02/11/2025
এইমাত্র ৩ পিচ্চি এসে বলল তারা পড়ে থাকা সমস্ত পাতা পরিস্কার করে দিবে বিনিময়ে ১৫ ডলার নিবে, তারমানে প্রতিজন পাবে ৫ ডলার করে। তার মানে এই বয়সে সে শিখবে পাঁচ ডলার কামাতে কি রকম পরিশ্রম করতে হবে, খুব ভালো লাগলো সেই সাথে মনে পরল আলমানযোর সেই গল্প
সর্টকাটে পাওয়া টাকা কোনসময়ই ভালো কিছু আনে না। যে জন্য দেখবেন এই যে হঠাৎ শত কোটি টাকার মালিক হওয়া লোকেরা নিজেদের জীবনটা যেমন শান্তিতে উপভোগ করতে পারে না, তেমন তাদের একটা সন্তানও মানবিক হয় না। নিজেদের সন্তানও তাদের দেখে না। এই নিয়ে ছোট্ট বেলার বন্ধু আলমানযো আমায় যে শিক্ষা দিয়েছিল, সেটা আপনাদের সাথে শেয়ার করি, একটু মন দিয়ে পড়লেই হয়তো একমত হবেন। --
উত্তরের ঠাণ্ডা এলাকায় থাকে ওরা , কিন্তু গ্রীষ্মকালে আয়োজিত মেলায় গেছে ক্ষুদে আলমানযো তার বাবা-মা-ভাই-বোনদের নিয়ে। এটা সেই মেলার অমূল্য অভিজ্ঞতা- তার ও আমাদের জন্য-
"এক জায়গায় গোলাপী লেমোনেড বিক্রি হচ্ছে, এক নিকেলে এক গ্লাস। শহরের ছোকরারা ভিড় করেছে দোকানটার আশেপাশে। আলমানযো দেখল ওর চাচাতো ভাই ফ্র্যাঙ্কও আছে ওদের মধ্যে। শহরের পাবলিক পাম্প থেকে পানি খেল আলমানযো, কিন্তু ফ্র্যাঙ্ক বলল ও লেমোনেড খাবে। এক নিকেল দিয়ে এক গ্লাস গোলাপী লেমোনেড কিনে ধীরে সুস্থে তারিয়ে তারিয়ে খেল ও, তারপর ঠোঁট চেটে বলল, 'দারুণ! তুমিও খাও না এক গ্লাস?' 'নিকেল কোথায় পেলে?' জিজ্ঞেস করল আলমানযো। '
কেন, বাবা দিয়েছে,' বড়াই করে বলল ফ্র্যাঙ্ক। 'যখনই চাই তখনই দেয়।'
'আমি চাইলে আমার বাবাও দিত,' বলল আলমানযো।
'তা হলে চাইছ না কেন?' তামাশা করে বলল ফ্র্যাঙ্ক। বিশ্বাস করেনি সে আলমানযোর কথা।
'কারণ, আমার চাওয়ার ইচ্ছে নেই।'
'আসলে দেবে না, তাই না? চাইলেও দেবে না!' বাঁকা হাসছে ফ্র্যাঙ্ক।
'দেবে।'
'তা হলে চেয়ে দেখো দেয় কি না।' ফ্র্যাঙ্কের বন্ধুরাও কৌতূহলী হয়ে শুনছে
ওদের কথোপকথন।
দুই পকেটে হাত ভরে আলমানযো ঘোষণা করল, 'আমার ইচ্ছে হলে
চাইব।'
'বুঝেছি। চাইলেও পাবে না!' বলল ফ্র্যাঙ্ক। 'চাওয়ার সাহসই নেই তোমার, কারণ, জানো, দেবে না।'
কিছুটা দূরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মিস্টার প্যাডকের সঙ্গে কথা বলছে বাবা। ওয়্যাগন তৈরির বড়সড় এক কারখানার মালিক উনি। ধীরপায়ে ওদের দিকে এগিয়ে গেল আলমানযো। যতই এগোচ্ছে ততই ভয় বাড়ছে, যদি বাবা সত্যিই নিকেল না দেয়? এর আগে কোনদিন পয়সাকড়ি চায়নি ও বাবার কাছে, দরকারই পড়েনি।
চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল ও। কথা শেষ করে ওর দিকে ফিরল বাবা।
'কী হয়েছে, বাপ?'
ভয়ে ভয়ে আলমানযো বলল, 'বাবা...' শুকিয়ে আসছে গলাটা।
'হ্যাঁ, বলো, বাপ।'
'বাবা, তুমি কি... তুমি কি চাইলে আমাকে একটা নিকেল দেবে?' বাবা আর মিস্টার প্যাডক, দুজনেই তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আলমানযোর
মনে হলো এক দৌড়ে ছুটে পালায়। কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বাবা বলল,
'কী করবে?'
পায়ের মোকাসিনের উপর দৃষ্টি, মরে যাচ্ছে অস্বস্তিতে, কোনমতে বলল আলমানযো, 'ফ্র্যাঙ্কের কাছে একটা নিকেল ছিল, গোলাপী লেমোনেড কিনেছে ও।'
'বেশ,' ভেবেচিন্তে বলল বাবা, 'ও যদি তোমাকে খাইয়ে থাকে, তোমার উচিত ওকে কিনে খাওয়ানো।' পকেটে হাত ভরল বাবা, তারপর হঠাৎ দোত সরাসরি প্রশ্ন করল, 'ও তোমাকে লেমোনেড খাইয়েছে?'
নিকেলটা পাওয়ার আগ্রহে মাথা ঝাঁকাল আলমানযো। পরমুহূর্তে ছটফট কা উঠে মাথা নাড়ল, নিচু গলায় বলল, 'না, বাবা।'
অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকল বাবা ওর দিকে। গোটা ব্যাপারটা আন্দাজ করা নিয়ে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে খুলল। ধীরেসুস্থে বের করল রুপে একটা গোল আধডলার। জিজ্ঞেস করল, 'আচ্ছা, আলমানযো, এটা কী বলছে পারো?'
'আধডলার,' জবাব দিল আলমানযো.।
'ঠিক। কিন্তু আধডলার আসলে কী তা জানো?'
আলমানযো মাথা নাড়ল, আধডলার ছাড়া আর কী হতে পারে জানে না।
'এটা হচ্ছে কাজ,' বলল বাবা, 'টাকা হচ্ছে কাজ, কঠিন শ্রম।'
মিস্টার প্যাডক মৃদু হাসলেন। 'খুবই ছোট বাচ্চা,' বললেন তিনি।
'এসব বোঝার কি বয়স হয়েছে ওর, ওয়াইল্ডার?'
'দেখো না,' জবাব দিল বাবা, 'আসলে যা ভাবছ তার চেয়ে অনেক বুদ্ধিমা
ছেলে ও।'
জবাব না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল আলমানযো। একটা নিকেল চাইছে এসে এমন বিপদ হবে জানলে আসতই না। এখন পালাতে পারলে বাঁচে।
'আলুর চাষ কী করে করতে হয় তুমি জানো, তাই না, আলমানযো?' 'জানি,' ঝটপট জবাব দিল আলমানযো
। 'ধরো, বসন্তকালে একটা বীজ-আলু পেলে, কী করবে ওটা দিয়ে?' 'কেটে টুকরো করব, দু'তিনটে মুখ থাকবে প্রতিটা টুকরোয়,' বলল আলমানযো।
'তারপর? বলতে থাকো।'
'খেতে সার দিয়ে লাঙল দিতে হবে, তারপর মই দেওয়ার পর দাগ টানা জমিতে। আলু লাগিয়ে লাঙল আর নিড়ানি দিতে হবে দুই বার।'
'ঠিক। তারপর?' 'তারপর ওগুলো খুঁড়ে তুলে তলকুঠুরিতে রেখে দেব। গোটা শীতকাল থাকে ওগুলো ওখানে, মাঝে মাঝে ছোট আর পচা বেছে ফেলতে হবে। পরের বছরে গাড়ি ভর্তি আলু এনে বিক্রি করব এই শহরে।'
'হ্যাঁ। যদি ভাল দাম পাও তা হলে আধ-বুশেল আলুর জন্য কত পাবে?'
'আধডলার,' বলল আলমানযো।
'ঠিক বলেছ, বাপ,'খুশি হলো বাবা। 'আধ-বুশেল আলু চাষ করার খাটুনি
রয়েছে এই আধডলারে।
রুপোর চাকতিটার দিকে চেয়ে খাটুনির তুলনায় খুবই ছোট মনে হলে আলমানযোর।
'এটা এখন তোমার,' বলল বাবা।
নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না আলমানযো। কিন্তু বাবা সত্যিই ওটা এগিয়ে দিচ্ছে দেখে হাত বাড়িয়ে নিল। 'এটা তোমার,' আবার বলল বাবা। 'ইচ্ছে করলে ছোট্ট একটা মাদী শুয়োর কিনতে পারো এটা দিয়ে। যদি পেলেপুষে বড় করতে পারো, একগাদা বাচ্চা দেবে ওটা-বড় হলে ওগুলো প্রত্যেকটার জন্য পাবে চার কি পাঁচ ডলার করে। আবার ইচ্ছে করলে পুরো আধডলার দিয়ে লেমোনেড কিনে খেতে পারো। কেউ
কিচ্ছু বলবে না, তোমার যা খুশি। তোমার টাকা দিয়ে যা খুশি তাই করতে পারো তুমি। যাও।'
আধডলারের মুদ্রাটা হাতে নিয়ে কয়েক সেকেন্ড বিহ্বল ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকল আলমানযো, তারপর ওটা পকেটে পুরে চলে এল লেমোনেড স্ট্যান্ডে দাঁড়ানো ছেলেদের কাছে।
লেমোনেড বিক্রেতা হাঁকছে: "এদিকে আসুন, এদিকে আসুন! ঠাণ্ডা
লেমোনেড, শীতল গোলাপী লেমোনেড! এক গ্লাস মাত্র পাঁচ সেন্ট! মাত্র আধ ডাইমে বরফ-শীতল গোলাপী লেমোনেড! আসুন, আসুন!'
'কই, নিকেল কোথায়? দেখি?' সাগ্রহে এগিয়ে এল ফ্র্যাঙ্ক।
'নিকেল দেয়নি বাবা,' বলল আলমানযো।
টিটকারির হাসি হেসে উঠল ফ্র্যাঙ্ক। 'ইয়াহ্, ইয়াহ্! আমি বলেছিলাম না,
দেবে না? দেখলে?'
'নিকেল দেয়নি, চাইতেই আধডলার দিয়েছে,' নিচু, নরম গলায় বলল আলমানযো।
'মিথ্যে কথা!' বলল ফ্র্যাঙ্ক। অন্য ছেলেরা চাপ দিল, 'তা হলে দেখাও।'
সত্যি সত্যিই ওর হাতে আধডলার দেখে হাঁ হয়ে গেল সবার মুখ, দুচোখ যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসবে ফ্র্যাঙ্কের। সবাই ঘনিয়ে এল, দেখবে এত টাকা আলমানযো কীসে খরচ করে। কিন্তু নির্বিকার ভঙ্গিতে মুদ্রাটা পকেটে রেখে দিল ও।
'বাচ্চা একটা শুয়োর কিনব এটা দিয়ে-পুষব।'''
উপরের অনুবাদটুকু লরা ইঙ্গলস ওয়াইল্ডারের ' ফার্মার বয়' থেকে প্রিয় কাজী আনোয়ার হোসেনের রূপান্তরিত অংশ। বইটি প্রকাশিত হয়েছে সেবা প্রকাশনী থেকে।
মায়ের অফিসে ( রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে) প্রথম দেখা হয়েছিল আলমানযোর সাথে স্কুল জীবনেই। ভাগ্যিস হয়েছিল ।
এই সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখার সাথে আপনার দ্বিমত থাকলে কারণ সহ জানাতে পারেন-