Shabz Diary

Shabz Diary ....where i keep all my random thoughts

10/11/2025

বেশ কয়েক বছর আগেও প্রিতম হাসান কে খুব একটা পছন্দ করতাম না। মনে হতো বাচ্চা পোলাপান আর গানও করে পোলাপানদের জন্য! কথা বলার স্টাইলটাও মনে হতো ইম্যাচিওর!

কিন্তু শাহতাজ নামের মেয়েটাকে বিয়ে করার পর প্রিতমের একটা সাক্ষাৎকার দেখেছিলাম, যেখানে শাহতাজের সাথে ওর সম্পর্ক, বিয়ে, শাহতাজের সিম্পলিসিটি, সৎ আর সরল মানসিকতা নিয়ে অনেক কথা বলেছিলো! আই থিংক, সেই প্রথম আমি প্রিতমকে মনোযোগ দিয়ে শুনি! এরপর বেশ কয়েকটা প্রোগ্রামে দেখি ওয়াইফের বেলায় সে কত সিনসিয়ার, প্রোটেক্টভ আর পার্টনার হিসাবে কি দারুন ম্যাচিওরড চিন্তাভাবনা করে! তারপর থেকেই একটু একটু ওর গান শোনা শুরু করলাম। আর কোক স্টুডিওর কারনে পুরাই ফ্যান হয়ে গেলাম!

গতকালকে সামনে থেকে প্রিতমকে দেখে 'ফ্যান মোমেন্ট' এর চাইতেও, কেন যেন বেশি 'মায়া মোমেন্ট' কাজ করেছে। মনে হচ্ছিলো এই শুকনা পাতলা, বাচ্চা কিন্তু ট্যালেন্টেড ছেলেটা কি দারুনভাবে দেশকে রিপ্রেজেন্ট করছে। একদমই টিপিক্যাল বাংলাদেশি 'বয় নেক্সট ডোর লুক' আর কি সুন্দর পুরো স্টেজ হেঁটে হেঁটে গান গাচ্ছে, অডিয়েন্সের সাথে কানেক্ট করছে। মনে হচ্ছিলো যেন নিজের আপন ছোট ভাই বা সন্তানের মতো!

অনেকদিন দেশে যাওয়া হয়না। তাই হয়তো কিছুটা নষ্টালজিয়া, কিছুটা মন খারাপ আর ফেলে আসা সময়ের জন্য হাহাকার, সব মিলিয়ে অদ্ভুত এক জগাখিচুরি অনুভূতি কাজ করছিলো!
তাই হয়তো প্রিতমের চোখে মুখে দেশ দেখছিলাম! দেশের মানুষ দেখছিলাম! প্রিতম কত ভালো গেয়েছে, সবাইকে কেমন নাচিয়েছে, সবাই কত মজা করেছি, তার চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ অনুভূতি হয়তো এই যে প্রিতম হাসান আমার কাছে দেশকে নিয়ে এসেছিলো! সাথে দেশের মায়াভরা তারুণ্যকে!

 #লন্ডনজীবন২০লন্ডনে আমার খুব পছন্দের একজন শিক্ষক ছিলেন আনান্দ ওয়ালসার। ইনফ্যাক্ট ক্লাসের বেশিরভাগ স্টুডেন্টদেরই পছন্দের ...
04/11/2025

#লন্ডনজীবন২০
লন্ডনে আমার খুব পছন্দের একজন শিক্ষক ছিলেন আনান্দ ওয়ালসার। ইনফ্যাক্ট ক্লাসের বেশিরভাগ স্টুডেন্টদেরই পছন্দের শিক্ষক বললে ভুল হবেনা। খুব সম্ভবত ভারতীয় তামিল ব্যাকগ্রাউন্ডের এই মানুষটাকে হাসিমুখ ছাড়া কখনো দেখিনি। আর সাথে ছিলো তার প্রানবন্ত, তারুন্যে ভরপুর ব্যাক্তিত্ব। সবসময় মনে হতো খুব আনন্দে আছে বা পার্টি মুডে আছে। হেভিমেটাল ব্যান্ডের ভক্ত হওয়ায় প্রায়ই Metallica, Linkin Park, Iron Maiden এর টিশার্ট পরতো।
তো ইউনিতে লাস্ট সেমিস্টারে, আনান্দ আমাদের ব্যাচকে একদিন, একরাতের ট্রিপে ওয়েলসে একটা ম্যানেজমেন্ট ওয়ার্কশপের জন্য নিয়ে গিয়েছিলো! রুটিনের বাইরে আলাদা কিছু করা সাথে টিম ওয়ার্ক, ক্রিয়েটিভিটি, কমিউনিকেশন, প্রেজেন্টেশন স্কিল,টাইম ম্যানেজমেন্টও শেখা!
প্রথমে ভেবেছিলাম যাবো না। কিন্তু আমার টার্কিশ ফ্রেন্ড গুলজান এতো উৎসাহ দিচ্ছিলো যে শেষ পর্যন্ত রাজী হয়েই গেলাম। তো স্টুডেন্টদের রোডট্রিপের জন্য বিশাল ইন্টারস্টেট কোচ ভাড়া করা হয়েছিলো। তারপর একদিন বৃষ্টিভেজা সকালে ব্যাচের সবাই মিলে ওয়েলসের পথে রওয়ানা দিলাম। আনান্দ ছাড়াও সাথে ছিলো অন্য আরেকজন লেকচারার-পিটার। খুব সম্ভবত আইরিশ ব্যাকগ্রাউন্ডের পিটার ছিলো খুবই ফানি আর স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড! ওর ক্লাসে হাসি আটকানো কষ্টসাধ্য ছিলো!
তো সেই প্রথম আমার লন্ডন শহরের বাইরে যাওয়া। কি যে দারুণ উত্তেজনা কাজ করছিলো! যদিও সেই সময় আমার আরেক ফ্রেন্ড আলফি'র সাথে কথা বন্ধ ছিলো। এ অবশ্য নতুন কিছু না। আমাদের মাঝে মাঝেই কথা বন্ধ থাকতো! বেশিরভাগ সময় কারনটা ছিলো পাকিস্তানি গ্রুপের পোলাপানের সাথে আলফির গায়ে পড়ে মিশতে যাওয়া! ওই গ্রুপে ফয়সাল নামে একটা লম্বা চওড়া, বড়সর ছেলে ছিলো। স্বাস্থ্যের কারনে মনে হয় এমনিতেও সে নিজেকে 'বিগ ব্রাদার' টাইপ কিছু মনে করতো। ফয়সালের এই attitude আমি সহ্যই করতে পারতাম না। তাই এই গ্রুপের সাথে নিজেও মিশতাম না। চাইতাম না আলফিও মিশুক। আর সেই কারনেই ওই গ্রুপের সাথে আলফিকে আড্ডা দিতে দেখলেই কথা বলা বন্ধ থাকতো।
যাইহোক তিন ঘন্টা জার্নি করে ওয়েলস এর Gregynog গিয়ে যখন পৌঁছালাম তখন লাঞ্চ টাইম হয়ে গিয়েছিলো। গিয়েই সবাই মিলে লাঞ্চ করতে বসে গেলাম। এরপরই বিশাল হলরুমের মতো একটা জায়গায় গিয়ে দেখি গ্রুপ ওয়ার্কশপের জন্য আলাদা আলাদা টেবিল চেয়ার পাতা। লাঞ্চের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত চললো টানা ওয়ার্কশপ আর প্রেজেন্টেশন!
তারপর সবাই চলে গেলাম যে যার রুমে শাওয়ার আর রেস্ট এর জন্য! আনান্দ আগেই বলে রেখেছিলো রাত আটটা থেকে হলরুমে শুরু হবে ডিসকো পার্টি! আমরাতো সবাই এক্সাইটেড!
Gregynog এ আমি আর গুলজান শেয়ার করেছিলাম একটা রুম! ঢুকতেই মনে হচ্ছিলো যেন কয়শো বছর পেছনে চলে এসেছি! পুরানো বিল্ডিং, পুরানো ডিজাইন, এস্টেটের চারপাশে গাছপালা, জংগল! আশেপাশে নেই কোন মানুষজন, ঘরবাড়ি! হলরুম থেকে ঘুমানোর রুম পর্যন্ত আসার পথটা এতো বেশি নির্জন যে সন্ধ্যার দিকে কিছুটা ভয় ভয়ও লাগছিলো!
যাইহোক আটটা, সাড়ে আটটা বাজতেই আমি আর গুলজান রেডি হয়ে হলরুমে চলে গেলাম। গিয়েতো দেখি সবাই অলরেডি হৈ হুল্লোড় শুরু করে দিয়েছে! লাউড মিউজিক, নাচানাচি, হৈচৈ! পুরোই যেন জমজমাট ক্লাব! আমি এমনিতেও খুব একটা নাচুনে বুড়ি না। আমার মতো আরও কয়েকজন তাই কর্নারে দাঁড়িয়ে অন্যদের নাচানাচি দেখছিলাম আর নিজেরা নিজেরা গল্প করছিলাম।
রাত যত বাড়ছিলো পার্টি তত জমছিলো! একটু পর দেখি আনান্দ নিজেই স্টুডেন্টদের সাথে ডান্স ফ্লোরে জয়েন করেছে! তখন যেন সবার জোশ আরও বেড়ে গেলো! আর ডান্স ফ্লোর কিভাবে দখল রাখতে হয় সেটা যে আনান্দ কত ভালো জানে তার প্রমান ছিলো সেই রাত! স্টুডেন্টদের সাথে সে কি নাচ! আর আমরা যারা দর্শক তারা দূর থেকে দেখছিলাম আর হাসছিলাম! একসময় দেখি আলফিও নাচতে নেমে গেছে! ওর চিংড়ি ড্যান্স দেখেতো হাসি আরও আটকাতে পারছিলাম না! কি যে দারুন মজায় কেটেছিলো সেদিনের সন্ধ্যাটা!
রাত এগারো বা বারটায় পার্টি শেষে রুমে ব্যাক করে, ক্লান্ত শরীরে এক ঘুমে রাত পার করেছিলাম! পরদিন সকালে দেখি UK এর চিরাচরিত ঝিরিঝিরি বৃষ্টিভেজা ওয়েদার! এই থামে এই শুরু হয়! সকালের নাশতা করে হাতে কিছু সময় থাকায়, সবাই যে যার বন্ধুদের সাথে গ্রুপ করে এস্টেটের আশেপাশের সাইটগুলো ঘুরে দেখতে বের হয়েছিলো। আমি আর গুলজানও ঘুরে ঘুরে দেখেছিলাম। এস্টেট থেকে জংগলে যাওয়ার রাস্তাটা যে কি দারুন ছিলো! ভীষন সুন্দর এস্টেটের ভেতরটা। মনে হচ্ছিলো ওয়েদার ভালো থাকলে আর আরও টাইম নিয়ে ঘুরতে পারলে পুরো জায়গাটা এক্সপ্লোর করা যেতো।
ঘুরাঘুরি শেষ করে ব্যাচের সবাই মিলে আবার এক জায়গায় জড়ো হলাম। আনান্দ রোল কলের মতো নাম ধরে ডেকে মিলিয়ে নিচ্ছিলো সবাই এক জায়গায় আছি কিনা। এরপর একটা গ্রুপ ফটো আর তারপরই লন্ডনে ব্যাক করার জন্য একে একে কোচে উঠা! আর এভাবেই বুঝে উঠার আগেই ইতি টানলাম আমাদের স্টুডেন্ট লাইফের মোস্ট মেমোরেবল একটা ডে'র! তখনও অনুধাবন করিনি যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা, বিভিন্ন ভাষাভাসির সেই ব্যাচ এর স্টুডেন্টদের সেটাই ছিলো একসাথে শেষ ছবি তোলা।
আনান্দ এর সাথে এখনো আমার ফেইসবুকে যোগাযোগ হয়। সেদিনও কথা হচ্ছিলো আমাদের এই ওয়েলস ট্রিপ নিয়ে। বলছিলাম এখনও মিস করি আনান্দ এর ক্লাস। স্টুডেন্টদের সাথে ওর খুঁনসুটি! মনে হলো আনান্দ ও কেমন নস্টালজিয়াতে আক্রান্ত হয়ে গেলো! বললো "believe it or not, i miss those days too! Especially the students"! ইউকে ভিসা, এডমিশন কঠিন হয়ে যাওয়ায়, এখন নাকি আমাদের মতো অল্প বয়সী, ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ খুব একটা পায়না। বেশিরভাগ ম্যাচিওরড এইজ, লোকাল স্টুডেন্টস! তাই স্টুডেন্টদের শেখানোর বা হেল্প করার স্কোপও কম। আনান্দ এর স্টুডেন্ট হিসেবে আমি জানি শিক্ষক হিসেবে সে কতটা engaged আর interactive! তাই হয়েতো আনান্দ এর কথায় হালকা বিষন্নতার আঁচ পেলাম। মনে হলো এ যেন ওর ফেলে আসা দিনকে খুঁজে না পাওয়ার বিষন্নতা! সময় আর তারুন্যকে পেছনে ফেলে আসার বিষন্নতা! 'যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ' টাইপ বিষন্নতা! আমি নিজেও কি মাঝে মাঝে এ বিষন্নতায় আক্রান্ত হই না!
©মুনলীন (চলবে)

ইরানিয়ান 'আমু হাজি'-পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা মানুষ হিসেবে পরিচিত! মারা গেছেন ২০২২ সালের অক্টোবরে, ৯৪ বছর বয়সে! বেঁচে থাকতে স...
01/11/2025

ইরানিয়ান 'আমু হাজি'-পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা মানুষ হিসেবে পরিচিত! মারা গেছেন ২০২২ সালের অক্টোবরে, ৯৪ বছর বয়সে! বেঁচে থাকতে সাবান, পানির ব্যাপারে ছিলো উনার তীব্র ফোবিয়া। ইংরেজিতে যাকে বলে Ablutophobia! উনি বিশ্বাস করতেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলেই রোগশোকে উনি কাবু হয়ে যাবেন। তাই জীবনের দীর্ঘ ৬০ বছর 'World's Dirtiest Man' হিসেবেই উনি বেঁচে ছিলেন!

গোসল বা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার ব্যাপারে আমু হাজি'র এই তীব্র ভীতি শুরু হয়েছিলো যুবক বয়সে, হৃদয় ভাঙার বেদনা থেকে। উনি বিশ্বাস করতেন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা উনার জীবনে শুধু দুর্ভাগ্য আর রোগশোকই বয়ে আনবে! আর সেই ভাবনা থেকেই এই সন্যাস জীবন বেছে নেওয়া!

আর শুধু কি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা! খাওয়াদাওয়ার জন্য বেছে নিয়েছিলেন মৃত পশুপাখির পচা মাংস! বিশেষ পছন্দ ছিলো সজারুর মাংস। পানি পান করতেন ডোবা, জলাশয় বা জং ধরা তেলের পাত্র থেকে। ধুমপানের জন্য ব্যাবহার করতেন পশুপাখির বিষ্ঠা দিয়ে ভরা পাইপ! থাকতেন নিজ হাতে খোঁড়া মাটির গর্তে! চুলকে বাগে আনা হতো আগুনে পুড়িয়ে! শরীরের চামড়া ছিলো কালিঝুলি আর পুজে ভরা! গ্রামবাসীরা খাবার, পানি বা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য দিতে চাইলেও তিনি তা গ্রহণ করতেন না। উল্টো এতে নাকি তার মন খারাপ হতো!

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই পরিমান নোংরা, অপরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করেও জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি সুস্থভাবেই বেঁচে ছিলেন। ইরানের এক এসোসিয়েট প্রফেসর (প্যারাসাইটোলজি) হাজি'র হেলথ চেকআপ করে দেখেন, হাজির শরীরে কাঁচা মাংস খাওয়ার কারনে এক ধরনের প্যারাসাইটিক ইনফেকশন ছাড়া অন্য কোন ধরনের অসুস্থতা নেই। আর তারচেয়েও অত্যাশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, গ্রামবাসীর উৎসাহ আর প্ররোচনায় দীর্ঘ ৬০ বছর পর আমু হাজি যখন প্রথম গোসল করেন, তার ঠিক কয়েক মাস পরই তিনি মারা যান! আর তাই আমু হাজির জীবনের এই সত্য ঘটনা পড়ে আবারও মনে হয়েছে 'বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর'!

©মুনলীন

ছোটবেলা থেকে নানীর হাতের রান্না খেয়ে বড় হওয়ায়, যে কোন দেশি খাবার রাঁধতে গেলে ব্রেইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই রান্নার স্বাদটাই...
25/10/2025

ছোটবেলা থেকে নানীর হাতের রান্না খেয়ে বড় হওয়ায়, যে কোন দেশি খাবার রাঁধতে গেলে ব্রেইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই রান্নার স্বাদটাই বেঞ্চমার্ক হয়ে থাকে। নানুর কাছে বড় হলেও আমি যে খুব নানুর ন্যাওটা ছিলাম ব্যাপারটা সেরকম না। আমার অল্প বয়স থেকেই কথা কম বলার অভ্যাস! বই পড়ে আর সিডি, ক্যাসেটে গান শুনেই মহা আনন্দে দিন পার করে দিতাম। নাতি নাতনীরা নানী, দাদীদের সাথে যেমন অনেক গল্প করে, তেমন গল্প খুব একটা করতাম না! কিন্তু কোথায় যেন একটা কানেকশন সবসময়ই ছিলো! নানু মারা যাওয়ার পর এই কানেকশনটা আরও বেশী করে অনুভব করি!

অফিসে এক কলিগ একবার আমার Tarot Reading করেছিলো! আমি Astrology তে আগ্রহী হলেও Tarot card ব্যাপারটা একদমই বিশ্বাস করিনা। তো তখন সে রিড করেছিলো আমার আশেপাশে নাকি কোন এক মৃত guardian angel আছে। যে কিনা আমাকে সবসময় প্রটেক্ট করে! ওইসময় আব্বু মারা যাওয়ার কিছুদিন পরই এই রিডিং করাই, শুরুতে ভেবেছি আব্বুর কথা বলছে। আর মনে মনে ভাবছিলাম ধাপ্পাবাজি ধরে ফেলেছি। কারন আব্বুর মারা যাওয়ার কথাতো আমার কলিগও জানে! কিন্তু একটুপরই কলিগ বলেছিলো সে নাকি 'feminine energy' ফিল করতে পারছে সেই গার্ডিয়ান এঞ্জেলের ব্যাপারে! যে কিনা খুব কেয়ারিং আর প্রোটেক্টিভ আমার ব্যাপারে! নানু ছাড়া অন্য কারও কথা মাথায় আসেনি সেই মুহুর্তে!

যাইহোক আজকে লাঞ্চে ফলি মাছের কোফতা বানাতে গিয়ে ঘুরেফিরেই নানুর কথা মনে পড়ছিলো! শেষবার এই কোফতা বিশ বছর আগে দেশ ছাড়ার আগে নানুর হাতেরটাই খেয়েছিলাম। চিতল মাছেরটাও তাই! কি যে মজা লাগতো এই আইটেমটা। কিন্তু বাসায় খুব বেশি একটা বানানো হতো না। নানুই বলতো সময়সাপেক্ষ আর পরিশ্রমের কাজ। কিন্তু যখনই বানাতো মনে হতো গোগ্রাসে সব খেয়ে ফেলি!

নানুর মুখে বানানোর পদ্ধতি শুনে কোনদিন ভাবিওনি বা ইচ্ছাও হয়নি এই জিনিশ আমি কখনো বানাতে পারবো বা বানানোর শখ হবে। মনে হতো রান্নায় যাদের পিএইচডি আছে, তারাই এসব জটিল আর মজার রান্না রাঁধতে পারে। কিন্তু সেদিন না বুঝেই ফলি মাছ বাসায় নিয়ে এসে আম্মুকে যখন জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে রাঁধে! আম্মু বললো এই মাছে নাকি প্রচুর কাঁটা! নরমাল রান্না করলে নাকি কাঁটার জন্য খেতে অতো ভালো লাগেনা। তাই কোফতা করলেই মজা করে খাওয়া যায়। আমার নিজেরও কাঁটার অনেক ভয়! তাই আম্মুর কথা শুনে চুপসে গিয়েছিলাম। এতো দাম দিয়ে মাছ কিনে এনে যদি খেতেই না পারি, কেমন না ব্যাপারটা!

তো কি আর করা ইউটিউব ঘেটে কোফতা বানানোর পদ্ধতি দেখছিলাম। কোনটাই সহজে আর দ্রুত করা যাবে বলে মনে হচ্ছিলোনা। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে রেসিপি দেখছিলাম আর হতাশ হচ্ছিলাম। ভাবছিলাম আমাকে দিয়ে এই ঝামেলার রান্না হবেনা। কিন্তু ফ্রিজে মাছ ফেলে রাখলেই বা কি হবে! খেতে তো হবেই! কি আর করা! আল্লাহর নামে নেমেই পড়লাম কোফতা বানাতে। অনেক ঝক্কি ঝামেলা করে কাটা থেকে মাছ আলাদা করে সেটা আবার মাছের চামড়ায় প্যাঁচানো! বাবারে বাবা! অন্য সব আইটেম রান্না শেষ করে, সবার শেষে এই কোফতা বানানোর যুদ্ধে নেমেছিলাম। তা না হলে আজকে দুপুরে কারও খাওয়া হতো না!

কষ্ট করলে নাকি কেষ্ট মেলে! তাই এতো কষ্টের পর ফাইনাল রেজাল্ট যখন হাতে পেলাম তখন যেন রান্নায় ডক্টরেট ডিগ্রী পাওয়ার মতো অনুভূতি হলো! জিনিসটা এতো মজা হয়েছে যে বিশ্বাস হচ্ছিলো না এটা আমার হাতে বানানো! ঠিক যেনো নানুর হাতের স্বাদ! আমার মেয়ের যে কোন হোয়াইট ফিশে ভীষন এ্যালার্জিক রিএকশন হয়। তারপরও ওকে ডেকে একটু টেস্ট করাতে মন চাইলো! এতো মজার একটা দেশি খাবারের এক্সপেরিয়েন্স না নিলে কিভাবে হবে! মেয়ে একটু খেয়ে এতো মজা পেয়েছে যে পুরো একটা মাছের কোফতা খেয়ে ফেলেছিলো! তারপরই বলে ওর গলার ভেতর নাকি কেমন 'ফানি ফিলিং' হচ্ছে। ওর নাকি মনে হচ্ছে গলার ভেতরে ফুলে যাচ্ছে। সাথে সাথে দুইটা এ্যালার্জি ট্যাবলেট আর লেবু খেয়ে সামাল দেয়া লাগলো!

যাইহোক, যত মজাই হোক আর যত ভালোই বানাই না কেন, এই ফলি মাছের কোফতা বানানোর মতো গ্যাঞ্জাম আর জীবনে যদি করি তাহলে রান্নাবান্নাই বন্ধ করে দিবো! বাট এটলিস্ট মিশন ইজ সাকসেসফুল!😁

***ছবিতে লাঞ্চের অন্য কয়েকটা আইটেম। নয় পদের ছবি তোলার ধৈর্য্য ছিলো না!

03/10/2025
20/09/2025

#অপ্রিয়কথা

বেশ কিছুদিন আগে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার সাঈদ আনোয়ার এর একটা কোটেশন পোস্ট দেখেছিলাম "মেয়েরা চাকরি শুরু করার পর থেকেই ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়েছে"! সেই পোস্টে তখন পর্যন্ত প্রায় বিশ হাজার মানুষ লাইক দিয়ে তারাও যে একমত সে কথা প্রকাশ করেছে! আর সেইদিন দেখলাম বাংলাদেশি এক 'বিখ্যাত' (নাম ভুলে গেছি! তা না হলে মিডিয়াতে গুরুত্ব পেলো কেন) পরিচালক একিই ধরনের মন্তব্য করেছেন। অর্থাৎ মেয়েরা চাকরি করলে সংসার করতে চায়না টাইপ কিছু!

ভেবে দেখলাম এই দুজন আসলে ভুল কিছু বলেনি! আগের যুগে নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ, বা নারীর চাকরি করার স্বাধীনতা কোনটাইতো এখনকার মতো এতো বেশি ছিলো না। তো তখন তারা মুখ বুজে ঘর সংসার করা ছাড়া আর কিই বা করবে! আজকে আমি নিজেই যদি লেখাপড়া না জানতাম, চাকরি করার সুযোগ না পেতাম, তাহলে নিজেকে একা চালিয়ে নেয়ার শক্তি বা সাহসই বা কোথায় পেতাম! বিয়ে করে স্বামী যেমনই হোক না কেন, যত নির্যাতন, নিষ্পেষনই করুক না কেন, সংসার নামের সেই দোজখকেই আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইতাম।

এখনকার পুরুষরা কথায় কথায় বলে, তাদের মা, খালা, নানি দাদীরা কত সুন্দর সংসার করে গেছে!কত সুন্দর সংসার, সন্তান সামলেছে। কত ধরনের পিঠা বানিয়ে খাইয়েছে। এখনকার যুগের নারীরা সংসারতো পরের ব্যাপার, সামান্য পিঠাও বানাতে জানেনা। যদিও এই 'সুন্দর করে পিঠা বানিয়ে খাওয়ানো টাইপ সংসার করা' ব্যাপারটাকে আমার কাছে জটিল গোলক ধাঁধার মতোই মনে হয়! খালি চোখে খুব সহজ সরল, আসলেই কি তাই! আগের যুগে ডিভোর্স কম হতো, বা হতো না বলেই যে সবাই খুব সুখী দম্পতি ছিলো সেটাকে ধ্রুব সত্য বলে কেন ধরে নেই!

'সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে' এই বস্তাপচা প্রবচণে নারীর যে গুনের কথা বলা হয়েছে, তার মাঝে সুনিপুণ অভিনয় করতে পারার সক্ষমতাও যে একটা বিশাল গুন, সে কথা কি 'পুরুষ কর্তামশাইরা' কখনো ধরতে পেরেছেন? সংসারে আপাতদৃষ্টির সুখ ধরে রাখার জন্য নারীকে কত ধরনের চরিত্রে যে অভিনয় করতে হয়, সে যদি আমাদের 'ক্ষুরধার বুদ্ধিমান' বাঙালী পুরুষরা বুঝতোই, তাহলে আজ আধুনিক পুরুষদের কাছ থেকে এই মহামুল্যবান 'সবক' শোনা লাগতো না।

আমাদের বুদ্ধিমান মা, চাচী, নানী, দাদীরা কখনো স্বামীর, কখনো ছেলের বা কখনো সমাজের পুরুষদের ইগো তুষ্ট করতে, হয় কখনো অবুঝ, কখনো দূর্বল, কখনো অক্ষমের বা কখনো সুখীর ভুমিকায় অভিনয় করে গেছেন। অভিনয় করতে করতে হয়তো নিজেরাও একসময় বিশ্বাস করে ফেলেছেন। যে মা, চাচীরা কখনো নিজেদের মনের কথা, চাওয়া পাওয়া, অভিযোগ, অনুযোগ প্রকাশ করেই নি বা করার সুযোগও পায়নি, সেই অপ্রকাশিত মতামতকেই পুরুষরা ধ্রুব সত্য বলে ধরে নিচ্ছেন উনারা কত 'সুন্দর সংসার' করেছেন!

আর তাই এ যুগের নারীদের নিয়ে বাঙালী পুরুষদের প্রধান সমস্যাই হচ্ছে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা। পুরুষদের যা কিছু খারাপ তা এখনকার নারীদের মুখ ফুটে বলে ফেলা, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া আর সহ্যের বাইরে চলে গেলে সংসারের বেড়াজাল ছিঁড়ে ফেলে বাইরে বেড়িয়ে আসা।
নিজের খারাপটা শুনতে কারই বা ভালো লাগে। আর আমাদের দেশি পুরুষদের সে অভ্যেস আরও নেই।

তাই মেয়েদের চাকরি করাটাকে যদি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত পুরুষরা ডিভোর্স এর কারন হিসেবে দেখেন আমি তাদেরকে দোষ দেবোনা। বরং এটাই ধরে নেবো যে একজন ভীরু, দূর্বল, পশ্চাদপদ চিন্তার অধিকারী আর আত্মসমালোচনা করতে না জানা পুরুষের যুক্তি এছাড়া আর কিইবা হতে পারে!

আর সাথে সাথে এও ভাবি যে দুনিয়া কোথায় চলে যাচ্ছে, মেয়েরা কোন মহাকাশ, গ্যালাক্সি ঘুরে আসছে আর আমাদের উপমহাদেশের অথর্ব পুরুষরা 'মেয়েরা চাকরী করলে সংসার টিকেনা' এই মন্ত্র জপছে! আচ্ছা এই পুরুষরা কয়দিন পর বিয়ে করার মতো মেয়ে পাবেতো! কারন 'অথর্ব পুরুষ' বিয়ে না করেও যে পরিপূর্ণ জীবন কাটানো যায় এ বুঝ নারীরা অলরেডি বুঝে গেছে। পুরুষরা কি বুঝতে পারছে তাদের 'অথর্বতা'!

©মুনলীন

To all my friends & family who haven’t received any updates on my health for a while. I was actually waiting for this ca...
16/09/2025

To all my friends & family who haven’t received any updates on my health for a while. I was actually waiting for this case study to be published in the journal of Kidney International! I had given my consent to the research team in July 2024 & after a long wait, finally it is out!

For some, this article maybe full of medical jargons! It may also come across dry to read & understand! But the purpose of this publication is to add to the evidence base of my condition & guide clinicians through the decision making process.

https://doi.org/10.1111/nep.70124 (it may not be accessible for everyone. My sister was able to through her University login & shared the PDF with me. Medical professionals, researchers or Uni students & professionals maybe able to accees using their workplace login details).

I'm copy pasting the Abstract of the case study below who are unable to access-

ABSTRACT
Pulmonary-renal syndrome (PRS) caused by double-positive ANCA-associated vasculitis and anti-GBM disease is rare, and management is primarily guided by case series evidence. We present an even rarer case of a 36-year-old female who developed PRS in early pregnancy due to double-positive disease. She required intensive care admission for respiratory support and was treated with high-dose steroids and two doses of rituximab (1 g), achieving a good pulmonary response. However, her renal function subsequently deteriorated. Given the high maternal and foetal risks associated with her condition, she chose to terminate her pregnancy at 8 weeks. A subsequent kidney biopsy revealed crescentic glomerulonephritis secondary to anti-GBM disease. She was treated with plasma exchange and cyclophosphamide, leading to normalisation of her kidney function. She was weaned off prednisone and completed a course of intravenous pulsed cyclophosphamide (500 mg ×6 fortnightly). At 1 year post-diagnosis, she remains in biochemical and clinical remission on maintenance rituximab every 6 months. This case highlights the complexity of managing double-positive disease in pregnancy, where evidence is limited, and decisions require careful consideration of maternal and foetal risks. Furthermore, it underscores the importance of early anti-GBM-specific treatment—plasma exchange and cyclophosphamide—in achieving remission.

Pulmonary-renal syndrome (PRS) caused by double-positive ANCA-associated vasculitis and anti-GBM disease is rare, and management is primarily guided by case series evidence. We present an even rarer ...

আজকে অস্ট্রেলিয়াতে ফাদার'স ডে! সেজন্যই কিনা জানিনা মনে হচ্ছিলো আব্বুকে নিয়ে কিছু লিখি! আব্বু বেঁচে থাকতে কখনো লিখিনি। উই...
07/09/2025

আজকে অস্ট্রেলিয়াতে ফাদার'স ডে! সেজন্যই কিনা জানিনা মনে হচ্ছিলো আব্বুকে নিয়ে কিছু লিখি! আব্বু বেঁচে থাকতে কখনো লিখিনি। উইশও করিনি। এমনকি তার বার্থডেও বেশীরভাগ সময় মনে থাকতো না। আব্বু বেঁচে থাকতে সে যতটা আমাদের সাথে দূরত্ব মেইনটেইন করেছে বা বাবা হিসেবে যতটা অ-বাবাসুলভ আচরণ করেছে, আমরা দুবোনই আসলে ততটাই শীতল কঠিন হয়ে গেছি 'বাবা' শব্দটার ব্যাপারে।

তারমানে যে আব্বুর সাথে আমাদের একদমই যোগাযোগ ছিলো না, তা না! যোগাযোগ, হৃদ্যতা সবই ছিলো অনেকটা স্কুল,কলেজের হাড়িয়ে যাওয়া সেই বন্ধুর মতো! যার সাথে অনেক অনেকদিন পর যখন দেখা হয়, তখন নতুন উচ্ছাসে, মন ভালো করা আড্ডা, গল্পগুজব হয়। আর যখন বিদায় নেয়ার সময় হয় তখন দু'পক্ষই খুব স্বাভাবিকভাবেই জানি যে আবার কবে দেখা বা যোগাযোগ হবে তার ঠিক নেই! বাবা সন্তানের মাঝে চিড়ায়ত দেয়া, নেয়া, মানসিক, অর্থনৈতিক কোন বাধ্যবাধকতা বা প্রত্যাশা ছিলোনা বলে, সেখানে দাবীদাওয়া বা সম্পর্কের অধিকারবোধের অনুভূতিও ছিলো না বললেই চলে!

আব্বুর সাথে আমার ছোটবেলায় একসাথে থাকার স্মৃতি খুব একটা মনে পড়েনা! শুধু একটা ব্যাপার ছাড়া। একদমিই যখন ছোট ছিলাম মানে চার/পাঁচ বছর বয়স। তখন 'হিসু চাপলে' আব্বু থাকলে নিশ্চিন্তে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে পারতাম আমার টয়লেটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য! যত গভীর রাতই হোক না কেন, ঘুম ভাঙানোর জন্য আব্বু কখনোই ঝাড়ি দিতোনা। আর দ্বিতীয় স্মৃতি হচ্ছে, আব্বুর সাথে ঘুমানো। ২০২০ এর জানুয়ারীতে আব্বুর মারা যাওয়ার আগে শেষবার যখন ডিসেম্বরে দেখা হলো, তখনও আমি আর এরিশা একসাথে আব্বুর সাথে ঘুমিয়েছিলাম। আর সকালে বাড়ির পুকুর থেকে ধরা ফ্রেশ মাছভাজা অন্য সবার সাথে আব্বু নিজেও খাচ্ছিলো আর আমাকে কাঁটা বেছে বেছে দিচ্ছিলো খাওয়ার জন্য! এরপর আমি জানুয়ারীতে অস্ট্রেলিয়া চলে আসার আগে, মেজোচাচাকে এয়ারপোর্ট থেকে তুলে, সকাল সাতটা/আটটার দিকে গাড়ি নিয়ে আমার বাসার নিচে এসে ফোন দিয়েছিলো চাচার সাথে দেখা করানোর জন্য। আব্বুকে দেখে হাগ দিতে ইচ্ছে হচ্ছিলো অনেক। কিন্তু জেদ করে দেইনি। কারন আমাকে দেখে আব্বু কেমন লজ্জা মেশানো ভঙ্গীতে হাত মেলানোর মতো করে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো! রাগ হচ্ছিলো সে কেন নিজে থেকে হাগ দিলোনা! ভেবেছিলাম যাওয়ার আগে সে নিজে থেকে ফোন না দিলে, আমিও ফোন করে বিদায় নেবোনা। কিন্তু ফোন দিয়েছিলো আব্বু। ফোন পেয়ে সেই চিড়াচরিত খোঁচা দিয়েছিলাম 'আমার যাওয়ার তারিখ তোমার মনে আছে'! আর আব্বুও কন্ঠে হালকা মনোক্ষুন্নতা এনে বলেছিলো 'কি যে বলোনা! মনে কেন থাকবে না'! এর ঠিক সাতদিন পর, অস্ট্রেলিয়ায়, সকালে কাজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি, তখন খবর পাই 'আব্বু মারা গেছে'!

আমি অসম্ভব কঠিন মনের মানুষ! হয়তো এইজন্য খবরটা শুনে কান্না পায়নি! কাঁদতে যে চাচ্ছিলাম না, তা না। কিন্তু কিছুতেই পারছিলাম না। সব অনুভূতি কেমন দলা পাকিয়ে গলার কাছে এসে আটকে ছিলো! আর মনে হচ্ছিলো আমি বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা। যতই চেষ্টা করি কিছুতেই লাংস সম্পুর্ন অক্সিজেন পাচ্ছে না! আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম নিজের মাঝে আব্বুকে দেখার জন্য। দেখি নাক, ঠোঁট, থুতনি ঠিক তার মতো। আব্বুর সাথে আমার মুখের যে সাদৃশ্য, জিনের যে বৈশিষ্ট সারাজীবন বিরক্তি উদ্রেক করেছে, যে মিল না থাকলেই সবচেয়ে বেশী খুশি হতাম, সে মারা যাওয়ার পর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সেই মিলকেই সবার আগে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেছি। মনে মনে ভাবছিলাম এখনতো সে বেঁচে থাকবে শুধুমাত্র এই মিলগুলোর মাঝেই।

তবে আব্বু মারা যাওয়ার পর কষ্টের চাইতেও বেশি যুদ্ধ করতে হয়েছে নিজের 'conflicting emotions' এর সাথে। আগে ভাবতাম আব্বু মারা গেলেও আমার কিছু যাবে আসবে না। যার সাথে যোগাযোগই তেমন ছিলো না। তার মৃত্যুতে আর কিইবা যাবে আসবে। কিন্তু যায় আসছে তো! খুব অদ্ভুত ভাবেই অনেক কিছু যায় আসছে! আমি তার মৃত্যুতে কষ্ট পেতে চাইছি না! কিন্তু পাচ্ছি তো! কেন! নিজের কাছেই নিজের অনুভূতি অস্বীকার করতে পারি না! কার কাছে গেলে এই দূর্বোধ্য জট খুলবে তাও জানিনা! যে মানুষটার ব্যাপারে আমার এতো রাগ, অভিমান, অভিযোগ, সেই অনুভূতিগুলোকে এখন আমি কোথায় রাখি! এই মানুষটা মারা যাওয়ার সাথে সাথে কেন মনে হচ্ছে, সেই আসলে জিতে গেছে! আর আমি ভীষনভাবে হেরে গেছি! কেন মনে হচ্ছে দূরে বসে সে আমাকে দেখে হাসছে। তার সেই চিরাচরিত ঠোঁট চাপা হাসি! আম্মু বলে আব্বুর মতোই নাকি আমার হাসি! এখন সেই হাসিতেও আমি খুঁজি তাকে। আমি আসলেই আব্বুকে খুঁজি এখন নিজের মাঝে!

যদিও সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু এখন সহজ হয়ে গেছে। Conflicting Emotions কেও অনেকটাই আয়ত্তে এনে ফেলতে পেরেছি। কিন্তু তারপরও মাঝে মাঝেই মনে হয় আমি আব্বুকে মিস করি। কথার খোঁচায় ঘায়েল করার জন্য হলেওতো কাউকে লাগে! হঠাৎ হঠাৎ আব্বুকে স্বপ্নেও দেখি। কোনোটা মনে থাকে। কোনোটা থাকেনা। লাস্ট যখন আব্বুকে দেখেছিলাম, মনে হচ্ছিলো সে ভালো আছে। নিশ্চিন্তে, নির্ভাবনায়, আনন্দে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলো!
তারপর থেকে আমারও ভাবতে ভালো লাগে যে মৃত্যু মানেই হয়তো খুব ভয়ংকর কিছুনা। মৃত্যু মানেই সব শেষ হয়ে যাওয়া না। আব্বু এই ভুবনে ইতি টেনে, অন্য ভুবনে আবার শুরু করেছে। হয়তো সেই অদেখা ভুবনের জীবনটা, এই মানব জীবনের চাইতেও বেশি আনন্দের!
হ্যাপী ফাদার'স ডে, আব্বু!💖

©মুনলীন

 #লন্ডনজীবন১৯আমাদের বিয়ের একদিন পর ওমর নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ফ্লাই করে ওর বাবা মা'র সাথে দেখা করার জন্য! ওইভাবে প্ল্যান ক...
05/09/2025

#লন্ডনজীবন১৯

আমাদের বিয়ের একদিন পর ওমর নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ফ্লাই করে ওর বাবা মা'র সাথে দেখা করার জন্য! ওইভাবে প্ল্যান করেই ও অস্ট্রেলিয়া থেকে টিকেট করে এসেছিলো! আমাদের বিয়ের ডেইট ফিক্স করার ইচ্ছে ছিলো জুন এর শেষ বা জুলাই এর শুরুর দিকে। কিন্তু আমার সেমিস্টার ফাইনালের এক্সাম, মেজো মামার জাপান থেকে আসার একটা পসিবিলিটি, আর রেস্টুরেন্ট বুকিং এর জন্য এভেইলেবেল ডেইট পেতে পেতে বিয়ের তারিখ গিয়ে ঠেকেছিলো বিশ জুলাইতে!

ওর এই যাওয়ার ব্যাপারটা আগে থেকে জানলেও, যাওয়ার পর থেকে কেন যেন ভীষন রাগ লাগতে থাকে। কেমন একটা কনফিউজিং রাগ! একদিকে মনে মনে নিজেকে বলতাম আমিতো আগে থেকেই জানতাম এই যাওয়ার ব্যাপারটা! আবার পরক্ষণেই মনে হতো, আমাকে রেখে ওখানে গিয়ে নিজে খুব ফুর্তিতে আছে! আবার মনে হতো, আচ্ছা, বিয়েতো করলাম। কিন্তু ওমরকে কেন 'হাজব্যান্ড' মনে হয়না! তারমানে কি বিয়েটা ঠিকঠাক করিনি! আবার নিজেকে এ প্রশ্নও করছি, বিয়ে যে করেছি তার অনুভূতি আসলে কেমন হওয়া উচিৎ! সিনেমা, টিভিতে সেলিব্রিটিদের মুখে শুনি বিয়ের পরের অনুভূতি নাকি অন্যরকম হয়! কিন্তু আমার কেনো হচ্ছে না! আবার শুনি বিয়ের পর নাকি হাজব্যান্ডরা ওয়াইফের সব দায়িত্ব নেয়! ওয়াইফদেরও নাকি টাকাপয়সা সবকিছু হাজব্যান্ডের কাছে চাইতে হয়! এইটা কিভাবে সম্ভব! আমিতো মরে গেলেও কোনদিন ওমরের কাছে টাকা চাইতে পারবো না! নিজের বাবার কাছেই যেখানে চাইনি, হাজব্যান্ডতো অনেক পরের ব্যাপার! এমন নানারকম অনুভূতির সাথে যুদ্ধ করতে করতে, ফোনেও ওমরের সাথে প্রতিদিন ঝগড়া করতাম। আর ওমর বাসায় না থাকলে, শ্বাশুড়ির সাথে অনেক গল্প হতো ফোনে।

এর মাঝেই কনফার্মেশন পেয়ে গিয়েছিলাম যে মেজোমামার পরিবর্তে এরি মামী আমার আর ওমরের সাথে দেখা করার জন্য লন্ডন আসছে। মামী আসবে মাত্র পাঁচ দিনের জন্য! কিন্তু মামী আর ওমর যখন লন্ডন আসবে ততদিনে আমার আবার ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। যাইহোক পরের মাসে খুব বেশি কাজে যেন সময় দেয়া না লাগে এইজন্য আমিও যখনই ওভারটাইম পেতাম, কাজ করতাম। আর যেদিন কাজ থাকতো না সেদিন ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়াশোনা করতাম! লাইব্রেরিটায় ঢুকলেই মন ভালো হয়ে যেতো! মনে হতো বই এ কতবার এই লাইব্রেরির কথা পড়েছি! আর এখন নিজে সেই লাইব্রেরিতে বসে পড়ার সুযোগ পাচ্ছি! আমিতো আসলেই ভাগ্যবান!

যাইহোক, এক মাস পর ওমর যেদিন লন্ডন ব্যাক করলো সেদিন ওর ক্লান্ত, উদভ্রান্ত চেহারা দেখে মনে হচ্ছিলো 'হুদাই পেরেশানি' বেশি দিয়ে ফেলেছি! ওকে দেখেই ভীড়ের মাঝে দৌড়ে গিয়ে একটা হাগ দিয়েছিলাম। ও এসে কয়েকদিন রেস্ট নিতে না নিতেই এরি মামীর আসার সময় ঘনিয়ে এসেছিলো। আমার ক্লাস থাকায়, ওমরই মামীকে এয়ারপোর্ট থেকে পিক আপ করতে গিয়েছিলো! মামীকে মেইলে আগে থেকেই বলে দিয়েছিলাম ওমর কোন কালারের শার্ট পড়ে যাবে। দুইজনেরই যেহেতু প্রথম দেখা হবে তাই একটু চিন্তায় ছিলাম ঠিক মতো চিনতে পারে কিনা।

আর আমি নিজেই যেহেতু তখন পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকি, তাই মামীকে বলেছিলাম বাসার কাছাকাছি কোন একটা হোটেল নিতে। যেন সহজেই হেঁটে গিয়ে দেখা করা বা মামীকে নিয়ে বের হওয়া যায়! মনে আছে ওমর মামীকে হিথ্রো থেকে পিক আপ করে একদম ইস্ট হ্যামের কাছে মামীর বুকিং দেয়া হোটেলে ড্রপ করে আসে। মামী জাপান থেকেই বুকিং দিয়ে এসেছিলো। খুব সম্ভবত Premier Inn বা Holiday Inn! হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে পৌঁছাতে তিন/চারটা বেজে যায়! মামী টায়ার্ড থাকায় ফোনে কথা বলে রেস্ট নিতে বলি। আর আমার ক্লাস শেষ করে বাসায় যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তাই বলি একবারে পরদিন সকালে গিয়ে দেখা করবো!

তবে সত্যি কথা হচ্ছে মামীকে নিয়ে ওইসময়ের কথা আমার খুব বেশি মনে পড়ে না। কারন আমি মামীকে একটুও টাইম দিতে পারিনি ক্লাস আর কাজের ব্যাস্ততায়! পুরোটা সময় ওমর মামীকে নিয়ে লন্ডন ঘুরিয়ে দেখিয়েছে! জীবনে প্রথম তাদের দেখা হলেও ওমর আর মামী দুইজনই একজন আরেকজনের সাথে ভালো মিশে গিয়েছিলো! ওমরও আগ্রহ নিয়ে মামীকে সবকিছু ঘুরিয়ে দেখিয়েছে! মামীকেও দেখতাম খুব এঞ্জয় করছে লন্ডন! মামী অবশ্য আগে থেকেই ঘুরাঘুরি, নতুন জায়গা, নতুন মানুষ এসব কিছুই অনেক আগ্রহ নিয়ে এক্সপ্লোর করতে পছন্দ করে। একবার মনে আছে সবাই মিলে বাকিংহাম প্যালেসে ঘুরতে গিয়েছি, তখন মামীকে জিগ্যেস করেছিলাম ওমরকে তার কেমন লেগেছে! মামী বলেছিলো 'He is a good man! Has good heart'! তখন ধরে নিয়েছিলাম মামী হয়তো ভদ্রতা করে বলেছে। মামীকে সময় দিচ্ছে বলে! কিন্তু জীবনের এতো বছর পার করে, এতো মানুষের বহুরূপীতা দেখে, এখন উপলব্ধি করি সম্পুর্ন ভীনদেশি, ভিন্নভাষী মানুষ হয়েও, মামী মানুষ চিনতে ভুল করেনি!

মামী জাপানে ব্যাক করার পর আর অল্প কয়েক সপ্তাহ যে সময় পেয়েছিলাম, তখন আমরা নিজেরাই যতটুকু সময় পেয়েছি লন্ডনের ভেতরই এদিক সেদিক ঘুরেছি! ইনফ্যাক্ট লন্ডনে আমার যতটুকু ঘুরাঘুরি সেটা ওমরের সাথেই! তখনই যাওয়া হয়েছিলো মাদাম তুসোর জাদুঘরে। সে সময় বেশ ভালোই ছিলো টিকিটের দাম। কিন্তু দারুন লেগেছিলো তারকাদের মোমের মুর্তিগুলো! ২০০৭ এ যখন মিউজিয়ামে শাহরুখ খানের মূর্তি স্তাপন করা হয়েছিলো তখন খবরটা পত্র পত্রিকায় বেশ আলোরন তুলেছিলো! তখনই ভেবে রেখেছিলাম যাবো! ফাইনালি যখন গেলাম তখন শাহরুখের সাথে ছবি তুলতে ভুল করিনি। তবে মজা লেগেছে যখন দেখলাম মিউজিয়ামের অন্য সব এরিয়া থেকে বলিউড এরিয়াতে ভারতীয়দের ভীড় বেশি! পারলে ধাক্কাধাক্কি করে শাহরুখ, অমিতাভ, ঐশ্বরিয়ার মুর্তির সাথে ছবি তুলে। তো আমরাও বলিউড সেলিব্রিটিদের সাথে কোনরকমে ছবি তোলা শেষ করে, হলিউড আর ব্রিটিশ সেলিব্রিটিদের দিকে নজর দিলাম। প্রচুর ছবি তুলে ক্লান্ত হয়ে শেষমেশ বাড়ির পথ ধরলাম।

তবে ওমর ওর প্রথম লন্ডন ট্রিপে বেশিরভাগ সময় একা একাই সব জায়গায় গেছে। ইনফ্যাক্ট ওর দু'মাসের লন্ডন ভিজিটে যতটুকু ঘুরে দেখেছিলো, আমি নিজেও ততদিনে অতোটা ঘুরিনি। এভাবেই দেখতে দেখতে ওরও অস্ট্রেলিয়াতে ফেরার সময় ঘনিয়ে এসেছিলো। তারপর সেপ্টেম্বরের শুরুতে, আমার গ্র‍্যাজুয়েশনের সময় ব্যাক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সত্যি সত্যিই একদিন বিদায় নিলো।

©মুনলীন (চলবে)

Address

Barangaroo, NSW

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Shabz Diary posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Shabz Diary:

Share