Story of Neel Maloti Lota

Story of Neel Maloti Lota Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Story of Neel Maloti Lota, Bangladesh, Barishal.

লিখতে ভালো লাগে তাই,,,,টুকিটাকি লিখে যাই,,,,,, কারো ভালো লাগে,,, আবার কারো হয়তো বিরক্ত লাগে,, তবুও আমার কলম এগিয়ে যেতে চায়। কল্পনা বিলাসী আমি, কল্পনায় হাজারো ছবি আঁকি,,,



আমার ২য় পেজ সবাই ফলো করে রাখবেন: https://www.facebook.com/share/14FYzU9TopC/

 #আমার_স্নিগ্ধপরী  #পর্ব_২২ #লেখা:  #নীল_মালতীলতাকপি নিষিদ্ধ ❌❌❌ফাইয়াজের পরনে থ্রি কোয়াটার ট্রাউজার, হাফ হাতা টি শার্ট।...
11/09/2025

#আমার_স্নিগ্ধপরী
#পর্ব_২২
#লেখা: #নীল_মালতীলতা

কপি নিষিদ্ধ ❌❌❌

ফাইয়াজের পরনে থ্রি কোয়াটার ট্রাউজার, হাফ হাতা টি শার্ট। মূলত তার পরনে এখনো রাতের পোশাক যা সে এখনো পরিবর্তন করেনি।

তার স্নিগ্ধপরী চলে গেছে শুনে তার মাথা এমনিতেই আওলে গেছে। ঘরে এসে যখন দেখলো একেবারে তার জামা কাপড় নিয়ে লাগেজ সহ বেরিয়ে গেছে তখন ফাইয়াজ পাগল প্রায়। দিক বেদিক হারিয়ে সে ছুট লাগালো স্নিগ্ধাকে ফেরানোর উদ্দেশ্যে।

এরকম কিছু হবে তা ফারজানা তালুকদারের জানা। ছেলে যে বউয়ের প্রেমে বদ্ধ উন্মাদ তা তাদের সবার খুব ভালোভাবেই জানা হয়ে গেছে।
এইতো তার সুখী পরিবার।

ফারজানা তালুকদার দেখলেন ছেলের অবস্থা। ঘুম থেকে উঠেই বউকে খুঁজে খুঁজে হয়রান সেই অবস্থাতেই এখনো আছে। সেই অবস্থায় ছেলে পাগলের মতো দৌড়ে শিড়ি বেয়ে নামছে।

ফাইয়াজ যখন দৌড়ে ওপরে গেল তখনই ফারজানা তালুকদার ফজলুল তালুকদারকে ঘর থেকে ডেকে বের করেছেন।

ফাইয়াজ ডানে বামে না তাকিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বের হতে নেয় তখনই ফজলুল তালুকদার আর ফারজানা তালুকদার ফাইয়াজকে আটকে দেন,,

ছাড়ো আমাকে, ও নিশ্চয় বেশিদূর যেতে পারেনি আমাকে আটকাতে হবে। আমার উপরে অনেক অভিমান করেছে, এখন না আটকালে দেরি হয়ে যাবে। আর তোমরা কেমন হ্যাঁ তোমরা দেখেছো চলে যেতে আর একবারও আটকালে না, আর না আমাকে ডাকলে??

ও এতক্ষণে অনেকদূর চলে গেছে, বললেন ফারজানা তালুকদার।

ম. ম. মানে?

ওতো সেই আলো ফোটার আগেই বেড়িয়ে গেছে,,

ফাইয়াজ সেখানে মেঝেতেই ধপ করে বসে পড়ল, কাঁপা গলায় বলল,,

তোমরা দেখেও আটকালে না কেন আম্মু? কেনো? আমাকে কেন ডাকলে না?

যে মেয়ে সামান্য এতোটুকু ঝগড়ার কারণে অভিমান করে বাড়ি ছাড়ে তার জন্য এত পাগল হয় কি প্রয়োজন?

আম্মু, প্লিজ আমার সঙ্গে মজা করো না, আমি জানি তুমি স্নিগ্ধা বলতে পাগল সে তুমি আমার সঙ্গে এরকম কথা বলছো? আমাকে বোকা পেয়েছ আম্মু। আব্বু তোমরা দুজন আমার সঙ্গে এমন কেন করলে বলতো??

ফজলুল তালুকদার ফাইয়াজের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, শান্ত হও, স্নিগ্ধা মা ভালো আছে। কতগুলো দিন হলো বলতো বাবা মাকে দেখে না মেয়েটা। তার উপরে শুনলাম তোমাদের মধ্যে নাকি ঝগড়া হয়েছে। মেয়েটার মনটা এখন ভালো নেই। তাই একটু বাবা মার সঙ্গে দেখা করে আসুক, মনটা ওর ভালো হবে।

তাই বলে এভাবে আমাকে না বলে যাওয়ার তো কোনো প্রয়োজন ছিল না আব্বু,,

রাগ করো না, অতিরিক্ত রাগ অভিমান কোনটাই ভালো নয়। দুটো দিন থাকুক তারপর না হয় তুমি গিয়ে নিয়ে আসবে।

আমি এক্ষুনি রওনা দিচ্ছি,, এমন সুন্দর বৌ আমার একা রাখা যাবে না কোথাও। আমার সঙ্গে থাকাকালীন ছেলেরা আমার বউকে প্রপোজ করে বসে, সেখানে আমার অনুপস্থিতিতে তো,,, না না, আমি মোটেও এই রিক্স নিতে পারব না আমি এক্ষুনি রওনা দিচ্ছি।

ফাইয়াজের কথা শুনেই ফারজানা তালুকদার আর ফজলুর তালুকদার হতভম্ব,

ফারজানা তালুকদার বললেন,, বিয়ের আগেও কি তুমি তার সঙ্গে থেকে থেকে প্রটেক্ট করেছিলে নাকি?

বিয়ের আগের কথা আলাদা আম্মু, তখন সে আমার বউ ছিল না, এখন সে আমার বউ,

ও আচ্ছা তাই না, আচ্ছা ঠিক আছে, এখন যাও ফ্রেশ হয়ে এসো খাবার খাবে, পাগলামি বন্ধ কর,,

আম্মু,,

আজকের দিনটা মানিয়ে নাও কাল সকালে আমরা সবাই মিলে রওনা হব,,

সত্যি আম্মু,,

তুমি কি দিন দিন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছ নাকি?

ফাইয়াজ আর কিছু না বলেই মুখ গোমরা করে নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে চলে গেল,,

ফারজানা তালুকদার বিয়ে বির করে বললেন,, একদম বাপের ধারা পেয়েছে,,

ফজলুর তালুকদার সেটা শুনতে পেয়ে বললেন,, তোমার কি কোনভাবে হিংসা হচ্ছে ছেলে বউকে বেশি ভালোবাসে বলে?

হ্যাঁ হচ্ছেই তো, হিংসার জলে পুড়ে মরে যাচ্ছি আমি, অদ্ভুত বাপ ছেলে। সারা জনম এই লোক আমাকে জ্বালিয়ে মারলো। একটা রাত গিয়ে বাপের বাড়িতে কাটাতে পারলাম না। এখন আমার মেয়েটাকে তোমার ছেলে জ্বালিয়ে মারছে।

ফজলুল তালুকদার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বললেন,, এতে আমার কি করার তোমাকে ছাড়া তো আমার নিঃশ্বাসই চলতে চায়না। শেষে যদি দম আটকে মরে যাই? তাইতো তোমাকে কোনভাবেই ছাড়া যায় না।

বুড়ো বয়সে ভীমরতি হয়েছে নাকি?

আমি ভুল কি বললাম,,

হ্যাঁ ছেলেটাও তো পেয়েছে সেই একই রোগ মেয়েটাকে আমার জালিয়ে মারছে।
ফারজানা তালুকদার আর একদন্ড দাঁড়ালেন না চলে গেলেন তার কাজে। তবে স্বামীর আড়াল হলেই তার মুখে চলে আসে মিষ্টি হাসি। এই লোকটাকে ছাড়া তিনি থাকতে পারেন নাকি?

আল্লাহ তাকে দুহাত ঢেড়ে দিয়েছেন সুখ আলহামদুলিল্লাহ। ছেলের জন্যও খুঁজে পেয়েছেন যোগ্য জীবন সঙ্গী। মেয়েটা যাওয়ার সময় তার মুখটা কি অন্ধকারটাইনা ছিল। বারবার পেছনে নিজের ঘরের দিকে তাকাচ্ছিল। পা যেন সামনে আগাচ্ছেই না এমন করে বাড়ি থেকে বের হল।

,
,

গ্রামের পরিবেশ এখন স্বাভাবিক। সবাই স্নিগ্ধাকে সানন্দে গ্রহণ করেছে। তবে একা দেখে দু একজন খোঁচা মারতেও ছাড়েনি,,

কিরে স্নিগ্ধা একা কেনো।

এতদিন পর এলি তাও আবার জামাই ছাড়া?

কেনো আব্বু তোমাদের কিছু বলেনি নাকি? নাকি তোমরা দওয়াত পাওনি কাকি?

দাওয়াত? কিসের দাওয়াত? আমি তো বেড়াতে গিয়েছিলাম আজই এলাম। আর তোকেও দেখলাম তুইও এলি।

যাইহোক দাওয়াত না পেলেও পেয়ে যাবে,, এই বলে মুচকি হেসে স্নিগ্ধা চলে গেল তার বাড়ির ভেতরে।

অনেকদিন পর মেয়েকে কাছে পেয়ে সিদ্দিক তালুকদার শারমিন তালুকদার আবেগে আপ্লুত।

সাথী আর সায়ানও বোনকে পেয়ে ভীষণ খুশি।

,
,

ফাইয়াজ এর কাছে একটা দিন যেন হাজার বছরের সমান মনে হচ্ছে। কয়েক ঘন্টা পর তার মনে হচ্ছে সে যেন তার স্নিগ্ধপরী কে কতদিন দেখেনি।

মেয়েটাকে কতগুলো ফোন দিলো ধরল না। এখন আবার ফোনটা বন্ধ করে রেখেছে।

একবার হাতের কাছে পাই তোমার অভিমান আমি এমনভাবে ছুটাবো আর অভিমান করতেই ভুলে যাবে। যেই অভিমানে তোমাকে আমার থেকে দূরে সরায় সেই অভিমানের কোন প্রয়োজন নেই,,,

ফাইয়াজ শেষমেষ অস্থির হয়ে সিদ্দিক তালুকদারকে ফোন দিয়ে বসে,,

আসসালামু আলাইকুম আব্বু,,

সিদ্দিক তালুকদার গম্ভীর স্বরে সালামের জবাব দেন,,
ওয়াআলাইকুমুসসালাম,,

কেমন আছেন?

হুম ভালো, তা কি মনে করে ফোন করলে,,

ফাইয়াজ মনে মনে ভাবে, এ তো দেখছি ভিলেন শশুর, আমার বউটাকে কাছে রেখে আবার বলছে কি মনে করে ফোন করেছে! ইচ্ছে তো করছে এই লোককে বউ ছাড়া দুদিন রাখতে ।
আসলে আব্বু স্নিগ্ধার ফোন বন্ধ তাই যদি ওকে একটু ডেকে দিতেন,,

ও তোমার সঙ্গে এই মুহূর্তে কথা বলতে চাইছে না। মেয়েটাকে তো আমি তোমার হাতে তুলে দিয়ে এসেছিলাম। আর সেই তুমি মেয়েটাকে একাই ছেড়ে দিলে ,,

আব্বু আসলে,,

থাক আর বলতে হবে না, আমার মেয়েটাকে আমি আর অত সহজে তোমার কাছে পাঠাচ্ছি না। একা ছেড়ে দাও আমার মেয়েকে? দেখে নেব, বলে কল কেটে দিলেন সিদ্দিক তালুকদার। মেয়ে দিকে তাকিয়ে বললেন, ছেলেটাকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার কি দরকার ছিল তোর বলতো?

তো কি করবো আমাকে বকা দিয়েছে না খালি খালি।

আমি জানি তোদের বাচ্চাদের কি মনোভাব। আমি যাই আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।

ফোনটা কেটে গেলে ফাইয়াজ হতভম্ব হয়ে বসে রইল,, কি বলল শ্বশুর মশাই? মেয়ে দিবে না? আরে ওটা কি এখনো তার মেয়ে আছে নাকি? ওটা তখন আমার বউ! আমিও দেখবো কিভাবে আমার বউকে আটকে রাখে।

সারা ঘরময় পায়চারি করছে ফাইয়াজ। সারাদিনটা তো যেমন তেমন কাটলো রাতটা কিভাবে কাটাবে ভেবেই অস্থির ফাইয়াজ। শেষ পর্যন্ত আর টিকতে না পেরে বাবা মায়ের ঘরের সামনে গিয়ে নক করো।

ফারজানা তালুকদার বললেন, কিরে বাবা কিছু বলবি?

আম্মু কালকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার কি দরকার চলনা এখনই যাই!

ফারজানা তালুকদার এবার বেশ বিরক্ত হয়ে বললেন,, আর তো মাত্র কয়েকটা ঘন্টা এতটুকু সময় অপেক্ষা করতে পারবি না?

আম্মু,,

আরে আশ্চর্য তো ফাইয়াজ তুই কি বাচ্চা হয়ে গেছিস?

আব্বু এর প্রতিশোধ কিন্তু আমি নিব, তোমাকেও কিন্তু দুই দিন বউ ছাড়া রাখবো বলে দিলাম।

তবে রে হতচ্ছাড়া বাবার সঙ্গে কিভাবে কথা বলছিস?

তো কি করব আমাকে তোমরা বউ ছাড়া করেছো না? এই বলে রাগে গজগজ করতে করতে ফাইয়াজ চলে গেলো নিজের ঘরে,,,

সেদিন বিয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত একদিনও স্নিগ্ধাকে ছাড়া কাটায়নি ফাইয়াজ । আজ আর ফাইয়াজের ঘুম হলো না। সারারাত অস্থিরতায় কেটে গেল কিছুক্ষণ পায়চারি করল, কিছুক্ষণ আকাশ দেখল, কিছুক্ষণ কাজ করে, এভাবেই রাতটা পার হয়ে গেল।

অন্যদিকে স্নিগ্ধাও এভাবে ছটফট করতে করতে রাত পার করল। মনে মনে ভাবলো ঢের হয়েছে এমন প্লান আর সে জীবনেও করবে না।

ভোররাত থেকে ফাইয়াজ তৈরি হয়ে বসে আছে। তাই ফারজানা তালুকদার আর ফজলুল তালুকদার বেশি দেরি করলেন না ভোরের আলো ফোটার আগেই রওনা হয়ে গেলেন।

শশুর বাড়ি এসে ফাইয়াজ স্তব্ধ। তালুকদার বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো। যেন একটা বিয়ে বাড়ি। ফাইয়াজদের গাড়ি থামলো একটা বড় সাজানো গেটের সামনে ।
গেটের উপরে বড় বড় অক্ষরে লেখা,
"শুভ বিবাহ "
স্নিগ্ধা



আর মাত্র একটা পর্ব দিয়ে এই গল্পটা শেষ করে দিব। বেশি টানা হেচড়া করে গল্পটার সৌন্দর্য নষ্ট করতে চাইছি না। অতিরিক্ত টানাহেচড়া করলে হয়তো আপনাদের কাছেও বিরক্তির কারণ হতে পারে। আপনাদের আব্দারে আরো কয়েকটা পর্ব দিলাম এই আর কি।

 #মায়াবিনী_তরঙ্গিনী #পর্ব_১১ #লেখা :  #নীল_মালতীলতা কপি করা নিষেধ 🚫🚫রাতেই মোহিনী তার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে। নীরবও তাদে...
11/09/2025

#মায়াবিনী_তরঙ্গিনী
#পর্ব_১১
#লেখা : #নীল_মালতীলতা

কপি করা নিষেধ 🚫🚫

রাতেই মোহিনী তার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে। নীরবও তাদেরকে সব বুঝিয়ে বলে।

মোহিনীর বাবা মুফিজ সাহেব প্রথমে অসন্তুষ্ট হয়। একমাত্র মেয়ে হওয়ায় না চাইতে সবকিছু দিয়েছেন। স্বাধীনতা দিয়েছেন, কখনো কোন কিছুতেই বাধা দেয়নি। সেই মেয়ে জীবনে এত বড় একটা পদক্ষেপ নিল তাদেরকে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলোনা।

মোহিনীর মা লিয়ারা ভিনদেশী। তার কাছে এসব কোন ব্যাপার না তাই সে এসব নিয়ে বেশি একটা ঘাটলো না। স্বামীকেও মানিয়ে নিল। তারা জানালো আগামীকাল তারা আসবে।

মহিনীর ছোট একটা ভাই আছে মুরাদ নাবিলের বয়সী। বড় বোনের সঙ্গে তার খুব একটা সখ্যতা নেই। এ নিয়ে মুরাদের বেশ আক্ষেপ রয়েছে। সে বোনের সঙ্গে সখ্যতা গড়তে চাইলেও মোহিনী নির্লিপ্ত।
তার ব্যবহার এমন যে অতিরিক্ত ভালোবাসে না আবার খারাপ ব্যবহার করে না।
কিন্তু মুরাদের চাওয়া তার বোন তাকে নিয়ে অনেক আহ্লাদ করুক। দুজনে মিলে খুনসুটি করবে ঝগড়া করবে ভালবাসবে কিন্তু তার বোনতো তার লাইফ নিয়েই ব্যস্ত।

,
,

পরদিন মহিনীর বাবা-মা এলে নাজিমুদ্দিন সিকদার তাদের সঙ্গে আলাপ করে অনুষ্ঠানের একটা দিন নির্ধারণ করেন। বিয়েটা যেহেতু হয়েই গেছে বারতি আর কিছু বলার তো নেই।

নাসির শিকদার ছেলের বিয়েটা এভাবে এখনো মেনে নিতে পারছেন না। ছেলের বাবাকে মনমরা দেখে মুফিজ সাহেবেরও খুব একটা ভালো লাগলো না। নাসির সিকদার সেটা আন্দাজ করতে পেরে তিনি আর বেশি জল ঘোলা করতে চাইলেন না। নিজের ভালোবাসার মানুষ আর নিজের ওইরসজাত সন্তান যখন তার সঙ্গে এমন করতে পারলো এখন তার আর কি বা বলার আছে। তিনি চাইলেই উঁচু গলায় স্ত্রী সন্তানকে শাসন করতে পারেন। তবে এতে খারাপ বই ভালো হবে না। যারা ভাল হওয়ার তারা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। কমতো চেষ্টা করেননি। এদের ভেতরে সেসব লক্ষণ থাকেলেতো। কিন্তু এরা,, এতে সংসারে ঝামেলা হবে তাই আর তিনি সেই ঝামেলা করলেন না। মফিজ সাহেবের সঙ্গে ভালো মন্দ আলাপ আলোচনা করলেন।

নওশীনের এইচএসসি পরীক্ষা দুদিন বাদেই শুরু হয়ে যাবে। এই সময়ে বাড়িতে একটা বিয়ে হৈ হুল্লোড়ে নাজিমুদ্দিন শিকদার নাসির সিকদার দুজনেরই খানিক আপত্তি ছিল। তবে সেখানে বাদ সাধে রেহানা। বলে,,

ভাইয়া আপনি তো বললেন যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অনুষ্ঠানটা সেরে ফেলা উচিত। এখন আবার ওর পরীক্ষার জন্য যদি পিছিয়ে দেন তাহলে অনেকটা দেরি হয়ে যায় না! কোন এক শুক্রবার দিলেই তো হয়ে যায় ভাইয়া।

নাজিম উদ্দিন সিকদার বুঝলেন রেহানা যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টা পাবলিক করতে চায়।

নওশীনের জন্য বিয়ের ডেট পিছিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ আসায় মোহিনীর কেন জানি বেশ রাগ লাগলো। সে তাৎক্ষণিক কিছু একটা ভেবে নওশীনের ঘরের উদ্দেশ্যে গেল। যা সিয়ামের চোখে এ্যাড়ালো না।

,
,

নওশীন নিজের ঘরে মোহিনী কে দেখে একটু না বেশ অবাক হয়েছে,, যে মেয়ে গত দুইদিন ধরে তার সঙ্গে একটি শব্দ উচ্চারণ করে নি সে তার ঘরে হঠাৎ, কোন কিছু না বলেই সোজা ঘরে ঢুকে গেল। খানিক রুক্ষ সরে বলল,,

এই মেয়ে তোমার এক্ষুনি নিচে যাওয়া উচিত,,

নওশীন বুঝতে পারলোনা তার কি বলা উচিত, তার তো এই দুই দিনে অন্তত নামটা জানার কথা। তবুও ব্যবহারের এমন ছিড়ি নওশীনের বোধগম্য হলো না । তবুও খানিক হাসার চেষ্টা করে বলল,,

ভাবি,, আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না,, আপনি কি কোন কারনে বিরক্ত?

নিচে আমার আর নিরবের বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে কথা চলছে। সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছো তুমি।

কিন্তু ভাবি আমি তো এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। তাহলে বাধা হলাম কিভাবে,,

এই মেয়ে একদম বেশি কথা বলবে না। তোমার পরীক্ষা নিয়েইতো তোমার বাবা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই মুহূর্তে নিজে গিয়ে সবাইকে বলবে যে তোমার পরীক্ষায় কোন সমস্যা নেই তোমার।

নওশীনের কাছে এবার সবটাই পরিষ্কার। তার পরীক্ষার জন্য নিশ্চয়ই বাবা চাচা অনুষ্ঠানটা পিছিয়ে দিতে চেয়েছিল। নওশীনের ভেতর থেকে একটা তাচ্ছিল্য হাসি বেরিয়ে এলো। ভাবলো পুরনো কথা,,

বাবা চাচা মিলে ঠিক করেছিল নওশীনের পরীক্ষার পরে তার আর নীরবের বিয়ে সম্পন্ন করবে। আরো কত কি,, নওশীন সেসব ভাবতে চায় না তবুও কেন জানি চলে আসে তার ভাবনায়। নওশীন আর কিছু না বলেই সোজা নিচের দিকে পা বাড়ালো।

নিচে গিয়ে সবাইকে সালাম বিনিময় করে নওশীন।

মুফিজ সাহেব আর লিয়ারা নওশীন কে দেখে মুগ্ধ হয়। মুফিজ সাহেব সালাম এর উত্তর দিয়ে বলেন, মাশাআল্লাহ মামনি কে তুমি?

নাজিম উদ্দিন সিকদার প্রফুল্ল চিত্তে বলেন,, আমার মেয়ে নওশীন,,

এসো মামনি আমাদের সঙ্গে বসো,,

আসলে আংকেল আমি একটা কথা বলতে চাই,,

হ্যাঁ নিশ্চয়ই,,

আঙ্কেল,, আব্বু,, শুনলাম আমার পরীক্ষার জন্য আপনারা অনুষ্ঠানটা পিছিয়ে দিতে চাচ্ছেন। আব্বু আমি একেবারে পরীক্ষার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তাই এ নিয়ে তোমাদের চিন্তার কিছু নেই। তোমরা যথা সময় অনুষ্ঠানের আয়োজন কর প্লিজ। এতে করে পরীক্ষার ভেতরে আমার মনটাও বেশ ভালো থাকবে। আনন্দ করতে পেরে ভালো লাগবে ।

তামান্না শিকদার মেয়ের দিকে তাকালেন। তিনি এই মেয়েটাকে বিন্দুমাত্র সান্ত্বনা দেননি। পাছেনা আবার তিনিই বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেন। মেয়েটার মনের খবর তিনি খুব ভালো করেই জানেন। মেয়েকে সান্ত্বনা দেবেন কি তিনিই তো স্বামী থেকে সান্ত্বনা নিতে ব্যস্ত।
নাজিমুদ্দিন সিকদার তাকে এই বলে সান্ত্বনা দিল,,,
আমাদের মেয়েটা অনেক স্ট্রং তুমি এত ভেঙে পড়ছো কেন বলতো। মেয়েটা কি তোমাকে কিছু বলেছে নাকি কান্না করেছে?

ও আপনি বুঝবেন না, মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন একবারও? এত বড় সিদ্ধান্তটা যদি মেয়েটার থেকে অন্তত গোপন রাখতে পারতাম হয়তো মেয়েটা এত কষ্ট পেত না। আমরা মেয়েটাকে বিশ্বাস করতে পারিনি বলেই তো আরো বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম।

শান্ত হও নওশীনের আম্মু, তুমি যদি এমন করে বলতে থাকো তাহলে আমি অপরাধবোধে শেষ হয়ে যাব।

সব কথা ভেবে নাজিমুদ্দিন শিকদারও দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, অনেক বড় ভুল হয়ে গেল,,, যার সঙ্গে মেয়েটার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সেই তার বিয়েতেই নাকি মেয়েটা আনন্দ করবে।

অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো আগামী শুক্রবার মেয়ের বাড়িতে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। রবিবার ছেলের বাড়িতে।

সমস্ত আলাপ আলোচনা পরেই বিদায় নিতে চেয়েছিলেন মোহিনীর বাবা-মা।

তাদের বাড়ির দূরত্ব খুব একটা বেশি নয় এইতো আধা ঘন্টার পথ হয়তো, আর নিজেদের গাড়ির ব্যবস্থা যেহেতু আছে তাই সিকদার বাড়ির কর্তা কর্তৃরা তাদেরকে একেবারে রাতের খাবার খাইয়ে ছাড়লেন। তাদেরকে থেকে যেতে বললে তারা এ ব্যাপারে নাচোক করে, কারণ তাদের ছোট্ট ছেলেটাকে রেখে এসেছে বাড়িতেই। যদিও বাড়িতে লোকজন আছে তবুও তাদের যাওয়া উচিত । অনুষ্ঠানের তো আর বেশি বাকি নেই। মেয়েকে সঙ্গে করে নিতে চেয়েছিলেন। তবে মোহিনী যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি আর না নীরব। নীরব তাদেরকে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে মোহিনীকে সে বৃহস্পতিবার দিয়ে আসবে।

রেহানাও ছেলেকে সমর্থন করে বলে,, আপনি এই চিন্তা করবেন না ভাইসাহেব মেয়ে যেহেতু আমাদের বাড়ির বউ তো সেহেতু আমাদের বাড়িতেই থাকুক সময় মত দিয়ে আসা যাবে।

মুফিজ আর লিয়ারাও এ ব্যাপারে আর কিছুই বলল না।

,
,

সোমবার নওশীনের পরীক্ষা শুরু। সে তার পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত।

রবিবার সন্ধ্যায় মেহেরাব এলো নাবিলকে পড়াতে ।
সে গত সপ্তাহে গ্রামে গিয়েছিল। যার কারণে এই কদিন আসা হয়নি তার।
মেহরাব পড়াশোনা করে ছোটখাটো একটা চাকরিতে ঢুকেছে । নাবিলকে সে আরো তিন বছর আগে থেকে পড়ায়। তখন সে ছিল স্টুডেন্ট। চাকরি হওয়ার পরেও সে নাবিলকে পড়ানো ছাড়েনি দুটো কারণে। প্রধান কারণ হলো নওশীন। আরেকটা কারণ হল নাজিমুদ্দিন সিকদার বেশ অনুরোধ করেছেন যেন তার ছেলেকে পড়ানো না ছেড়ে দেয়। মেহরাব বেশ ভালো পড়ায়। আজকাল একজন ভালো টিচার ছেড়ে দিলে ভালো টিচার পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়।

সে যখন থেকে জানতে পারলো নওশীনের বিয়ে নিরবের সঙ্গে ঠিক করে রাখা তখন থেকে সে আর নাওশীনকে মানানোর কোনরকম চেষ্টাই করেনি। দূর থেকে এক পলক দেখার জন্যই সে এখানে আসে। যতদিন সে অন্য কারো নামে দলিল-বদ্ধ না হয় ততদিন তো দেখতে মানা নেই।

পড়া শেষ হতেই নাবিল খুব আনন্দের সাথে মেহরাব কে জানায়,,

জানেন স্যার একটা খুশির খবর আছে,,

মেহরাব হাসিমুখেই নাবিল এর কাছ থেকে জানতে চায়, তুমি না বললে তো আমি জানতে পারব না তুমিই বলো কি সেই খুশির খবর,,

আমাদের বড় ভাইয়া আছে না, নীরব ভাইয়া সেতো বাড়িতে এসেছ,,

নিরব এসেছে শুনেই মেহরাবের কলিজায় যেন কেউ খামচে ধরল।

এখানে একটা মজার ব্যাপার আছে জানেন স্যার।

ক কি

স্যার আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে?

না আমি ঠিক আছি। তুমি বলো মজার ব্যাপারটা কি?

নিরব ভাই কিন্তু একা আসেনি, সাথে করে সুন্দরী ভাবিও নিয়ে এসেছে,,

মেহরাবের কাছে নাবিলের কথাটা যেন একটু আশার আলো দেখাতে চাইল,, মেহরাব খানিক উত্তেজিত হয়ে বলল,, মানে??

মানে ভাইয়া বিয়ে করে একেবারে ভাবি নিয়ে এসেছে এই নিয়ে তো বাড়িতে দুদিন সবার মন খারাপ ছিল।

মেহরাব নিজের আনন্দটা আটকে রাখতে পারল না,, অতি উৎসাহিত হয়ে নাবিলকে জড়িয়ে ধরল।

চলবে???

 #আমার_স্নিগ্ধপরী  #পর্ব_২১ #লেখা:  #নীল_মালতীলতাকপি নিষিদ্ধ ❌❌❌স্নিগ্ধা তার মায়ের বুকে মুখ গুজে কাঁদছে। স্নিগ্ধার কান্...
10/09/2025

#আমার_স্নিগ্ধপরী
#পর্ব_২১
#লেখা: #নীল_মালতীলতা

কপি নিষিদ্ধ ❌❌❌

স্নিগ্ধা তার মায়ের বুকে মুখ গুজে কাঁদছে। স্নিগ্ধার কান্না ফাইয়াজের বুকে কাটার মত বিধছে, কিন্তু কিছুই করার নেই। এমন একটা সময় কান্না তো আসবেই,,,,

স্নিগ্ধার বাবা মা ভাই বোন গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। গ্রামে অমন একটা পরিস্থিতি রেখে এখানে আসা। এরপর তো দু-তিন দিন এখানে কেটেই গেল, এখন যেতেই হয় । স্নিগ্ধাও যেতে চেয়েছিল বাবা-মার সঙ্গে। তবে এ ব্যাপারে সবাই নারাজ। ফাইয়াজের তো কথাটা শুনেই স্নিগ্ধার ওপর রাগ চেপে বসলো। এত ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে বউটাকে কাছে পেল, সে কিনা এখন বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য কান্না করছে!!

সিদ্দিক তালুকদার ও নাচোক করলেন, এখন গ্রামে গেলে লোকজন বাঁকা চোখে তাকাবে। এর চেয়ে ভালো পড়াশোনায় মনোযোগী হও। নিজের সংসারে মনোযোগী হও। সবকিছু স্বাভাবিক হলেই জামাইকে নিয়ে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে যাবে। শেষমেষ এই কথাই রইল।

ফারজানা তালুকদার স্নিগ্ধাকে নিজের বুকে টেনে নিলেন,
কি ব্যাপার হ্যাঁ, নিজের মাকে পেয়ে এই মাকে ভুলে গেলে? নাকি আমি কারো মা নই।

স্নিগ্ধা নাক টানতে টানতে ফারজানা তালুকদারকে জড়িয়ে ধরল, বলল,, তুমিও আমার মা, ইস আমরা সবাই একসঙ্গে থাকলে থাকতে পারলে কত ভালো হতো! তোমরাও যদি গ্রামে থাকতে তাহলে আমরা সবাই একসঙ্গে থাকতে পারতাম।

তাই নাকি? তাহলে তোর যে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার স্বপ্ন তার কি হতো? তাহলে তো এখানে একা থাকতে হতো।

ধুর ভালো লাগেনা

শারমিন তালুকদার মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,, পাগলি মেয়ে কান্না করার কি আছে, সময় সুযোগ করে জামাইকে সঙ্গে করে নিয়ে সোজা চলে যাবি বাড়িতে। আর এমন একটা নতুন মা পেলে কেউ পুরাতন মায়ের জন্য কান্না করে বুঝি?

,
,

বিকেলে ঠান্ডা বাতাসে ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধা। কিছুদিন আগেও তার জীবনটা কত সহজ সরল ছিল। অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে কত কিইনা দেখতে হলো তাকে।
তার ভাবনার মধ্যে আচমকে পেছন থেকে কেউ একজন জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ গুঁজে দিল। স্নিগ্ধা খানিক কেঁপে উঠলো। তাকে জড়িয়ে ধরা মালিককে চিনতে তার একটুও কষ্ট হয়নি।

এখনো মন খারাপ করে আছো? আচ্ছা তুমি কি আমাকে একটুও ভালোবাসতে পারোনি?

ফাইয়াজের কথা শুনে স্নিগ্ধা তার দিকে তাকালো বলল,,কি বলতে চাইছেন আপনি?

না মানে, একটুও যদি ভালবাসতে তাহলে অন্তত আমাকে একা ফেলে চলে যেতে চাইতে না।

তাহলে এক কাজ করলে কেমন হয় আমি বরং আপনাকে নিয়ে আমার বাবার বাড়িতে থেকে যাই,,

মানে কি তুমি কি আমাকে ঘর জামাই বানাতে চাচ্ছ।

কেন আপনার কি ঘরের বাহিরে থাকার প্ল্যান,,

আরে বাবা আমি কি বললাম আর তুমি সেটাকে মসলা মাখিয়ে কি বলছো,,

আপনি কি এখন কোনভাবে আমার সঙ্গে ঝগড়া করতে এসেছেন??

ওমা, কেন তুমি কি ঝগড়ুটে নাকি??

আরে আশ্চর্য তো,, আপনি কি করে বুঝবেন বাবা-মাকে ছেড়ে থাকা কষ্ট,

তুমিও তো বুঝতে পারছ না ভালোবাসার যন্ত্রণা,
ভালোবাসার মানুষেকে ছেড়ে থাকার কষ্ট, তাহলে কি আর তুমি আমাকে রেখে দূরে যাওয়ার কথা ভাবতে বলোতো? তোমাকে আমি হারাতে হারাতে পেয়েছি, বিশ্বাস করো যদি আর একবার তোমাকে হারিয়ে ফেলি তাহলে আমার অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে। হয়তো আমি বেঁচে থাকব, তবে মনে রেখো এই আমি বেঁচে থাকব শুধু মৃত্যুর অপেক্ষায়।

স্নিগ্ধার হৃদয় শিউরে ওঠে, অবাক হয়ে তাকালো ফাইয়াজের মুখের দিকে,, মানুষটা তাকে কখন এতটা ভালোবেসে ফেলল,,

আমার পরী,, তোমার মুখ থেকে ভালোবাসা শব্দটা শোনার জন্য অধীর আগ্রহী হয়ে আছে এই অধম। এত নিষ্ঠুর হয়ে আছো কেন তুমি আমার স্নিগ্ধপরী?

সবুরে মেওয়া ফলে,, প্রবাদটা জানেন না নাকি?

,
,

কেটে গেল অনেকগুলো দিন। ফাইয়াজ স্নিগ্ধার বিয়ের প্রায় ছয় মাস হতে চলল।

হাসি আনন্দ খুনসুটিতে কাটছে স্নিগ্ধার সংসার জীবন।

এরই মধ্যে ফাইয়াজও পড়াশোনা ইতি টেনেছে। তার মাস্টার্স সম্পন্ন হয়ে গেছে। ফজলুল তালুকদার তাকে তার ব্যবসায় বসিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে তার। এর চেয়ে আর বেশি কিছু তার চাওয়ার নেই।

স্নিগ্ধারও পড়াশুনা চলছে ধুমছে। স্নিগ্ধার হোম টিউটর অবশ্যই ফাইয়াজ। তার স্নিগ্ধপরীর জন্য তার কাছে অফুরন্ত সময়। সে সব সময় স্নিগ্ধাকে ভার্সিটি দিয়ে আসে এবং নিয়েও আসে ।

ফারজানা তালুকদার চেয়েছিলেন একটা মেয়ে, তিনি তা পেয়েছেন। তিনি স্নিগ্ধাকে এমন ভাবে যত্ন নেন যেন তার সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চা মেয়ে। ফজলুল তালুকদারের ও চোখের মনি স্নিগ্ধা। মেয়েটা এই বাড়িতে এসে যেন পুরো বাড়িটা আলোকিত করে ফেলেছে। একদম মাতিয়ে রাখে।

আগে তো ফজলুল তালুকদার ফাইয়াজকে প্রায়শই ব্যবসার কাজে এক শহর থেকে অন্য শহরে পাঠাতেন। ফাইয়াজও রাহাত কে সঙ্গে নিয়ে কাজও করে আসতো আবার ঘোরাঘুরি করেও আসতো। এখন তাকে হাজার বলেও পাঠানো যায় না।
এ নিয়ে তো প্রথমবার ফারজানা তালুকদার আর ফজলুল তালুকদার বেশ অবাক হয়েছিলেন। যে ছেলেকে বলার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে হাজির হয়ে যেত এখন সে যাবে না বলছে। পরে অবশ্য তারা বুঝতে পেরে মনে মনে বেশ হেসেছিলেন। বউকে মানবে না বলে পালিয়ে যাওয়ার ছেলেটা এখন সাংঘাতিক বউ পাগল হয়ে গেছে। পরে অবশ্য ফজলুল তালুকদার বলেছিলেন স্নিগ্ধাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে। সেবার স্নিগ্ধার গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা থাকায় আর যাওয়া হয়নি। পরে অবশ্য বেশ কয়েকবার স্নিগ্ধাকে নিয়ে ফাইয়াজ কাজে গিয়েছিল ঘোরাঘুরিও হয় কাজও হয়।

এনিয়ে অবশ্য স্নিগ্ধা মাঝেমধ্যে বেশ লজ্জায় পড়ে। যদিও তাকে কখনো কেউ লজ্জা দেয় না। তবুও ফাইয়াজের কাজে কর্মেই তাকে লজ্জারা ঘিরে ধরে।

বিয়ের ৬ মাস উপলক্ষে স্নিগ্ধা ফাইয়াজকে একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা ভাবে। সে তার প্লানটা ফারজানা তালুকদার আর ফজলুল তালুকদারের সঙ্গে শেয়ার করে।

তারা তো স্নিগ্ধার পরিকল্পনা শুনে এক দফা হাসেন। এরপর বেশ আনন্দিতো হয়ে সায় জানান।

বিয়ের ছয় মাস হতে আর মাত্র মাঝে এক দিন বাকি। ফাইয়াজ ও হয়তো ভাবছে কিভাবে বউকে সারপ্রাইজড করা যায়।

আজ বুধবার, স্নিগ্ধার শুক্রবারের পরিকল্পনাটা কোনভাবেই সে ফাইয়াজকে জানতে দেয়নি।

এরমধ্যে আবার ঘটে যায় আর এক অঘটন।
আজ ফাইয়াজ কাজের শেষে স্নিগ্ধাকে আনতে যায় ভার্সিটি। কাঙ্খিত ডিপার্টমেন্টের সামনে গিয়েই তার মাথা আউলে যায়।
দাঁতে দাঁত চেপে ভাবে,, সুন্দর বউ নিয়ে এই এক ঝামেলা। যখন তখন যে কেউ প্রপোজ করে বসে।

রাগে গজ গজ করতে করতে গিয়ে ছেলেটার সামনে দাঁড়ায়।

ফাইয়াজকে দেখে স্নিগ্ধাও বেশ ঘাবড়ে যায়। এখন এই পাগল লোক কিনা কি করে বসে। চোখ মুখ দেখে স্নিগ্ধা চমকে উঠে, চোখ জোড়া কেমন লাল বানিয়ে ফেলেছে রাগে,,

ফাইয়াজ ঠান্ডা মাথায় বলে,, আরে ভাই আমার বউকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছিস খুব ভালো। কিন্তু আমি খুশি হতে পারলাম না। আমার বউ নিজেই একটা ফুল আর তাকে ফুল দেবো শুধুমাত্র আমি। বউ একটা লাঠির ব্যবস্থা করে দাও তো!! ওর হাতটা আমি আগে ভেঙে নি। তারপর তোমাকে দেখছি এত সাজগোজ করে এখানে পড়াশোনা করতে আসো নাকি তোমার এই সুন্দর রূপখানা সবাইকে দেখাতে আসো?

ফাইয়াজের কথায় আজ স্নিগ্ধা বেশ রেগে যায়,, সে তো কখনো সাজগোজের আশেপাশেও যায় না তবুও এই লোক কি বলছে। তবে কিছু বলে না এখানে বলে পরিস্থিতি খারাপ করতে চায় না সে , তাই ফাইয়াজকে টানতে টানতে নিয়ে আসে এখান থেকে। ফাইয়াজ যেই ত্যাড়া সে কি আর এত সহজে আসতে চায়? স্নিগ্ধা যখন বলল আপনি যদি এখানে ঝামেলা করেন তাহলে এই আমি একাই চললাম। রাস্তায় একটা ঝামেলাবিহীন স্বামী খুঁজে নিব।

স্নিগ্ধার কথায় ফাইয়াজ রাগবে নাকি হাসবে বুঝে উঠতে অক্ষম হয়,,

কি বলল মেয়েটা?? স্বামী খুঁজে নিবে মানে?? এই কি বললে তুমি?

চলুন বলছি,,,

ফাইয়াজ বাধ্য ছেলের মত চুপচাপ চলে আসে স্নিগ্ধার সঙ্গে।

বাড়িতে এসে শুরু হয় যুদ্ধ,, এই তুমি তখন কি বলেছিলে যেন?

আপনি তখন কি বলেছিলেন যেন? আমি রূপ দেখাতে যাই তাই না?

হ্যাঁ তাইতো না হলে ছেলেরা তোমাকে প্রপোজ করবে কেন?

আম্মু তোমার ছেলেকে বারণ করো বলে দিচ্ছি। আমি কিন্তু চলে যাবো এখান থেকে একদম থাকবো না বলে রাখলাম।

এই এই কি বললে তুমি? চলে যাবে মানে, কোথায় চলে যাবে হ্যাঁ, এখন আর আমাকে ভালো লাগছে না তাই তো, একেবারে ঠ্যাং ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে বসিয়ে রাখবো।

আম্মু তোমার ছেলেকে বারণ করা বলে রাখলাম,

ফারজানা তালুকদার ফাইয়াজের দিকে তেড়ে এসে বললেন, এই মেয়েটার সঙ্গে সুরুটা করেছিস কি, প্রপোজটা কি ও করেছে নাকি যে ওর সঙ্গে এরকম ব্যবহার করছিস।

আম্মু তুমি একদম ওর হয়ে কথা বলবে না বলে রাখলাম। আর এই যে রূপবতী আপনাকে বলছি কাল থেকে যদি বোরকা ছাড়া এক পা বাইরে বেরিয়েছো তো পা ভেঙে দেবো একেবারে।

আম্মু সেটা তো ভালো করেও বলা যায় তাই না? যে কাল থেকে তুমি বোরখা পড়ে যাবে, তা নয় তোমার ছেলে কি শুরু করেছে আমার সঙ্গে । থাকবো না আমি এখানে।

আর একবার যদি এই শব্দটা উচ্চারণ করেছ তো তোমার মুখ আমি তালা মেরে দিব।

ফারজানা তালুকদার মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন এই দুটোর ঝগড়া যেনো থামার নামই নেই।

সেই থেকে ফাইয়াজের সঙ্গে স্নিগ্ধা আর একটাও কথা বলেনি।

ফাইয়াজ বারবার সরি বলেছে কান ধরেছে কোন কিছুতেই কিছু হলো না, স্নিগ্ধার মন গলে নি।

ফাইয়াজ করুন চোখের স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে ছিল। যা দেখে ফারজানা তালুকদার আর ফজলুল তালুকদার মিটিমিটি হাসেন। ছেলে তার বউ এর কাছে পরাজিত।

রাতে ফাইয়াজ বার বার স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করেছে বরাবরই সে ব্যর্থ হয়েছে।

যখন স্নিগ্ধা রাগ করে বলে, আর একবার যদি আমাকে ধরার চেষ্টাও করেন তো আমি অন্য রুমে গিয়ে ঘুমাবো বলে রাখলাম।

ব্যাস ফাইয়াজ চুপচাপ বসে আছে অসহায় চোখে তাকিয়ে। এখন তো তাও একটু দেখতে পারছে অন্য রুমে গেলে তো তাও হবে না,,

স্নিগ্ধাতো মনে মনে হেসে কুটিকুটি,,

স্নিগ্ধা যখন ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় ফাইয়াজ আর এক মুহূর্ত দেরি না করে স্নিগ্ধাকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে শান্তির ঘুম দেয়।

স্নিগ্ধাও মুচকি হাসে, সে মোটেও ঘুমায়নি ঘুমের ভান ধরেছিল,

বড় চমকটা তো ফাইয়াজ সকালে পায়, স্নিগ্ধাকে ঘরে না দেখে সারা বাড়ি তন্ন করে খুঁজে। স্নিগ্ধা এ কদিন কখনো তাকে না ডেকে ঘরের বাইরে যায়নি। সারা বাড়ি খুঁজে যখন কোথাও পেল না অস্থির হয়ে গেল ফাইয়াজ।

আম্মু আম্মু স্নিগ্ধা কোথায় ওকে দেখছি না কেন?

চলে গেছে,,

মানে? ফাইয়াজের গলা শুকিয়ে আসছে ,,

মানে সে তার বাবা-মার কাছে চলে গেছে।

ফাইয়াজ দৌড়ে নিজের ঘরে যায়, দেখে সেখানে স্নিগ্ধার লাগেজ মিসিং,,,

 #আমার_স্নিগ্ধপরী তুমিও তো বুঝতে পারছ না ভালোবাসার যন্ত্রণা,ভালোবাসার মানুষেকে ছেড়ে থাকার কষ্ট,   তাহলে কি আর তুমি আমাক...
10/09/2025

#আমার_স্নিগ্ধপরী

তুমিও তো বুঝতে পারছ না ভালোবাসার যন্ত্রণা,
ভালোবাসার মানুষেকে ছেড়ে থাকার কষ্ট, তাহলে কি আর তুমি আমাকে রেখে দূরে যাওয়ার কথা ভাবতে বলতে? তোমাকে আমি হারাতে হারাতে পেয়েছি, বিশ্বাস করো যদি আর একবার তোমাকে হারিয়ে ফেলি তাহলে আমার অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে। হয়তো আমি বেঁচে থাকব, তবে মনে রেখো এই আমি বেঁচে থাকব শুধু মৃত্যুর অপেক্ষায়,,

আসছে শীঘ্রই,,,,

 #মায়াবিনী_তরঙ্গিনী #পর্ব_১০ #লেখা :  #নীল_মালতীলতা কপি করা নিষেধ 🚫🚫কি ব্যাপার তোতা পাখির জননী আড়ি পাতছো নাকি???আচমকা গ...
09/09/2025

#মায়াবিনী_তরঙ্গিনী
#পর্ব_১০
#লেখা : #নীল_মালতীলতা

কপি করা নিষেধ 🚫🚫

কি ব্যাপার তোতা পাখির জননী আড়ি পাতছো নাকি???

আচমকা গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠ ভেসে আসতে হকচকিয়ে যায় নওশীন,,

আসলে,, আসলে তেমন কিছুনা,,

তাহলে কেমন কিছু??

ঐ আব্বুর সঙ্গে একটু কথা বলতে যাচ্ছিলাম ভেতর থেকে ভাইয়াদের গলা শুনে আর যাইনি,

ওওওওওওও,,

আ, আপনি এখানে,

তুমি তোতলাচ্ছ কেন? এই তুমি আবার তোমার পাখিটাকেও এরকম তোতলা বানিয়েছ নাকি??

আশ্চর্য আপনি এত কথা বলছেন কেন? আমার আব্বুর ঘরের সামনে আমি দাঁড়াতেই পারি এর জন্য আড়ি পাতা হয় নাকি?

হ্যাঁ তাইতো,, যাগ্গে এক কাপ কফি পাওয়া যাবে?? আসলে মাথাটা ভীষণ ব্যথা করছে।

আপনি কফি খাবেন তার জন্য আব্বুর ঘরের সামনে এসেছেন কেন রান্নাঘর তো ওই দিকে।

তোমরা কি তোমাদের বাড়ির অতিথিকে রান্না করে খেতে বলো,

না না আপনি ভুল বুঝছেন, আমি বলতে চাইছি ওইখানে কেউ না কেউ থাকবে। তাদেরকে বললেই হতো যাই হোক আমি দিচ্ছি আপনি অপেক্ষা করুন।

ওখানে কাউকে না দেখেই তো চারিদিকে তাকাতে তোতা পাখির জননীকে এখানে দেখতে পেলাম । তাইতো এখানে আশা।

আচ্ছা ঠিক আছে সরি আমি আপনার কফির ব্যবস্থা করছি।

কফিটা আমার ঘরে দিয়ে আসবে, আমি ঘরে যাচ্ছি,, বলে আর একটু অপেক্ষা করলো না সিয়াম সোজা নিজের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরের দিকে হাটা ধরল,,

সিয়াম চোখের আড়াল হলে নওশীন মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,, এএএহ,, আড়ি পাতছিলে নাকি! আমি আড়ি পাতবো না কি করব তাতে এই লোকের কি আশ্চর্য। আজকাল আমার সঙ্গে ঠিক কি যে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না ।

রান্নাঘরে মা কাকিরা কাজ করছে। কাজের লোকেরা হাতে হাতে সাহায্য করছে। নওশীন চারিদিকে চোখ বুলিয়ে কাউকে কিছু না বলেই কফি বানানোর কাজে লেগে পরলো,,

তামান্না সিকদার মেয়েকে কফি বানাতে দেখে বললেন,, কিরে মা তুই এখন কফি বানাচ্ছিস কেন?? এই সময় তো তুই কফি খাস না,,

আম্মু কফিটা আমার জন্য না তোমাদের অতিথির জন্য, ঐযে ভাইয়ার বন্ধুটা আছে না উনার জন্য,,

রেহানা কথাটাকে একটুও ছেড়ে দিল না, খোঁচা মেরে বলল,, হ্যা রে নওশীন তুই কি এখন কোনোভাবে নিরবের ওই বিদেশী বন্ধুকে পটানোর চেষ্টা করছিস নাকি??

তামান্না সিকদার এবার আর সহ্য করলেন না, মুখের উপর বললেন, এখানে কিন্তু আমি উপস্থিত আছি। আমারই সামনে আমারই মেয়েকে বাজে কথা বলার সাহস কোথায় পাও তুমি?

ভাবি আমি তো মজা করছিলাম,,

তোমার এমন মজার কোন প্রয়োজন নেই আমাদের,,

আসলে আম্মু তোমরা প্লিজ কথা কাটাকাটি করো না আসলে আমার সঙ্গে পথে দেখা হয়েছিল বলে আমাকেই বলল,, তোমাদের হাতে কাজ দেখে আমি নিজেই কফিটা বসিয়ে দিলাম,,

তামান্না সিকদার বললেন,, তো কি হয়েছে? ঘরে অতিথি এসেছে সে কিছু একটা চেয়েছে আর তুই তাকে দিবি এতে দোষের কিছুই নেই তুই যা তাড়াতাড়ি গিয়ে ছেলেটাকে কফি দিয়ে আয়।

এইতো আম্মু যাচ্ছি,,

রোহানা মুখ ভেঙ্গিয়ে মনে মনে বলল,, আপদ একটা,

,
,

নওশীন সিয়ামের ঘরের কাছাকাছি আসতেই পথ আগলে দাঁড়ানো নদীয়া,,

এই তোকে বলেছিলাম না,, সিয়ামের আশেপাশে যাবি না, কিন্তু তুই তো দেখছি সোজা তার ঘরে চলে যাচ্ছিস।

দেখ বোন, আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে না পারলে আমার সঙ্গে কথা বলিস না প্লিজ। তবুও বাজে কথা বলবি না। আর সিয়াম কি, উনি তোর কত বড় ভাইয়া বলতে পারিস না,

নাদিয়া নওশীনের হাত থেকে কফিটা ছিনিয়ে নিল,, বলল,

তোর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা এমনিতেও আমার নেই। কিন্তু কি আর বলবো বল! তোর তো আবার ছিনিয়ে নেওয়ার স্বভাব। আর আমি কাকে ভাইয়া বলবো আর কাকে কি বলে ডাকবো সেটা তোর থেকে শিখতে হবে না,

মানে?

নাদিয়া আর কিছুই বলল না আর না নওশীনকে বলার সুযোগ দিল,,

নওশীন ভাবছে, ও কি বলতে চাইছে আমি ওর থেকে ঠিক কি ছিনিয়ে নিয়েছি? আমারতো তেমন কিছুই মনে পড়ছে না? দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো নওশীনের ভেতর থেকে একটা,
বোনটাকে যত ভালবাসতে চেষ্টা করলাম ও যেন ততই দূরে চলে গেল,,,

,
,

ড্রয়িং রুমে সবাই চিন্তিত মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তামান্না শিকদার ছোট মেয়ের হাতে ঠান্ডা পানি ঢেলে মলম লাগিয়ে দিচ্ছেন। নাদিয়া ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।

নাজিমুদ্দিন সিকদার আফসোসের সুরে বললেন,, ইস কতখানি পুড়ে গেল একটু দেখেশুনে কাজ করবেনা মামনি!

সিয়াম মুখে অপরাধী ছাপফুটিয়ে বলল,, সরি আঙ্কেল আসলে আমার জন্যই হলো সবকিছু।

তামান্না শিকদার সিয়ামকে সান্ত্বনা দিতে বললেন,, না না বাবা এমন করে বলো না,, তুমি তো আর ইচ্ছে করে কিছু করোনি!

সিয়াম মনে মনে হেসে বলল, সরি শাশুড়ি মা ইচ্ছে করেই কাজটা করেছি । মুখে বললো,, আসলে কিভাবে যে কি হলো আমি বুঝি উঠতে পারলাম না।

নাজিমুদ্দিন সিকদার বললেন,, আহা বাবা তুমি এত অস্থির হইও না, সামান্য কফি পরেছে ঠিক হয়ে যাবে।

ফ্লাশব্যাক,,

সিয়াম নিজের ঘরে নওশীনের আগমনের জন্য পায়চারি করছিল। মাথাব্যথা তো একটা বাহানা মাত্র। তখন সে তার ঘরের বাইরে থেকে কথার আওয়াজ পেয়ে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে নাদিয়ার সব কথাই শুনে, এতে মেজাজ তুঙ্গে উঠে যায়।

নাদিয়া ঘরে ঢোকার আগে আগে সে বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে মাথার উপর হাত রেখে বসে,

নাদিয়া অবশ্য ঢোকার আগে অনুমতি নেয়,, আসবো সিয়াম ভাই,,

এসো,,

আপনার কফি,,

আমার মাথাটা ব্যথা করছে তুমি একটু আমার কাছে এসে দিয়ে যাও,,

নাদিয়ার জন্য যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মত লাগছিল,,

সে দ্রুত সিয়াম এর কাছে গিয়ে কফির মগটা এগিয়ে দেয়।

সিয়াম চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় কফির মগটার দিকে এমন ভাবে হাত লাগায় এতে তার হাতে লেগে মগটা উল্টে গিয়ে মগের কফি সব নাদিয়া হাতে পড়ে যায়,, সঙ্গে সঙ্গে নাদিয়া চিৎকার করে ওঠে,,

আহ, পুড়ে গেলো,

সরি সরি, ইস লেগে গেলো? চোখ বন্ধ ছিল তো তাই দেখতে পাইনি সরি।

আহ, আম্মু,,

নওশীন তখন কাছাকাছি ছিল নাদিয়ার চিৎকার শুনে সে ছুটে যায়,

আরে আরে দেখি কি হলো,,

নাদিয়া নওশীন কে না দেখিয়ে এক ছুটে নিচে চলে যায়, আম্মু,

নাদিয়ার চিৎকার শুনে তামান্না শিকদার রান্নাঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসেন, এরপর মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নাদিয়ার চিৎকারে আশেপাশে থেকে তার বাবা চাচা ও বেরিয়ে আসে।

নওশীন আর সিয়ামও নাদিয়ার পিছু পিছু নিচে এসেছে।

সিয়াম নাজিমুদ্দিনের কাছে কৈফিয়তের সুরে বলে,, সরি আঙ্কেল আমি চোখ বন্ধ করে হাত বাড়িয়েছিলাম কিভাবে কি হলো আসলে আমি বুঝতে পারলাম না আই এম ভেরি সরি,,,

চলবে???

 #মায়াবিনী_তরঙ্গিনী সিয়াম চোখের আড়াল হলে নওশীন মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,, এএএহ,, আড়ি পাতছিলে নাকি!  আমি আড়ি পাতবো না কি করব ত...
09/09/2025

#মায়াবিনী_তরঙ্গিনী

সিয়াম চোখের আড়াল হলে নওশীন মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,,

এএএহ,, আড়ি পাতছিলে নাকি! আমি আড়ি পাতবো না কি করব তাতে এই লোকের কি আশ্চর্য।
আজকাল আমার সঙ্গে ঠিক কি যে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না ।

আসছে শীঘ্রই,,,,

 #আমার_স্নিগ্ধপরী  #পর্ব_২০ #লেখা:  #নীল_মালতীলতাকপি নিষিদ্ধ ❌❌❌প্রাপ্ত মনস্কদের জন্য উন্মুক্ত 🚫🚫নতুন একটা সকাল। ভোরের প...
08/09/2025

#আমার_স্নিগ্ধপরী
#পর্ব_২০
#লেখা: #নীল_মালতীলতা

কপি নিষিদ্ধ ❌❌❌
প্রাপ্ত মনস্কদের জন্য উন্মুক্ত 🚫🚫

নতুন একটা সকাল। ভোরের পাখির মিষ্টি শব্দ, বাগানে ফোটা তাজা ফুলের মিষ্টি সুবাস। যা একটা নতুন সকালকে করে তোলে আরো মনোরম আরো প্রফুল্লময়।

ফাইয়াজের আজকের সকালটা একটু অন্যরকম। একটু না অনেকটাই অন্যরকম। তার ২৫ বছরের জীবনে এরকম একটা সকাল আজ প্রথমে এসেছে। তার ঘুম ভেঙ্গেছে অনেকক্ষণ আগেই। যখন ঘুমটা হালকা হয়ে আসে তখন তার মনে হচ্ছিল সে যেন কোন সুবাসিত রাজ্যে বিচরণ করছে। তার নাকে আসছে অন্যরকম একটা সুবাস যা সে এর আগে কখনো পায়নি।
আর তার জড়িয়ে ধরা কোলবালিশটা প্রতিদিনকার মতন নির্জীব নয়। সে কিছু একটা আস্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে আর তার হৃদয় স্পন্দন বাজছে। তাকেও কিছু একটা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে। আস্তে আস্তে তার মস্তিষ্ক সজাগ হলো। তার মনে পড়ে গেল গতকালের কথা। বহুৎ যুদ্ধ করে এসে তার বউকে তার ঘর অব্দি আনতে পেরেছে আজ তাকেই ভুলে যাচ্ছে অদ্ভুত!
তার সব কিছু মনে পড়তে স্নিগ্ধাকে আরো একটু শক্ত করে আস্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।

স্নিগ্ধাও খানিক নড়ে চড়ে উঠে ফাইয়াজের বুকের ভেতর আরো খানিকটা ঢুকে গিয়ে আবারো গভীরভাবে ঘুমিয়ে পড়ে।

এতে ফাইয়াজের মুখের হাসি আরও বিস্তৃত হয়।ফাইয়াজের নাকে সেই সুবাস আরো গভীর ভাবে এসে ঠেকে । এই সুবাসটা তার নিজস্ব বাগানের নিজস্ব ফুলের সুবাস। তার স্নিগ্ধপরীর স্নিগ্ধ সুবাস। তার ইচ্ছে করল না চোখ মেলতে। সে তার ইচ্ছেটাকে প্রাধান্য দিলো চোখ দুটো বন্ধ করে নাকটা স্নিগ্ধার গলার ভাজে দিয়ে সর্বসুখে গভীর ঘুমে পানি জমালো।

,
,

অনবরত দরজার ধাক্কায় পুরোপুরি ঘুম ভেঙে গেলো স্নিগ্ধার। চোখ দুটো মেলে ফাইয়াজকে দেখে হকচকিয়ে গেল সে। নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে লজ্জায় আরষ্ট হল। তবে ফাইয়াজকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে খানিকটা শান্ত হল। তার ভীষণ ইচ্ছে হলো প্রিয় পুরুষের কপালে নিজের ওষ্ঠ জোড়া ছোঁয়াতে। লজ্জায় সে তার মনের কথা শুনতে পারছে না। তবে তার মন বিরোধিতা করে বলল,, এত লজ্জার কি আছে সে তোর স্বামী, সে অবশ্যই তোকে ভালবাসে নইলে তোকে এত কষ্ট করে জয় করে আনত? তাহলে এত দ্বিধা কিসের? আর সে তো ঘুমিয়ে আছে জানতেও পারবে না আর তুই লজ্জাও পাবি না। স্নিগ্ধতার মনের কথা শুনল, খুব সন্তর্পনে নিজের ওষ্ঠ জোড়া ছোঁয়ালো ফাইয়াজের কপালে।

ওমনি খুলে গেল ফাইয়াজের চোখ জোড়া। স্নিগ্ধা হকচাকিয়ে উঠলো, ছিটকে সরে গেল খানিকটা দূরে, লজ্জায় দুহাত দিয়ে নিজের মুখখানা চেপে ধরল,

ফাইয়াজ স্নিগ্ধার হাত ধরে টান দিলো, স্নিগ্ধা প্রস্তত ছিল না বিধায় সোজা পড়ে গেল বিছানায়, ফাইয়াজ নিজের সম্পূর্ণ ভর স্নিগ্ধার ওপরে ছেড়ে দিল।

স্নিগ্ধার চোখ জোড়া বন্ধ,

ফাইয়াজ মন ভরে খানিক দেখলো তার স্নিগ্ধপরীর স্নিগ্ধ মুখখানা, স্নিগ্ধার কানের কাছে মুখ নিয়ে হালকা স্বরে বলল,

নিজের স্বামীকে লুকিয়ে লুকিয়ে আদর করার কি আছে? এই ফাইয়াজ তালুকদার সম্পূর্ণটাই তার স্নিগ্ধপরীর।

ফাইয়াজের আরো কিছু বলতে ইচ্ছে হলো আরো কিছু সময় এমন থাকতে ইচ্ছে হলো, কিন্তু তার সম্ভব হলো না বিচ্ছুবাহিনীর জন্য।

দরজায় আবারও অনবরত ধাক্কা পরছেই পড়ছে, যেন দরজা ভেঙে এরা ভেতরে ঢুকে পড়বে।

ফাইয়াজের হাত আলগা হয়ে গেলে স্নিগ্ধা তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে তোরি ঘরি করে উঠে যায়।

আরে আরে, তুমি পালাচ্ছো কোথায়?

পালাবো কেন? দেখছেননা দরজা ধাক্কা দিচ্ছে। কত বেলা হয়ে গেছে দেখতে পাচ্ছেন না আপনি ছি ছি কি লজ্জা জনক ব্যাপার হয়ে গেল।

আরে নতুন দম্পতি আমরা, এটুকু জ্ঞান সবার আছে তুমি এত হাইপার হচ্ছ কেন? এটা যে করছে সে ইচ্ছে করেই করছে নিশ্চয়ই রাহাতের কাজ,,,

রাহাতের নাম শুনে স্নিগ্ধা শান্ত চোখে ফাইয়াজের দিকে তাকালো, ভাবলো একটা মানুষ আর একটা মানুষকে ঠিক কতটা ভালবাসলে এতকিছুর পরেও নিজের অজান্তে সেই নামটা মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়।

ফাইয়াজ আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল, আচমকা সে থেমে গেল, যেই নামটা সে মনেও নিতে চায় না সেই নামটাই অজান্তে মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো। তার হৃদয়টা ভার হয়ে এল,,

স্নিগ্ধা বুঝতে পারল ভাইয়াজের মনোভাব, পেঁয়াজের কাঁধে হাত রাখল, এটা বোঝাতে যে আমরা সবাই তো আছি আপনার সঙ্গে।

ফাইয়াজ সেই হাতটা আঁকড়ে ধরল,,

স্নিগ্ধা বলল,, নিশ্চয়ই আপনার পাতানো ভাই বোন গুলো,

ওরা একদম আমার পাতানো ভাই বোন না ওরা আমার সত্যিকারের ভাই বোন,

স্নিগ্ধা একটা নির্মল হাসি দিয়ে দরজা খোলার জন্য এগিয়ে গেল,

দরজাটা খোলার সঙ্গে সঙ্গে সাথী আর সায়ান হুড় মুড়িয়ে ভেতরে ঢুকে গেল, সাথী বলল,,

কি ব্যাপার বলতো আপু,, সে কখন থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছিল খোলার নামই নিচ্ছো না, এই যে দুলাভাই ওরফে বড় ভাইয়া, প্রেম পিরিততো আমরা গেলেও করা যাবে নাকি? আমরা তো আর আপনার বউকে নিয়ে যাচ্ছি না।

ফাইয়াজ স্নিগ্ধা অবাক হয়ে তাকানোর সাথীর দিকে, এইটুকুনি মেয়ের কি কথা!!!

স্নিগ্ধা তেরে এসে বলল,, তবে রে,

স্নিগ্ধাকে তেড়ে আসতে দেখে সাথী সারা ঘরে ছুট লাগাচ্ছে।

ফাইয়াজ ওদের কাণ্ড দেখে খাট থেকে নামলো,

এবার সাথী ফাইয়াজকে ঢাল হিসেবে রাখল,

সায়ান ওদের কান্ড দেখে বলল,, তোমরা এখানে এভাবে ছোটাছুটি কর ওদিকে আব্বু আম্মু আমাদের রেখেই চলে যাক,,

সায়ানের কথা শুনে স্নিগ্ধা থেমে গেল,, বলল, আব্বু আম্মু চলে যাচ্ছে মানে?

ওই জন্যই তো তোমাদের ডাক এলাম এসো তাড়াতাড়ি নিচে,,

তাই আজ বলল ঠিক আছে তোমরা যাও আমরা আসছি,,

দুই ভাই বোন চুপচাপ চলে গেল,,

স্নিগ্ধার মনটা খারাপ হয়ে গেল।

ফাইয়াজ বুঝতে পেরে বলল,, চলো ফ্রেশ হয়ে নিচে যাওয়া যাক,

হ্যাঁ

,
,

স্নিগ্ধা তার মায়ের বুকে মুখ গুজে কাদছে। স্নিগ্ধার কান্না ফাইয়াজের এর বুকে কাটার মত বিধছে, কিন্তু কিছুই করার নেই। এমন একটা সময় কান্না তো আসবেই,,,,

Address

Bangladesh
Barishal
8400

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Story of Neel Maloti Lota posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Story of Neel Maloti Lota:

Share