25/06/2025
সমাজে একজন পুরুষের পরিচয় অনেকাংশেই নির্ধারিত হয় তার আর্থিক সামর্থ্য দিয়ে। টাকাই যেন একমাত্র মানদণ্ড, যার ভিত্তিতে বিচার হয় তার মর্যাদা, সম্মান, দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব। একদিকে পরিবার, অন্যদিকে সমাজ—সব জায়গায় একজন পুরুষকে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হয়, আর সে পরীক্ষার প্রধান শর্তই হলো “টাকা”। টাকা না থাকলে পুরুষের জীবন হয়ে ওঠে ভয়ংকর রকমের অসুন্দর, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অবহেলিত।
টাকা ছাড়া পুরুষকে প্রথম যে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়, তা হলো পরিবারের চাহিদা পূরণে ব্যর্থতা। সন্তানের স্কুল ফি, বাজারের খরচ, অসুস্থ বাবার ওষুধ, স্ত্রীর নতুন শাড়ি—সবই যেন এক একটা বোঝা হয়ে কাঁধে চেপে বসে। টাকা না থাকলে মুখ নামিয়ে রাখতে হয়, কারণ তখন তার কথা শুনবে না কেউ। এমনকি ভালোবাসার মানুষটিও মাঝে মাঝে অভিযোগের তীর ছুড়ে দেয়, যা পুরুষের ভেতরটা চুরমার করে দেয়।
সমাজেও টাকা ছাড়া একজন পুরুষকে প্রায়ই মূল্যহীন মনে করা হয়। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী—সবার চোখে তখন সে একজন ‘ব্যর্থ’ পুরুষ। তার সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না, কথাকে পাত্তা দেওয়া হয় না। আর কেউ যদি বলেও, “টাকা দিয়ে কি সব হয়?”—তবুও বাস্তবতা হলো, টাকা না থাকলে কিছুই হয় না। কারণ এ সমাজ অনুভূতির আগে দামে বিশ্বাস করে।
আরও কষ্টকর হয় তখন, যখন একজন পুরুষ নিজের স্বপ্ন, ভালোবাসা, প্রতিভা কিংবা ইচ্ছেগুলোকে ত্যাগ করতে বাধ্য হয় শুধুমাত্র টাকার অভাবে। একসময় সে নিজের ভালো লাগা, নিজের প্রয়োজন, এমনকি নিজের পরিচয়ও হারিয়ে ফেলে। অথচ, সেই পুরুষটাই হয়তো রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটায়, কীভাবে টাকা আয় করা যায়, কীভাবে সংসার বাঁচানো যায় সেই চিন্তায়।
টাকা সব কিছু নয়—এটি নিঃসন্দেহে সত্য, তবে আজকের বাস্তবতায় টাকা ছাড়া পুরুষের জীবন একটি যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে সে প্রতিদিন হারে সম্মান, ভালোবাসা আর নিজের অস্তিত্ব। তাই টাকাকে অপমান না করে, বরং তা উপার্জনের পবিত্রতা ও প্রয়োজনকে সম্মান জানানোই শ্রেয়।
পরিশেষে বলতেই হয়, সমাজের মূল্যায়ন পেতে হলে, নিজের আত্মমর্যাদা টিকিয়ে রাখতে হলে, একজন পুরুষের টাকার প্রয়োজন হয়—এটা বিলাসিতা নয়, বরং বেঁচে থাকার এক নির্মম প্রয়োজন। টাকা না থাকলে সে শুধু দরিদ্রই নয়, বরং হয়তো সবচেয়ে অবহেলিত এক জীবন্ত মানুষ!
#জীবন_চক্র