15/09/2023
সামান্য কথা কাটাকাটির জের ধরে রাউজানের কদলপুরের একটি মুরগীর খামারে কর্মরত কয়েকজন যুবক সেই খামারের ম্যানেজার শিবলী সাদিক হৃদয় নামে একজন তরুণকে নৃ*শংসভাবে হ*ত্যা করেছে। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, এলাকার সকলের কাছে একজন ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল হৃদয়। অত্যন্ত বর্বরোচিত এই ঘটনা চট্টগ্রাম সহ সারাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। কাঁদছে বাংলাদেশের মানুষ। কাঁদছে হৃদয়ের পরিবার৷
ছবিতে যাকে দেখতে পাচ্ছেন, সে হল মুরগীর খামারে কর্মরত সহকর্মীদের একজন। যে কিনা হৃদয়কে হ*ত্যা করার পর তার শরীর থেকে মাংস তুলে তার কং*কাল ও হাড়টি গর্বের সাথে ধরে দেখাচ্ছে।
এ ধরনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে হয়তো গুনাহের কাজ করছি। কিন্তু এই মানুষগুলোকে বাংলার মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়া দরকার। যাতে আমরা জানি ও বুঝি যে, সমাজে মানুষের ছদ্মবেশে অনেক অমানুষও বাস করে। শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ার কারণে বর্তমানে আমি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি৷ আমার এমন অবস্থার মধ্যেও গত কয়েকদিন ধরে আমার বাবাকে অনেক দুশ্চিন্তার মধ্যে কাটাতে দেখেছি। কখনো সেনাবাহিনী, কখনো র্যাব বা কখনো পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে দেখেছি। আবার বান্দরবানের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সাথেও তিনি যোগাযোগ করেছেন। বাবার এমন বিচলিত অবস্থা আমি বসে বসে দেখছিলাম। হৃদয়কে অপহরণের পর বান্দরবানের একটি দুর্গম এলাকায় নিয়ে গিয়ে তার হৃদয়ের বাবার কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছিল। তাই বান্দরবানের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথেও আমার বাবা যোগাযোগ করেছিলেন।
এরপরও হৃদয়কে হ*ত্যার পর কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। তবে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী সাথে না থাকলে দুর্ধর্ষ খুনিদের গ্রেফতার করা কখনো সম্ভব ছিল না, তা আমি নিজের চোখে দেখেছি।
পুলিশের গাড়ীতে করে যখন আসামীদের ধরে নিয়ে আসা হচ্ছিল, তখন উত্তেজিত জনতা আর নিজেদের থামিয়ে রাখতে পারে নি৷ দেশের আইন ভঙ্গ করে পুলিশের উপর আক্রমণ করে পুলিশের গাড়ি ভাংচুর করে হৃদয়ের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত একজন আসামীকে ছিনিয়ে নিয়ে এমনভাবে মেরে ফেলেছে যে তার শরীরের কোন অংশ অক্ষত অবস্থায় নেই৷
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ বাদী হয়ে জনতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এই মামলা গুলোর মধ্যে রয়েছে পুলিশের উপর হামলা, পুলিশের গাড়ী ভাংচুর ও আসামী ছিনিয়ে নিয়ে হ*ত্যা করার মামলা। আমি দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পুলিশ ভাইদের অনুরোধ স্বরূপ জানাতে চাই, আপনাদের উপর হামলার ঘটনায় সাধারণ জনতার পক্ষ থেকে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। সেই সাথে সাধারণ জনতার বিচার করার সময় একটু সুনজর দেওয়ার আহবান করছি। আইন সবকিছুর ঊর্ধ্বে, তবে অনেক সময় মানুষের আবেগও অনেক বড় একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। সাধারণ মানুষও তার কর্মব্যস্ত জীবনে ফিরে যাবে। এই পৃথিবী হয়তো কিছুদিন পর আরো নির্মম কোন ঘটনার কারণে এই হৃদয়কে ভুলে যাবে। তবে হৃদয়ের পরিবারের হৃদয় থেকে এই নির্মম হ*ত্যাকান্ডের কষ্ট কখনো মুছে যাবে না।
আমি শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়া মাত্রই হৃদয়ের পরিবারের পাশে দাঁড়াবো। হয়তো এখন আর কিছুই করতে পারবো না। কারণ আমরা হৃদয়কে বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছি। তবে সন্তান হারানো সেই মায়ের কাছ থেকে কিছু কথা শুনে যেন তার কষ্টটা একটু হালকা করতে পারি, সেই দোয়াই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে কামনা করছি।