06/06/2023
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতিও অকৃতজ্ঞ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮১১)
জীবনযাত্রার নানান ঘটনার চাপে সবাই কমবেশি অকৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে।
গত এক সপ্তাহের ঘটনাগুলো যদি মনে করেন, তবে কমপক্ষে একটা এমন ঘটনা পাবেন যেখানে একজন মানুষ আপনাকে সাহায্য করেছে কিন্তু বদলে তাকে তার প্রাপ্য সম্মান বা ধন্যবাদটুকু দেওয়ার সুযোগ হয়নি।
কিছু ক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে না পারলেই যে আপনি অকৃতজ্ঞ হিসেবে গন্য হবেন তা কিন্তু নয়। তবে কিছু মানুষ আছেন যারা সর্বক্ষেত্রেই অকৃতজ্ঞ।
এই মানুষগুলো মনে করে নেন অন্যদের সাহায্য পাওয়াটা তার অধিকার এবং সেজন্য ওই ব্যক্তিকে ধন্যবাদ দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আবার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণেও একজন মানুষ সাময়িকভাবে অকৃতজ্ঞ হয়ে উঠতে পারে।
এই দুধরনের মানুষের মধ্যে তফাৎ খুঁজে পাওয়াটা মুশকিল।
মানসিক স্বাস্থ্য-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অবলম্বনে জানান হল অকৃতজ্ঞ মানুষ চেনার সম্ভাব্য কিছু উপায়।
সন্তুষ্টি নেই: অকৃতজ্ঞ মানুষগুলোর জীবন যতই ভালো যাক না কেনো তারা কখনই খুশি হতে পারেনা। জীবনে যতই প্রাপ্তি আসুক না কেনো তাদের চাহিদার কোনো সীমা থাকে না। তারা সবসময়ই কোনো না কোনো কিছুর অর্জনের চেষ্টায় মত্ত। জীবনে সফল হওয়া অদম্য চেষ্টা থাকা সাধারণত ভালো দিক। তবে আপনার যা আছে সেটুকুর মূল্যায়ন না করা, সেগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ না হওয়া কখনই ভালো দিক নয়।
হিংসাপরায়ন: এই মানুষগুলো অন্যের প্রাপ্তিগুলো যখন দেখে, তখন তা নিজের জন্য আশা করা শুরু করে। তবে সেটা অনুপ্রেরণার দৃষ্টিতে নয়। তারা নিজের জীবনকে সবসময় অন্যের সঙ্গে তুলনা করে। ‘অন্যের কি আছে যা আমার নেই’ এই হিংসায় তারা নিমজ্জিত থাকে, তবে ‘আমার যা কিছু অন্যের নেই’ সেদিকে কৃতজ্ঞা নেই।
খিটখিটে মেজাজ: অকৃতজ্ঞ মানুষগুলো খুব সহজেই রেগে যায়। অনেকদিন আগের ঘটা কোনো ঘটনা নিয়ে তারা ক্ষোভ পুষে রাখে। আবার এই মুহূর্তে কিছু একটা ঘটছে যা তার অপছন্দ সেটাও তার মেজাজ বিগড়ে দিতে পারে।
নেতিবাচক প্রত্যাশা: অকৃতজ্ঞ মানুষগুলোর বেশিরভাগই অতীতে বড় কোনো মানসিক কষ্টের শিকার হয়েছেন বা এখনও হয়ে যাচ্ছেন। এই অতীত অভিজ্ঞতার কারণে তারা ইতিবাচক কোনো কিছু আশা করার সাহস হারায়। তাদের ধারণা তার সঙ্গে ভালো কিছু হওয়া কখনই সম্ভব নয়।
তাদের চাওয়ার শেষ নেই: বেশিরভাগ মানুষই অন্যের কাছে কোনো কিছু চাইতে কুন্ঠাবোধ করে। তবে অকৃতজ্ঞ মানুষগুলোর এই সমস্যা নেই। তারা খুব সহজেই অন্যের কাছে কিছু চাইতে পারে। আর তাদের চাওয়ার কোনো শেষ নেই। সবসময়ই তাদের কিছু না কিছু প্রয়োজন। তাদের ধারণা আপনার সহযোগিতা তাদের পাওনা, তাই এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা হয়ত আপনার জন্য একবার ভালো কিছু করেছিল, এখন আপনার কাছ থেকে ১০টি উপকার সে নেবে।
আর আপনি যদি কোনো কারণে তাদের উপকার বা সাহায্য করতে না পারেন, তবে তা সে যেমন ভুলবে না, তেমনি আপনাকেও ভুলে যেতে দেবেনা।
অন্যদের ব্যাপারে তারা চিন্তিত নয়: অকৃতজ্ঞতা থেকেই তৈরি হয় স্বার্থপরতা। অন্যরা তাদের জন্য এটা ওটা করবে এটাই তাদের কাছে স্বাভাবিক ঘটনা হওয়ায় সেই উপকারগুলো করতে অন্যের কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে সেদিকে তাদের নজর থাকে না। কারণ সেটা তাদের মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে না কখনই।
নিজের প্রয়োজন ছাড়া অন্যের জন্য সময় নেই: এই মানুষগুলো তখনই কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে যখন ওই ব্যক্তির কাছ থেকে তার কিছু একটা দরকার। শুধুই গল্প করার জন্য, একসঙ্গে সময় কাটানোর জন্য তারা কারও সঙ্গে দেখা করে না। এমনকি মেসেজ দিয়ে খোঁজ নেওয়ারও তারা প্রয়োজন মনে করে না। তাদের ধারণা আপনাকে সবসময়ই তারা পাশে পাবে।
সবসময় তারাই ভুক্তভোগী: তারা ভুক্তভোগী হওয়ার অভিনয় করে। চিন্তাধারায় অকৃতজ্ঞ মানুষগুলো নিজেদের সবসময়ই ভুক্তভোগী মনে করে। তারাই পৃথিবীতে সবচাইতে কষ্টে আছে। আপনি যদি কোনো কিছু নিয়ে অভিযোগ করেন, তারা অনেকগুলো এমন উদাহরণ তুলে ধরবে যেখানে তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ ছিল। আর আপনি যদি সেসময় তাদের সহানুভূতি কিংবা সমাধানের পথ দেখান সেটাও তারা আমলে নেবে না।
অকৃতজ্ঞ ব্যক্তির জীবনে আপনি বা আপনার জীবনে সে কতটা ভূমিকা রাখবে সেটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। অকৃতজ্ঞ মানুষকে সামাল দেওয়া সহজ বিষয় নয়। তবে তাদের আচরণ যদি আপনার জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সেক্ষেত্রে তাদের এড়িয়ে চলাই হবে আপনার জন্য মঙ্গল।