26/03/2024
প্রথম দেখাতে তো ভুত দেখার মতো চমকে উঠেছিলাম। অবিকল একই দেখতে কী করে হয়? আর সব থেকে বড় কথা, বছর বারো আগে যে মারা গেছে সে এই ট্রেনের কামরায় কীভাবে এলো? যদিও শুনেছিলাম ট্রেন এক্সিডেন্টেই আমার এক সময়ের প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু হয়। তাহলে কী.....?
সামনের সিটেই বসেছিল। আমি ট্রেনে ওঠার আগে থেকেই ছিল। ভালো করে কিছুক্ষণ নিরীক্ষণ করার পর বুঝলাম, আমার মৃত বন্ধুর সাথে এই ভদ্রলোকের চেহারার অনেকটাই মিল। তবে ওর ঠোঁট দুটো একটু মোটা আর ভ্রূযুগল হালকা ছিল। এই ভদ্রলোকের চোখে চশমা আর গালে হালকা দাড়ি। আমার বন্ধুটি সবসময় সেভ করে নিট এন্ড ক্লিন থাকতো। চশমাও ছিল না।
হঠাৎ করে ভদ্রলোককে বলেই ফেললাম, কিছু মনে না করলে একটা কথা বলব?
চশমার ওপর দিয়ে সরাসরি তাকিয়ে বেশ খানিকটা গাম্ভীর্যপূর্ন স্বরে তিনি বিজ্ঞের মতো বললেন, বলুন।
একদম সেম টু সেম আপনার মতো দেখতে আমার একটা বন্ধু ছিল। নাম সুশোভন।
উনি একটা খবর কাগজ পড়ছিলেন। পাতা উল্টে আমার দিকে না তাকিয়ে বললেন, ছিলেন মানে?
আমি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম, বছর বারো আগে একটা ট্রেন এক্সিডেন্টে ওর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
ভদ্রলোক কেমন যেন চমকে উঠে পেপারটা ভাঁজ করে বললেন, বলেন কী!
ভীষণ প্যাথেটিক! তখন যদিও তাঁর সাথে আমার আর সেরকম যোগাযোগ ছিল না। আরেক বন্ধু মারফত খবরটি পাই। তাছাড়া পেপারেও খবরটি দিয়েছিল।
লোকটি মাথা নেড়ে বললেন, সত্যিই খুব বেদনাদায়ক!
সবথেকে বড় কথা ও নাকি মারা যাবার বছর দু'য়েক আগে বিয়ে করেছিল। একটি কন্যা সন্তানও হয়েছিল। ওদের অবস্থার কথাটা জাস্ট ভাবুন।
বিয়েতে আপনাকে নেমতন্ন করেনি?
আসলে আর যোগাযোগ ছিল না। প্রায় কুড়ি বছর হয়ে গেল কলেজ পাশ করা। ফোন নম্বরও বদলে গেছে, সোশ্যাল মিডিয়াতেও খুঁজে পাইনি।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ভদ্রলোক বললেন, কোন কলেজ?
KN কলেজ। বহরমপুর।
আসলে খোঁজ করলে সব মানুষেরই একটা আধটা ড্যামি পাওয়া যাবে। যমজ না হয়েও একই দেখতে মানুষ আছে। অবিকল একই না হলেও অনেকটা একই।
আমি ভদ্রলোকের কথায় সায় দিয়ে বললাম, একদম ঠিক বলেছেন।
তবে কী জানেন, আমারও কলেজের এক বন্ধু ছিল। ঠিক আপনার মতই দেখতে।
আমি কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কী আশ্চর্য! কোন কলেজ? নাম কী?
উনি আমার দিকে স্থির তাকিয়ে বললেন, KN কলেজ। সন্তু।
*
কয়েক মুহূর্ত দুজনের মধ্যে এক ভয়ংকর নীরবতা। ট্রেনে আছি, সেটা বেমালুম ভুলে গিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ভদ্রলোক, থুড়ি আমার সেই মৃত বন্ধু, থুড়ি বেঁচে থাকা বন্ধু সুশোভনের দিকে।
বিস্ময় কাটিয়ে কিছুক্ষণ পর বললাম, ভাই তুই বেঁচে আছিস তাহলে?
কেন রে, মরে গেলে ভালো হতো নাকি?
কিন্তু ব্যাটা বিভাস যে আমাকে ফোন করে বলেছিল তুই নাকি ট্রেনের তলায় কাটা পড়েছিস। পেপারেও দিয়েছিল।
ওটা একই নামের অন্য কেউ ছিল হয়তো। তবে শুধু কী মারলি আমায়, তার আগে বিয়ে দিলি, বাচ্চাও হল।
তার মানে তোর বিয়ে হয়নি?
না হয়নি। আর স্টিল নাও আনম্যারেড।
ভাই ক্ষমা করে দে। এরকম একটা ফেক নিউজকে এতকাল সত্যি মেনে আসার জন্য। তবে তুই কিন্তু অনেকটা চেঞ্জ হয়ে গেছিস।
কীরকম?
চেহারার মধ্যে একটা ভারিক্কি ভাব এসেছে।
বয়স বাড়লে তো আসবেই। তবে না চেনার মতো কিছু ছিল না। আমি তো তোকে প্রথম দেখাতেই চিনতে পেরেছিলাম। তবে তুই কিন্তু অবিলল একই আছিস।
না রে, ভালো করে লক্ষ্য করে দেখ, গায়ে একটু মাংস লেগেছে।
আমি সেটা বলছি না।
তবে?
মানে কলেজে পড়তে যেমন টাল পাবলিক ছিলিস, এত বছর পর আজও সেই টাল-ই থেকে গেছিস।
আমার আশেপাশে এরকম প্রচুর টাল পাবলিক আছে তারা সংখ্যায় এত বেশি যার কারনে মেনশন দিতে পারলাম না🤣