07/09/2025
সূরা কাউসার আমরা পড়ি ঠিকই… কিন্তু আমরা কি আসলেই বুঝি আল্লাহ কী বলছেন?
একটা ছোট্ট সূরা কাউসার। মাত্র তিনটা আয়াত।
কিন্তু এর ভেতরে এমন গভীর বার্তা আছে, যেটা পুরো দুনিয়া আর আখিরাতের হিসাবটাই পাল্টে দিতে পারে।
আমরা নামাজে এটা পড়ি, কিন্তু খুব তাড়াহুড়া করে, পড়ি শুধু শেষ করার জন্য।
অথচ এখানে আল্লাহ আমাদের জন্য রেখেছেন সুসংবাদ, আবার ভয়ঙ্কর সতর্কবার্তাও।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উপর যখন সূরাটা নাযিল হলো, উনি তখন অনেক খুশি হইলেন।
কারণ উনি বুঝলেন, আল্লাহ সরাসরি ভ্যালিডেশন দিচ্ছেন—“তুমি ঠিক পথে আছো।”
এখন প্রশ্ন আমরা যখন পড়ি, তখন আমরা কি এই ভ্যালিডেশনটা পাই? আমরা কি কোরআনের পথে আছি?
যদি হ্যাঁ, তাহলে এই সূরা আমাদের জন্য সুসংবাদ।
যদি না, তাহলে এই তিনটা আয়াতই আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর সতর্কবার্তা।
এখন আসি প্রথম দুই আয়াতের দিকে, প্রথম আয়াতে আল্লাহ আমাদের মুমিন বান্দাদের জন্য সুসংবাদ দিচ্ছেন।
মানে, যারা সত্যি আল্লাহর পথে, যারা অন্তরে আল্লাহকে রাখে, তাদেরকে তিনি নিশ্চয়তা দিচ্ছেন তাদের হারানোর কিছু নাই।
তাদের অন্তরে শান্তি, ভেতরের সুখ, আধ্যাত্মিক সফলতা নিশ্চিত। এটা একদম ভ্যালিডেশন—“তুমি যা করছো, তুমি ঠিক পথে আছো।”
দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ আমাদের রিমাইন্ড যে, আমরা যেন সূরা মাউনের ওই দুর্বল সালাত আদায়কারীদের মতো না হই।
আমাদের নামাজ, আমাদের কোরবানী, আমাদের দোয়া, আমাদের চ্যারিটি—সব কিছুই হোক একদম ফোকাসড, এখলাসের সাথে, কেবল আল্লাহর জন্য।
আমাদেরকে বুঝতে হবে, শুধু পড়লেই হবে না, আমাদের ইবাদতে সেটা ব্যবহার করতে হবে।
তিন নম্বর আয়াতে আল্লাহ খুব ক্লিয়ার করে দিলেন—যারা ইসলামকে ঘৃণা করে, যারা আল্লাহকে মানে না, তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
তারা শিকড় ছাড়া গাছের মতো হয়ে যাবে এই দুনিয়ায়ও ব্যর্থ, আখিরাতেও ব্যর্থ। দিনের শেষে তাদের কাছে টাকা থাকবে, সম্মান থাকবে, নাম থাকবে, কিন্তু ভেতরে শান্তি থাকবে না।
তারা যত ভোগ করুক, যত উপভোগ করুক, তাও সবসময় এক ধরনের শূন্যতা নিয়ে ঘুরবে।
আর আমাদের জন্য আল্লাহর নির্দেশনা কী? *“ফাসল্লি লি রাব্বিকা”—*মানে নামাজ হবে শুধু আল্লাহর জন্য। শুধু সালাত না, আমাদের কোরবানী, আমাদের ইবাদত, আমাদের চ্যারিটি—সব কিছুই যেন হয় খুব ফোকাসড, একদম এখলাসের সাথে।
এই জায়গায় একটা ভেবে দেখার মতো বিষয়—আমরা নামাজ পড়ি তাড়াহুড়ো করে, অনেক সময় শুধু শেষ করার জন্য। অথচ এটাই সেই সূরা, যেটা পড়তে গিয়ে আমাদের থেমে ভাবা উচিত ছিল, আল্লাহ আমাদের কী বলছেন।
ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলছেন—সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো, আল্লাহর শত্রুরা কোনোদিন সালাতের মজা পায় না, কোনোদিন ইবাদতের সুখ পায় না। তারা ভেতরে সবসময় খালি।
কিন্তু যে বান্দার অন্তরে আল্লাহ আছে—সে দুনিয়ায় গরিব হোক, কুঁড়েঘরে থাকুক বা জেলে থাকুক—দিনের শেষে সেজদায় সে শান্তি খুঁজে পাবে।
সো, আসল সফলতা হলো আল্লাহর ভালোবাসা। যদি সেটা অন্তরে থাকে,তাইলে সব কিছু ঠিক থাকবে। আর যদি সেটা না থাকে, দুনিয়ার সব অর্জন নিয়েও আপনি ব্যর্থ।
আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে এই সূরা কাউসারের মর্ম বোঝার, নামাজে এর স্পিরিট ধরে রাখার এবং কেয়ামতের দিনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাত থেকে আল কাউসারের পানি পান করার তৌফিক দেন, আমীন।