19/10/2025
. 🔥🔥 #ভূত_চতুর্দশী_কি❓
-----------------------------------------
কালী পূজার আগের দিন চতুর্দশী তিথিতে ভূত চতুর্দশী পালিত হয়। আগামীকাল ভূতচতুর্দশী। ভারতের বিভিন্ন স্থানে একে নরক চতুর্দশী এবং যম চতুর্দশীও বলা হয়। ভূত চতুর্দশী বলতে ভূত-প্রেত বোঝায় না, বরং পূর্বপুরুষদের বুঝায়। এই দিনটি চৌদ্দো পুরুষকে উৎসর্গ করা হয়েছে। বাঙ্গালী হিন্দুদের ভূত চতুর্দশীর দিনে ১৪ রকমের শাক খাওয়া ও ১৪ টি প্রদীপ জ্বালানোর রীতি রয়েছে। অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য এদিন যমের প্রদীপ জ্বালিয়ে বাড়ি থেকে তাড়ানো করা হয়।
পুরাণ অনুযায়ী এদিন কিছু ক্ষণের জন্য স্বর্গ ও নরকের দ্বার খোলা থাকে। এ সময় বিদেহী আত্মা ও স্বর্গত আত্মারা মর্ত্যে নেমে আসেন। এ সময় ভূত-প্রেত নিয়ে মর্ত্যে আসেন রাজা বলী।
রাজা বলীর মর্ত্যে আগমনের কারণ সম্পর্কে বিষ্ণু পুরাণে উল্লেখিত রয়েছে। স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতালের অধীশ্বর ছিলেন রাজা বলী। শিবভক্ত দৈত্য রাজ বলী বিষ্ণুর পূজা করতেন না। বলীর পরাক্রমে অতিষ্ট দেবতারা বিষ্ণুর শরণাপন্ন হন। বলীর ঔদ্ধত্য থেকে দেবতাদের মুক্ত করতে বামন অবতারে বলীরাজের সামনে উপস্থিত হন শ্রীবিষ্ণু।
বলীরাজ তখন এক যজ্ঞ অনুষ্ঠান করছিলেন। আর তখনই বিষ্ণু বামন বেশে এসে বলীর কাছ থেকে তিন পদ ভূমি চেয়ে বসেন। বলী তাতে রাজি হয়ে যান।
এখন বিষ্ণু নিজের এক পা রাখেন স্বর্গে এবং অপর পা রাখেন মর্ত্যে। অতপর বিষ্ণুর নাভি থেকে তৃতীয় একটি পা বেরিয়ে এলো, তা রাখার জন্য বলী নিজের মাথা এগিয়ে দেন। এর ফলে বলীরাজ ক্রমশ পাতালে প্রবেশ ঘটে।
বলীর দানবীর স্বভাবে প্রসন্ন হয়ে বিষ্ণু তাঁকে আশীর্বাদ দেন যে, তাঁর ও তাঁর সঙ্গীরা পৃথিবীতে পূজা পাবে। সে অনুসারে ভূত চতুর্দশীর দিনে বলীরাজ ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা পূজা নিতে পৃথিবীতে আসেন।
🔥ভূত চতুর্দশীতে যে #১৪টি_শাক খাওয়া হয়–
এদিন ১৪ শাক খাওয়ার রীতি প্রচলিত আছে। ওল, বেতো বা বাথুয়া, কালকাসুন্দা, নিম, সরষে, শালিঞ্চা বা শাঞ্চে, জয়ন্তী, গুলঞ্চ, পলতা, ঘেঁটু বা ভাঁট, হিঞ্চে, শুষনি, শেলু শাক খাওয়া হয় এদিন। এই সকল শাক একত্রে মিশিয়ে এক পদ রান্না করা হয়।
🔥আয়ুর্বেদের চোদ্দ শাক– আয়ুর্বেদে যে ১৪ শাকের উল্লেখ পাওয়া যায়, তা হলো পালং শাক, লাল শাক, শুষনি, পাট শাক, ধনে, পুঁই, কুমড়ো, গিমে, মূলো, কলমি, সরষে, নোটে, মেথি, লাউ বা হিঞ্চে।
🔥১৪টি শাক খাওয়ার গুরুত্ব– আয়ুর্বেদ মতে এই ১৪টি শাকে নানান রোগ নাশক শক্তি রয়েছে। এই শাকগুলি ঋতু পরিবর্তনের সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
🔥 ্রদীপ কেন জ্বালানো হয় ❓
👉১)বাঙ্গালী হিন্দুদের প্রথা অনুযায়ী কালীপূজার আগের দিন ১৪ রকমের শাক খাওয়ার পাশাপাশি ১৪টি প্রদীপ জ্বালাতে হয়। মনে করা হয় ১৪ শাক খেয়ে সন্ধেবেলা ১৪ টি প্রদীপ জ্বালালে বাড়ি থেকে দূরাত্মা, অন্ধকার ও নেগেটিভ এনার্জি দূর হয়।
👉২)ভূত চতুর্দশীর রাতে শিবভক্ত রাজা বলী ও তাঁর অনুচরেরা মর্ত্যে পূজা নিতে আসেন। চতুর্দশী তিথির ঘোর অমাবস্যার অন্ধকারে রাজা বলী ও তাঁর অনুচরেরা যাতে পথভ্রষ্ট বাড়িতে ঢুকে না-পড়েন, তাই পথ দেখানোর উদ্দেশে এই প্রদীপ জ্বালানো হয়।
👉৩)অন্য মতে, পিতৃপক্ষের সময় পিতৃপুরুষদের মর্ত্যে আগমন হয়। তার পর এই চতুর্দশী তিথিতেই শুরু হয় তাঁদের ফেরার পালা। সে সময় অন্ধকারে পথ দেখানোর জন্য ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়।
পদ্মপুরাণ অনুযায়ী এই তিথিতে গঙ্গা স্নান করলে নরক দর্শনের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ভুত চতুর্দশীতে ১৪ প্রদীপ জ্বালালেই হলো না, সঠিক জায়গায় তা না দিলে পরিশ্রম বৃথা ।বহু বাঙালি পরিবারে ভুত চতুর্দশী পালন করা হয়। বিদায় করা হয় অলক্ষ্মী। সেই সঙ্গে জ্বালানো হয় ১৪ প্রদীপ। ১৪ প্রদীপ জ্বালালেও অনেকেই জানেন না এই ১৪ প্রদীপ কোথায় কোথায় দিতে হয়? জেনে নিন সেই নিয়মও।
প্রচলিত বিশ্বাস, এ দিন খুলে যায় স্বর্গ নরকের দ্বার। ১৪ পুরুষ এসে সময় কাটিয়ে যান তাঁদের পরিবারের সঙ্গে। এই দিন ১৪ পুরুষকে অর্পণ করে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা রয়েছে।
কোথায় কোথায় দেবেন ১৪ প্রদীপ?
• বাড়িতে কেবল ১৪ প্রদীপ জ্বালালেই হলো না। সঠিক জায়গায় প্রদীপ দেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। ১৪ প্রদীপের সঙ্গে একটি পদ্ম প্রদীপ রাখুন। সেটিকে জ্বালিয়ে প্রথমে বাড়ির ঠাকুরঘরে বা পুজোর স্থানে রাখুন। এই স্থানে প্রদীপ দেওয়াটা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
• এরপর বাড়িতে তুলসীমঞ্চ থাকলে, সেখানেও একটি প্রদীপ দিতে হবে।
• বাড়ির সদর দরজায় দু’পাশে দুটি প্রদীপ দিতে হবে। অশুভ শক্তি দূর করে শুভ শক্তির প্রবাহ বজায় রাখতে সেখানে সঙ্গে একটি করে লবঙ্গ রাখতে পারেন।
• বাড়ির যেখানে জলের ব্যবস্থা রয়েছে বা কলতলায় একটি প্রদীপ দিতে হবে।
• বাড়ির দক্ষিণ দিকে একটি প্রদীপ জ্বালাতে হবে। বাড়িতে মাটির উনুন থাকলে, সেই উনুনে একটি প্রদীপ দিন।
• বাথরুমে প্রদীপ জ্বালাতে হবে। এই নিয়ম কিন্তু ঠাকুরঘরে প্রদীপ জ্বালানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ।
• একটি প্রদীপ দিতে হবে রান্নাঘরে।
• এছাড়া প্রতিটি ঘরের দরজায় একটি করে প্রদীপ জ্বালান।
• বেল গাছ থাকলে তার গোড়াতে একটি প্রদীপ জ্বালাতে পারেন।
এই দিন আর কী কী নিয়ম মানতে হবে?
১৪ প্রদীপ জ্বালানো ছাড়াও আরও কয়েকটি কাজ করা প্রয়োজন। এই দিন বাড়িতে ১৪ শাক খাওয়ার চল আছে। যমরাজের পুজো করতে পারেন। ভুত চতুর্দশীর সন্ধেয় বাড়িতে অন্ধকার যেন না থাকে। সব সময় আলো জ্বালিয়ে রাখুন। দু’বেলা গীতা পাঠ করতে পারলে আরও ভালো।
সুন্দর নিত্যানন্দ প্রভুর টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত।