
11/09/2025
#আমার_স্নিগ্ধপরী
#পর্ব_২২
#লেখা: #নীল_মালতীলতা
কপি নিষিদ্ধ ❌❌❌
ফাইয়াজের পরনে থ্রি কোয়াটার ট্রাউজার, হাফ হাতা টি শার্ট। মূলত তার পরনে এখনো রাতের পোশাক যা সে এখনো পরিবর্তন করেনি।
তার স্নিগ্ধপরী চলে গেছে শুনে তার মাথা এমনিতেই আওলে গেছে। ঘরে এসে যখন দেখলো একেবারে তার জামা কাপড় নিয়ে লাগেজ সহ বেরিয়ে গেছে তখন ফাইয়াজ পাগল প্রায়। দিক বেদিক হারিয়ে সে ছুট লাগালো স্নিগ্ধাকে ফেরানোর উদ্দেশ্যে।
এরকম কিছু হবে তা ফারজানা তালুকদারের জানা। ছেলে যে বউয়ের প্রেমে বদ্ধ উন্মাদ তা তাদের সবার খুব ভালোভাবেই জানা হয়ে গেছে।
এইতো তার সুখী পরিবার।
ফারজানা তালুকদার দেখলেন ছেলের অবস্থা। ঘুম থেকে উঠেই বউকে খুঁজে খুঁজে হয়রান সেই অবস্থাতেই এখনো আছে। সেই অবস্থায় ছেলে পাগলের মতো দৌড়ে শিড়ি বেয়ে নামছে।
ফাইয়াজ যখন দৌড়ে ওপরে গেল তখনই ফারজানা তালুকদার ফজলুল তালুকদারকে ঘর থেকে ডেকে বের করেছেন।
ফাইয়াজ ডানে বামে না তাকিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বের হতে নেয় তখনই ফজলুল তালুকদার আর ফারজানা তালুকদার ফাইয়াজকে আটকে দেন,,
ছাড়ো আমাকে, ও নিশ্চয় বেশিদূর যেতে পারেনি আমাকে আটকাতে হবে। আমার উপরে অনেক অভিমান করেছে, এখন না আটকালে দেরি হয়ে যাবে। আর তোমরা কেমন হ্যাঁ তোমরা দেখেছো চলে যেতে আর একবারও আটকালে না, আর না আমাকে ডাকলে??
ও এতক্ষণে অনেকদূর চলে গেছে, বললেন ফারজানা তালুকদার।
ম. ম. মানে?
ওতো সেই আলো ফোটার আগেই বেড়িয়ে গেছে,,
ফাইয়াজ সেখানে মেঝেতেই ধপ করে বসে পড়ল, কাঁপা গলায় বলল,,
তোমরা দেখেও আটকালে না কেন আম্মু? কেনো? আমাকে কেন ডাকলে না?
যে মেয়ে সামান্য এতোটুকু ঝগড়ার কারণে অভিমান করে বাড়ি ছাড়ে তার জন্য এত পাগল হয় কি প্রয়োজন?
আম্মু, প্লিজ আমার সঙ্গে মজা করো না, আমি জানি তুমি স্নিগ্ধা বলতে পাগল সে তুমি আমার সঙ্গে এরকম কথা বলছো? আমাকে বোকা পেয়েছ আম্মু। আব্বু তোমরা দুজন আমার সঙ্গে এমন কেন করলে বলতো??
ফজলুল তালুকদার ফাইয়াজের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, শান্ত হও, স্নিগ্ধা মা ভালো আছে। কতগুলো দিন হলো বলতো বাবা মাকে দেখে না মেয়েটা। তার উপরে শুনলাম তোমাদের মধ্যে নাকি ঝগড়া হয়েছে। মেয়েটার মনটা এখন ভালো নেই। তাই একটু বাবা মার সঙ্গে দেখা করে আসুক, মনটা ওর ভালো হবে।
তাই বলে এভাবে আমাকে না বলে যাওয়ার তো কোনো প্রয়োজন ছিল না আব্বু,,
রাগ করো না, অতিরিক্ত রাগ অভিমান কোনটাই ভালো নয়। দুটো দিন থাকুক তারপর না হয় তুমি গিয়ে নিয়ে আসবে।
আমি এক্ষুনি রওনা দিচ্ছি,, এমন সুন্দর বৌ আমার একা রাখা যাবে না কোথাও। আমার সঙ্গে থাকাকালীন ছেলেরা আমার বউকে প্রপোজ করে বসে, সেখানে আমার অনুপস্থিতিতে তো,,, না না, আমি মোটেও এই রিক্স নিতে পারব না আমি এক্ষুনি রওনা দিচ্ছি।
ফাইয়াজের কথা শুনেই ফারজানা তালুকদার আর ফজলুর তালুকদার হতভম্ব,
ফারজানা তালুকদার বললেন,, বিয়ের আগেও কি তুমি তার সঙ্গে থেকে থেকে প্রটেক্ট করেছিলে নাকি?
বিয়ের আগের কথা আলাদা আম্মু, তখন সে আমার বউ ছিল না, এখন সে আমার বউ,
ও আচ্ছা তাই না, আচ্ছা ঠিক আছে, এখন যাও ফ্রেশ হয়ে এসো খাবার খাবে, পাগলামি বন্ধ কর,,
আম্মু,,
আজকের দিনটা মানিয়ে নাও কাল সকালে আমরা সবাই মিলে রওনা হব,,
সত্যি আম্মু,,
তুমি কি দিন দিন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছ নাকি?
ফাইয়াজ আর কিছু না বলেই মুখ গোমরা করে নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে চলে গেল,,
ফারজানা তালুকদার বিয়ে বির করে বললেন,, একদম বাপের ধারা পেয়েছে,,
ফজলুর তালুকদার সেটা শুনতে পেয়ে বললেন,, তোমার কি কোনভাবে হিংসা হচ্ছে ছেলে বউকে বেশি ভালোবাসে বলে?
হ্যাঁ হচ্ছেই তো, হিংসার জলে পুড়ে মরে যাচ্ছি আমি, অদ্ভুত বাপ ছেলে। সারা জনম এই লোক আমাকে জ্বালিয়ে মারলো। একটা রাত গিয়ে বাপের বাড়িতে কাটাতে পারলাম না। এখন আমার মেয়েটাকে তোমার ছেলে জ্বালিয়ে মারছে।
ফজলুল তালুকদার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বললেন,, এতে আমার কি করার তোমাকে ছাড়া তো আমার নিঃশ্বাসই চলতে চায়না। শেষে যদি দম আটকে মরে যাই? তাইতো তোমাকে কোনভাবেই ছাড়া যায় না।
বুড়ো বয়সে ভীমরতি হয়েছে নাকি?
আমি ভুল কি বললাম,,
হ্যাঁ ছেলেটাও তো পেয়েছে সেই একই রোগ মেয়েটাকে আমার জালিয়ে মারছে।
ফারজানা তালুকদার আর একদন্ড দাঁড়ালেন না চলে গেলেন তার কাজে। তবে স্বামীর আড়াল হলেই তার মুখে চলে আসে মিষ্টি হাসি। এই লোকটাকে ছাড়া তিনি থাকতে পারেন নাকি?
আল্লাহ তাকে দুহাত ঢেড়ে দিয়েছেন সুখ আলহামদুলিল্লাহ। ছেলের জন্যও খুঁজে পেয়েছেন যোগ্য জীবন সঙ্গী। মেয়েটা যাওয়ার সময় তার মুখটা কি অন্ধকারটাইনা ছিল। বারবার পেছনে নিজের ঘরের দিকে তাকাচ্ছিল। পা যেন সামনে আগাচ্ছেই না এমন করে বাড়ি থেকে বের হল।
,
,
গ্রামের পরিবেশ এখন স্বাভাবিক। সবাই স্নিগ্ধাকে সানন্দে গ্রহণ করেছে। তবে একা দেখে দু একজন খোঁচা মারতেও ছাড়েনি,,
কিরে স্নিগ্ধা একা কেনো।
এতদিন পর এলি তাও আবার জামাই ছাড়া?
কেনো আব্বু তোমাদের কিছু বলেনি নাকি? নাকি তোমরা দওয়াত পাওনি কাকি?
দাওয়াত? কিসের দাওয়াত? আমি তো বেড়াতে গিয়েছিলাম আজই এলাম। আর তোকেও দেখলাম তুইও এলি।
যাইহোক দাওয়াত না পেলেও পেয়ে যাবে,, এই বলে মুচকি হেসে স্নিগ্ধা চলে গেল তার বাড়ির ভেতরে।
অনেকদিন পর মেয়েকে কাছে পেয়ে সিদ্দিক তালুকদার শারমিন তালুকদার আবেগে আপ্লুত।
সাথী আর সায়ানও বোনকে পেয়ে ভীষণ খুশি।
,
,
ফাইয়াজ এর কাছে একটা দিন যেন হাজার বছরের সমান মনে হচ্ছে। কয়েক ঘন্টা পর তার মনে হচ্ছে সে যেন তার স্নিগ্ধপরী কে কতদিন দেখেনি।
মেয়েটাকে কতগুলো ফোন দিলো ধরল না। এখন আবার ফোনটা বন্ধ করে রেখেছে।
একবার হাতের কাছে পাই তোমার অভিমান আমি এমনভাবে ছুটাবো আর অভিমান করতেই ভুলে যাবে। যেই অভিমানে তোমাকে আমার থেকে দূরে সরায় সেই অভিমানের কোন প্রয়োজন নেই,,,
ফাইয়াজ শেষমেষ অস্থির হয়ে সিদ্দিক তালুকদারকে ফোন দিয়ে বসে,,
আসসালামু আলাইকুম আব্বু,,
সিদ্দিক তালুকদার গম্ভীর স্বরে সালামের জবাব দেন,,
ওয়াআলাইকুমুসসালাম,,
কেমন আছেন?
হুম ভালো, তা কি মনে করে ফোন করলে,,
ফাইয়াজ মনে মনে ভাবে, এ তো দেখছি ভিলেন শশুর, আমার বউটাকে কাছে রেখে আবার বলছে কি মনে করে ফোন করেছে! ইচ্ছে তো করছে এই লোককে বউ ছাড়া দুদিন রাখতে ।
আসলে আব্বু স্নিগ্ধার ফোন বন্ধ তাই যদি ওকে একটু ডেকে দিতেন,,
ও তোমার সঙ্গে এই মুহূর্তে কথা বলতে চাইছে না। মেয়েটাকে তো আমি তোমার হাতে তুলে দিয়ে এসেছিলাম। আর সেই তুমি মেয়েটাকে একাই ছেড়ে দিলে ,,
আব্বু আসলে,,
থাক আর বলতে হবে না, আমার মেয়েটাকে আমি আর অত সহজে তোমার কাছে পাঠাচ্ছি না। একা ছেড়ে দাও আমার মেয়েকে? দেখে নেব, বলে কল কেটে দিলেন সিদ্দিক তালুকদার। মেয়ে দিকে তাকিয়ে বললেন, ছেলেটাকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার কি দরকার ছিল তোর বলতো?
তো কি করবো আমাকে বকা দিয়েছে না খালি খালি।
আমি জানি তোদের বাচ্চাদের কি মনোভাব। আমি যাই আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।
ফোনটা কেটে গেলে ফাইয়াজ হতভম্ব হয়ে বসে রইল,, কি বলল শ্বশুর মশাই? মেয়ে দিবে না? আরে ওটা কি এখনো তার মেয়ে আছে নাকি? ওটা তখন আমার বউ! আমিও দেখবো কিভাবে আমার বউকে আটকে রাখে।
সারা ঘরময় পায়চারি করছে ফাইয়াজ। সারাদিনটা তো যেমন তেমন কাটলো রাতটা কিভাবে কাটাবে ভেবেই অস্থির ফাইয়াজ। শেষ পর্যন্ত আর টিকতে না পেরে বাবা মায়ের ঘরের সামনে গিয়ে নক করো।
ফারজানা তালুকদার বললেন, কিরে বাবা কিছু বলবি?
আম্মু কালকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার কি দরকার চলনা এখনই যাই!
ফারজানা তালুকদার এবার বেশ বিরক্ত হয়ে বললেন,, আর তো মাত্র কয়েকটা ঘন্টা এতটুকু সময় অপেক্ষা করতে পারবি না?
আম্মু,,
আরে আশ্চর্য তো ফাইয়াজ তুই কি বাচ্চা হয়ে গেছিস?
আব্বু এর প্রতিশোধ কিন্তু আমি নিব, তোমাকেও কিন্তু দুই দিন বউ ছাড়া রাখবো বলে দিলাম।
তবে রে হতচ্ছাড়া বাবার সঙ্গে কিভাবে কথা বলছিস?
তো কি করব আমাকে তোমরা বউ ছাড়া করেছো না? এই বলে রাগে গজগজ করতে করতে ফাইয়াজ চলে গেলো নিজের ঘরে,,,
সেদিন বিয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত একদিনও স্নিগ্ধাকে ছাড়া কাটায়নি ফাইয়াজ । আজ আর ফাইয়াজের ঘুম হলো না। সারারাত অস্থিরতায় কেটে গেল কিছুক্ষণ পায়চারি করল, কিছুক্ষণ আকাশ দেখল, কিছুক্ষণ কাজ করে, এভাবেই রাতটা পার হয়ে গেল।
অন্যদিকে স্নিগ্ধাও এভাবে ছটফট করতে করতে রাত পার করল। মনে মনে ভাবলো ঢের হয়েছে এমন প্লান আর সে জীবনেও করবে না।
ভোররাত থেকে ফাইয়াজ তৈরি হয়ে বসে আছে। তাই ফারজানা তালুকদার আর ফজলুল তালুকদার বেশি দেরি করলেন না ভোরের আলো ফোটার আগেই রওনা হয়ে গেলেন।
শশুর বাড়ি এসে ফাইয়াজ স্তব্ধ। তালুকদার বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো। যেন একটা বিয়ে বাড়ি। ফাইয়াজদের গাড়ি থামলো একটা বড় সাজানো গেটের সামনে ।
গেটের উপরে বড় বড় অক্ষরে লেখা,
"শুভ বিবাহ "
স্নিগ্ধা
আর মাত্র একটা পর্ব দিয়ে এই গল্পটা শেষ করে দিব। বেশি টানা হেচড়া করে গল্পটার সৌন্দর্য নষ্ট করতে চাইছি না। অতিরিক্ত টানাহেচড়া করলে হয়তো আপনাদের কাছেও বিরক্তির কারণ হতে পারে। আপনাদের আব্দারে আরো কয়েকটা পর্ব দিলাম এই আর কি।