05/11/2025
#মায়াবিনী_তরঙ্গিনী
#পর্ব_৩৫
#নীল_মালতীলতা
নতুন সতেজ একটা সকাল। চারিদিকে নতুন সূর্যের সোনালী আলো। পাখির ঠোঁটের মিষ্টি ডাক কিচিরমিচির কিচিরমিচির।
সূর্য যেমন রাতের অন্ধকার কে নিভিয়ে পৃথিবী আলোকিত করে ঠিক তেমনি মানুষকেও নতুন স্বপ্নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। পুরনো বিষণ্নতা ভুলিয়ে নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন আশা জাগায়।
কিন্তু আজকের সিকদার বাড়ির সকালটা যেনো আগের চেয়ে অনেকটা ভিন্ন। কেউ কারো সঙ্গে মন খুলে একটা কথাও বলতে পারছে না।
যেই মানুষগুলো আপন মানুষদের সঙ্গে কথা না বলে দিন শুরু করতে পারতো না আজ তাদের মনটা বিষন্নতায় ভরা।
আজ প্রায় মাস খানিক পরে নাজিমুদ্দিন শিকদার নাসির সিকদার দুই ভাই একসঙ্গে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিল, তবে তাদের দুই ভাইয়ের দৃষ্টি ছিল ভিন্ন আলাদা।
যদিও নাসির শিকদারের কর্মকাণ্ড ক্ষমার অযোগ্য, তবুও সে মুখ ফুটে ভাইয়ের কাছে এখন অব্দি কিছুই বলেনি। যখন দেখলো তার সত্যটা লুকানোর আর উপায় নেই তখন শুধু নিজের দোষটুকু স্বীকার করে নিয়েছে ব্যস। হয়তো সে ভাবছে সে যা করেছে তা তার প্রাপ্য পাওনার জন্য করেছে তাই ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
এতদিন তামান্না শিকদার এই বাড়িতে আসার জন্য ছটফট করছিলেন। আজ কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে । ইচ্ছে করছে এক ছুটে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে। তবুও কিছু করার নেই। স্বামীর অনুরোধে দাঁত কামড়ে কয়েকটা দিন এই বাড়িতে পড়ে থাকতে হবে।
আবার এই বাড়িটা ছাড়তে হবে মনে পড়লেও বুকের ভেতর কেঁপে ওঠে। সেই বিয়ের পরের দিন থেকে আজ পর্যন্ত এই সংসারটাকে প্রাণ দিয়ে আগলে রেখেছে। এইবাড়ির কোনায় কোনায় কত স্মৃতি। এইবাড়ির মানুষগুলোর সঙ্গে নিজের সন্তানদের সঙ্গে কাটানো কত হাসি কান্না মিলে আছে এইবাড়ির দেয়ালে দেয়ালে।
আবার স্বামীর কথা মনে পড়লেও চোখ থেকে অশ্রু ঝরে। মানুষটা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এই বাড়িটা তৈরি করল সবাই একটুখানি মিলেমিশে সুখে দুখে হাসি কান্নায় এক সঙ্গে বাঁচার জন্য থাকার জন্য। সবাইকে খুশি রাখার জন্য, সুখে রাখার জন্য নিজেকে সময় না দিয়ে সম্পদের পিছনে ছুটলো অর্জন করল আজ তা কেমন ফিকে হয়ে গেলো।
হৃদয়ের বিষন্নতা হৃদয়ে লুকিয়ে নেমে পড়লেন আয়োজন করার জন্য। আজ নতুন অতিথি আসবেন। আয়োজনে কোন ত্রুটি রাখতে চান না তামান্না শিকদার। কাজের লোকের সাহায্য নিয়ে সবকিছু নিখুঁতভাবে গোজগাছ করার চেষ্টা করছেন তামান্না সিকদার।
রেহানার চোখেমুখে একদিন আগেও যে উদাসীন মনমরা ভাবটা ছিলো তা আজ আর দেখা যাচ্ছে না। ঠিক আগের মত উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। হয়তো স্বামীর সব কথা শুনে সে বেশ উৎসাহ পেয়েছে।
বড় জায়ের কাছে এসে বেশ ভাব নিয়ে বলল,,
কি ব্যাপার ভাবি এত আয়োজন?
তামান্না সিকদার মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে উত্তর দিলেন, হ্যাঁ নতুন অতিথি আসবেন।
ওওও, কই আমাদেরতো জানালে না,,
ততক্ষণে নাজিমউদ্দিন শিকদার উপস্থিত হলেন ড্রয়িং রুমে। একজন কাজের লোক ডেকে ডেকে পাঠালেন নিজের ভাই ভাইয়ের বউকে সাথে নিরব মোহিনীকেও। তারা সবাই উপস্থিত হয় ড্রয়িং রুমে, যে যার মত জায়গা বেছে দখল করে বসে পড়ে।
তামান্না শিকদার আগে থেকেই জানেন এখানে কি আলোচনা হবে, তাই তিনি আর এখানে ভিড় জমাননি, শাশুড়িকে ধরে ধরে এ পর্যন্ত এনে বসিয়ে দিয়ে গেছেন। যদিও নিজের মাকে নাজিমুদ্দিন শিকদার আগেই সবটা জানিয়েছে তবুও জরুরী আলোচনায় মাকে তো থাকতেই হয়।
মিনিট পাঁচেক নিরবতা চলে। নাসির শিকদার সেই আগের মত ভাইকে ভাইয়া বলে সম্বোধন করে জানতে চায় না কি জন্য ডেকেছে। নিরব সেও চুপচাপ। ভীষণ কষ্ট হয় নাজিমউদ্দিন শিকদারের।
তবুও তিনি নিজেকে সামলে বলেন,, আগামী শুক্রবার বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান হবে। আর তিন দিন বাদেই। আশা করি তোমরা স্বাভাবিক আচরণ আমাকে উপহার হিসেবে দেবে।
নাসির সিকদার চুপচাপ, তবে রেহানা বলল,,
কিসের অনুষ্ঠান ভাইয়া সেটা তো বললেন না,
নওশীনের বিয়ের অনুষ্ঠান। তোমাদের যদি কাউকে দাওয়াত দেওয়ার থাকে অবশ্যই দিতে পারো। মোহিনীর বাবা মার সঙ্গে যেহেতু আমার একটা ভালো সম্পর্ক রয়েছে আমি তাদেরকে দাওয়াতটা দিয়ে দিয়েছি। তারা হয়তো চলে আসবেন কিছুক্ষণ এর মধ্যে। তোমাদের যদি আর কারো দাওয়াত দেওয়ার থাকে তো তোমরা সেটা আমাকে জানিও লিস্টে অ্যাড করে দিব। আর তাদের দাওয়াতটাও তোমরা দিয়ে দিও।
ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,, নাসির আমি তোমার থেকে আমার সকল আত্মীয় স্বজনের কাছে ভালো স্বাভাবিক আচরণ চাই। যেমনটা আগে ছিল।
আমি আগের মতই আছি। চিন্তা করো না কারো কোন ক্ষতি হবে না।
বেশ তাহলেই ভালো,,
,
,
বিশাল খোলা ছাদের নিচে মেঝেতে বিষন্ন মনে বসে আছে নওশীন। তার কাঁধে রয়েছে তার প্রিয় সঙ্গী মিষ্টি। আর কোলের ভিতর একটা সাদা পায়রা নিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে নওশীন। নওশীন পায়রাটার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে এক মনে তাকিয়ে আছে দূরে কোথাও। হয়তো কিছু ভাবতে ভাবতে ভাবনার এতটাই গভীরে চলে গিয়েছে যে তার দৃষ্টির কোন নির্দিষ্ট স্থিরতা নেই।
তার চারিপাশে বেশ কিছু কবুতর উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। তারা সংখ্যায় বেশ কম। যা নওশীনের বিষন্নতা আবারও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আজকাল বিষন্নতায় মন খারাপের সময় বিদেশি জামাইটাকে ভিষন মনে পড়ে।
রাতেই তো বললো সকালে কিছু একটা সারপ্রাইজ থাকবে, অথচ আটটা থেকে নয়টা বাজতে চলল এখনো পর্যন্ত মানুষটার কোন খোঁজ খবর নেই।
বেশি রাত করে দুজন গল্প করে ঘুমাতে গিয়েছিল। বিছানায় এপাশাওপাশ করতে করতেই আজান হয়ে গেল। তাই আর ঘুমানোর চেষ্টা না করে তাৎক্ষণিক নামাজ পড়ে ছুটলো সিয়ামের ঘরের সামনে। বার কয়েক টোকা দিয়েও যখন ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ পেলোনা অবাক হয়ে ঢুকলো ভিতরে। রুমের ভিতর যখন সিয়ামের চিহ্নটুকু পেলো না ভারী অবাক হল নওশীন। মসজিদে নামাজ পড়তে গেলেও এতক্ষণে তো নামাজ পড়ে আসার কথা।
লোকটা যখন তখন কাজে বেরিয়ে যায় অথচ সারাদিন যাকে বউ বউ করে ডাকে তাকে একবার বলে পর্যন্ত যায় না ।
গত রাতেই সারপ্রাইজের কথা বলল, মাত্র কয়েক ঘণ্টা হল এর মধ্যেই সারপ্রাইজের কথা ভুলে গেল? এমন আবোল তাবোল ভেবে নওশীনের মন বিষন্নতায় আরো ভরে গেল। সেই থেকেই মনে মনে নওশীন বেশ অপেক্ষা করছে কখন সিয়াম ফিরবে আর সে তার সারপ্রাইজ পেয়ে যাবে ।
নওশীনের আবোল তাবোল ভাবনার মধ্যেই হঠাৎ তার মনে হল একটা গাড়ি তাদের বাড়ির ভেতরে ঢুকেছে। এই সময় আবার কে আসতে পারে ভেবে ছাদের রেলিংএ গিয়ে দাঁড়ালো নওশীন।
গাড়িটা সিয়ামের গাড়ি। নওশিনের ধারণা ছিল সিয়াম বোধ হয় এই দেশে এসে একটা গাড়ি কিনে ফেলেছে বিদেশী বড়লোক মানুষ। তাদের বাড়িতেই তো দু চারটা গাড়ি আছে সেখান থেকেই তো একটা চালাতে পারতো এমনটা ধারণা ছিল নওশীনের। তবে সেটা মনের মধ্যেই থেকে গিয়েছিল। এখন তার মনে হচ্ছে এটা সরকার থেকে পাওয়া হয়তো গাড়ি।
নওশীনের ভাবনার মধ্যে দেখতে পেল সিয়াম গাড়ি থেকে নেমেছে সাথে ফ্রন্ট সিট থেকে একটা মেয়েও নেমেছে । মেয়েটা ছুটে গিয়ে সিয়ামের হাত ধরে ভীষণ উৎসাহের সঙ্গে চারিপাশ দেখছে আর কিছু বলছে, তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে ভীষণ প্রশংসাও করছে।
নওশীনের হৃদয় ধক করে উঠলো। গলা শুকরিয়া এলো, মনে পড়ে গেল নিরব যেদিন বিদেশ থেকে এসেছিল সেই দিনের কথা। সিয়ামওতো সেই দিনই এসেছিল।
নওশীনের আর কিছু দেখার ইচ্ছে হলো না, সে দৌড়ে নিচে চলে গেল উদ্দেশ্য সিয়ামের সম্মুখ,, পথে ঘরে গিয়ে মিষ্টিকে খাচায় রেখে এলো। মিষ্টিকে নিয়েও এখন ভয় হয় একটু হাতছাড়া করতে মনে চায় না। তবে এই মুহূর্তে সে সিয়ামের সামনে ওকে নিয়ে যেতে চায়না আগে পরিস্থিতি বুঝতে চায়।
মিষ্টি একদম ঘর থেকে বের হবি না। কেউ কিছু দিলে একদম খাবি না মনে থাকবে?
মনে থাকবে নশী, খুব মনে থাকবে।
আর তোকে কেউ কষ্ট দিতে নএলে একদম উড়ে পালিয়ে আমার কাছে চলে যাবি।
ঠিক আছে বাবা ঠিক আছে,,
নওশিন নিচে আসতে আসতে ততক্ষণে কলিং বেলটাও বেজে উঠল। সবাই সদর দরজার দিকে ঘুরে তাকালো ততক্ষণে নওশীন দৌড়ে গিয়ে দরজার নবে হাত লাগালো।
নওশীনকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে সবাই বেশ অবাক হলেও তবে মুখে কেউ কিছুই বলল না।
দরজাটা খুলেই নওশীন থমকে গেল।
একি এখানে তো আরো মধ্য বয়স্ক দুজন নরনারী রয়েছেন। নওশীন এতটাই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল যে তাদেরকে সালাম প্রদান করতেও ভুলে গেল।
মিনিট খানেক নিরবতা চলল। সিয়াম নিজের বাবা-মাকে ইশারা করলো। সিয়ামের মা সাজিয়া সাখাওয়াত বুঝলেন এটাই তার পুত্রবধূ।
তিনিও বুঝতে পারলেন মেয়েটা হঠাৎ তাদেরকে এইভাবে দেখে ভরকে গিয়েছে। সিয়াম যে মেয়েটাকে কিছু জানায়নি এ ব্যাপারে তাদেরকে সিয়াম বলেছে। সাজিয়া নিজেই সালাম দিলো,,
সিয়াম তার বাবা মার সঙ্গে নওশীনের কথা আগেই বলেছে, যখন তার ছবি দেখে তাকে পছন্দ হয়েছে। সাজিয়া তো এমনটা শুনে যারপরনাই খুশি হলেন, নিজের দেশের বাঙালি একটা মেয়েকে পুত্রবধূ করতে পারবেন এর চাইতে খুশি সেই মুহূর্তে আর কোন কিছু ছিলই না। এরপর তিনি বেশ কয়েকবার সিয়ামের কাছে ছবি দেখতে চেয়েছিলেন। সিয়ামের এক কথা সরাসরি দেখবে না হলে আনন্দ কমে যাবে না!
আসসালামু আলাইকুম মামনি, কেমন আছো তুমি? নওশীনের গালে হাত বুলিয়ে হাতে চুমুএকে বললেন,, মাশাআল্লাহ ভারি মিষ্টি মেয়ে আমাদের।
নওশীন বেশ লজ্জা পেল ইস মেহমানদের সামনে দাঁড় করিয়ে নিজেই সালাম তো দিলই না উল্টো এখনো পর্যন্ত সালামের জবাবটাও দিল না। লজ্জায় মাথা নত করে সালামের জবাব দিল নওশীন।
ততক্ষণে নাজিম উদ্দিন সিকদার আর তামান্না শিকদারও দরজার কাছে এসে পৌঁছেছেন। বাকিরাও দাঁড়িয়ে রয়েছে অপেক্ষা করছে তাদের ভেতরে আসার।
নাজিমুদ্দিন সিকদার এগিয়ে সালাম আদান প্রদান করলেন। সিয়ামের বাবা সাজ্জাদ সাখাওয়াতের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে কোলাকুলি করলেন। এবং একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন।
মেয়েকে উদ্দেশ্য করে তামান্না সিকদার বললেন,
কি ব্যাপার নওশীন মা, আরে এনারা তোমার আরেক বাবা মা, এনাদেরকে তুমি এভাবে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছো?
সাজিয়া বেগম হেসেই বললেন,, আর বলবেননা বেয়ান, ছেলে আমাদের সব বলেছে, মেয়েটাকে না জানিয়েই সমস্ত আয়োজন করে ফেলেছে। এমনকি আমরা আসবো সেটাও নাকি মেয়েটাকে জানায়নি। ভাবুন মেয়েটা কতখানি ভরকে গিয়েছে আমাদের দেখে।
মামনি ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই আমি তোমার আরেক মা। আমার ছেলেটা নিশ্চয়ই এতদিন তোমাকে জ্বালিয়ে মেরেছে, তবে চিন্তা করো না এখন আমি এসে পড়েছি এবার আমরা তিন মা মেয়ে মিলে ওকে জ্বালিয়ে মারবো । আবার আমার মেয়েটাকে যখন বিদেয় করে দেব তখন আমরা দুই মামা মিলে জালাবো
তিম মা মেয়ে শুনে চোখ মেলে তাকালো নওশীন তাদের দিকে বোঝার চেষ্টা করলো কথাটার অর্থ,
বুঝলে না তো তিন মা মেয়ে কোথা থেকে হলাম, এরপর তিনি সিয়ামের বোন সারাহ কে দেখিয়ে বলল, এই যে আমার মেয়ে মানে তোমার আরেক বোন, হলো না আমরা তিন মা মেয়ে,
সারাহ বলল,, একদম আমাকে বিদায় করার কথা বলবেনা, আমি তোমাদের সবাইকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছি না।
সিয়ামের বাবা রসিকতা করে বললেন,, তোমাদের দল তো ভারি হয়ে গেল, বলি আমাকেও তো তোমাদের দলে রাখতে পারতে!
সারাহ হাসি মুখে বলল,, একদম না আব্বিজান। আপনি আমাদের দলে চলে এলে ভাইয়া একদম একা হয়ে পড়বে।
ওহ তাই, তাহলে তুই বরং আমার দলের থেকে যা তাহলে তো হয়ে গেল। ভালোবাসা দেখাস আবার দলেও থাকিস না, এ আবার কেমন ভালোবাসা।
এই না না একদম না আমি ভাবি আর আম্মুর দলে থাকবো। আমরা মেয়েরা তিনজন এক দলে তোমরা ছেলেরা দুজন এক দলে, আমাদের দল ভারি।
সারাহর কথা শুনে উপস্থিত সবাই প্রফুল্ল হাসলো। সাজিয়া বললেন, আমার মেয়েটার একটা বোনের বড্ড শখ ছিল, এখন ঠিক পেয়ে গেল, মামনি তোমার ছোট বোনটা কিন্তু ভারী দুষ্ট। একদম লাই দেবে না, ঠিক আছে,,
নওশীন নিজেকে নিজেই ধিক্কার জানালো ছি মানুষটাকে তুই ভুল বুঝতে পারলি নওশীন? যে মানুষটা তোর সমস্ত বড় বড় বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাকে তুই অবিশ্বাস করলি? কুল নওশীন কুল সম্পর্কে বিশ্বাস রাখতে হয় এভাবে হুটহাট সন্দেহ মনের মধ্যেও আনতে নেই,, নওশীনের ভীষণ খারাপ লাগে তখনকার ভাবনার জন্য।
আবার সিয়ামের পরিবারের সবার কথা শুনে কেন জানি ভীষণ লজ্জা লাগছে এবং ভীষণ ভালো লাগছে সে মাথাটা নিচু করে রয়েছে।
ইস আমি মোটেও দুষ্টু নয়। আমি অনেক ভালো। আমি আর ভাবিআপু অনেক মজা করবো অনেক আনন্দ করবো
ভাবিআপু,,
হ্যাঁ আমার একটা আপুর শখ ছিল আর ভাবিরও তাই আমি দুটো মিলিয়ে বলবো ভাবিআপু ব্যাস আপু আর ভাবি দুজনই পেলাম।
নাজিম উদ্দিন সিকদার আর তামান্না শিকদারের ভীষণ ভালো লাগলো, সিয়ামের ব্যবহারে তারা আগেই মুগ্ধ। মেয়েকে নিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলেন। আর এখন এই পরিবারটা দেখে তো তাদের আর কোন চিন্তাই রইল না ।
নাজিমুদ্দিন সিকদার বিনয়ের সঙ্গে বললেন, বেয়াই বেয়ান আপনারা প্লিজ ভিতরে আসুন, আর কতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবেন, কতটা পথ জার্নি করে এলেন। এসো মামনি ভেতরে এসো। সিয়াম বাবা সবাইকে নিয়ে ভেতরে এসো।
আরে বেয়াই মশাই এত ব্যস্ত হবেন না, চলুন আস্তে ধীরে যাই।
অতিথীরা সবাই ভেতরে এসে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন।
নাসির শিকদারও সিয়ামের বাবা-মার সঙ্গে বেশ ভালো ভাবেই ব্যবহার করল। মাঝে সিয়ামের সঙ্গে চোখে হলে তিনি চোখ সরিয়ে ফেলেন। এতে সিয়াম মনে মনে বেশ মজা পায়।
সাজিয়া এবং সাজ্জাদ সাখাওয়াত হালিমা বেগমের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই মিশে যান তারা তো বলেই বসেন,, আমাদের মা বেঁচে নেই কিন্তু আপনাকে দেখে আমাদের মায়ের কথা মনে পড়ে গেল,
হালিমা বেগমও তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, আমাকে তোমরা তোমাদের মা মনে করতে পারছ না তাইতো?
না না মোটেও এমনটা নয় আপনাকে আমাদের মায়ের মত মনে হচ্ছে তাই তো বলি ছেলে আমার দাদীও জোগাড় করে ফেলেছে।
বড় বৌমার তারা অনেক দূর থেকে জার্নিকরে এসেছে তুমি তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা কর। আর এই বেলা তাদের খাবারটা তাদের ঘরেই পাঠাও।
এত ব্যস্ত হবেন না দয়া করে, আমরা এখানে এসে খেতে পারবো শুধু ফ্রেশ হওয়াটা প্রয়োজন।
না তোমাদের এবেলায় আর ঘর ছাড়তে হবে না বিশ্রাম করো যাও।
নওশীন চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলি কেন, আশ্চর্য কোথায় নিজের শ্বশুর শাশুড়ি এসেছে তাদের আপ্যায়নে লেগে পড়বে তা না চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আহা ওকে এভাবে বলছেন কেন, আমাদের নতুন দেখছে তাই হয়তো লজ্জা পাচ্ছে আস্তে আস্তে আমাদের মেয়েকে আমরা এতটাই আপন করে নেব যে আপনাদের কথা মনে করার সময় পাবেনা।
সারাহ নওশীনের হাত জড়িয়ে ধরে বলে আমি কিন্তু ভাবিআপুর সঙ্গে থাকবো।
তামান্না সিকদার হেসে বলেন বেশ তো নওশীন মামনি ওকে নিয়ে যাও তোমার ঘরে।
বেয়ান আপনারা আসুন আপনাদের ঘর দেখিয়ে দিচ্ছি।
হ্যাঁ চলুন, ছেলের মুখে তো আপনার আরো ছেলে মেয়ের কথা শুনলাম ওদেরকে তো দেখলাম না এখানে।
আছে কোথাও হয়তো টের পায়নি অতিথি এসেছে তাহলে এখানে এসে অবশ্যই ভিড় জমাতো। আপনার বিশ্রাম নিন ওদের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে।
চলবে,,,