
07/09/2025
পরম মঙ্গলময় ভাদ্র পূর্ণিমা!
"আমরা ভাদ্র পূর্ণিমার দ্বারপ্রান্তে। শ্রীমদ্ভাগবতে এই ভাদ্র পূর্ণিমার মহিমা বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে- স্বর্ণসিংহাসনে স্থাপন করে শ্রীমদ্ভাগবতের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং ভাগবত প্রচারের মহিমান্বিত দিন রূপে। আমি আমার সন্ন্যাসের এই অর্ধশত বার্ষিকীতে এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত- কেননা অনেক ভক্তই শ্রীমদ্ভাগবত সেট দান করছে। তাই মায়াপুরের প্রত্যেক গৌড়ীয় মঠে, যেখানে গ্রন্থাগার রয়েছে, সেখানে আমরা ভাগবত সেট প্রদান করতে পারি, তাঁরা শ্রদ্ধার সাথে সেই শ্রীমদ্ভাগবত সেট রাখতে পারেন, এবং এর মাধ্যমে তাঁরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন যে, শ্রীল প্রভুপাদ এই পৃথিবীকে কী অমূল্য সম্পদ প্রদান করেছেন! শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তিনটি মূল নির্দেশনা প্রদান করেছেন- “বল কৃষ্ণ, ভজ কৃষ্ণ, কর কৃষ্ণ শিক্ষা।“ শ্রীল প্রভুপাদ বিশ্লেষণ করেছেন যে, শিক্ষা মূলত দুটি - শ্রীমদ্ভগবদগীতা, যা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা, এবং শ্রীমদ্ভাগবত - যা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্কে কথা। আমরা জানি যে এই শ্রীমদ্ভাগবত সমগ্র বৈদিক সাহিত্যের সুপক্ক ফল। বলা হয়ে থাকে যে, অন্যান্য সকল পুরাণ এবং শাস্ত্রসমূহ ততক্ষণ পর্যন্তই মহিমান্বিত যতক্ষণ পর্যন্ত শ্রীমদ্ভাগবত প্রকাশিত হননি, এবং যখন শ্রীমদ্ভাগবত অবতীর্ণ হলেন তখন উপলব্ধ হল যে, অন্যান্য সকল শাস্ত্রের গুরুত্ব এখন আগের মত নেই, এবং শ্রীমদ্ভাগবত অনন্যসাধারণ। তাই এটি আমাদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ- শ্রীমদ্ভাগবত দান করার জন্য। অবশ্যই শ্রীল প্রভুপাদ চেয়েছেন যে, আমরা যেন শ্রীমদ্ভাগবত অধ্যয়ন করি।
.. এই শ্রীমদ্ভাগবত বৈদিক বৃক্ষের সুপক্ক ফল। আমাদের তাই এই ভাগবত অধ্যায়ন করা উচিত এবং অবশ্যই এ ভাগবতের সর্বত্র প্রচার করা উচিত। এবং এই ভাদ্র পূর্ণিমা শ্রীমদ্ভাগবত প্রচার করার জন্য আমাদের এক মহান সুযোগ প্রদান করছে। এবং সকলেই এই তিথিতে শ্রীমদ্ভাগবত প্রদান করার মাধ্যমে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হতে পারে এবং তারা জীবনের পরম গতি লাভ করতে সমর্থ হবে।
আমাদের জন্য এটি এক দুর্লভ সুযোগ। এবং আমরা জানতে পেরেছি যে কীভাবে ভক্তেরা শ্রীমদ্ভাগবত সেট দান করছে- তাঁদের অন্তর্ধান প্রাপ্ত পূর্বপুরুষদের নামে, পিতা-মাতা, পিতা-মাতামহ, পিতা-মাতামহীর কল্যাণার্থে। পুত্রপুত্রী- 'পুত' অর্থ হল নরক এবং 'র' অর্থ হল রক্ষা করা, তাই পূর্বপুরুষদের অর্থাৎ পিতা-মাতাকে নরক থেকে রক্ষা করাই হচ্ছে পুত্র বা পুত্রীর কর্তব্য। তাই এটি হলো আপনার পূর্বপুরুষদের উদ্ধার করার একটি পন্থা।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সবাইকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন এই বলে যে, সকলেরই শ্রীমদ্ভাগবত অধ্যয়ন করা উচিত এবং প্রচার করা উচিত। আমি শ্রীমদ্ভাগবতের মাহাত্ম্য শ্রবণ করছিলাম। যেহেতু শ্রীমদ্ভাগবত হলো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী অবতার, তাই যে ঘরে শ্রীমদ্ভাগবত রাখা হয় দেবতারা সেখানে আসেন এবং সেখানে প্রণতি নিবেদন করেন, কেননা এই শ্রীমদ্ভাগবত কৃষ্ণ থেকে অভিন্ন। আমরা জানি যে, কৃষ্ণ এবং তাঁর নাম অভিন্ন। কৃষ্ণ এবং তার লীলার মধ্যে কোনো প্রভেদ নেই। তাই কৃষ্ণ এবং শ্রীমদ্ভাগবতের মাঝে কোন পার্থক্য নেই- যা কৃষ্ণ, তাঁর বিভিন্ন অবতার এবং ভক্তের লীলার এক পূর্ণ সংকলন। প্রকৃতপক্ষে কেবলমাত্র শ্রীমদ্ভাগবত স্পর্শ করার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি সুমহান আশীর্বাদ লাভ করতে পারে। কোন ব্যক্তি শ্রীমদ্ভাগবতের শ্লোক পাঠ করার মাধ্যমে পরম সত্যের সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। তাই আমাদের এই কৃপার সুযোগ যতটা সম্ভব সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।
~ শ্রীল জয়পতাকা স্বামী
২৮শে আগস্ট ২০২০
শ্রীধাম মায়াপুর