23/07/2025
পিসিওএস: ওজন কমানোই একমাত্র সমাধান নয়
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (পিসিওএস) একটি জটিল হরমোনজনিত সমস্যা, যা শুধুমাত্র ওজন বেড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী নয় বরং একে ঘিরে থাকে আরও গভীর কিছু শারীরবৃত্তীয় অসামঞ্জস্য। প্রায়শই চিকিৎসা ও পরামর্শে ওজন কমানোকে প্রধান উপায় হিসেবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ চিত্রটি তুলে ধরে না। কারণ, পিসিওএস শুধুমাত্র শরীরের ওজনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় — এটি মূলত ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, দেহের প্রদাহ এবং অস্বাস্থ্যকর অন্ত্রের অবস্থার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স: হরমোন ভারসাম্য নষ্টের মূল সূত্র
পিসিওএস আক্রান্ত নারীদের প্রায় ৭০-৮০ শতাংশের দেহে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স দেখা যায়। অর্থাৎ, শরীরে ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইনসুলিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত ইনসুলিন আবার অ্যান্ড্রোজেন (পুরুষ হরমোন) হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে অনিয়মিত পিরিয়ড, ব্রণ, ও মুখে বা শরীরে অস্বাভাবিক লোম গজানোর মতো সমস্যা দেখা দেয়। ওজন কমানো অবশ্যই ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কিছুটা উন্নত করতে পারে, তবে এটি একমাত্র সমাধান নয়।
প্রদাহ: নীরব বিপদ
পিসিওএসের পেছনে নিম্নমাত্রার দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ (chronic low-grade inflammation) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই প্রদাহ হরমোন ভারসাম্য আরও বিঘ্নিত করে এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সকে আরও জোরালো করে তোলে। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক পিসিওএস রোগীর রক্তে C-reactive protein (CRP) এর মতো প্রদাহ সূচক বেশি থাকে, এমনকি তারা যদি অতিরিক্ত ওজনের না-ও হয়।
অন্ত্রের স্বাস্থ্য: হরমোনের গোপন রক্ষাকর্তা
সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, অন্ত্রের স্বাস্থ্য বা gut microbiome-এর ভারসাম্য পিসিওএসের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। হরমোন নিঃসরণ, প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ এবং ইনসুলিনের প্রতি দেহের প্রতিক্রিয়া — সবকিছুর সঙ্গেই এই অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াগুলি যুক্ত। যখন অন্ত্রে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বেড়ে যায় এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া কমে যায়, তখন হরমোন ভারসাম্য আরও নষ্ট হতে থাকে।
ওজন না কমিয়েও হরমোন ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব কীভাবে?
যদিও ওজন কমানো অনেক ক্ষেত্রে উপকারি, তবুও শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে — বিশেষ করে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে — হরমোনের ভারসাম্য আনা সম্ভব।
• অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার যেমন — বিভিন্ন ধরনের রঙিন ফলমূল, সবজি, অলিভ অয়েল, বাদাম, চিয়া সিড, ফ্যাটি ফিশ (যেমন স্যামন) ইত্যাদি দেহের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
• ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন — ওটস, শাকসবজি, ডাল, ব্রাউন রাইস, ফলমূল ইত্যাদি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়।
এইসব খাদ্য উপাদান প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ধীরে ধীরে কমে আসতে পারে, অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত হয়, এবং হরমোন ভারসাম্য আবার স্থাপন করা যায় — এমনকি শরীরে বিশেষ কোনো ওজন পরিবর্তন ছাড়াও।
উপসংহার
পিসিওএসের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ওজন কমানোকে কেন্দ্র করে নয়, বরং দেহের ভিতরকার জটিল প্রক্রিয়াগুলোর ওপর নজর দেওয়া প্রয়োজন। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, প্রদাহ এবং অন্ত্রের ভারসাম্য — এই তিনটি বিষয়েই সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, বিশেষ করে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, প্রতিদিনের জীবনধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে পিসিওএসের উপসর্গ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব — এমনকি দৃশ্যমান ওজন হ্রাস ছাড়াও।
⸻
🔹 “পিসিওএস, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা ওজন সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার জন্য ব্যক্তিগত ও বিজ্ঞানভিত্তিক ডায়েট পরিকল্পনা পেতে মেসেজ করুন এখনই — Diet & Discipline-এর পক্ষ থেকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। 💬🍽️”
🔹 “নিজের শরীর অনুযায়ী সঠিক ডায়েট গাইডলাইন পাওয়ার জন্য মেসেজ করুন । ব্যক্তিগত পরিকল্পনা Diet & Discipline- থেকে করে দেওয়া হবে। 📩”
⸻