Story of Neel Maloti Lota

Story of Neel Maloti Lota Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Story of Neel Maloti Lota, Barishal.

আমি সাহিত্যে কাঁচা, অজ্ঞাত,,,,
শুধু কল্পনাগুলো শব্দে সাজাই ✍️✍️
কল্পনা বিলাসী আমি, কল্পনায় হাজারো ছবি আঁকি,,,


আমার ২য় পেজ সবাই ফলো করে রাখবেন: https://www.facebook.com/share/14FYzU9TopC/

 #মায়াবিনী_তরঙ্গিনী #পর্ব_৩৫ #নীল_মালতীলতা নতুন সতেজ একটা সকাল।  চারিদিকে নতুন সূর্যের সোনালী আলো। পাখির ঠোঁটের মিষ্টি ...
05/11/2025

#মায়াবিনী_তরঙ্গিনী
#পর্ব_৩৫
#নীল_মালতীলতা

নতুন সতেজ একটা সকাল। চারিদিকে নতুন সূর্যের সোনালী আলো। পাখির ঠোঁটের মিষ্টি ডাক কিচিরমিচির কিচিরমিচির।

সূর্য যেমন রাতের অন্ধকার কে নিভিয়ে পৃথিবী আলোকিত করে ঠিক তেমনি মানুষকেও নতুন স্বপ্নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। পুরনো বিষণ্নতা ভুলিয়ে নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন আশা জাগায়।

কিন্তু আজকের সিকদার বাড়ির সকালটা যেনো আগের চেয়ে অনেকটা ভিন্ন। কেউ কারো সঙ্গে মন খুলে একটা কথাও বলতে পারছে না।
যেই মানুষগুলো আপন মানুষদের সঙ্গে কথা না বলে দিন শুরু করতে পারতো না আজ তাদের মনটা বিষন্নতায় ভরা।
আজ প্রায় মাস খানিক পরে নাজিমুদ্দিন শিকদার নাসির সিকদার দুই ভাই একসঙ্গে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিল, তবে তাদের দুই ভাইয়ের দৃষ্টি ছিল ভিন্ন আলাদা।
যদিও নাসির শিকদারের কর্মকাণ্ড ক্ষমার অযোগ্য, তবুও সে মুখ ফুটে ভাইয়ের কাছে এখন অব্দি কিছুই বলেনি। যখন দেখলো তার সত্যটা লুকানোর আর উপায় নেই তখন শুধু নিজের দোষটুকু স্বীকার করে নিয়েছে ব্যস। হয়তো সে ভাবছে সে যা করেছে তা তার প্রাপ্য পাওনার জন্য করেছে তাই ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।

এতদিন তামান্না শিকদার এই বাড়িতে আসার জন্য ছটফট করছিলেন। আজ কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে । ইচ্ছে করছে এক ছুটে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে। তবুও কিছু করার নেই। স্বামীর অনুরোধে দাঁত কামড়ে কয়েকটা দিন এই বাড়িতে পড়ে থাকতে হবে।

আবার এই বাড়িটা ছাড়তে হবে মনে পড়লেও বুকের ভেতর কেঁপে ওঠে। সেই বিয়ের পরের দিন থেকে আজ পর্যন্ত এই সংসারটাকে প্রাণ দিয়ে আগলে রেখেছে। এইবাড়ির কোনায় কোনায় কত স্মৃতি। এইবাড়ির মানুষগুলোর সঙ্গে নিজের সন্তানদের সঙ্গে কাটানো কত হাসি কান্না মিলে আছে এইবাড়ির দেয়ালে দেয়ালে।

আবার স্বামীর কথা মনে পড়লেও চোখ থেকে অশ্রু ঝরে। মানুষটা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এই বাড়িটা তৈরি করল সবাই একটুখানি মিলেমিশে সুখে দুখে হাসি কান্নায় এক সঙ্গে বাঁচার জন্য থাকার জন্য। সবাইকে খুশি রাখার জন্য, সুখে রাখার জন্য নিজেকে সময় না দিয়ে সম্পদের পিছনে ছুটলো অর্জন করল আজ তা কেমন ফিকে হয়ে গেলো।

হৃদয়ের বিষন্নতা হৃদয়ে লুকিয়ে নেমে পড়লেন আয়োজন করার জন্য। আজ নতুন অতিথি আসবেন। আয়োজনে কোন ত্রুটি রাখতে চান না তামান্না শিকদার। কাজের লোকের সাহায্য নিয়ে সবকিছু নিখুঁতভাবে গোজগাছ করার চেষ্টা করছেন তামান্না সিকদার।
রেহানার চোখেমুখে একদিন আগেও যে উদাসীন মনমরা ভাবটা ছিলো তা আজ আর দেখা যাচ্ছে না। ঠিক আগের মত উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। হয়তো স্বামীর সব কথা শুনে সে বেশ উৎসাহ পেয়েছে।

বড় জায়ের কাছে এসে বেশ ভাব নিয়ে বলল,,
কি ব্যাপার ভাবি এত আয়োজন?

তামান্না সিকদার মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে উত্তর দিলেন, হ্যাঁ নতুন অতিথি আসবেন।

ওওও, কই আমাদেরতো জানালে না,,

ততক্ষণে নাজিমউদ্দিন শিকদার উপস্থিত হলেন ড্রয়িং রুমে। একজন কাজের লোক ডেকে ডেকে পাঠালেন নিজের ভাই ভাইয়ের বউকে সাথে নিরব মোহিনীকেও। তারা সবাই উপস্থিত হয় ড্রয়িং রুমে, যে যার মত জায়গা বেছে দখল করে বসে পড়ে।

তামান্না শিকদার আগে থেকেই জানেন এখানে কি আলোচনা হবে, তাই তিনি আর এখানে ভিড় জমাননি, শাশুড়িকে ধরে ধরে এ পর্যন্ত এনে বসিয়ে দিয়ে গেছেন। যদিও নিজের মাকে নাজিমুদ্দিন শিকদার আগেই সবটা জানিয়েছে তবুও জরুরী আলোচনায় মাকে তো থাকতেই হয়।

মিনিট পাঁচেক নিরবতা চলে। নাসির শিকদার সেই আগের মত ভাইকে ভাইয়া বলে সম্বোধন করে জানতে চায় না কি জন্য ডেকেছে। নিরব সেও চুপচাপ। ভীষণ কষ্ট হয় নাজিমউদ্দিন শিকদারের।

তবুও তিনি নিজেকে সামলে বলেন,, আগামী শুক্রবার বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান হবে। আর তিন দিন বাদেই। আশা করি তোমরা স্বাভাবিক আচরণ আমাকে উপহার হিসেবে দেবে।

নাসির সিকদার চুপচাপ, তবে রেহানা বলল,,
কিসের অনুষ্ঠান ভাইয়া সেটা তো বললেন না,

নওশীনের বিয়ের অনুষ্ঠান। তোমাদের যদি কাউকে দাওয়াত দেওয়ার থাকে অবশ্যই দিতে পারো। মোহিনীর বাবা মার সঙ্গে যেহেতু আমার একটা ভালো সম্পর্ক রয়েছে আমি তাদেরকে দাওয়াতটা দিয়ে দিয়েছি। তারা হয়তো চলে আসবেন কিছুক্ষণ এর মধ্যে। তোমাদের যদি আর কারো দাওয়াত দেওয়ার থাকে তো তোমরা সেটা আমাকে জানিও লিস্টে অ্যাড করে দিব। আর তাদের দাওয়াতটাও তোমরা দিয়ে দিও।
ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,, নাসির আমি তোমার থেকে আমার সকল আত্মীয় স্বজনের কাছে ভালো স্বাভাবিক আচরণ চাই। যেমনটা আগে ছিল।

আমি আগের মতই আছি। চিন্তা করো না কারো কোন ক্ষতি হবে না।

বেশ তাহলেই ভালো,,

,

,

বিশাল খোলা ছাদের নিচে মেঝেতে বিষন্ন মনে বসে আছে নওশীন। তার কাঁধে রয়েছে তার প্রিয় সঙ্গী মিষ্টি। আর কোলের ভিতর একটা সাদা পায়রা নিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে নওশীন। নওশীন পায়রাটার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে এক মনে তাকিয়ে আছে দূরে কোথাও। হয়তো কিছু ভাবতে ভাবতে ভাবনার এতটাই গভীরে চলে গিয়েছে যে তার দৃষ্টির কোন নির্দিষ্ট স্থিরতা নেই।
তার চারিপাশে বেশ কিছু কবুতর উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। তারা সংখ্যায় বেশ কম। যা নওশীনের বিষন্নতা আবারও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

আজকাল বিষন্নতায় মন খারাপের সময় বিদেশি জামাইটাকে ভিষন মনে পড়ে।
রাতেই তো বললো সকালে কিছু একটা সারপ্রাইজ থাকবে, অথচ আটটা থেকে নয়টা বাজতে চলল এখনো পর্যন্ত মানুষটার কোন খোঁজ খবর নেই।
বেশি রাত করে দুজন গল্প করে ঘুমাতে গিয়েছিল। বিছানায় এপাশাওপাশ করতে করতেই আজান হয়ে গেল। তাই আর ঘুমানোর চেষ্টা না করে তাৎক্ষণিক নামাজ পড়ে ছুটলো সিয়ামের ঘরের সামনে। বার কয়েক টোকা দিয়েও যখন ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ পেলোনা অবাক হয়ে ঢুকলো ভিতরে। রুমের ভিতর যখন সিয়ামের চিহ্নটুকু পেলো না ভারী অবাক হল নওশীন। মসজিদে নামাজ পড়তে গেলেও এতক্ষণে তো নামাজ পড়ে আসার কথা।
লোকটা যখন তখন কাজে বেরিয়ে যায় অথচ সারাদিন যাকে বউ বউ করে ডাকে তাকে একবার বলে পর্যন্ত যায় না ।
গত রাতেই সারপ্রাইজের কথা বলল, মাত্র কয়েক ঘণ্টা হল এর মধ্যেই সারপ্রাইজের কথা ভুলে গেল? এমন আবোল তাবোল ভেবে নওশীনের মন বিষন্নতায় আরো ভরে গেল। সেই থেকেই মনে মনে নওশীন বেশ অপেক্ষা করছে কখন সিয়াম ফিরবে আর সে তার সারপ্রাইজ পেয়ে যাবে ।

নওশীনের আবোল তাবোল ভাবনার মধ্যেই হঠাৎ তার মনে হল একটা গাড়ি তাদের বাড়ির ভেতরে ঢুকেছে। এই সময় আবার কে আসতে পারে ভেবে ছাদের রেলিংএ গিয়ে দাঁড়ালো নওশীন।

গাড়িটা সিয়ামের গাড়ি। নওশিনের ধারণা ছিল সিয়াম বোধ হয় এই দেশে এসে একটা গাড়ি কিনে ফেলেছে বিদেশী বড়লোক মানুষ। তাদের বাড়িতেই তো দু চারটা গাড়ি আছে সেখান থেকেই তো একটা চালাতে পারতো এমনটা ধারণা ছিল নওশীনের। তবে সেটা মনের মধ্যেই থেকে গিয়েছিল। এখন তার মনে হচ্ছে এটা সরকার থেকে পাওয়া হয়তো গাড়ি।
নওশীনের ভাবনার মধ্যে দেখতে পেল সিয়াম গাড়ি থেকে নেমেছে সাথে ফ্রন্ট সিট থেকে একটা মেয়েও নেমেছে । মেয়েটা ছুটে গিয়ে সিয়ামের হাত ধরে ভীষণ উৎসাহের সঙ্গে চারিপাশ দেখছে আর কিছু বলছে, তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে ভীষণ প্রশংসাও করছে।
নওশীনের হৃদয় ধক করে উঠলো। গলা শুকরিয়া এলো, মনে পড়ে গেল নিরব যেদিন বিদেশ থেকে এসেছিল সেই দিনের কথা। সিয়ামওতো সেই দিনই এসেছিল।

নওশীনের আর কিছু দেখার ইচ্ছে হলো না, সে দৌড়ে নিচে চলে গেল উদ্দেশ্য সিয়ামের সম্মুখ,, পথে ঘরে গিয়ে মিষ্টিকে খাচায় রেখে এলো। মিষ্টিকে নিয়েও এখন ভয় হয় একটু হাতছাড়া করতে মনে চায় না। তবে এই মুহূর্তে সে সিয়ামের সামনে ওকে নিয়ে যেতে চায়না আগে পরিস্থিতি বুঝতে চায়।

মিষ্টি একদম ঘর থেকে বের হবি না। কেউ কিছু দিলে একদম খাবি না মনে থাকবে?

মনে থাকবে নশী, খুব মনে থাকবে।

আর তোকে কেউ কষ্ট দিতে নএলে একদম উড়ে পালিয়ে আমার কাছে চলে যাবি।

ঠিক আছে বাবা ঠিক আছে,,

নওশিন নিচে আসতে আসতে ততক্ষণে কলিং বেলটাও বেজে উঠল। সবাই সদর দরজার দিকে ঘুরে তাকালো ততক্ষণে নওশীন দৌড়ে গিয়ে দরজার নবে হাত লাগালো।
নওশীনকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে সবাই বেশ অবাক হলেও তবে মুখে কেউ কিছুই বলল না।

দরজাটা খুলেই নওশীন থমকে গেল।
একি এখানে তো আরো মধ্য বয়স্ক দুজন নরনারী রয়েছেন। নওশীন এতটাই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল যে তাদেরকে সালাম প্রদান করতেও ভুলে গেল।
মিনিট খানেক নিরবতা চলল। সিয়াম নিজের বাবা-মাকে ইশারা করলো। সিয়ামের মা সাজিয়া সাখাওয়াত বুঝলেন এটাই তার পুত্রবধূ।
তিনিও বুঝতে পারলেন মেয়েটা হঠাৎ তাদেরকে এইভাবে দেখে ভরকে গিয়েছে। সিয়াম যে মেয়েটাকে কিছু জানায়নি এ ব্যাপারে তাদেরকে সিয়াম বলেছে। সাজিয়া নিজেই সালাম দিলো,,

সিয়াম তার বাবা মার সঙ্গে নওশীনের কথা আগেই বলেছে, যখন তার ছবি দেখে তাকে পছন্দ হয়েছে। সাজিয়া তো এমনটা শুনে যারপরনাই খুশি হলেন, নিজের দেশের বাঙালি একটা মেয়েকে পুত্রবধূ করতে পারবেন এর চাইতে খুশি সেই মুহূর্তে আর কোন কিছু ছিলই না। এরপর তিনি বেশ কয়েকবার সিয়ামের কাছে ছবি দেখতে চেয়েছিলেন। সিয়ামের এক কথা সরাসরি দেখবে না হলে আনন্দ কমে যাবে না!

আসসালামু আলাইকুম মামনি, কেমন আছো তুমি? নওশীনের গালে হাত বুলিয়ে হাতে চুমুএকে বললেন,, মাশাআল্লাহ ভারি মিষ্টি মেয়ে আমাদের।
নওশীন বেশ লজ্জা পেল ইস মেহমানদের সামনে দাঁড় করিয়ে নিজেই সালাম তো দিলই না উল্টো এখনো পর্যন্ত সালামের জবাবটাও দিল না। লজ্জায় মাথা নত করে সালামের জবাব দিল নওশীন।

ততক্ষণে নাজিম উদ্দিন সিকদার আর তামান্না শিকদারও দরজার কাছে এসে পৌঁছেছেন। বাকিরাও দাঁড়িয়ে রয়েছে অপেক্ষা করছে তাদের ভেতরে আসার।

নাজিমুদ্দিন সিকদার এগিয়ে সালাম আদান প্রদান করলেন। সিয়ামের বাবা সাজ্জাদ সাখাওয়াতের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে কোলাকুলি করলেন। এবং একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন।
মেয়েকে উদ্দেশ্য করে তামান্না সিকদার বললেন,
কি ব্যাপার নওশীন মা, আরে এনারা তোমার আরেক বাবা মা, এনাদেরকে তুমি এভাবে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছো?

সাজিয়া বেগম হেসেই বললেন,, আর বলবেননা বেয়ান, ছেলে আমাদের সব বলেছে, মেয়েটাকে না জানিয়েই সমস্ত আয়োজন করে ফেলেছে। এমনকি আমরা আসবো সেটাও নাকি মেয়েটাকে জানায়নি। ভাবুন মেয়েটা কতখানি ভরকে গিয়েছে আমাদের দেখে।
মামনি ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই আমি তোমার আরেক মা। আমার ছেলেটা নিশ্চয়ই এতদিন তোমাকে জ্বালিয়ে মেরেছে, তবে চিন্তা করো না এখন আমি এসে পড়েছি এবার আমরা তিন মা মেয়ে মিলে ওকে জ্বালিয়ে মারবো । আবার আমার মেয়েটাকে যখন বিদেয় করে দেব তখন আমরা দুই মামা মিলে জালাবো

তিম মা মেয়ে শুনে চোখ মেলে তাকালো নওশীন তাদের দিকে বোঝার চেষ্টা করলো কথাটার অর্থ,

বুঝলে না তো তিন মা মেয়ে কোথা থেকে হলাম, এরপর তিনি সিয়ামের বোন সারাহ কে দেখিয়ে বলল, এই যে আমার মেয়ে মানে তোমার আরেক বোন, হলো না আমরা তিন মা মেয়ে,

সারাহ বলল,, একদম আমাকে বিদায় করার কথা বলবেনা, আমি তোমাদের সবাইকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছি না।

সিয়ামের বাবা রসিকতা করে বললেন,, তোমাদের দল তো ভারি হয়ে গেল, বলি আমাকেও তো তোমাদের দলে রাখতে পারতে!

সারাহ হাসি মুখে বলল,, একদম না আব্বিজান। আপনি আমাদের দলে চলে এলে ভাইয়া একদম একা হয়ে পড়বে।

ওহ তাই, তাহলে তুই বরং আমার দলের থেকে যা তাহলে তো হয়ে গেল। ভালোবাসা দেখাস আবার দলেও থাকিস না, এ আবার কেমন ভালোবাসা।

এই না না একদম না আমি ভাবি আর আম্মুর দলে থাকবো। আমরা মেয়েরা তিনজন এক দলে তোমরা ছেলেরা দুজন এক দলে, আমাদের দল ভারি।

সারাহর কথা শুনে উপস্থিত সবাই প্রফুল্ল হাসলো। সাজিয়া বললেন, আমার মেয়েটার একটা বোনের বড্ড শখ ছিল, এখন ঠিক পেয়ে গেল, মামনি তোমার ছোট বোনটা কিন্তু ভারী দুষ্ট। একদম লাই দেবে না, ঠিক আছে,,

নওশীন নিজেকে নিজেই ধিক্কার জানালো ছি মানুষটাকে তুই ভুল বুঝতে পারলি নওশীন? যে মানুষটা তোর সমস্ত বড় বড় বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাকে তুই অবিশ্বাস করলি? কুল নওশীন কুল সম্পর্কে বিশ্বাস রাখতে হয় এভাবে হুটহাট সন্দেহ মনের মধ্যেও আনতে নেই,, নওশীনের ভীষণ খারাপ লাগে তখনকার ভাবনার জন্য।
আবার সিয়ামের পরিবারের সবার কথা শুনে কেন জানি ভীষণ লজ্জা লাগছে এবং ভীষণ ভালো লাগছে সে মাথাটা নিচু করে রয়েছে।

ইস আমি মোটেও দুষ্টু নয়। আমি অনেক ভালো। আমি আর ভাবিআপু অনেক মজা করবো অনেক আনন্দ করবো

ভাবিআপু,,

হ্যাঁ আমার একটা আপুর শখ ছিল আর ভাবিরও তাই আমি দুটো মিলিয়ে বলবো ভাবিআপু ব্যাস আপু আর ভাবি দুজনই পেলাম।

নাজিম উদ্দিন সিকদার আর তামান্না শিকদারের ভীষণ ভালো লাগলো, সিয়ামের ব্যবহারে তারা আগেই মুগ্ধ। মেয়েকে নিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলেন। আর এখন এই পরিবারটা দেখে তো তাদের আর কোন চিন্তাই রইল না ।

নাজিমুদ্দিন সিকদার বিনয়ের সঙ্গে বললেন, বেয়াই বেয়ান আপনারা প্লিজ ভিতরে আসুন, আর কতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবেন, কতটা পথ জার্নি করে এলেন। এসো মামনি ভেতরে এসো। সিয়াম বাবা সবাইকে নিয়ে ভেতরে এসো।

আরে বেয়াই মশাই এত ব্যস্ত হবেন না, চলুন আস্তে ধীরে যাই।

অতিথীরা সবাই ভেতরে এসে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন।
নাসির শিকদারও সিয়ামের বাবা-মার সঙ্গে বেশ ভালো ভাবেই ব্যবহার করল। মাঝে সিয়ামের সঙ্গে চোখে হলে তিনি চোখ সরিয়ে ফেলেন। এতে সিয়াম মনে মনে বেশ মজা পায়।

সাজিয়া এবং সাজ্জাদ সাখাওয়াত হালিমা বেগমের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই মিশে যান তারা তো বলেই বসেন,, আমাদের মা বেঁচে নেই কিন্তু আপনাকে দেখে আমাদের মায়ের কথা মনে পড়ে গেল,

হালিমা বেগমও তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, আমাকে তোমরা তোমাদের মা মনে করতে পারছ না তাইতো?

না না মোটেও এমনটা নয় আপনাকে আমাদের মায়ের মত মনে হচ্ছে তাই তো বলি ছেলে আমার দাদীও জোগাড় করে ফেলেছে।

বড় বৌমার তারা অনেক দূর থেকে জার্নিকরে এসেছে তুমি তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা কর। আর এই বেলা তাদের খাবারটা তাদের ঘরেই পাঠাও।

এত ব্যস্ত হবেন না দয়া করে, আমরা এখানে এসে খেতে পারবো শুধু ফ্রেশ হওয়াটা প্রয়োজন।

না তোমাদের এবেলায় আর ঘর ছাড়তে হবে না বিশ্রাম করো যাও।
নওশীন চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলি কেন, আশ্চর্য কোথায় নিজের শ্বশুর শাশুড়ি এসেছে তাদের আপ্যায়নে লেগে পড়বে তা না চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

আহা ওকে এভাবে বলছেন কেন, আমাদের নতুন দেখছে তাই হয়তো লজ্জা পাচ্ছে আস্তে আস্তে আমাদের মেয়েকে আমরা এতটাই আপন করে নেব যে আপনাদের কথা মনে করার সময় পাবেনা।

সারাহ নওশীনের হাত জড়িয়ে ধরে বলে আমি কিন্তু ভাবিআপুর সঙ্গে থাকবো।

তামান্না সিকদার হেসে বলেন বেশ তো নওশীন মামনি ওকে নিয়ে যাও তোমার ঘরে।
বেয়ান আপনারা আসুন আপনাদের ঘর দেখিয়ে দিচ্ছি।

হ্যাঁ চলুন, ছেলের মুখে তো আপনার আরো ছেলে মেয়ের কথা শুনলাম ওদেরকে তো দেখলাম না এখানে।

আছে কোথাও হয়তো টের পায়নি অতিথি এসেছে তাহলে এখানে এসে অবশ্যই ভিড় জমাতো। আপনার বিশ্রাম নিন ওদের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে।

চলবে,,,

 #মায়াবিনী_তরঙ্গিনী  #পর্ব_৩৫সিয়াম গাড়ি থেকে নেমেছে সাথে ফ্রন্ট সিট থেকে একটা মেয়েও নেমেছে । মেয়েটা ছুটে গিয়ে সিয়...
05/11/2025

#মায়াবিনী_তরঙ্গিনী
#পর্ব_৩৫

সিয়াম গাড়ি থেকে নেমেছে সাথে ফ্রন্ট সিট থেকে একটা মেয়েও নেমেছে ।

মেয়েটা ছুটে গিয়ে সিয়ামের হাত ধরে ভীষণ উৎসাহের সঙ্গে চারিপাশ দেখছে আর কিছু বলছে,
তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে ভীষণ প্রশংসাও করছে।

নওশীনের হৃদয় ধক করে উঠলো।
গলা শুকরিয়া এলো, মনে পড়ে গেল নিরব যেদিন বিদেশ থেকে এসেছিল সেই দিনের কথা। সিয়ামওতো সেই দিনই এসেছিল।
✍️ #নীল_মালতীলতা

মনে হচ্ছে গাইস?
কি হতে চলেছে?
পর্ব- ৩৫ এর অংশ,,

05/11/2025

#মায়াবিনী_তরঙ্গিনী

 #মায়াবিনী_তরঙ্গিনী আজকাল বিষন্নতায় মন খারাপের সময় বিদেশি জামাইটাকে ভিষন  মনে পড়ে।রাতেই তো বললো সকালে কিছু একটা সারপ...
04/11/2025

#মায়াবিনী_তরঙ্গিনী

আজকাল বিষন্নতায় মন খারাপের সময় বিদেশি জামাইটাকে ভিষন মনে পড়ে।

রাতেই তো বললো সকালে কিছু একটা সারপ্রাইজ থাকবে, অথচ আটটা থেকে নয়টা বাজতে চলল এখনো পর্যন্ত মানুষটার কোন খোঁজ খবর নেই।

✍️ #নীল_মালতীলতা

 #মায়াবিনী_তরঙ্গিনী #পর্ব_৩৪ #নীল_মালতীলতা গভীর রাত,,  চারিদিক অন্ধকারে ঘেরা, যত দূরেই দৃষ্টি যায় শুধু অন্ধকার, এমনকি ...
03/11/2025

#মায়াবিনী_তরঙ্গিনী
#পর্ব_৩৪
#নীল_মালতীলতা

গভীর রাত,,
চারিদিক অন্ধকারে ঘেরা, যত দূরেই দৃষ্টি যায় শুধু অন্ধকার, এমনকি কাছের জিনিসগুলোও অন্ধকারে ঢেকে গেছে। আশেপাশে কোথাও কোন আলো নেই। আলো নেই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা কিছু মানুষের মনেও। হয়তো আলোর সন্ধান মিলবে এই অপেক্ষায় তারা। সবাই এখন গভীর নিদ্রায়। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে হয়তো সবাই একটু আরামের জন্য চোখ বন্ধ করেছে। কেউ কেউ হয়তো যন্ত্রণা ভুলে থাকার জন্য ঘুমানোর চেষ্টায় ছটফট করছে। ল্যাম্পপোস্টের আলো গুলো কেমন নিভে রয়েছে।
হয়তো লোডশেডিং হয়ে গেছে। কিছু কিছু মানুষের মনে হয়তো এই লোডশেডিংটাও একটা দুঃখের মত লাগছে।

এই যেমন বারান্দায় পাতানো চেয়ারে বসে নাজিমুদ্দিন শিকদার আকাশের পানে তাকিয়ে রয়েছেন। পাশেই বসে আছে তার পথ চলার সঙ্গী তার সহধর্মিনী। যিনি শুধু একধ্যানে স্বামীর চোখ পানে তাকিয়ে রয়েছেন।
হয়তো তার ভেতরের দুঃখের পরিমাণ ঠিক কতখানি আন্দাজ করার চেষ্টা করছেন, তবে বরাবরি ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি নিজেকে নিয়ে ভাবছেন না। এই মানুষটা তো সব সময় তার পাশে ছায়া হয়েছিল। হাজারটা আঘাত আসলেও তখন এই মানুষটা ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার আবার দুঃখ কিসের? কিন্তু এই মানুষটার পাশে থেকেও তার দুঃখ মোছাতে পারলো না আজ তার সহধর্মিনী হয়ে এটা তার বড় আফসোস ।

আজকের গভীর রাতটা চারপাশের সবকিছুই কেমন যেন বেশি নিস্তব্ধ লাগছে। শুধু নিজেদের নিঃশ্বাসের শব্দ বারবার নিজেদের কানে ভেসে আসছে। যাতে মিশে আছে একরাশ দুঃখ, একরাশ দীর্ঘশ্বাস।

নাজিম উদ্দিন শিকদারের চোখে একে একে ভেসে আসছে ছোটবেলা থেকে আজ বৃদ্ধের পথে যাওয়ার প্রত্যেকটা দৃশ্যপট। সেখানে তিনি খুঁজে পেলেন কি সুন্দর হাসি আনন্দ কিছু রাগ অভিমান। তার ছোট্ট ভাই, তার কত আবদার।

ইস, কেন হারিয়ে যায় পুরনো দিনগুলো?

আজ পুরনো দিনের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে, কই! এতদিন তো এভাবে ঘটা করে মনে পড়েনি?
আর আজ মনে পড়ে চোখের কোনায় এমন গরম অনুভূতি হচ্ছে কেন ? মনটা এত অশান্তই বা লাগছে কেন? পুরনো দিনের কথা মনে করলে তো মনটা অনেক শান্ত হওয়ার কথা! নিজের কাছে প্রশ্ন করেও কোন উত্তর মেলাতে পারেন না নাজিমুদ্দিন শিকদার

এত টাকা এত প্রপার্টি অর্জন করে সুখ দুঃখের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতিটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না।

চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে গেলো নাজিম উদ্দিন শিকদারের। বন্ধ দুই চোখ থেকে বেরিয়ে এলো দুই ফোটা অশ্রুদানা।
অবাক হয়ে দেখলেন পাশে থাকা তার সহধর্মিনী।
ভাবতে লাগলেন, কে বলল, পুরুষের চোখে পানি আসে না। ওই তো ওগুলো কি পানি নয়?

অনেকটা সময় পর স্বামীর কাঁধে হাত রাখলেন তামান্না শিকদার। বললেন,,
এত জোড় খাটাচ্ছেন কেন চোখের পানির উপরে? ওদের সঙ্গে এত কিপটামো করছেন কেন? ঝরতে দিন না ওদের!!

নাজিমউদ্দিন সিকদার ভাঙ্গা গলায় বললেন,, তুমি কোন অভিযোগ কেন করছ না? আমার সঙ্গে জীবন কাটিয়ে কি পেলে জীবনে?

আপনাকে! আপনাকে পেলাম।
আপনার মত একজন সঙ্গী থাকলে আর কিসেরই বা প্রয়োজন।

স্বামীর একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন,, এই হাত আমার মাথার উপরে যতদিন আছে, এই হাতের মালিকের ছায়া যতদিন আমার উপরে আছে, আমার কোন চিন্তা নেই। চলুন এখন আপনার একটুখানি বিশ্রামের প্রয়োজন। সামনে কত আয়োজন।

আমার কি মনে হয় জানো?

কি?

আমার সারা জীবনের অর্জন আমার নওশীন।

হ্যাঁ, আপনি ঠিক বলেছেন। মেয়েটাকে আমাদের ঘরে নিয়ে আসার পর, ঘরটা একেবারে আলোয় ভরে গেল। একেবারে জেনো সমস্ত বিপদ কেটে গেল। আমি মা হওয়ার সুখ অনুভব করলাম। গর্ভে ধারণ না করেও মা হলাম। এরপর গর্ভধারণ করেও মাতৃত্বের সুখ পেলাম। মেয়েটার হাসি আমাদের ঘরে এক একটা রহমত হয়ে এল।

হ্যাঁ, আর মেয়েটা দুঃখ পেলো এই সিকদার বাড়িটাও দুঃখ পেয়ে সবকিছু কেমন খানখান হয়ে গেল।

চলুন বিশ্রাম নিবেন, এক মনে আর কত জোর খাটাবেন।

হ্যাঁ, অনেক তো ভাবলাম সবাইকে নিয়ে, এখন একটুখানি নিজেকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত। নিজেকে সময় দেওয়া উচিত।

নওশীনের আম্মু!

হু,,

আজকে আমরা এই রাতটা চাঁদের আলো গায়ে মেখে এই আকাশের নিচেই কাটিয়ে দেই? গোটা জীবনের এই ব্যস্ততায় তোমার সঙ্গে তো দু'দন্ড বসে আকাশ দেখার সময় হয়নি। হয়তো তা নিয়ে তোমার ওই মন কুঠুরিতে রয়েছে গভীর অভিমান।

সত্যি কথা বলতে একটা সময় অভিমান হতো, আবার যখন চোখ বন্ধ করে আপনার সমস্ত কর্মকান্ড ব্যাস্ততা বাস্তবতা ভাবতাম, তখন সে অভিমান একেবারে পালিয়ে যেত। মন কুঠুরিতে আমি মোটেও সেটা জমা রাখতেই পারতাম না।

হেসে উঠলেন নাজিমুদ্দিন সিকদার,

আপনি হাসছেন?

আমি আবারও একটা ভুল করে বসলাম যে,

ভ্রু জোড়া কুঁচকে এলো তামান্নার, ভুল? আবার কি ভুল?

আমার ছোট্ট একটা বাগানে জীবন্ত দামি দুটো ফুল, সেই বাগানের একটা ফুলের গল্প আমি অপর ফুলটার সঙ্গে বললাম অথচ অপর যে ফুলটার সঙ্গে গল্প করছিলাম তার কোনো গুনগান এখনো অব্দি আমি করলাম না

মানে কি? আমি বুঝতে পারছি না,, আপনার মনের কথা আপনি আমাকে মন খুলে বলুন, আপনার ভালো লাগবে,

তোমাকে পেয়ে আমার কি মনে হচ্ছে জানো?

কি?

আমি নিশ্চয়ই জীবনে কোন না কোন ভালো কাজ করেছি? আর তার জন্য আল্লাহ তোমাকে আর নওশীনকে আমার জীবনে উপহার দিয়েছেন। তাইতো তুমি এত ভালো।

তামান্নার মনে শীতল হাওয়া বয়ে গেল, কোন স্ত্রী যদি স্বামীর মুখ থেকে এমন কথা শুনতে পায়, তার চাইতে ভাগ্যবতী আর কে বা আছে!

তামান্না!

হু,,

তোমার সঙ্গে কথা বলে মনটা খুব ভালো লাগছে, চল না একটু আমরা এই অন্ধকার রাতে হাতে হাত রেখে ফাঁকা রাস্তায় হাটি। ওই যে আমাদের বাগানটা ওইখানে গিয়ে হাটি, যাবে?

বেশ, তবে তাই হোক, এমন সুন্দর প্রস্তাব খানা ফিরিয়ে দেওয়ার হিম্মত কি এই ভাগ্যবতীর আছে?

,
,

আচমকা কাঁধে কারো হাত পড়তেই চমকে উঠল নওশীন,,

ভয় পেলে?

পিছন ফিরে সিয়াম কে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো নওশীন।

ভয় দেখিয়ে বলছেন ভয় পেলাম কিনা,

আমি তো তোমাকে ভয় দেখাতে চাইনি, তোমাকে ডাক দিয়েছি তুমি শুনতে পাওনি। এত কি ভাবছো বলতো? নাবিল তোমার ঘরে ঘুমিয়ে যে?

হ্যাঁ, কাঁদছিল ভীষণ। ছোট হলেও এতটাও ছোট নয় যে কিছু বুঝতে পারবে না। বেশ বুঝতে পারছে তার বাবা মায়ের সঙ্গে ভীষণ খারাপ হয়েছে। তাই ওকে আমি আমার ঘরে রেখেছি, এতক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম এখন ঘুমাচ্ছে, তাই একটু বারান্দায় এলাম,,

তুমি ঘুমাবে না?

ঘুম যে আসছে না,,

আমার যে কিছুই করার ছিল না মায়াবিনী।তোমাদের সকলের চোখের ঘুম কেড়ে নিতে আমি কখনোই চাইনি। আজ যদি আমি চুপ করে থাকতাম তাহলে যে আমার জবাবদিহি করতে হতো নিজের কাছে খোদার কাছে। যে অপরাধ করে আর তা জেনেও যে চুপ করে থাকে দুজনেই যে সমান অপরাধী।

আপনি এমন কথা কেন বলছেন? আজ আল্লাহ আপনার মাধ্যমে আমাদের সঠিক পথটা দেখিয়েছেন। এজন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া। আরো কোটি কোটি শুকরিয়া আমার জীবনে আপনাকে পাঠানোর জন্য।
যেখানে বছরের পর বছর পার করেও কেউ আমরা মানুষ চিনতে পারলাম না সেখানে আপনি একটা ছবি দেখে ভালোবেসে ফেললেন সম্পূর্ণ অচেনা ভিনদেশী একটা মেয়েকে, ভাগ্যিস আমাকে আপনার ভালো লেগেছিলো,,,,

নওশীনের কথা শুনে মুচকি হাসলো সিয়াম, বলল, তোমারকি কোন ভাবে আমাকে অবিশ্বাস হচ্ছে? মানে তুমি কি কোন ভাবে আমাকে ভয় পাচ্ছো।

কোন লাভ নেই কিন্তু, তোমাকে আমার সঙ্গে যেতেই হবে,,

নওশীন ফিরে তাকালো সিয়ামের দিকে, বলল, কোথায়?

কোথায় আবার অবশ্যই শ্বশুরবাড়িতে, এবং আমি যেখানে থাকবো তোমাকে তো সেখানেই থাকতে হবে তাই না? বাঙালি মেয়ে হয়ে এতোটুকু জানো না, নাকি বুঝতে চাইছ না? অবশ্য না বুঝলেও কিছু করার নেই। আমি বুঝিয়ে নিব। আচ্ছা যাই হোক বললে না তো আমাকে তুমি কি ভয় পাচ্ছো?

না, সেরকমটা নয়,

তাহলে? এক মাসের বউ তুমি আমার, অথচ একবার জামাইয়ের খোঁজখবর নাও না। সেই সেধে সেধে আমাকেই আসতে হয়, আমাকেই খোঁজখবর নিতে হয়। এমনটা কিন্তু বাঙালি মেয়েদের থেকে আশা করা যায় না।

সিয়াম নিজেকে নওশীনের আরো একটু কাছাকাছি নিয়ে গেল। নওশীনের দিকে ঝুকে গিয়ে আস্তে করে বলল,,
চোখ কিন্তু কথা বলে মায়াবিনী,

নওশীন কাচুমাচু করতে লাগলো, যেন চুরি করে ধরা পড়েছে। বিড়বিড়িয়ে বলল, আল্লাহ গোয়েন্দা জ্যামাই নিয়ে কি ঝামেলা চোখ নিয়েও শান্তি নেই,

সিয়াম নওশীনের খুব কাছাকাছি ছিল বলে নওশীনের বলা অত আস্তে কথাও শুনে ফেলল।
এতে বেশ মজা পেল সিয়াম, একটুখানি আওয়াজ করেই হাসলো, যদিও আওয়াজটা বাইরে যাওয়ার মত নয় ।

সিয়ামের হাসি দেখে নওশীন আরো একটুখানি লজ্জায় পড়ে গেল।

বেশ অনেকটা সময় অন্ধকারে থাকতে থাকতে তাদের চোখ অন্ধকারে সয়ে এল। এখন অন্ধকারেও চাঁদের আলোয় গাছ-গাছালির ফাকফোকর খানিকটা ঠাওর করা যাচ্ছে।
আচমকাই নওশিনীর নজরে এলো বাগানের দুটো ছায়া, হঠাৎ দেখায় চমকে উঠলো।

সিয়ামের চোখ জোড়াও নওশিন এর দিকে আবদ্ধ ছিল, যার কারনে নওশীনের এহেন আচরণ তার নজরে এলো,

কি হলো তরঙ্গিনী, এমন ভাবে ভয় পেয়ে উঠলে কেন?

সিয়ামের মুখে হুটহাট মায়াবিনী তরঙ্গিনী ডাকটা বেশ লাগে। নিজেরকে তখন সত্যিই মায়ার খনি মনে হয়। মনে হয় সত্যি সত্যি সমুদ্রের বিশাল বিশাল ঢেউগুলো সে নিজেই। আবার যখন তোতা পাখির জননী বলে তখন মনে হয়, সে সত্যিই ওই ছোট্ট পাখিটির মা। বাস্তবে তো সেটাই সত্যি,,,,

মনে হচ্ছে বাগানে কেউ আছে,,

দুজনে মিলে বাগানের পথে বেশ গারো নজর দিল, এরপর তাদের কাছে সবটা পরিষ্কার হলো,

আরে এতো দেখছি আমার শশুর - শাশুড়ি,

আব্বু আম্মু এত রাতে বাগানে,

চিন্তা করো না হয়তো মনটাকে একটু হালকা করার জন্যই, তুমি বরং একটু ঘুমিয়ে নাও কালকে কিন্তু তোমার জন্য একটা বড় সারপ্রাইজ আছে,

কি সারপ্রাইজ?

তোতা পাখির বোকা জননী, সারপ্রাইজের কথা যদি আগেই বলে দেই তাহলে কি সেটা সারপ্রাইজ থাকে?

আপনি বরং গিয়ে বিশ্রাম করুন। সারাদিন এত পরিশ্রম করে আবার এখানে এসে দাঁড়িয়ে বকবক করছেন আপনার ক্লান্ত লাগছে না?

তুমি কি কোন ভাবে বিরক্ত? এখন থেকে একটু একটু করে অভ্যাস করে নাও। এরপর যখন আমাদের সখ্যতা আরো বেড়ে যাবে আমরা আরও একে অপরের কাছাকাছি চলে আসব, তখন কিন্তু তোমাকে আরো অনেক কিছু সহ্য করতে হবে,

মানে কি?

তুমি কি খারাপ কিছু ভাবছো? আমি কিন্তু বলতে চাচ্ছি ওই যে দেখো শ্বশুর-শাশুড়ির মত কিন্তু আমার সঙ্গেও তোমার ওই রকম রাতের অন্ধকারে শুনশান নীরব রাস্তায় পায়ে পা লাগিয়ে হাঁটতে হবে। আমার সঙ্গে অনেক গল্প করতে হবে, আমার সারাদিনের ক্লান্তির গল্প শুনতে হবে, কি পারবে না?

হুম,

চলো এখন একটু ঘুমিয়ে নাও,

আমার এখন মনে হচ্ছে আব্বু চাচ্চুর সঙ্গে মোটেও নিরাপদ নয়। অথচ আমরা এতগুলো বছর এক ছাদের নিচে কাটিয়ে দিলাম।

জানিনা আব্বু কি সিদ্ধান্ত নিবেন, নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিবেন। চিন্তা করো না। এখানে আমি সম্পূর্ণ একটা গোপন তথ্য বের করেছি, এখানে শাস্তির ব্যাপারটা আমি সম্পূর্ণ আব্বুর উপরেই ছেড়ে দিয়েছি, তিনি যা ভাল বুঝবেন করবেন, এতে আমার কোন আপত্তি নেই, আমার শুধু তুমি হলেই চলবে।

একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

তোমার জন্য এই আমি সব সময় উন্মুক্ত, তুমি শুধু জিজ্ঞেস করবে, একটা নয় হাজারটা নয় যত খুশি,,

আপনি বলেছিলেন চিঠিতে , আপনি সকালের ঘুম ভাঙলে আপনি আমাকে দূর থেকেই দেখতেন তখন কাছে থেকে দেখার তৃষ্ণা জাগতো,

হুম, বলেছিলাম,

কিন্তু আপনি আমাকে কিভাবে দেখতেন?

সিয়াম হেসে দিল,,

হাসছেন কেন আমি কি হাসির মতো কথা বলেছি?

না তো আসলে আমার কষ্টের দিনের অবসান হয়েছে তাই হাসছি আনন্দে। তোমার মায়া মুখটা প্রথম দেখার পরেইতো আমার সর্বনাশটা হল। চোখ বন্ধ করে আগে যেখানে অপরাধীদের কিভাবে ধরতাম তার ছক ভেসে আসতো সেখানে তোমার ছবিটা দেখার পর চোখ বন্ধ করার পর শুধু তোমার মায়াবী মুখটা ভেসে উঠে, ঠিক যতক্ষণ না আমার নিদ্রা আসে। আর তোমাকে কল্পনা করতে করতে আমার রাত কেটে যায় নিদ্রারা রেগে মেগে চলে যায়। আর যখন আমি ঘুমিয়ে যেতাম তুমি প্রায়সয়ই আমার স্বপ্নে চলে আসতে একদম প্রিন্সেস সেজে। তোমাকে আমি বলেছিলাম না যেদিন তুমি আমাকে মন থেকে ভালবাসবে সেদিন তুমি সেই ড্রেসটা পড়বে যেটা আমি প্রথম তোমাকে দিয়েছিলাম। ওই ড্রেসটা পড়াই কিন্তু আমি তোমায় সব সময় কল্পনায় দেখতাম, এবার বাস্তবে দেখার জন্য অপেক্ষা করছি। কি পড়বে না?

হুম,

সিয়াম নিজের পার্সোনাল ফোনটা বের করে নওশীনকে অনেক কিছু দেখালো সেখানে ছিল নওশীনের বিভিন্ন ছবি ভিডিও ক্লিপ।

আশ্চর্য এগুলো আপনি কোথায় পেলেন?

যেদিন থেকে তুমি আমার মন চুরি করে ফেলেছ সেদিন থেকেই তুমি আমার এই মনের রাণী হয়ে বসে আছো। রানীর তো দাস দাসীর কোন অভাব থাকে না। বলেছিলামনা বাংলাদেশে আমার এক ফ্রেন্ড আছে। ওই আমাকে তোমার সম্পূর্ণ খোঁজ খবর বের করে দিয়েছিল। তোমার কলেজে যাওয়ার পথে সিকিউরিটি ওই আমাকে ঠিক করে দিয়েছিল। আর সকালে যখন তুমি পাখিদের সঙ্গে সময় কাটাতে তখন ওই আমাকে খুব দূর থেকে সাবধানে ড্রোন থেকে ভিডিও করে পাঠিয়ে দিত ব্যাস,,

মানে,, আপনি আমাকে সব সময় নজরে রেখেছেন?

আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে আমি নিজেকে একটু নিশ্চিন্ত রাখতে চেয়েছিলাম আর কিছু না। আমার নিজেকে ভালো রাখতে তোমাকে আমার প্রয়োজন। এই আমিটা বড্ড স্বার্থপর যে,,

নওশীন সিয়ামের হাত জোড়া নিজের দুই হাত দিয়ে আকড়ে ধরল। চোখ জোড়া বন্ধ করে মুখটাকে আকাশের দিকে নিয়ে বলতে লাগলো,, আপনার এই স্বার্থপরতা সারা জীবন বজায় থাকুক, এমন একটা স্বার্থপর মানুষ পেয়ে আমি ভীষণ ভাগ্যবতী। খোদার দরবারে এই শুকরিয়ার শেষ কখনো হবে না। আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আপনার ছায়া আমার উপরে থাকুক। আমিও আপনার মত স্বার্থপর হতে চাই। সৃষ্টিকর্তা আমাকেও কবুল করুন।

আমিন,,,

চলবে??

গল্প শেষ হয় না ক্যারে ভাই 😮😮🙂
বড় একটা পর্ব কিন্তু, কমেন্টও বড় বড় চাই 😟

 #মায়াবিনী_তরঙ্গিনী নাজিম উদ্দিন শিকদারের চোখে একে একে ভেসে আসছে ছোটবেলা থেকে আজ বৃদ্ধের পথে যাওয়ার প্রত্যেকটা দৃশ্যপট...
03/11/2025

#মায়াবিনী_তরঙ্গিনী

নাজিম উদ্দিন শিকদারের চোখে একে একে ভেসে আসছে ছোটবেলা থেকে আজ বৃদ্ধের পথে যাওয়ার প্রত্যেকটা দৃশ্যপট। সেখানে তিনি খুঁজে পেলেন কি সুন্দর হাসি আনন্দ কিছু রাগ অভিমান। তার ছোট্ট ভাই, তার কত আবদার।

ইস, কেন হারিয়ে যায় পুরনো দিনগুলো?

✍️✍️ #নীল_মালতীলতা

কলাপাড়ার এই জায়গাটা খুব প্রিয় একটা জায়গা। মন ভালো করার মত জায়গাটা ❤️কলাপাড়া থেকে একেবারের জন্য চলে গেলে এই জায়গাট...
02/11/2025

কলাপাড়ার এই জায়গাটা খুব প্রিয় একটা জায়গা। মন ভালো করার মত জায়গাটা ❤️
কলাপাড়া থেকে একেবারের জন্য চলে গেলে এই জায়গাটাকে ভীষণ মনে পড়বে 💔💔🥺❤️

01/11/2025

আমার কাছে আপনি অনেক দামি ❤️❤️❤️

 #মায়াবিনী_তরঙ্গিনী #পর্ব_৩৩ #নীল_মালতীলতা সিকদার বাড়ি আজকে নিস্তব্ধ স্তব্ধ। কি দরকার ছিল সত্যগুলো সবার সামনে আসার? কি...
30/10/2025

#মায়াবিনী_তরঙ্গিনী
#পর্ব_৩৩
#নীল_মালতীলতা

সিকদার বাড়ি আজকে নিস্তব্ধ স্তব্ধ। কি দরকার ছিল সত্যগুলো সবার সামনে আসার? কিছু সত্য বোধ হয় সামনে না আসাই ভালো।
এই যে এত বড় একটা সত্য সামনে এলো এখন এই পরিবার টার কি হবে?
এই সত্য অনাচারের উৎপত্তি তো সেই কত আগে থেকে, কেউ জানতো না, তাই কোন বিবাদ ছিল না, কারো মনে কোন কষ্ট ছিল না, আঘাত ছিল না। এখন সবাই জেনে গেলো, কি হবে এই পরিবারটার?

সিয়াম গম্ভীর কন্ঠে বলল, আমার জীবনে আমি একটা বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম।

এমন কথা শুনে সবাই অবাক চোখে সিয়ামের দিকে তাকায়। সবাই অপেক্ষা করে সিয়ামের পরবর্তী কথার।

মি. নাসির শিকদারের অন্যায় গুলো জেনেও আমি চুপচাপ চলে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলাম । ভেবেছিলাম আমি আমার সম্পদ আমার স্ত্রীকে নিয়ে এখান থেকে চুপচাপ ঝামেলা বিহীন চলে যাবো, আমার ধারণা ছিল নওশীন চলে গেলেই সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এটা আমার অনেক আগের ভাবনা আমি এরকম একটা ভাবনা নিয়ে এখানে এসেছিলাম। কল রেকর্ডের ব্যাপারটা আমি যথেষ্ট গোপন রাখতে চেয়েছিলাম কারণ নওশীন নেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। কিন্তু যখন আমি ভীষণ গভীর থেকে জানলাম তখন আসলে এটা আর সম্ভব হয়নি।
কিছু মনে করবেন না আব্বু। আমি তাকে নাম ধরে সম্মোধন করেছি তার কারণ,
বাবার পরে বাবার ভাই মানে চাচ্চুই হয় আপন। আর এই আপন ডাকটা আমি কোন স্বার্থপর ব্যক্তির জন্য ব্যবহার করতে চাই না। আমাকে ক্ষমা করবেন।

হালিমা বেগম নিজের বড় ছেলে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পরেই নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলেছেন।
আস্তে আস্তে চোখের উপর থেকে সমস্ত ভুলের পর্দা গুলো সরে যায়, সে নিজেই বুঝতে পারে নিজের ভুলগুলো।
আজকে এই পর্যায়ে এসে নিজের প্রিয় ছেলের প্রিয় রূপ হারিয়ে ফেললেন। এখনো তিনি মানতে পারছেন না। ভাঙ্গা গলায় সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে বললেন,, নাতজামাই! ভাই আমার যতটুকু প্রমাণ দিয়েছো ততটুকু মেনে নিলাম। তা দিয়েও তো কারো কোন ক্ষতি হয় নি। বরং আমরা তোমার মত একজনকে পেলাম। কিন্তু আমার বড় ছেলের ঘরের সন্তান আশায় সে বাধা দেবে এতটা পাপ কি সে আসলেই করেছে?

সিয়াম হাসলো, মায়ের চোখের সন্তানের অপরাধ কি অপরাধ নয়? ইস মায়ের মনের কি কষ্ট। এত কষ্ট তো সে দিতে চায়নি পরিবারটাকে কিন্তু না হলে যে বড্ড অন্যায় হয়ে যাবে। শেষে কোন অঘটন ঘটলে আর নিজেকেই নিজে ক্ষমা করতে পারত না সিয়াম।

দাদী এটা সত্যি, খুব কঠিন একটা সত্যি।

এটা তো অনেক আগের ঘটনা ভাই, তুমি কিভাবে জানলে?

দাদী আমার পেশাটা এমন এক পেশা, যেখানে কারো চোখের একটুখানি এলোমলো নজরেও সন্দেহ চলে আসে । আর এই ইফতারের ব্যাপারে আমার সন্দেহ না, সে যে অপরাধী সেটা আমি বহু আগেই জানি। সেই একটা কলেই আমার কাছে সবকিছু পরিষ্কার যে পরিবারকে সে ঠিক কতটা ভালোবাসে। আমি এখানে তদন্তের কাজে এসেছি, ঘুরে বেড়াতে আসিনি। আপনারা হয়তো খেয়াল করবেন আমি যখন তখন বাড়ির বাইরে থাকতাম। যখনই কোন একটা ইনফরমেশন পেতাম কাজের জন্য ছুটে যেতাম। হয়তো কাকতালীয়ভাবে আল্লাহ চেয়েছিলেন আমার মাধ্যমে এই সমাধানটা।

নাসির শিকদার খুবই গোপনে নিজের জন্য আলাদা একটা ঘর রেখেছে। যেই ঘরে সে নিজের সঙ্গে নিজেই কথা বলে। কারণ তার ষড়যন্ত্রের সকল কিছু সঙ্গী সে নিজেই। সেদিন একটা বাড়িতে গিয়েছিলাম তদন্তের জন্য এই শিকদার বাড়ি থেকে খুব একটা দূরে নয় আবার কাছেও নয় । তবে এমন একটা স্থান যেখানে এই শিকদার বাড়ির মানুষজন অপরিচিত। সেই বাড়ি থেকে শোনার পর থেকে রাস্তায় একজন লোককে দেখলাম তার হাঁটার ভাব ভঙ্গি গায়ের গড়ন খুবই পরিচিত। তবে তার মুখটা ঢাকা ছিল, তাকে অনুসরণ করলাম, শেষ পর্যায়ে এসে দেখলাম সে আমার ভীষণ পরিচিত। আমার কাছে বহু আগে থেকেই অপরাধী। প্রতিদিন তাকে অনুসরণ করলাম আবার এবং সেই গোপন ঘরটি খুঁজে পেলাম। একটা বিল্ডিং এ কয়েকটা ফ্লাট আছে সেখানেই সে ছোট্ট একটা ফ্লাটে থাকে। সেখান থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম সে সেখানে তার মালপত্র রাখার জন্য নাকি একটা ছোটখাট রুম নিয়েছে। তবে তার পরিচয় সেখানকার কেউ তেমন জানে না। মাঝে মাঝে চুপিচুপি আসে আবার চুপিচুপি চলে যায়। বাড়ির মালিকের কাছে চাবি চাইলাম সেই ঘরের চাবি নাকি সে কাউকেই রাখতে দেয়নি, তবে এখানে আমার কাজটা একটু বাড়ির মালিক সহজ করে দিয়েছিলেন নইলে আমাকে অন্যভাবে ভাবতে হতো। তার কাছে বাড়ি চাবি ছিল তিনটা, সে সেটা নাসির শিকদারকে জানায়নি তাকে জানিয়েছে এইটাই ছিল তার কাছে আর। গোপনে নিজের কাছে একটা রেখে দেয় সেই চাবি নিয়ে আমি ঘরে প্রবেশ করেছিলাম ।
মিস্টার শিকদার আপনি সেখানে অনেক মালপত্র রেখেছেন, মানে খালি কার্টুন গুলো খুব ভালো করে সাজিয়ে রেখেছেন যাতে কারো সন্দেহ না হয় যেখানে আসলে মালপত্রের জন্য নয় নিজের সময় কাটানোর জন্যই আশা।

ওখানে আমি একটা ক্যামেরা রেখে এসেছিলাম,

সিয়াম সব ভিডিওগুলো এক এক করে সবাইকে দেখায়। সেখানে স্পষ্ট ভাষায় নাসির শিকদার বলছে,,

এত চেষ্টা করেও কিছু আটকাতে পারলাম না। উফ প্লান মত কিছুই করতে পারলাম না। এত চেষ্টা করেও ভাইয়াকে নিঃসন্তান রাখতে পারলাম না। আর আমার আহাম্মক ছেলেটাও আমার কথা শুনলো না।

বন্ধ করো এসব, নাসির সিকদার চিৎকার করে বলে উঠলো।
হ্যাঁ হ্যাঁ আমি সবকিছু করেছি। এই ছেলেটা যা যা বলেছে সবকিছু সত্যি তো এখন কি করবে আমাকে বল?

নাজিমউদ্দিন সিকদার ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়লেন ভেতর থেকে। তবুও মুখে গম্ভীরতা টেনে রাখার চেষ্টা করলেন। শান্ত কন্ঠে বললেন,, তোর আদর যত্ন ভালবাসার কোন কিছুর কমতি তো আমি কখনোই রাখিনি। নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করেছি তবুও তোকে সেখানে যেতে দেইনি কষ্ট হবে বলে। অথচ তুই ভাবলি আমি তোকে রাজত্ব দিইনি। আসলে রাজ্য রাজত্ব এগুলো কখনোই আমি ভাবিনি। আমি শুধু ভেবেছিলাম তোরা ভালো থাক সুখে থাক আনন্দে সময় কাটা।
নিজের স্ত্রীকে দেখিয়ে বললেন, এই যে মানুষটা এই বাড়িতে আসার পর নিজেকে নিয়ে না ভেবেই পরিবারটার জন্য ভেবেছে, আমার ভাবনাগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করার চেষ্টা করেছে, অথচ তোরা ভাবলি তোদেরকে ছোট করা হয়েছে।

আমাদের সন্তান হওয়ার পথে কোনো বাধা ছিল না অথচ এই মানুষ দুটো দিনের পর দিন মানুষের কথা শুনে গেল কখনো কি বিন্দুমাত্র খারাপ তোর লাগেনি ভাই? আমার কথা না হয় বাদ দিলাম পুরুষ মানুষকে তো সবাই কথা শোনায় না কিন্তু এই মহিলা আমার অভাগী সহধর্মিনী, হায়, তার কান্না গুলো তার চোখের পানিগুলো।
আচ্ছা এই এক একটা চোখের পানির ফোটার দায়ভার তুই কিভাবে নিবিরে ভাই?

তো আমি কি করতাম হ্যাঁ? সেই শুরু থেকে তো সবকিছু তোমারই।তারপর তোমার সন্তান আসলে সব কিছু তাদের।
আমি সবসময় তোমার পিছনে পিছনে বড় হয়েছি তারপর আমার সন্তান সবসময় তোমার ছেলে মেয়ের পেছনে পেছনে বড় হবে এটা আমি মেনে নিব? না

আমি তো তোকে আমার পেছনে রেখে বড় করিনি রে ভাই, ছায়া দিয়ে বড় করতে চেয়েছি।

হাহ, যে ছায়ায় সব সময় নিজের মনের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে হয় সেই ছায়ার কোন প্রয়োজন ছিলো না আমার।

হালিমা বেগম রাগ নিয়ে বলে উঠলেন,,
নাজিম ওর শাস্তির ব্যবস্থা করো। আমার দুইটি সন্তান ছিল একটি সন্তান মারা গেছে। এখন তুমি আমার সন্তান তোমাকে যে এত বড় ক্ষতি করছে আমি তার শাস্তি চাই।

সিয়াম অপেক্ষা করছে নাজিমউদ্দিন সিকদার নিজের ভাইয়ের জন্য কি শাস্তি বরাদ্দ করে সেটা জানার জন্য

নাজিমউদ্দিন সিকদার বাড়িটার চারিদিকে একবার চোখ বুলালেন। তার কষ্টের অর্জন। ছোট্ট একটা স্বপ্ন সবাই একসঙ্গে থাকার।

নাসির শিকদার কারোর দিকেই তাকাচ্ছে না আর কিছু বলছেও না, সে মাথা নিচু করে নিজের মত কিছু ভাবছে।

নাজিমুদ্দিন শিকদার ভাইয়ের কাছে এগিয়ে গেলেন। ভাইয়ের হাত জোড়া ধরলেন, অনুরোধের স্বরে বললেন,, আমাকে আর একটা সপ্তাহের সময় দিবি ভাই? আমি তোকে রাজ্য রাজত্ব সবকিছু দিবো।

চলবে,,

রিচেক করা হয়নি বানান ভুল থাকতে পারে। ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ।

Address

Barishal
8400

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Story of Neel Maloti Lota posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Story of Neel Maloti Lota:

Share