16/07/2022
আমাদের এ্যপার্টমেন্ট এর উপর তলায় একজন ভদ্র মহিলা ভাড়া থাকতো আজ থেকে ২ বছর আগে।
তো ওই ভদ্রমহিলার সাথে আমার সম্পর্ক মোটামুটি ফ্রেন্ড এর মতই ছিলো কারন আমরা সেইম এইজের ছিলাম।
তো উনি ছিলেন প্রচন্ড সংসারী টাইপের এবং গুছানো।
তবে উনি নিজের জন্য কখনোই ২ টাকা ও খরচ করতে চাইতেন না তাই উনি কোন বিয়ের প্রোগ্রাম বা কোন অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় আমার কাছে আসতো সাজতে বা ব্যাগ, ড্রেস, জুতা এইসব নিতে (আমি ছোট করার জন্য বলছি না) এমন না যে আপুটার কেনার এ্যাবিলিটি ছিলো না অনেক ভালো এ্যাবিলিটিই ছিলো উনাদের কারন উনার হাসবেন্ড একজন আইটি কর্মকর্তা।
আমি যখনি উনাকে কথায় কথায় বলতাম আপু আপনি অমুক পেইজ থেকে তো নিতে পারেন জিনিস গুলো। প্রতিবারই তিনি উওর দিতো আরেহ মিতু আপু! ভাড়া বাসায় থাকি একটা ফ্ল্যাট কিনতে হবে, আপনার ভাইয়া বাইকে করে অফিস এ যায় একটা গাড়ি কিনতে হবে তাই সেভিংস করছি৷ ইনশাআল্লাহ দুটো হয়ে গেলে বিদেশ যাবো ঘুরতে,ব্র্যান্ড এর সব জিনিস কিনবো।
উনি কখনো হাসবেন্ড বললেও ঘুরতে যেত না বা কোন দামী রেস্টুরেন্ট এ ও কখনো খেতে যেতে দেখিনি, কারন উনার ভাষ্যমতে এই টাকা'টা ডিপোজিট করলে আরো কিছু সেভিংস হবে। আমার এখনো মনে পড়ে একবার উনার হাসবেন্ড উনাকে চুল রিবন্ডিং করার জন্য কিছু টাকা দেয় সে টাকা দিয়ে উনি সংসার এর জন্য অনেক গুলো ক্রোকারিজ আইটেম কিনে নিয়ে আসে এই ঘটনায় তার হাসবেন্ড ও খুব বিরক্ত হয়েছিল যতদূর মনে পড়ে।
উনার বর্তমান নিয়ে কোন চিন্তা ছিলো না উনার চিন্তা ছিলো শুধু ভবিষ্যত নিয়ে, সংসার নিয়ে। বলতো সব শখ এক এক করে পূরন করবো ফ্ল্যাট আর গাড়িটা কিনা হোক । তো উনারা ১ বছর আগে আমাদের বাসা থেকে কিছু দূরেই একটা ফ্ল্যাট কিনে ভাইয়া একটা সাদা টয়োটা গাড়ি কিনলো।
আপুটা ওই বাসাটা মনের মত করে নিজের কেনা প্রতিটা জিনিস দিয়ে সাজালো। অনেক রিনোইন্ড ইন্টোরিয়র ডিজাইনার দিয়ে বাসাটা ডেকোরেট করলো।
তখন মনে হলো উনার থেকে সুখী আর দুনিয়ায় কেউ নাই! এইবার উনি ঘুরবে, দামী দামী জিনিস কিনবে, সব শখ পূরন করবে৷
কিন্ত আল্লাহর প্ল্যান মনে হয় ছিলো ভিন্ন! আপুটার সেকেন্ড প্রেগন্স্যাসি (উনার সাড়ে ৩ বছরের একটা ছেলে ছিলো) ওই প্রেগন্স্যাসি টা ছিলো এপটোপিক pregnancy!
আপুটা সার্জারির সময় না ফেরার দেশে চলে যায়।, তার সাজানো সংসার, তার ছোট একটা বাচ্চা,তার ভালোবাসার হাসবেন্ড এবং শত শত অপূরনীয় শখ পিছনে রেখে।
তো আজকে আমার বাসার কাজের খালা এসে জানালো ভাইয়া আবার বিয়ে করছে, বউকে নিয়ে সেই সাজানো ফ্ল্যাট এ উঠছে৷ সদ্য বিবাহিত নবদম্পতির ডিস্টার্ব হবে তাই বাচ্চাটাকে তার নানীর কাছে রেখে এসেছে !!😅
কথাগুলো শুনে আমার উনার হাসবেন্ড এর উপর মোটেই রাগ হয়নি বরং মৃত মানুষটার উপর রাগ হচ্ছে যে ভবিষ্যত ভবিষ্যত করে তার সব শখ মাটিতে চাপা দিছিলো। কি হলো আজকে? উনার সাজানো সংসার আজকে অন্য কারো! সেই গাড়ি, বাড়ির রাজরানি অন্য কেউ!
এই যে আপনারা বলেন শখের বয়সে ধৈর্য ধরা শিখছি, এই কথাটা গুরুতর বিরোধিতা করি আমি। কেন শখের বয়সে ষোল আনা শখ পূরন করবো, বেড়ষোল আনা শখ পূরন করবো, বেড়ানোর বয়সে বোড়াবো, খাওয়ার বয়সে সব ভালো ভালো জায়গায় খাবো৷ ভবিষ্যতে কি হবে কে জানে? আজকে আছি কালকে থাকবো কিনা সেটা কে বলতে পারবে?
এই যে আপুটার হাসবেন্ড হার্ডলি কোন সুন্দর মেমোরি পাবে রিকল করার জন্য কারন উনি কখনোই কোথাও ঘুরতে যেতেন না।
তাই আমি বলবো সময় থাকতে হাসবেন্ড ওয়াইফ ঘুরুন, বেড়ান, সুন্দর সুন্দর মোমেন্ট কালেক্ট করুন আপনাদের মেমোরি তে❤️ যাতে আপনি না থাকলে ওই সুন্দর মোমেন্ট গুলো মনে করে হলেও আপনাকে খুঁজে আপনার পার্টনার।
ফিউচার, ফিউচার একটা সিকিউর ফিউচার বানাতে গিয়ে বর্তমানকে শেষ করবেন না! একটা সময় দেখা যাবে দুজনেরই হাতে সময় এবং টাকা সব আছে কিন্ত ঘুরতে, বেড়াতে যাওয়ার মত শক্তি বা হেলথ কোনটাই আর নাই!
শখের বয়সে ষোলআনা শখ পূরন করুন নিজের সাধ্যর মদ্ধে।
অনেক কষ্ট নিয়ে লেখা গুলো লিখা💔
লিখেছেনঃ