31/10/2025
জাহিলিয়াতের আগুন ও ওহির পানিঃ
জাহিলিয়াত—অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ অস্বীকার করে অজ্ঞতার অন্ধকারে জীবনযাপন—এর প্রকৃতি ও রূপ অনেকটা আগুনের মতো।
শুরুতে এই আগুনের লালচে সোনালি আভা, তার উজ্জ্বল শিখা ও দীপ্তিময় রূপ মানুষকে মোহিত করে। সবাই সেই আগুনের উজ্জল সোনালি আলোকে সৌন্দর্য ভেবে তার দিকে আকৃষ্ট হয় ও দিকবিদিক হয়ে ছুটে চলে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই আগুনের সেই সোনালি শিখা ঘন কালো ধোঁয়ায় পরিণত হয়, আর সেই ভয়ংকর আগুন চারপাশের সবকিছুকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। এটা আগুনের এক শ্বাশত, অমোঘ নিয়ম যতক্ষণ না তাঁকে থামানো না হয়।
অন্যদিকে, পানি কখনো আগুনের এই মায়াবী রূপে প্রভাবিত হয় না। বরং পানি সরাসরি আগুনের মূলে পৌঁছে সেটিকে দ্রুত নিভিয়ে ফেলে—রক্ষা করে মানুষের মূল্যবান জীবন, সম্পদ ও রক্ষা করে পরিবেশ।
একইভাবে, আধুনিক সমাজে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা (free mixing) হলো এক ধরনের জাহিলিয়াতের আগুন। প্রথমে এটি আনন্দ, স্বাধীনতা ও প্রগতির নামে সমাজে প্রচলিত হয়; মানুষ মনে করে এটি আধুনিকতার প্রতীক। নারী-পুরুষ পরস্পরের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয় এবং তারা এর বাহ্যিক আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে। কিন্তু সেই তথাকথিত ‘স্বাধীনতা’র পেছনে ধীরে ধীরে অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠে ও নানাধরনের অবৈধ কার্যকলাপ শুরু হয়। ভাঙন ধরে পরিবারে, তৈরি হয় অশান্তি, দূষিত হয় সমাজের নৈতিক ভিত্তি এবং হারিয়ে যায় মানুষের স্বাভাবিক লজ্জা ও পবিত্রতা।
আর এই জাহিলিয়াত ও তার অগ্নিকাণ্ড থেকে সমাজকে রক্ষা করে আল্লাহর বিধান—পর্দাপ্রথা ও নারী-পুরুষের স্বাভাবিক দূরত্ব। এই বিধান পানির মতো; এটি শীতল, প্রশান্তিদায়ক এবং সমাজকে অনৈতিক কাজ ও সম্পর্ক থেকে রক্ষাকারী। আগুন যেভাবে পানিকে নিভিয়ে দেয়, তেমনি আল্লাহর হুকুম সমাজকে জাহিলিয়াতের তপ্ত দহন থেকে বাঁচিয়ে দেয়।
কিন্তু আজকের তথাকথিত সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী ও প্রগতিশীল চিন্তাবিদরা আগুনের এই লাল আভাতেই তারা মুগ্ধ। তারা ফ্রি মিক্সিং স্বরূপ জাহিলিয়াতকে স্বাধীনতা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির নামে সাজিয়ে তুলে ধরে। তারা সাহিত্য-নাটক-সিনেমার মাধ্যমে মানুষকে সেই আগুনে ঝাঁপ দিতে উদ্বুদ্ধ করে। তারা মনে করে আল্লাহর বিধান মানা চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতার পরিপন্থী। অথচ তাদের চিন্তা সীমিত—তারা আগুনের প্রাথমিক সৌন্দর্যের রূপ দেখে মোহিত হয়, কিন্তু তার ধ্বংসাত্মক পরিণতি ও তার ভয়ংকর কালো মেঘকে তারা দেখতে পায় না, কিংবা দেখেও তা মেনে নিতে অস্বীকার করে।
অপরদিকে, মহান আল্লাহ তাঁর প্রেরিত নবী-রাসূলদের মাধ্যমে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন এই আগুনরূপ ভয়ংকর জাহিলিয়াত থেকে। ওহির আলোয় আলোকিত সেই রাসূলগণ মানবতাকে শিক্ষা দিয়েছেন—জাহিলিয়াতের মায়াবী লাল রূপে মোহিত না হয়ে, বরং পানির মতো হয়ে সমাজ ধ্বংসকারী আগুনকে নিভিয়ে দিতে। সমাজে যখন জাহিলিয়াত ও অজ্ঞতার আগুন ছড়ায়, তখন শান্তির জন্য, সভ্যতা ও সমাজ রক্ষার জন্য ওহির নির্দেশে সেই আগুনের মূলে পানি ঢেলে দাও।
কারণ, পানি যেমন দেহের তৃষ্ণা নিবারণ করে ও শান্তি আনয়ন করে তেমনি আল্লাহর ওহি অন্তরের তৃষ্ণা নিবারণ করে। মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত ওহির পানিতে আত্মাকে পবিত্র করবে না, ততক্ষণ সে জাহিলিয়াতসম আগুনের বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি পাবে না।
আমরা আগুন-রূপ সকল প্রকার জাহিলিয়াত থেকে দূরে থাকি এবং ওহি-রূপ পানির আশ্রয় নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের অন্তরকে তাঁর হিদায়াতের আলোয় সিক্ত করুন এবং আমাদের পরিবার ও সমাজকে জাহিলিয়াতের আগুন থেকে রক্ষা করুন — আল্লাহুম্মা আমিন।