18/07/2025
#দুঃখের_পরে_সুখ
#পর্ব : ১৪
#লেখা: #নীল_মালতীলতা
🚫কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ 🚫
নিঃস্বার্থভাবে মনের গহীন থেকে কাউকে ভালবাসলে কারো মায়ায় আটকে গেলে সেই মায়া কাটানো কোনভাবেই সম্ভব হয় না। হয়তো দিন কেটে যায় রাত কেটে যায় মাস কেটে যায় বছর কেটে যায় তবুও সেই মানুষটার হৃদয়ে খুব বেশি কষ্ট অনুভব করে।
মাহনূরের হৃদয়টাও সেরকম কষ্টে জর্জরিত। সে ভাবছে,, কেন ভালবাসতে গেল। ভালো না বাসলে তো আর এত কষ্ট পেতে হতো না। কই ছোটবেলা থেকে তো অবহেলায় বড় হয়েছে তখন তো এত কষ্ট হয়নি। তাহলে এখন কেন এত কষ্ট হয়। আচ্ছা সেই মানুষটাও কি আমার জন্য কষ্ট পায়?? পায় হয়তো। জয়াতো বলেছিলো,, ওর কাছে আসার পথেই নাকি মানুষটা এক্সিডেন্ট করেছে। সেই এক্সিডেন্টের তার ফোন ভেঙে গিয়েছিল । তার জন্যই তো সেদিন ফোন করেও পায়নি। কি প্রয়োজন ছিল এত কিছু করার। আমার তো শুধু তাকেই প্রয়োজন ছিল। তাহলে তো আমি সবকিছু ত্যাগ করতে পারি। তারতো প্রয়োজন ছিল আমাকে জিজ্ঞেস করার, সত্যটা বলার।
মাহনূর মা কি করছিস??
আম্মা এসো ভেতরে, এইতো কিছু না,
এই নে তোর ফোনটা বাজছিল আমার ঘরে তখন রেখে এসেছিস।
আমাকে আবার কে ফোন করতে যাবে বলোতো।
জাবেরের মা,
হুম, কি বলো উনি আবার কেন আমায় ফোন করতে গেলেন।
দেখ তোর মনোমালিন্যতা জাবেরের সাথে উনার সাথে তো আর না। তাছাড়া তাকে তুই মা বলেও ডেকেছিস, সে তোকে খুব ভালবাসে সেটা তুইও জানিস, যথেষ্ট স্নেহ করে, এতদিন পরে দেশে ফিরেছে, তোর কাছে নিজে থেকে ফোন দিয়েছে, তুই কথা বলবি না?
আচ্ছা দাও কথা বলছি,
আসসালামু আলাইকুম আন্টি কেমন আছেন? বাড়িতে সবাই ভালো আছে?
ফোনের অপর পাশের দুই ব্যক্তি হা করে তাকিয়ে রইল মাহনুরের কথা শুনে,
জাবেরের মনটাও একেবারে খারাপ হয়ে গেল।
মায়া বেগম বললেন,,, এই মেয়ে কি বললি তুই, আমাকে কি বলে ডাকলি।
কেন?? আন্টি বলেছি,
তোর অভিমান তো জাবের এর উপরে তাহলে আমাকে কেন আন্টি বলে ডাকতে যাবি, তুই আমাকে মা বলেই ডাকবি।
আপনাকে মা বলে ডাকার কারণটাই তো ছিল সে, এখন আমি কোন মুখে আপনাকে মা বলে ডাকবো ।
সামনে পেলে ঠাটিয়ে দুটো চড় বসাতাম আমি বে*য়া*দ*ব মেয়ে , ওই ছেলে কারণ ছিল মানে কি, তুই আমার মেয়ে, আর মেয়েরা কি মাকে আন্টি বলে ডাকে?
আসলে,,
কোন আসলে নয়,, ও তো আমার ছেলে, যদি ওর জন্য আমাকে মা বলে ডাকতিস তাহলে তো তুই আমার ছেলের বউ হতিস, তাহলে কি আমি তোর সাথে এত ভালো করে কথা বলতাম,, কিন্তু তুই তো আমার মেয়ে, আর তুই কালকেই আমার বাড়িতে চলে আসবি, কতদিন আমার মেয়েটাকে দেখিনা।
আচ্ছা আমি তোমাকে মা বলেই ডাকবো তবু এমন আবদার করো না, আমি ওই বাড়িতে যেতে পারবো না, প্লিজ মা।
না তোকে আসতেই হবে। এটা কিন্তু আমার অনুরোধ।
মা প্লিজ এমন কেন করো আমি তো তোমার মেয়ে, তাহলে এমন করে কথা বলছ কেন??
কাল তুই আসছিস এবং তোর আম্মা আর বান্ধবীকে নিয়ে আসছিস এটাই আমার শেষ কথা। এখন রাখছি কাল দেখা হবে ভালো থাকিস, আল্লাহ হাফেজ। এসব বলে ফোন রেখে দিলেন মায়া বেগম মাহনূরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই।
,
,
,
,
আমি ওই বাড়িতে যেতে চাই না আম্মা, কেন বুঝতে চাইছে না মা,
আমাদের ঐ বাড়িতে যাওয়াটা খুব জরুরী, এখানে অনেক অনেক কথা লুকিয়ে রয়েছে জয়া বলেছিল আমাদের, মনে নেই তোর।
হুম মনে আছে, কিন্তু,,
আমি জানি জাবের তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল তাই তুই যেতে চাইছিস না।
শুধু বের করে দেয়নি আম্মা, ওই বাড়ির তৃ সীমানায় যেতেও নিষেধ করে দিয়েছে।
আমি বুঝতে পারছি,, তবুও শেষবারের মতো অনুরোধ করছি প্লিজ চল মা,,
ঠিক আছে যাচ্ছি আমি,
মাহনূরের কথা শুনে রুনা বেগম ও রিমা দুজনই খুশি হয়।
,
,
,
,
সকাল ৮ টা,,,,,,
রুনা বেগম মাহনুরকে নিয়ে খুব সকালেই চলে এসেছেন জাবেরের বাড়িতে।
সেই যে গেটের ভির পা দিয়েছিল মাহনুর তখন থেকেই জাবের তার দুচোখের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে প্রেয়সির দিকে তাকিয়ে থেকে। কতদিন পর দেখছ তাকে। এতকিছুর মধ্যে মাহনুর একবারও ফিরেও তাকায়নি জাবেরের দিকে। শুধু জাবেরের বাবা-মায়ের সাথে কুশল বিনিময় করে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে নিচের দিকে যে তাকিয়ে আছে আর ওপরে চোখ তোলেনি।
জয়া খেয়াল করেছে তার ভাইকে। ভাইয়ের সাথে এখন মিষ্টি মধুর সম্পর্ক থাকলে কাছে গিয়ে মজা নিতে পারত, বলতো,, ভাইয়া দেখার জন্য সারা জীবন পড়ে আছে এখন চোখ দুটো সরা, কিন্তু আফসোস সেটা বলার মতন না আছে সম্পর্ক না আছে মুখ কোন মুখে ভাইয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াবে ভাই তো তার সাথে কথাই বলে না।
সবাই উপস্থিত রয়েছে ড্রয়িং রুমে, যে যার মত বসে পড়েছে এবার, মায়া বেগম একটু জোরে গলা খাকারি দিলেন। এতে জাবেরের হুস ফিরলো । সে মায়ের চোখে দিকে তাকিয়ে খানিকটা লজ্জাও পেল।
জাহিদ হোসেন বললেন,, মাহনুর মা, সবকিছুই আমি শুনেছি, তোমার সাথে যা হয়েছে তা খুব অন্যায় হয়েছে, তার জন্য নাকি তুমি তোমার মাকে আংটি বলে ডেকেছে, আর আমাকে তো তুমি কিছু ডাকোইনি। আমাদের ক্ষমা করে দিয়ে আমাদের তোমার মা বাবার জায়গাটা দিতে পারবে না মা?
মাহনুর জলভরা চোখে জাহিদ হোসেনের দিকে তাকালো। ভাবলো এই মানুষগুলো এত ভালো কেন, এতো ভালো মানুষ আছে এই পৃথিবীতে এখনো। বলল,,, এ আপনি কি বলছেন বাবা,
এইতো মেয়ে আমাকে বাবা বলে ডেকেছে, এখন থেকে ওই হতচ্ছাড়ার সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই তুমি শুধু আমাদের মেয়ে,
এ কথা শুনে উপস্থিত সবাই খানিক হাসলো,, মাহনূর নিজেও মলিন হাসলো, কিন্তু জাবেরের দিকে ফিরল না।
তো যাই হোক, জয়া তুমি আমাদেরকে কিছু বলবে বলেছিলে,, আমরা সব শুনতে চাই আর এও শুনতে চাই তুমি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে? আর ফিরলে কি করে আর কোথায় ছিলে তুমি সবকিছু আমাদের খুলে বল । তোমার কোন ক্ষতি হয়নি তো?
না বাবা আমি ঠিক আছি,,
হুম, এবার তুমি শুরু করো আমাদের কি বলতে চাও।
আমি একদম শুরু থেকেই তোমাদের বলছি,,
হুম,, অবশ্যই শুরু থেকে বলবে, আমরা তোমার সব কথা শুনবো।
,
,
,
ভাইয়ার বন্ধু অশিক,,
অশিকের নাম শুনে জাবের ভ্রু কুচকে তাকালো জয়ার দিকে। বলল,, অসিক,, তুমি কোন অসিকের কথা বলছো? ঐ রা*স্কে*ল টার কথা,
কিন্তু ওরতো এখন জেলে থাকার কথা???
ও অনেকদিন আগেই জেল থেকে পালিয়েছে ভাইয়া। আর এসব কিছুর পিছনে ওরই হাত আছে। আর ওকে আমি সাহায্য করতাম।
শেষের কথাটা ঘরে যেন বজ্রপাতের মত ঠেকলো সবার কাছে। সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। মায়া বেগম মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে যেন ভুলে গেলেন।
অনেকটা সময় সবাই স্তব্ধ হয়ে থাকার পর হঠাৎ একটা শব্দে সবার হুঁশ ফিরল,,,
মায়া বেগম মেয়ের গালে চড় মেরেই যাচ্ছেন,,
আর কাঁদতে কাঁদতে বলছেন এইজন্য তোকে আমি মানুষ করেছিলাম??
রুনা বেগম তাকে গিয়ে থামালেন,,,, কি করছেন আপা বাচ্চা মেয়েটাকে এভাবে মারবেন না, আগে ওর সব কথা শুনুন।
কি শুনবো আর আপনি বলুন,, এই সবকিছুর পেছনে ও আছে সেটা ও নিজের মুখে বলার পর আমি নিজেকে কিভাবে ঠিক রাখতে পারি। পরের মেয়ের জন্য আজ আমার নিজের পেটের ছেলেটা কষ্ট পেল।
মায়া বেগমের এই কথাটা জয়ার কানে যেন বিষের মতো ঠেকলো। তারমানে অশিক্ষিক বলেছে আমি এদের আপন কেউ না।
তাৎক্ষণিক জাহিদ হোসেন মায়া বেগম কি ধমকে উঠলেন,, আাহ জবেরের মা, কি বলছ তুমি? শান্ত কর নিজেকে।
তখনই মায়া বেগম নিজের হুশে ফিরে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন ভাবতে লাগলেন এ আমি কি করলাম এতদিনের লুকানো সত্যটা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল। তিনি মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন মেয়েটা তার দিকে ছল ছল চোখে তাকিয়ে আছে। তিনি আবারও ভাবলেন মেয়েটা তার নিজের পেটের না হলেও সে তো মানুষ করেছে। আর তার নিজের মেয়ে যদি এরকম করতো তাহলে তিনি তাকেও কোনোভাবেই ছাড় দিতেন না।
এতটা সময় মাহনুর ও জাবের ছিল নিরব দর্শক।
এবার জাবের গম্ভীর কণ্ঠে বললো ,, জয়া তুমি তোমার কথাগুলো কন্টিনিউ করো,, আশা করি তুমি আমাদেরকে আপন ভেবে সব কিছু সত্য কথা বলবে,,
ভাইয়া তোমরাই তো আমার আপন তোমরা ছাড়া যে আমার আর কেউ নেই।
কে বলেছে তোমার কেউ নেই আছে তো অসিক, নিশ্চয়ই আমাদের চেয়েও সে তোমার অনেক বেশি কাছের এবং আপন।
জাহিদ হোসেন আবারো ধমকে উঠলেন,, জাবের কি শুরু করলে তোমরা মেয়েটাকে সব কথা শেষ করতে দাও,, মা জয়া তুমি বল কি হয়েছিল?
জয়া এবার শব্দ করেই কেঁদে দিলো,, এতক্ষণে সে বুঝে গেছে তার এই বাড়ির সাথে রক্তের কোন সম্পর্ক নেই, তবুও এই বাবা ডাকা মানুষটা তাকে মা বলে সম্বোধন করছে। আর সে কি করছিল।
জাহিদ হোসেন এবার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, কান্না করো না মা, যা সত্যি তা তুমি আমাদের খুলে বল।
জয়া এবার নিজেকে শান্ত করে বলতে শুরু করলো,,,
চলবে,,,,,