20/07/2025
গৌরনদীতে আর্মি ক্যাম্প থাকা সত্ত্বেও মাদকবিরোধী অভিযান নেই — প্রশ্ন উঠছে সেনা সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে
বরিশালের গৌরনদীতে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপিত থাকলেও মাদকের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান বা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে জনমনে উদ্বেগ ও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে—সেনা ক্যাম্প থাকার পরও কেন মাদক ব্যবসা অব্যাহত? তবে ভয়ে কিংবা নানা আশঙ্কায় সাধারণ মানুষ প্রকাশ্যে এসব প্রশ্ন তোলার সাহস পাচ্ছেন না।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় পরিচিত মাদক ব্যবসায়ী হিরা মাঝি ও তার বড় ভাই মানিক মাঝির সঙ্গে সেনা ক্যাম্পের কিছু সদস্য এবং গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ও এনএসআই–এর কয়েকজন কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এমনকি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও উঠে এসেছে।
সূত্র জানায়, গত ১৭ এপ্রিল ২০২৫, রাত আনুমানিক ২টা ৩০ মিনিটে কটকস্থলে মানিক মাঝির মালিকানাধীন ‘ফাতেমা রেস্টুরেন্ট ও হোটেল’-এ গিয়েছিলেন সেনা ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ল্যান্স কর্পোরাল মো. আশরাফ, ডিজিএফআই-এর সার্জেন্ট ইমরান, এনএসআই কর্মকর্তা ফুয়াদসহ মোট পাঁচজন, যারা সবাই সিভিল পোশাকে ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তারা সেদিন মানিক মাঝির কাছ থেকে ৫টি এক হাজার টাকার বান্ডিল গ্রহণ করেন—মোট পাঁচ লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত, কটকস্থলের ‘মেসার্স আরিফ ফিলিং স্টেশন’ পূর্ববর্তী সরকারের আমলে জোরপূর্বক দখলে নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মুন্সি। ফিলিং স্টেশনটি তিনি হিরা ও মানিক মাঝিকে শেয়ার হিসেবে দেন—মূল মালিক হারুন বেপারীর অজান্তে।
হারুন বেপারীর কন্যা পপি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এবং ১০ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে সেনা ক্যাম্প, গৌরনদী থানা, স্থানীয় সাংবাদিক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন সম্পূর্ণ মালিকানা ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে।
পরবর্তীতে গৌরনদী থানায় বৈঠক হয় এবং ইউএনও আবু আব্দুল্লাহ খান উভয়পক্ষকে নোটিশ দিয়ে শুনানির আয়োজন করেন। শুনানিতে তিনি মৌখিকভাবে হারুন বেপারীর পক্ষেই রায় দেন।
কিন্তু রায় মেনে না নিয়ে প্রতিপক্ষ হয়রানিমূলক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। অভিযোগ রয়েছে, হিরা ও মানিক মাঝি সেনা ক্যাম্পের ল্যান্স কর্পোরাল আশরাফকে ম্যানেজ করে চলেছেন। এমনকি হিরা-মানিকের পিতা মজিবর রহমান মাঝির করা একটি অভিযোগের সূত্র ধরে সেনা ক্যাম্পের পক্ষ থেকে ‘আর্মি ক্যাম্প থেকে বলছি’ পরিচয়ে পপিকে ফোনে হুমকি দেওয়া হয়। তাঁরা মৌখিক রায় অস্বীকার করে লিখিত রায় চেয়ে পপিকে বারবার ক্যাম্পে যেতে বলেন, কিন্তু পরিচয় গোপন রাখেন। এই ফোনালাপের অডিও রেকর্ড পপির কাছে সংরক্ষিত আছে।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, তাহলে কি “শর্ষের মধ্যেই ভূত”?
ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও নিরপেক্ষতার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরাই যদি পক্ষপাতিত্বে জড়ান, তাহলে সাধারণ মানুষের আশ্রয় কোথায়?
এবিষয়ে ল্যান্স কর্পোরাল মো. আশরাফ, ডিজিএফআই-এর সার্জেন্ট ইমরান, এনএসআই কর্মকর্তা ফুয়াদ এর বক্তব্য নেঅ সম্ভব হয় নি, প্রতিবেদকের দেয়া ফোন রিসিভড করেননি ।