20/09/2025
#অপ্রিয়কথা
বেশ কিছুদিন আগে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার সাঈদ আনোয়ার এর একটা কোটেশন পোস্ট দেখেছিলাম "মেয়েরা চাকরি শুরু করার পর থেকেই ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়েছে"! সেই পোস্টে তখন পর্যন্ত প্রায় বিশ হাজার মানুষ লাইক দিয়ে তারাও যে একমত সে কথা প্রকাশ করেছে! আর সেইদিন দেখলাম বাংলাদেশি এক 'বিখ্যাত' (নাম ভুলে গেছি! তা না হলে মিডিয়াতে গুরুত্ব পেলো কেন) পরিচালক একিই ধরনের মন্তব্য করেছেন। অর্থাৎ মেয়েরা চাকরি করলে সংসার করতে চায়না টাইপ কিছু!
ভেবে দেখলাম এই দুজন আসলে ভুল কিছু বলেনি! আগের যুগে নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ, বা নারীর চাকরি করার স্বাধীনতা কোনটাইতো এখনকার মতো এতো বেশি ছিলো না। তো তখন তারা মুখ বুজে ঘর সংসার করা ছাড়া আর কিই বা করবে! আজকে আমি নিজেই যদি লেখাপড়া না জানতাম, চাকরি করার সুযোগ না পেতাম, তাহলে নিজেকে একা চালিয়ে নেয়ার শক্তি বা সাহসই বা কোথায় পেতাম! বিয়ে করে স্বামী যেমনই হোক না কেন, যত নির্যাতন, নিষ্পেষনই করুক না কেন, সংসার নামের সেই দোজখকেই আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইতাম।
এখনকার পুরুষরা কথায় কথায় বলে, তাদের মা, খালা, নানি দাদীরা কত সুন্দর সংসার করে গেছে!কত সুন্দর সংসার, সন্তান সামলেছে। কত ধরনের পিঠা বানিয়ে খাইয়েছে। এখনকার যুগের নারীরা সংসারতো পরের ব্যাপার, সামান্য পিঠাও বানাতে জানেনা। যদিও এই 'সুন্দর করে পিঠা বানিয়ে খাওয়ানো টাইপ সংসার করা' ব্যাপারটাকে আমার কাছে জটিল গোলক ধাঁধার মতোই মনে হয়! খালি চোখে খুব সহজ সরল, আসলেই কি তাই! আগের যুগে ডিভোর্স কম হতো, বা হতো না বলেই যে সবাই খুব সুখী দম্পতি ছিলো সেটাকে ধ্রুব সত্য বলে কেন ধরে নেই!
'সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে' এই বস্তাপচা প্রবচণে নারীর যে গুনের কথা বলা হয়েছে, তার মাঝে সুনিপুণ অভিনয় করতে পারার সক্ষমতাও যে একটা বিশাল গুন, সে কথা কি 'পুরুষ কর্তামশাইরা' কখনো ধরতে পেরেছেন? সংসারে আপাতদৃষ্টির সুখ ধরে রাখার জন্য নারীকে কত ধরনের চরিত্রে যে অভিনয় করতে হয়, সে যদি আমাদের 'ক্ষুরধার বুদ্ধিমান' বাঙালী পুরুষরা বুঝতোই, তাহলে আজ আধুনিক পুরুষদের কাছ থেকে এই মহামুল্যবান 'সবক' শোনা লাগতো না।
আমাদের বুদ্ধিমান মা, চাচী, নানী, দাদীরা কখনো স্বামীর, কখনো ছেলের বা কখনো সমাজের পুরুষদের ইগো তুষ্ট করতে, হয় কখনো অবুঝ, কখনো দূর্বল, কখনো অক্ষমের বা কখনো সুখীর ভুমিকায় অভিনয় করে গেছেন। অভিনয় করতে করতে হয়তো নিজেরাও একসময় বিশ্বাস করে ফেলেছেন। যে মা, চাচীরা কখনো নিজেদের মনের কথা, চাওয়া পাওয়া, অভিযোগ, অনুযোগ প্রকাশ করেই নি বা করার সুযোগও পায়নি, সেই অপ্রকাশিত মতামতকেই পুরুষরা ধ্রুব সত্য বলে ধরে নিচ্ছেন উনারা কত 'সুন্দর সংসার' করেছেন!
আর তাই এ যুগের নারীদের নিয়ে বাঙালী পুরুষদের প্রধান সমস্যাই হচ্ছে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা। পুরুষদের যা কিছু খারাপ তা এখনকার নারীদের মুখ ফুটে বলে ফেলা, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া আর সহ্যের বাইরে চলে গেলে সংসারের বেড়াজাল ছিঁড়ে ফেলে বাইরে বেড়িয়ে আসা।
নিজের খারাপটা শুনতে কারই বা ভালো লাগে। আর আমাদের দেশি পুরুষদের সে অভ্যেস আরও নেই।
তাই মেয়েদের চাকরি করাটাকে যদি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত পুরুষরা ডিভোর্স এর কারন হিসেবে দেখেন আমি তাদেরকে দোষ দেবোনা। বরং এটাই ধরে নেবো যে একজন ভীরু, দূর্বল, পশ্চাদপদ চিন্তার অধিকারী আর আত্মসমালোচনা করতে না জানা পুরুষের যুক্তি এছাড়া আর কিইবা হতে পারে!
আর সাথে সাথে এও ভাবি যে দুনিয়া কোথায় চলে যাচ্ছে, মেয়েরা কোন মহাকাশ, গ্যালাক্সি ঘুরে আসছে আর আমাদের উপমহাদেশের অথর্ব পুরুষরা 'মেয়েরা চাকরী করলে সংসার টিকেনা' এই মন্ত্র জপছে! আচ্ছা এই পুরুষরা কয়দিন পর বিয়ে করার মতো মেয়ে পাবেতো! কারন 'অথর্ব পুরুষ' বিয়ে না করেও যে পরিপূর্ণ জীবন কাটানো যায় এ বুঝ নারীরা অলরেডি বুঝে গেছে। পুরুষরা কি বুঝতে পারছে তাদের 'অথর্বতা'!
©মুনলীন