
05/05/2025
হওয়ার কথা ছিল সমুদ্রবন্দর, হয়ে গেছে কয়লাবন্দর!
দক্ষিণ চট্টগ্রামের এক অপার সম্ভাবনার নাম — বাঁশখালী। প্রকৃতি যেন তার সবটুকু সৌন্দর্য ঢেলে সাজিয়েছে এই জনপদকে। পাহাড়, নদী, সমুদ্র, খাল, বন, কৃষিজমি, লবণচাষ, সামুদ্রিক মাছ— এমন সম্ভারের সম্ভাবনা আর কোথায় আছে? অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য হলো দূরদর্শী ও নিবেদিত নেতৃত্বের অভাবে এগিয়ে যেতে পারেনি এই অঞ্চল।
যদি কেউ প্রশ্ন করে, "বাঁশখালীতে আছে কী?" বরং উত্তরে জিজ্ঞেস করা উচিত, "বাঁশখালীতে নেই কী?" এই লেখায় শত শত সম্ভাবনার মাঝে একটি মাত্র বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছি — খাটখালী সমুদ্রবন্দর/নদী বন্দর।
#গন্ডামারা: এক স্বপ্নের জনপদ:
সেই বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়ন— প্রকৃতির বদন্যতায় দানবলে সমৃদ্ধ একটি জনপদ। লবণ, শাকসবজি, মাছ, ধান, খালবিল— এক অর্থনৈতিক স্বপ্নপুরী। বঙ্গোপসাগরের মোহনাকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠতে পারত দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে ব্যস্ততম অর্থনৈতিক অঞ্চল। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নের নাম । এখানে গড়ে উঠেছে বিতর্কিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র — যে প্রকল্প দেশের কোথাও স্থান পায়নি, তা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এখানকার মানুষের ওপর। এর জন্য প্রাণ গেছে নিরীহ মানুষের, ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছে বহু পরিবার। সে গল্প আরেকদিন হবে, আজ শুধু সম্ভাবনার কথা বলব।
#জলকদরখাল: হারিয়ে যেতে বসা এক সম্ভাবনা; এক সময় এই জলপথ ছিল প্রাণচঞ্চল। বাণিজ্যের রথ চলত এই পথ ধরে। আজ তা বলতে গেলে মৃতপ্রায়। দখলে, দূষণে আর অবহেলায় ধুকছে। অথচ বিগত তিনদশক আগেও এই খাল ছিল কর্মচঞ্চল বানিজ্য পথ । আনোয়ারা-বাঁশখালী ফেরি সার্ভিস চালু হয়নি, সেতু ছিল না সেই সময়টা দেখেছেন তেমন মানুষ এখন পঞ্চাশ /ষাটের কোটায়। তাঁরা জলকদরের কদর আর যৌবন দুটোয় দেখেছেন। নতুন প্রজন্ম জলকদর এই অঞ্চলের জন্য কী তারা জানেনা, জানার চেষ্টাও হয়তো করেনা। সুখে থাকতে এসব কাসুন্দি ঘাটতে কে যাবে? দুঃখ নিয়ে বলতে হয় এই খালকে ঘিরেই গড়ে উঠতে পারত একটি নদীবন্দর নিদেনপক্ষে সমুদ্রবন্দর। সুয়েজ খাল যেমন একটি দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে, তেমনি জলকদর খালও হতে পারত বাঁশখালীর ‘লাইফলাইন’।
আজ সড়কপথ পেয়েই ভুলে গেছি এক সময়ের অত্যাবশকীয় নদীর কথা, খালের কথা। পরিকল্পনাহীন নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছে এই স্বপ্নকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে। আর নিজেদের বিনাশ নিজেরাই যখন ডেকে এনেছি তাতে কে বাঁচাবে আমাদের?
এত হতাশার মাঝেও বলতে চাই এখনো সময় আছে, সব হারিয়ে যায়নি। জলকদর খাল আবার জেগে উঠতে পারে। খাটখালীকে সমুদ্রবন্দর নিদেনপক্ষে নদীবন্দর করার স্বপ্ন আকাশকুসুম নয়, অতিবাস্তব এক স্বপ্ন। প্রাকৃতিক, ভৌগোলিক ও কৌশলগত সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বাঁশখালীকে গড়া যেতে পারে একটি নতুন লজিস্টিকস হাবে। এই পোস্টটি নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব, স্থানীয় উন্নয়ন ভাবনায় সক্রিয় তরুণদের উদ্দেশ্যে। ভাবুন, পরিকল্পনা করুন, আওয়াজ তুলুন। 💪✍️🗣️
(চলবে)
– রহিম সৈকত
শিক্ষক ও সাংবাদিক,
চট্টগ্রাম।