13/04/2025
বর্ষাকালীন মরিচ চাষ পদ্ধতি
🌓জলবায়ু:
মরিচ গ্রীষ্মপ্রধান জলবায়ু উপযোগী ফসল ডিসেম্বর- জানুয়ারীতে নিম্ন তাপের কারণে গাছের বৃদ্ধি কিছুটা ব্যাহত হয় ও অতিরিক্ত ঠান্ডায় মরিচের ঝাঁঝ কমে যায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে (২০°-৩০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায়) সঙ্গে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক হতে থাকে।
তাপমাত্রা ১৫° সেলসিয়াসের নিচে বা ৩৫° সেলসিয়াসের বেশী হলে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন সাধারণত কমে যায়। দেশের যে সমস্ত অঞ্চলে ৭৫ সে.মি. থেকে ১০০ সে.মি. বৃষ্টিপাত হয় এবং মাঝে মাঝে রোদ ও বৃষ্টি হয় সে সব অঞ্চলে মরিচ খুব ভালো হয়। ফসলের প্রাথমিক অবস্থায় অল্প বৃষ্টিপাত এবং ফসলের বৃদ্ধির সময় পরিমিত বৃষ্টিপাত হলে মরিচ খুব ভাল জন্মে।
◼️মাটি:
পানি নিস্কাশন সুবিধাযুক্ত বেলে দোঁআশ থেকে এঁটেল দোঁআশ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ উর্বর দোঁআশ মাটি উত্তম। ক্ষারীয় মাটিতে ফলন ভালো হয় না। মাটির পিএইচ ৬.০ থেকে ৭.০ হলে উৎপাদন ভালো হয়।
🌶️জাত:
বারি মরিচ ২, বিজলী প্লাস, সানড্রপ, নাগা ফায়ার, মরিচ সুপার, মধুমতি, গ্রীণ ফায়ার, উল্কা, সুপার হট, সনিক, মোহনা এছাড়াও সনিক, প্রিমিয়াম, ধুম, মেজর, ডেমন, চন্দ্রমুখী, হটমাস্টার, এম এস ফায়ার, যমুনা প্রভৃতি জাত রয়েছে।
🌱চারা উৎপাদন পদ্ধতি:
বীজতলার উপরের মাটিতে বালি ও পঁচা গোবর দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে চারা উৎপাদন অথবা সরাসরি মুল জমিতে বীজ বপন
🌶️বীজ শোধন:
বীজ বপনের পূর্বে কার্বোডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজতলার চারপাশে সেভিন ডাস্ট ছিটিয়ে দিতে হবে। বীজতলা পলিথিন বা চাটাই দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
◼️মাটি শোধন:
বীজতলার উপরের ৩-৪ সেন্টিমিটার ধানের খড়ের স্তর তৈরী করে পুড়িয়ে মাটি শোধন করতে হবে।
👉বীজ বপনের সময়:
শীতকালীন- ভাদ্র-আর্শ্বিন মাসে বীজ বপন করতে হবে
বর্ষা মৌসুমে- ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বীজ বপন করতে হবে।
বীজহার:
রবি মৌসুমে সরাসরি বীজ বপন করলে বিঘা প্রতি ৩৫০-৪০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
বীজতলায় চারা উৎপাদন করে লাগালে ১২০-১৩০ গ্রাম বীজ দরকার।
👉জমি চাষ:
মাটির প্রকারভেদে জমিতে ৪-৬ টি চাষ ও মই দিতে হয়। শেষ চাষের সময় সুপারিশকৃত মাত্রায় গোবর, টিএসপি ও জিপসাম, পটাশ, জিংক, বোরন মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
👉বেড তৈরি:
জমিতে ১ মিটার প্রস্থ ও লম্বায় জমির অবস্থান মত বেড তৈরি করতে হবে। পানি সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধার্থে বেড ২০ সে.মি. উঁচু হবে ও দুই বেডের মাঝে ৩০ সে.মি. নালা থাকবে।
🌱চারার বয়স:
৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা অথবা, মোটা কান্ড ও ৪-৫ পাতা বিশিষ্ট চারা লাগানোর জন্য উত্তম।
🌱চারা রোপণ দুরত্ব:
মূল জমিতে সারি থেকে সারি দুরত্ব ৫০ সে: মি: চারা থেকে চারার দুরত্ব ৪০ সে.মি.
🌱চারার পরিচর্যা:
বাঁশের চাটাই বা পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিতে হবে।
বীজ লাগানোর পর চারা বের না হওয়া পর্যন্ত নেটের উপর ঝরনা দিয়ে সেচ দেয়া আবশ্যক।
চারা গজালেই ইনসেক্টপ্রুফ নেট দিয়ে চারা ঢেকে দিতে হবে।
চারা রোপন মুহুর্তে পানি সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
বীজতলার আগাছা নিড়ানি দিয়ে উঠিয়ে ফেলতে হবে।
চারা তোলার আগের দিন বীজতলায় হালকা সেচ দিলে মাটি নরম হয়।
🔹🔹সারের পরিমানঃ (শেষ চাষের সময়)
শেষ চাষের সময় বিঘা প্রতি-৩৩ শতকে
গোবর ২০০০ কেজি
ইউরিয়া ২৮ কেজি
টিএসপি- ৪৪ কেজি
এম ও পি- ২৫ কেজি
জিপসাম- ২০ কেজি
জিংক ১.৫ কেজি
বোরন ১ কেজি
🔹🔹সার প্রয়োগ পদ্ধতি:
জমি তৈরি সময় সমস্ত গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক(আলাদাভাবে), বোরন ও এক-তৃতীয়াংশ এমওপি প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপনের ২৫ দিনে:
বিঘা প্রতি ইউরিয়া ১০ কেজি পটাশ ৮ কেজি
চারা রোপনের ৫০ দিনে:
বিঘা প্রতি ইউরিয়া ১০ কেজি পটাশ ৮ কেজি
চারা রোপনের ৭৫ দিনে:
বিঘা প্রতি ইউরিয়া ১০ কেজি পটাশ ৮ কেজি
💧সেচ:
রসের ঘাটতি থাকলে সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে সেচ কম সেচ লাগে।
মরিচ অতিরিক্ত পানি সয় না তাই অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করতে হবে।
সেচের প্রয়োজনীয় মাটির পানি ধারন ক্ষমতা ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। সেচের কয়েক দিন পর মাটিতে চটা দেখা যায়। এই চটা ভেঙ্গে দিতে হবে যাতে শিকড় প্রয়োজনীয় আলো ও বাতাস পায়। এতে গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
🔰হরমোন প্রয়োগ:
ভালো মানের একটা পিজিআর ব্যবহারে মরিচের ফুল কম ঝরে এবং ফলন বাড়ায় ফুল আসার সময় ও তার ২০-২৫ দিন পরে আরেকবার স্প্রে করতে হবে।
🌶️ফসল সংগ্রহ:
মরিচ কাঁচা অথবা পাকা অবস্থায় তোলা হয়। চারা লাগানোর ৩৫- ৪০ দিন পর গাছে ফুল ধরতে শুরু করে, ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে ফল ধরে। ৭৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ফল পাকতে আরম্ভ করে। প্রথম ও দ্বিতীয় বারের সংগৃহীত ফসল কাচা মরিচ হিসাবে গণ্য করা হয়। পরের মরিচ পাকা (লাল রং) হিসাবে সংগ্রহ করা হয়।
Chandra Prakash কৃষি তথ্য উপজেলা কৃষি অফিস লামা পাহাড়ি কৃষি খামার কৃষিকথা Agriculture farmer