ღBarishailla-বরিশাইল্লাღ

ღBarishailla-বরিশাইল্লাღ আপনার তোলা বরিশাল বিভাগের সুন্দর সুন্দর ছবি inbox এ পাঠিয়ে দিন। আপনার নাম সহ আপলোড করা হবে

কোন কিছুতে বিজয়ী হতে হলে আমরা কার বিরুদ্ধে লড়ছি সেই ব্যপারে পরিষ্কার জ্ঞান রাখতে হবে। তবেই না আমরা সেই শত্রুর মোকাবিলা...
23/08/2025

কোন কিছুতে বিজয়ী হতে হলে আমরা কার বিরুদ্ধে লড়ছি সেই ব্যপারে পরিষ্কার জ্ঞান রাখতে হবে। তবেই না আমরা সেই শত্রুর মোকাবিলা করতে পারবো!

আমাদেরকে নামাজে অমনোযোগী করে আমাদের অন্যতম শত্রু শয়তান। রসূল(সাঃ) বলেন, “যখন আযানের শব্দ উচ্চারিত হয়, শয়তান তখন সশব্দে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে দৌড়ে পালিয়ে যায় যাতে তার কানে আযানের শব্দ না আসে।

আযান শেষ হলে আবার ফিরে আসে; ইকামাতের সময় আবার সে পালিয়ে যায় এবং শেষ হলে আবার ফিরে আসে, এবং মানুষের মনকে ফিসফিসিয়ে ধোঁকা দিতে থাকে যেন নামাজ থেকে মনোযোগ সরে যায় এবং মানুষকে এমন সব জিনিস মনে করিয়ে দেয় যা নামাজের পূর্বে তার মাথায় ছিলনা। যার ফলে মানুষ ভুলে যায় যে সে কোন রাকাআতে নামাজ পড়ছে|” [বুখারী]

কি চেনা চেনা লাগছে না? কল্পনা করুন আপনি নামাজে দাঁড়িয়ে আর আপনার ঠিক পাশেই কদাকার এক শয়তান কানের কাছে ফিসফিস করেই যাচ্ছে। চিত্রটা বেশ ভয়ঙ্কর! তাই এই শয়তানের ক্ষতি থেকে আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে তবেই নামাজ শুরু করতে হবে।

♦ সানা পাঠ শেষ করে আমরা বলি,
"আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজিম"
অর্থঃ "বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।"

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীমঃ
এরপর আমরা বলি, "শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম দয়ালু এবং অসীম করুণাময়"

♦নতুন করে সূরা ফাতিহা আবিষ্কারঃ
এরপর আমরা পাঠ করি চিরচেনা সূরা ফাতিহা। চলুন আজকের পর্বে নতুন করে সেই সূরা ফাতিহা আবিষ্কার করা যাক।

১. আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আ'লামিন:
রবঃ
আল্লাহ এই আয়াতের মাধ্যমে আমাদের সাথে আল্লাহর পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। তিনি আমাদের রব, প্রভু, মনিব। আরবি "রব" শব্দটার মানে এমন কেউ যে টুয়েন্টি-ফোর-সেভেন আমাদের দেখ-ভাল করে যাচ্ছেন। আমাদের প্রত্যেকটা হার্ট-বিটের তত্ত্বাবধান, আমাদের খাওয়ানো, পড়ানো, সুস্থ রাখা, আমাদের অনুরোধগুলো শোনা, আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা—এই সবই "রব" শব্দটার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ আমাদের প্রভু, আমরা তাঁর গোলাম। আমরা আল্লাহর সম্পত্তি। নিজেকে কারো গোলাম ভাবতে অনেকের কাছে ভালো নাও লাগতে পারে। কারণ মানুষ স্বভাবতই স্বাধীন থাকতে পছন্দ করে। তাছাড়া দুনিয়াবি দৃষ্টিতে প্রভুরা তার দাসের উপর ক্ষমতার জোর খাটায়, অত্যাচার করে। কিন্তু আমাদের আল্লাহ অন্যরকম প্রভু। তিনি এমন প্রভু যে তাঁর গোলামের সাথে কখনো অন্যায় করেননা। তিনি তার বান্দাকে ধরে-বেঁধে রাখেন না, বরং বান্দাদেরকে একটা নির্দিষ্ট পরিধি পর্যন্ত স্বাধীন ইচ্ছা (free will) দেন।

এই স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি কে কিভাবে চ্যানেল করে হিদায়াতের পথে থাকতে হবে সেটার কমপ্লিট ইন্সট্রাকশনও তিনি দিয়ে দিয়েছেন। আমাদের হাত-পা-মুখ সবকিছুই আল্লাহর। খুব সীমিত সময়ের জন্যে আল্লাহ আমাদেরকে আমানত হিসেবে কিছু জিনিসের কন্ট্রোল দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন আমাদের নিজেদের হাত-পা গুলিও আমাদের কর্ম অনুযায়ী আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে।

তাই, আল্লাহই সার্বিক ব্যপারের কন্ট্রোলে আছেন ভেবে আমরা খুশি। এই আয়াতের মাধ্যমে নিজেদের দাসত্ব আল্লাহর কাছে স্বীকার করি।
আমরা দাসেরা তাই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করতে থাকি। তিনি এমন একজন রব, যার জন্যে সমস্ত প্রশংসা নির্ধারিত!

আরবি "হামদ" শব্দটা প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা দুইটাই ইঙ্গিত করে। কারণ, কেউ যখন মন থেকে প্রশংসা করে কাউকে ধন্যবাদ দেয়, তার কৃতজ্ঞতা হয় নির্ভেজাল। আমরা সূরা ফাতিহাতে নির্ভেজাল ভাবে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।

আলহামদুলিল্লাহঃ
এখানে আরেকটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এই আয়াতের বিশ্লেষণে বুঝা যায়, আমাদের প্রশংসার আসলে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। দুনিয়ার সমস্ত মানুষ আল্লাহর প্রশংসা ছেড়ে দিলেও আল্লাহর রাজ্য থেকে একটা কিছু কমে যাবে না। আবার দুনিয়ার সমস্ত মানুষ মিলে আল্লাহর প্রশংসা করতে ঝাঁপিয়ে পড়লেও সেটার ফলে আল্লাহর মহিমা এতটুকু বেড়ে যাবে না।

আমরা "আলহামদুলিল্লাহ" বলি বা না বলি, আল্লাহ সবসময় প্রশংসিত! "আলহামদুলিল্লাহ" বলে আমরা আল্লাহর কোনো উপকার করছিনা। বরং লাভটা আমাদের নিজের।

যখন একজন মাকে দেখি তার বুকের ধন সন্তানকে কবর দিয়ে ফেরত এসে বলছে "আলহামদুলিল্লাহ! আমার ছেলে এখন ইব্রাহীম(আঃ) এর সাথে জান্নাতে খেলছে"; একজন ভাইকে দেখি চাকরি হারিয়ে বলছে, "আলহামদুলিল্লাহ! আরো অনেক কিছুই তো হারাতে পারতাম"; একজন বোনকে দেখি বিছানায় শুয়ে প্রচণ্ড অসুস্থতায় বলছেন, "আলহামদুলিল্লাহ! এই কষ্টের মাধ্যমে আল্লাহ আমার গুনাহ্গুলি মাফ করে দিচ্ছেন"

- তখন "আলহামদুলিল্লাহ"র মর্মটা বুঝি! আমরা যতবার নামাজে এই আয়াত পড়ছি, ততবার আমরা নতুন করে পজিটিভ হতে শিখছি। শত কষ্টের মধ্যে থেকেও "আলহামদুলিল্লাহ" বলতে পারার চেয়ে শক্তিশালী আর শান্তিদায়ক আর কিছু নেই। দিনের মধ্যে পাঁচবার করে নামাজে আমরা সেটারই প্র্যাক্টিস করছি।

আ'লামিনঃ
আলামিন শব্দের অর্থঃ‍ ''সকল সৃষ্টি জগতের (পালনকর্তা)"। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার রব! সুবহানাল্লাহ! ভালো নেটওয়ার্ক না থাকলে চাকরি পাওয়া যায়না। ভালো রেকমেন্ডেশান লেটার না থাকলে এডমিশন পাওয়া যায়না!

কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহ ধনী, গরিব, কালো, সাদা - সবার জন্যে প্রযোজ্য! তিনি যে "রব্বুল আলামিন"! আমরা মানুষরাও যেন আমাদের অনুগ্রহ বিলানোর সময় নিজেদের মধ্যে তারতম্য করা বন্ধ করি।
তাহলে এক বাক্যে এই আয়াতের অনুবাদ হয় - "যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।" কিন্তু একটু সময় নিয়ে ব্যাখ্যাসহ বুঝে পড়লে, প্রতিটা শব্দ অন্তরের ভিতরে গিয়ে নাড়া দেয়!

"আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন" আমাদেরকে প্রতিবার রিমাইন্ডার দিচ্ছে যে, সীমাহীন প্রশংসার যোগ্য আমার রব সারাক্ষন আমার যত্ন নিচ্ছেন, তিনি আমার সকল সমস্যার সমাধান দিয়ে গিয়েছেন এবং তিনি আমাদের কারো মধ্যেই তার প্রভুত্ব নিয়ে ভেদাভেদ করেন না। এমন রব থাকতে আমাদের কীসের চিন্তা বলুন?

পর্ব-০৪
নামাজে মন ফেরানো
শারিন সফি অদ্রিতা

মাঝে মাঝে কাজের চাপে খুব অস্থির লাগে। মনে হয় দশ দিক থেকে আমাকে টানা হচ্ছে আর মাঝখানে আমি তব্দা খেয়ে বসে আছি। কোন দিকেই য...
21/08/2025

মাঝে মাঝে কাজের চাপে খুব অস্থির লাগে। মনে হয় দশ দিক থেকে আমাকে টানা হচ্ছে আর মাঝখানে আমি তব্দা খেয়ে বসে আছি। কোন দিকেই যেতে পারছিনা! তখনই মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে শুনি নামাজের আহবান, "আল্লাহু আকবর ... আল্লাহু আকবর ..." আমাকে ডাকতে থাকে, "নামাজের দিকে আসো! কল্যাণের দিকে আসো!"

তখন এই অগোছালো আমি অন্তত একটা ডিরেকশানে যাবার পথ খুঁজে পাই! এলোমেলো টেবিলটা ওভাবেই ফেলে চলে যাই রবের কাছে নিজের আত্মাকে গুছিয়ে নিতে! এটা যে কতটা উপকারী এবং শক্তিশালী অনুশীলন - যে কোনদিন এর স্বাদ পায়নি তাকে বুঝানো কঠিন।

মুহাম্মদ ফারিস তার "প্রোডাক্টিভ মুসলিম" বইতে নিজের জীবনের এমন একটা ঘটনা লিখেছিলেন যে, একবার তাদের এলাকায় বড় ধরণের বন্যা হয় যার ফলে তাদের বাড়ির অনেকটা অংশই ডুবে যায়। লেখক হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে চোখের সামনে নিজের সাজানো ঘরটাকে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যেতে দেখতে থাকে। এরকম পরিস্থিতিতে মাথা ঠিক রাখা দায়!

ঠিক ঐ সময় তিনি শুনলেন যে আযান পড়ছে! সাথে সাথে তিনি মসজিদের দিকে হাঁটা দিলেন। ঐ ওলটপালট অবস্থা থেকে বের হয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সাথে কথা বলে মনটা শান্ত করে নিলেন। মাথা ঠাণ্ডা হলে পরবর্তী কাজ সম্পাদনের একটা দিশা পেলেন!

যখন প্রচন্ড মন খারাপের দিনে কিছুই করতে ইচ্ছা করেনা, হতাশায় শুধু মনে হয় ঘরের এক কোণে গিয়ে বসে থাকি, তখনই একজন মুসলিম নামাজের জন্যে উঠে দাঁড়ায় নিজের রবের কাছে গিয়ে নিজেকে গুছিয়ে আনতে। আলহামদুলিল্লাহ এভাবেই নামাজ একজন মুসলিমের মনোবল চাঙ্গা করে এবং শক্তি বৃদ্ধি করে।

আসুন "নামাজে মন ফেরানো" সিরিজে আমরা আজকে সানার দ্বিতীয় অংশটুকু জেনে নেই ইনশাআল্লহ,

♦ওয়া তা আ'লা জাদ্দুকাঃ
"জাদ্দুকা" মানে "Determination, Decree", সহজ বাংলায় "ইচ্ছাশক্তি, আইন পাশ করে দেওয়া"। "আ'লা" মানে "Higher, উঁচু, মহান"। তাহলে এর অর্থ দাঁড়ালো - "আল্লাহর ইচ্ছা সবচেয়ে বড়"! আমাদের কত শত ইচ্ছা থাকে, কিন্তু আমাদের ইচ্ছামতন সবকিছু হয়না। তখন আমরা অনেকেই ভেঙ্গে পড়ি, কষ্ট পাই। অথচ, নামাজে প্রতিদিন আমরা সানায় স্বীকার করে নিচ্ছি যে - "আল্লাহ, আমার ইচ্ছার থেকে আপনার ইচ্ছা বড়!"

আমাদের সামান্য জ্ঞান দিয়ে আমরা কোন কাজের কী পরিণাম সেটা বুঝতে পারিনা। কিন্তু যেই রব মহান আল্লাহ, তিনি স্থান, কাল, পাত্র ভেদ করে সবকিছু জানেন। তাঁর থেকে ভালো আর কেউ জানবে না যে, এখন আমার জন্যে এই বিয়ে, চাকরি অথবা কাজ হয়ে যাওয়াটা আসলেই কতটা কল্যাণকর। যে ব্যক্তি "ওয়া তা আ'লা জাদ্দুকা"-র মর্ম বুঝে নামাজে এটা পাঠ করবে, না পাওয়ার কোন গ্লানি তাকে জেঁকে ধরতে পারবে না। তার অন্তর জুড়ে থাকবে প্রশান্তি ইন শা আল্লাহ।

♦ওয়া লা ইলাহা গাইরুকাঃ
"আল্লাহ, আমি আপনি ছাড়া আর কারো ইবাদাত করবো না" - এই পর্যায়ে এসে সানায় আমরা স্বীকার করি নেই যে, আল্লাহ আমাদের প্রভু। আমরা তাঁর গোলাম। আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে আমাদের মাথা নত করবো না। নিজেদের কামনা-বাসনা এবং নফসের সামনে না।

সমাজে সামনে না, শয়তানের ওয়াসওয়াসার সামনে না! আমরা আল্লাহর থেকে বেশি কোনকিছুকেই গুরুত্ব দিবো না।

আচ্ছা, একটু ভাবি, দিনের মধ্যে পাঁচবার করে যদি আমরা কাউকে নিজে থেকে গিয়ে বলে আসি যে, "তুমি আমার লাইফে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ"। এবং বলার সাথে সাথেই যদি এমন এমন কাজ তার চোখের সামনে করতে থাকি করি যা ঐ ব্যক্তি মোটেও পছন্দ করেন না, তাহলে পরবর্তীতে তার সামনে যেতে আমাদের অনেক লজ্জা লাগবেনা?

কষ্টের কথা কি জানেন, এই কাজটা আমরা দৈনিক আল্লাহর সাথে করে আসছি। এজন্যেই যে বুঝে নামাজ পড়ে, তারা জানেন যে আল্লাহর সাথে সে প্রতিশ্রুতি করেছে, সেই রবের দরবারে এখনি হাজিরা দিতে যেতে হবে। কীভাবে আল্লাহকে এতটা অসন্তুষ্ট করে তাঁর সামনে দাঁড়াই? কীভাবে তাঁর বান্দাকে কষ্ট দিয়ে, তাঁরই বান্দার হক মেরে এসে তাঁকে বলি যে, "ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা"?

আমরা নামাজ পড়ি আর আমাদের মনে হয় - "কই! নামাজ পড়েও তো খারাপ কাজ করেই যাচ্ছি!" এটা আমাদের নিজেদের দুর্বলতা, নামাজের না। আল্লাহ আমাদের ইবাদত, আখলাক এবং ইখলাস আরও বহুগুণে তাওফিক বাড়িয়ে দিক। আমিন।

পর্ব-০৩
নামাজে মন ফেরানো
শারিন সফি অদ্রিতা

আচ্ছা আমরা কি জানি যে আল্লাহর তরফ থেকে একমাত্র নামাজ ব্যতীত কোন আদেশ আকাশে অবতীর্ণ হয়নি? রোজা, হাজ্জ, হিজাব ইত্যাদি বিধ...
20/08/2025

আচ্ছা আমরা কি জানি যে আল্লাহর তরফ থেকে একমাত্র নামাজ ব্যতীত কোন আদেশ আকাশে অবতীর্ণ হয়নি?

রোজা, হাজ্জ, হিজাব ইত্যাদি বিধানগুলো নাযিল হয়েছে পৃথিবীর মাটিতে, ফেরেশতা জিবরীল (আঃ) মারফত ওহীর মাধ্যমে। কিন্তু নামাজের আদেশ বান্দার জন্যে কার্যকরী করার সময় আল্লাহ স্বয়ং রসূল(সাঃ) কে মেহমান করে নিয়ে যান সাত আসমানের উপর!

বান্দা এবং আল্লাহর মধ্যকার সমস্ত দূরত্ব ভেদ করে রসূল (সাঃ) চলে যান তাঁর রবের দরবারে এই বিশেষ উপহারটি নিবার সময়!! কতটা সম্মান আর ভালোবাসায় মুড়িয়ে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্যে নামাজের বিধান নাযিল করেছেন!

সুবহানআল্লাহ কল্পনা করা যায় নামাজের মধ্যে প্রতিবার সরাসরি আল্লাহর সাথে আমাদের মুখোমুখি মিটিং হচ্ছে?

আমরা কি সেই মিটিংকে আমাদের রবের তরফ থেকে আসা ডিরেক্ট উপহার হিসেবে নিচ্ছি? নাকি "নামাজ" কেবল আমাদের শত কাজের লিস্টের মধ্যে একটি 'কাজ' মাত্র যেটাকে যন্ত্রের মত কোনমতে পালন করে আমরা পরের কাজে চলে যাই?

"নামাজে মন ফেরানো" সিরিজে আজকের পর্বে আমরা জানব নামাজে পঠিত সানা-র অর্থ এবং ব্যখ্যা
🔹নামাজে পড়া সানার অর্থ এবং ব্যাখ্যাঃ
"সুবহানাকাল্লাহুম্মা, ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারকাসমুকা, ওয়া তাআ'লা জাদ্দুকা, ওয়ালা ইলাহা গইরুকা"

অর্থঃ "আল্লাহ আপনি কতই না পবিত্র, আপনার কোনো ভুল নেই। আমি সারাজীবন আপনার প্রশংসা করেই যাবো, আপনার নামগুলি সবচেয়ে বরকতপূর্ণ, আপনার নির্ধারিত হুকুম সবচেয়ে উচ্চ, আমি কখনোই আপনি ছাড়া আর কারো ইবাদাত করবো না। (অর্থাৎ কাউকে আপনার থেকে বেশি গুরুত্ব দিবো না!)

🔹সুবহানাকাল্লাহুম্মা, ওয়া বিহামদিকাঃ

এর অর্থ আমাদের আল্লাহ সবচেয়ে পারফেক্ট, তিনি সমস্ত ভুল হতে পবিত্র এবং সমস্ত প্রশংসা কেবল তাঁরই জন্যে। একটু খেয়াল করি, আমরা মানুষরা জীবনে এই দুইটা জিনিসই খুব চাইঃ Perfection and Praise. অর্থাৎ নিজেদের জন্যে আমাদের সবকিছু পারফেক্ট হতে হবে; পারফেক্ট ক্যারিয়ার, পারফেক্ট বিয়ে, পারফেক্ট বাড়ি! আর অন্যের কাছে আমরা আশা করি, প্রশংসা বা এপ্রিশিয়েশান। আমরা খুব চাই যে, পরিবারে, সমাজে অন্যেরা আমাদের সমাদর করুক!

ইন্টারেস্টিং ব্যপার হচ্ছেঃ মানুষের জীবনের বেশির ভাগ কষ্ট আসে এই দুই এর অভাবে। হয়, নিজেরা পারফেক্টলি কিছু করতে পারিনি, তাই নিজের উপর হতাশ। নাহলে অন্যের কাছে যেই সমাদর আশা করেছি সেটা পাইনি, তাই অন্যের উপর হতাশ!

চমৎকার ব্যপার হচ্ছে, আল্লাহ বার বার নামাজে আমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, ত্রুটিহীনতা এবং প্রশংসা - এই দুইটি বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি আল্লাহ রব্বুল আলামিনের আয়ত্বে। আমাদের আয়ত্বে না।

যেই আমরা নামাজে দাঁড়িয়ে বলছি, "সুবহানাকা আল্লাহুম্মা (আল্লাহ তুমি কত পবিত্র, ত্রুটিহীন), ওয়া বিহামদিকা (এবং আমি তোমার প্রশংসা সারাজীবন করেই যাবো) - সাথে সাথে আমরা আল্লাহর সামনে নিজেদের ত্রুটিপূর্ণ সত্তাকে কবুল করে নেই।

অন্য কোন সৃষ্টির কাছে সমাদর না খুঁজে একমাত্র আল্লাহর দিকে ফোকাস করি। এটা খুব পাওয়ারফুল। নামাজে দাঁড়িয়েই এটা একজন মুসলিমকে মেন্টালি স্ট্রং বানিয়ে দেয়। সে জানে যে, তার হতাশ হবার কিছু নেই। সে ভুলে ভরা হলেও আল্লাহ তাকে তার ঈমানের সহিত করা ছোট/বড় সকল আন্তরিক চেষ্টার জন্যে পুরষ্কৃত করবেন!

অন্য কারো কাছে প্রশংসা বা উপযুক্ত সমাদর না পেলেও তার কষ্টের কিছু নেই; সত্যিকার প্রশংসা তো কেবল আল্লাহর জন্যে, তার নিজের জন্যে তো না। ইম্পারফেক্ট বান্দার জন্য রয়েছে তার পারফেক্ট রব!

🔹ওয়া তাবারকাসমুকাঃ
অর্থ, "আল্লাহ তোমার নামগুলি কতই না বরকতপূর্ণ!" এখানে, আরবি "বারাকাহ" শব্দকে ইংরেজিতে "Blessing" এবং বাংলায় আশীর্বাদ বলা হয়। খুব কমনলি আমরা একে অন্যকে বলে থাকি, "May Allah Bless you", মানে "আল্লাহ তোমাকে বরকত দিক"। বরকত বলতে আমরা সাধারণত বুঝি কল্যাণ, মঙ্গল - জীবনে যা কিছু ভালো।

"বারাকাহ"-র আরেকটা ইন্টারেস্টিং অর্থ কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না। বারাকাহ মানে হচ্ছে, যখন আল্লাহ আমাদের জীবনে কল্যাণ এমনভাবে বাড়িয়ে দেন যে, আমরা অনেক কম সময়ে অনেক বেশি কিছু অর্জন করে ফেলতে পারি!

বারাকাহর একটা প্রাইম উদাহরণ দেই।

গেল রোজায় আমার এক বড় বোন কয়েকজন মুরব্বিদের ইফতারে দাওয়াত করবেন বলে নিয়ত করলেন। কিন্তু, আপুর হাতে ওইদিন সময় ছিল অনেক কম। সারাদিনের ঝড়-ঝাপটা শেষে সন্ধ্যার ঠিক আগে হাতে পেলো এক থেকে দেড় ঘণ্টা! এতগুলা মানুষের খাবার এত কম সময়ে সে কীভাবে করবে?

আপু তখন ভাবলো, "ইয়া আল্লাহ! আমি তোমার জন্যে নিয়ত করেছি যে তোমার বান্দাদের ইফতার খাওয়াবো। তুমি আমার জন্যে পথ করে দাও! মাগরিবের আযান পড়ার ৫ মিনিট আগে সে যখন টেবিলে দশটার বেশী আইটেম রেডি করে ফেললো, টেবিল ভর্তি খাবার দেখে আপুর বিস্ময়ে অস্ফুটে মুখ থেকে বের হলো - "এটা আমি করি নাই! এটা আল্লাহর বারাকাহ!"

যখন আল্লাহ সময়ে বারাকাহ দেন, তখন সেই সময় এমনভাবে প্রশস্ত হয়ে যায় যে, কম সময়ে অনেক বেশি কল্যাণ অর্জন করা সম্ভব হয়, যেটা আল্লাহর বারাকাহ ছাড়া অসম্ভব!
নামাজ এমন একটা ইবাদাত, যেটা করতে খুব কম সময় লাগে, কিন্তু আমরা যদি সেটা সঠিকভাবে জীবনে পালন করতে পারি, তাহলে প্রতিদিনের কয়েক মিনিটের এই নামাজই আমাদের জীবনে অসম্ভব রকমের কল্যাণ এবং বরকত নিয়ে আসবে!

নামাজের শুরুতেই যখন আমরা বলছি যে, "ওয়া তাবারকাসমুকা" - "আল্লাহর নামগুলি বরকতপূর্ণ" - তখন আল্লাহর কাছে আমরা সেই লেভেলের বারাকাহর আশা করছি! যেই সত্তার নামই এত বরকতপূর্ণ তিনি নিজে না জানি তাহলে কতটা বরকতপূর্ণ!
অকল্পনীয় এই বারাকাহর কল্যাণ আল্লাহ ছাড়া আমাদের জীবনে আসা সম্ভব নয় - এটাই আমরা প্রতিদিন পাঁচবার নামাজে মেনে নিচ্ছি।
সুবহানাল্লাহ! নামাজ যেমন বারাকাহ বাড়ায়, গুনাহ তেমনি বারাকাহ কমায়। সেজন্যে আমাদের গুণাহ থেকে অনেক দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে যেন জীবনের বারাকাহগুলো গুনাহ দিয়ে আমরা হারিয়ে না ফেলি। কষ্ট করে নামাজ পড়ে যে বারাকাহ পাচ্ছে, সে ঐ বারাকাহ প্রোটেক্ট করার জন্যে সমস্ত চেষ্টা দিয়ে গুনাহ থেকে দূরে থাকবে। এজন্যেই তো বলে,
"নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে।

(সূরা আনকাবুতঃ ৪৫)

তাহলেই নামাজের শুরুতেই একজন বান্দা মেন্টালি স্ট্রং হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে যে দুনিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে রব সে তাকে সমাদর এবং প্রশংসা করবেন এবং সেই রব তার বান্দার জন্যে অসম্ভব কল্যাণ এবং বারাকাহর দরজা খুলে দিতে সক্ষম! কেবল আমাদের মানুষের প্রশংসার আশা আর গুনাহগুলোকে ছুড়ে ফেলে রবের প্রতি আন্তরিক হবার অপেক্ষা!

পর্ব-০২
নামাজে মন ফেরানো
শারিন সফি অদ্রিতা আপু

🔹এরকম কি কখনো হয়েছেঐ যে নামাজে দাঁড়ানোর সাথে সাথে অহেতুক সব চিন্তা মাথায় এসে জট পাকিয়ে গেল? "পেপারটা জমা দিতে হবে! "...
19/08/2025

🔹এরকম কি কখনো হয়েছেঐ যে নামাজে দাঁড়ানোর সাথে সাথে অহেতুক সব চিন্তা মাথায় এসে জট পাকিয়ে গেল? "পেপারটা জমা দিতে হবে! "ওহ! ইনবক্সের অনেকগুলো মেসেজের রিপ্লাই দেওয়া হয়নি!" "আহারে রান্নাটা বসাতে হবে, আজ যেন কি রান্না করবো?" আমাদের দুনিয়ার সব হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেল রবের সাথে কথা বলার সময়, তাই না?

যেখানে আল্লাহর রসূল (সা:) তাঁর নামাজে এক রাকাতেই সুরাহ বাকারাহ পড়ে শেষ করে ফেলতেন, সেখানে সবচেয়ে ছোট সূরাটা পাঠ করে, কোন রাকাআতে যে আছি এটা মনে রেখে কোনমতে নামাজ শেষ করাটাই আমাদের মনের সাথে এক বিশাল যুদ্ধ!

নামাজে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে রসূল (সা:) এর পা ফুলে যেত, অথচ তার জীবনের অতীত, বর্তমান সমস্ত গুনাহই মাফ! তাহলে কেন তিনি এভাবে নামাজ পড়তেন? কারণ, তিনি আসলেই তাঁর নামাজকে অনেক উপভোগ করতেন!

নামাজ ছিল তাঁর জীবনের সমস্ত ঝড়-ঝাপটার মাঝে নিরাপদ আশ্রয় এবং চক্ষু শীতলতাকারী ইবাদত! সেই নামাজ তাঁর জায়গায় এখনো আছে! তাহলে কেন আমরা নামাজ পড়ে সেরকম মজা পাই না?

নামাজ উপভোগ না করার একটা বড় কারণ হচ্ছে নামাজের মধ্যে যা যা বলছি, সেগুলোর অর্থ না জানা। আমরা যদি অর্থগুলি জানি, আশা করি তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে আমাদের নামাজগুলিকে শুদ্ধ করার তাওফিক দিবেন।

সেজন্যে এই ১৩ পার্টের "নামাজে মন ফেরানো" সিরিজের মাধ্যমে আমরা সেই লক্ষ্যের দিকেই কাজ করবো ইন শা আল্লাহ। আল্লাহ কবুল করুক।

নামাজে "আল্লাহু আকবার" এর অর্থ:

নামাজ শুরু করি আমরা "আল্লাহু আকবর" বলে হাত বাঁধার মাধ্যমে। এছাড়াও নামাজের বিভিন্ন সময়ে প্রায় একটু পরে পরে আমরা বলি "আল্লাহু আকবার". এটার সবচেয়ে কমন ট্রান্সলেশন হচ্ছে - "আল্লাহ সবচেয়ে বড়/মহান!" "Allah is the greatest." কিন্তু, ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, এটার অর্থ আসলে "Allah is greater" (Not greatest).

আরবি গ্রামার খুঁটে পড়লে দেখা যায় যে, "আল্লাহু আকবার" আসলে comparative form এ আছে, not superlative. সহজ বাংলায় আল্লাহু আকবার মানে "আল্লাহ অন্য কোনকিছুর থেকে বড়"। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, এখানে "অন্যকিছু" টা কি? আর কেনই বা আমরা নামাজে আল্লাহকে "অন্য কোনকিছুর" থেকে বড় বলছি? এর উত্তরে রয়েছে চমৎকার এক ব্যাখ্যা!

আমরা দুই হাত বেঁধে একবার নামাজটা শুরু করার পরে, যে জিনিসের চিন্তাটাই আমাকে আল্লাহ থেকে অমনোযোগী করে অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছে, সেটার থেকে আল্লাহ বড়!! ইচ্ছা করেই এখানে এটা "অন্যকিছুর" ব্যাপারটা উহ্য রেখে যেন একটা শূন্যস্থান রাখা হয়েছে।

তাহলে "আল্লাহু আকবার" এর proper অর্থ দাঁড়ায় - "Allah is greater than ___________ ." এই “Fill in the blank” পূরণ করতে আমরা সেটাই বসিয়ে দিবো, যেটা আমাকে নামাজের মধ্যে আল্লাহর থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে।

যেমন : নামাজ পড়তে পড়তে স্কুলের হোমওয়ার্ক বা চাকরির কথা মনে পড়লো, যেই আমি বললাম, "আল্লাহু আকবার" - তার মানে আমার এই হোমওয়ার্ক বা চাকরির থেকে আল্লাহ বড়! সিজদাহ থেকে উঠতে উঠতেই অফিসের বসের কথা মনে পড়লো - যেই বললাম - "আল্লাহু আকবার" - নিজেকে মনে করিয়ে দিলাম যে, অফিসের বসের থেকে আল্লাহ বড়।

নামাজে দাঁড়িয়ে চুলায় বসানো রান্না কথা মনে হচ্ছে - কিন্তু রান্নার থেকে আল্লাহ বড়! আমার দুনিয়ার যেই কাজটার কথাই আমি নামাজের মধ্যে ভেবে ভেবে আল্লাহর প্রতি অমনোযোগী হচ্ছি - সেই কাজের থেকে আল্লাহ বড়!

এজন্যেই প্রায় প্রতিটা ধাপেই আমরা "আল্লাহু আকবার" বলি, রুকুতে যেতে, সিজদায় যেতে, দুই সিজদার মাঝে, আবার সিজদা থেকে উঠতে!

এমন ভাবেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে যেন আল্লাহকে ভুলে যেতে গেলেও আবার "আল্লাহু আকবার" মনে করিয়ে দেয় যে, আসলে এই মুহূর্তে নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় আমার কাছে আল্লাহর থেকে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই!

আল্লাহু আকবার!

নামাজে মন ফেরানো
পর্ব-০১
লেখা: শারিন সফি অদ্রিতা আপু

18/08/2025

Shahiba…❤️

সুন্দর ❤️
17/08/2025

সুন্দর ❤️

13/08/2025

Situation right now🙂🙃
Video credit: বাবুমশাই

12/08/2025

❤️🦋

08/08/2025

চলোনা হারিয়ে যাই…🌿

Address

Barisal

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when ღBarishailla-বরিশাইল্লাღ posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share