Saikhul ISLAM

16/08/2025

The journey begins… Something explosive is coming, stay tuned!

09/08/2025

গল্প: মরা গ্ৰামের অতিথি
লেখিকা: নিগার সুলতানা বন্যা

প্রথম পর্ব:

সকালটা বেশ উজ্জ্বল। সূর্যের আলো পড়ে প্ল্যাটফর্মের মেঝেতে ছায়া ফেলেছে। শহর থেকে কিছুটা দূরের ছোট এই স্টেশনটা তুলনামূলকভাবে ফাঁকা, কিন্তু একেবারেই নির্জন নয়। কিছু স্থানীয় যাত্রী এখানে-ওখানে ঘোরাঘুরি করছে।

স্টেশনের এক কোণে বেঞ্চে দাঁড়িয়ে আছে পাঁচজন — বর্ষা, মেহেমেদ, ফাহিম, সিহাব আর হুমায়রা। হাতে ব্যাগ, চোখে বিরক্তির ছাপ।

"কিরে, ট্রেন এখনো আসছে না কেন?" সেই কখন থেকে বসে আছি — বিরক্ত গলায় জিজ্ঞেস করল বর্ষা।

মেহেমেদ কপাল ঘষে উত্তর দিল,
"স্টেশন মাস্টারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। বলল সিগন্যালের সমস্যা, ট্রেনটা দেরি করেই আসবে।"

"অসাধারণ!" — ফাহিম ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
"এই লাইনে একটাও দিন যায় না, যেদিন ট্রেন টাইমে আসে।"

সিহাব বোতলের পানি খেতে খেতে বলল,
"এই গরমে এখানে দাঁড়িয়ে থাকা সত্যিই torture..." তারপর আবার এতটা পথ জার্নি করতে হবে।

হুমায়রা একটু ক্লান্ত মুখে বলল,
"ভেবেছিলাম আজ একটু মজার ট্রিপ হবে। এখন তো শুরুতেই মন খারাপ হয়ে গেল।"

পাঁচজনের কথাবার্তায় যেন ঠিক কলেজ ট্যুরে যাওয়ার আগের সেই ক্লান্তি আর উত্তেজনা মিশে আছে। কেউ ফোনে সময় দেখে, কেউ স্যুটকেসে বসে পড়ে। স্টেশনের আশেপাশে জীবন নিজের মতোই চলছে—কেউ খবরের কাগজ পড়ছে, কেউ চা খাচ্ছে।

---

সকাল প্রায় ১০টা। অবশেষে স্টেশনের পাশ দিয়ে একটা দীর্ঘ বাঁশির শব্দ ভেসে এল। একটু পরেই ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে ট্রেনটি ধীরে ধীরে প্ল্যাটফর্মে ঢুকল।

পাঁচজনের চোখে-মুখে স্পষ্ট স্বস্তি।

"শেষমেশ এল তো!" — বর্ষা মৃদু হাঁফ ছেড়ে বলল।

সিহাব ব্যাগ কাঁধে ফেলে বলল,
"আর পাঁচ মিনিট দেরি হলে আমি হেঁটে রওনা দিতাম!"

সবাই হাসতে হাসতে ব্যাগ নিয়ে ট্রেনে উঠল। জানালার পাশে জায়গা খুঁজে বসে পড়ল তারা, কেউ সিটের ওপর বসলো, কেউ জানালার ধারে দাঁড়িয়ে রইল। ট্রেন গর্জন তুলে আবার চলতে শুরু করল।

গন্তব্য: পাটকাউলি গ্রাম।

একটি নাম, যা তারা আগে কখনো শোনেনি। কেউ চেনেও না।মানচিত্রে ক্ষীণ এক চিহ্ন মাত্র।

এই গ্রামের নামটা তারা প্রথম শুনেছে এক সরকারি ফাইলে। জেলা সদর দপ্তর থেকে একটি চিঠি এসেছে—গ্রামে নাকি হঠাৎ করে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেছে। লোকালয় থেকে একটু দূরে, বনাঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় গ্রামটি সাধারণত প্রশাসনের চোখে পড়ে না। ফলে চিকিৎসা সুবিধাও প্রায় নেই বললেই চলে।

এই কারণেই পাঁচজনকে সেখানে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তরফ থেকে ১০ দিনের মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হবে পাটকাউলিতে। তারা সবাই স্বাস্থ্যকর্মী বা মেডিকেল ভলান্টিয়ার—নতুন এলাকায় গিয়ে কাজ করার মতো অভিজ্ঞতা আছে, কিন্তু এইবারের জায়গাটা একটু বেশিই অজানা।

হুমায়রা জানালার বাইরে তাকিয়ে বলল,
"এই প্রথম কোনো এমন জায়গায় যাচ্ছি, যার নামই জীবনে শুনিনি। অন্তত কিছু ইনফরমেশন তো থাকবে। তাও নেই। কিছু চিনি না জানি না। অফিস থেকে পাঠিয়ে দিল"

ফাহিম হাসল,
"গ্রামের নাম না শুনলেই যদি ভয় পাও, তবে এবার ১০ দিন খুব মজাদার যাবে না মনে হচ্ছে!"

মেহেমেদ একটু চুপ থেকে বলল,
"কাজের জায়গা যেখানেই হোক, মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারাটাই আসল।"

বাতাসে ধীরে ধীরে দুপুরের গন্ধ। ট্রেন ছুটছে তার গতিতে, অজানার পথে। পাটকাউলি গ্রাম তখনও বহুদূরে,

ট্রেন চলতে চলতে ঘড়ির কাঁটা দুপুর ছুঁতে চলেছে। জানালার বাইরে সবুজ মাঠ, মাঝেমধ্যে কিছু গাছপালা, ছোট ছোট স্টেশনগুলো হঠাৎ এসে আবার হারিয়ে যাচ্ছে।

হালকা বাতাসে কথা বলতে শুরু করল হুমায়রা।

"ভাবছিলাম, আমাদের মধ্যে কে প্রথম ক্লান্ত হয়ে যাবে," — সে মুচকি হাসল।

সিহাব হেসে উঠল,
"তোমার মতো সোজাসাপ্টা নার্সকে দেখে তো রোগীরাই আগেই সেরে ওঠে। ক্লান্তি তোমার পিছু নেয় না!"

হুমায়রা, পেশায় একজন নিবেদিত নার্স। বয়স তেইশ, শান্ত স্বভাবের হলেও পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে জানে। মেডিকেল ক্যাম্পে এর আগেও বহুবার কাজ করেছে। বেশ সুন্দরী।

"আমি বলি, ক্লান্তির রেকর্ড তো বর্ষারই। যতই কফি খাও না কেন, একটু পরেই বলবে ‘একটু শুয়ে নিতে চাই’!" — বলল ফাহিম।

বর্ষা, একজন মেডিকেল টেকনিশিয়ান। চশমা পড়া, হাসিখুশি মেয়ে, অনেক সময় একটু বিরক্ত হলেও দায়িত্ব পালনে খুবই যত্নবান। বেশ চঞ্চল ।সে এই ক্যাম্পের লজিস্টিক ও ওষুধ সামলানোর দায়িত্বে।

ফাহিম, বয়স প্রায় ২৪, একজন অভিজ্ঞ স্বাস্থ্য সহকারী। কাজ করতে ভালোবাসে, কিন্তু একটু রসিক প্রকৃতির। সবসময় মজার কথা বলে পরিবেশ হালকা করে রাখে।

"তোমরা মজা করো, আমি ট্রেনের গতির সাথে চিঠি টাইপ করছি। রিপোর্ট দেরি হলে তো স্যারের ফোন আসবে!" — ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ বের করে বলল মেহেমেদ।

মেহেমেদ, টিমের সবচেয়ে গম্ভীর এবং দায়িত্ববান সদস্য। স্বাস্থ্য প্রশাসনের অধীনে ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর। বাইরের এলাকায় গিয়ে ক্যাম্প পরিচালনার অভিজ্ঞতা তার অনেক বেশি। বলা যায় ওদের টিমের লিডার মেহেমেদ। পরিবার বলতে একমাত্র বাবা ছিল । সেও গত বছর স্টো্রোক এ মারা যান।

সবাই কথা বলছিল, হঠাৎ সিহাব বলল,
"আমার কাজ ফিল্ডে গিয়ে ডেটা সংগ্রহ করা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকজনের স্বাস্থ্য যাচাই করাই। কিন্তু শুনেছি পাটকাউলির লোকজন একটু 'কম কথা বলে' টাইপ..."

সিহাব একজন স্বেচ্ছাসেবক, মেডিকেল রিপোর্ট ও ফিল্ড সার্ভের কাজের অভিজ্ঞতা আছে। কিছুটা রগচটা স্বভাবের হলেও মানুষের বিপদে সবার আগে এগিয়ে আসে

ট্রেন গড়াতে গড়াতে দুপুর প্রায় পেরিয়ে গেছে। জানালার বাইরে সূর্যের আলো একটু একটু করে ঢলে পড়ছে পশ্চিমে। পাঁচজনের মধ্যে হালকা হাসি-মশকরা চলছে, কিছুক্ষণ পরপরই কেউ না কেউ নতুন কোনো বিষয় তুলে ধরছে।

তাদের বয়স কেউই পঁচিশ পার করেনি। তরুণ, কর্মঠ, উৎসাহী। এই মেডিকেল টিমে একসাথে কাজ করতে করতে মাঝেমাঝে ঝগড়া হলেও, বেশ ভালো একটা বন্ধন গড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে।

তবে মেহেমেদ ও সিহাব—এই দুজনের বন্ধুত্বটা একটু অন্যরকম।

কলেজ জীবন থেকেই একসাথে পথচলা তাদের। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে, পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক সামাজিক কাজেও অংশ নিয়েছে। একে অপরকে শুধু বন্ধু নয়, প্রায় ভাইয়ের মতোই দেখে। কাজের চাপ, ঝামেলা, সমস্যা—সব তারা ভাগ করে নেয়।

তবে সিহাবের গল্পটা একটু আলাদা।

চোখে সবসময় একটা ভিন্ন রকম স্বপ্ন—ফটোগ্রাফি। সে ভালো ছবি তোলে, প্রকৃতির, শহরের, মানুষের, ক্ষণিকের অভিব্যক্তির। কিন্তু সেই স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার এক চরম দূরত্ব। সংসারে অভাব-অনটন, আর্থিক টানাপোড়েন। ফলে স্বপ্নকে সময় দেওয়া সম্ভব হয়নি। এই সংস্থার কাজে সে আসতে চায়নি, কিন্তু উপার্জনের প্রয়োজন ছিল—তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই এসেছে।

মেহেমেদ সেটা জানে। তাই তাকে সবসময় একটু বাড়তি আগলে রাখে।

"তোর ক্যামেরাটা আনিসনি?" — হঠাৎ প্রশ্ন করল মেহেমেদ।
সিহাব একটু মুচকি হেসে বলল,
"আনছি।। এই কাজের ভেতরেও যদি একটু সময় পাই, ছবি তুলব ভেবেছি। গ্রামটা একেবারে নতুন জায়গা। কিছু না কিছু তো থাকবেই ক্যামেরার জন্য।"

হুমায়রা পাশ থেকে হেসে বলে,
"ভালোই করছ। হয়তো তোর তোলা ছবিগুলোই একদিন পাটকাউলিকে চেনাবে বাইরের মানুষকে।"

ফাহিম বলল,
"না ভাই, তোর তোলা ছবিগুলা দেখে কেউ বলবে না ডেঙ্গুর ক্যাম্পে গেছিলি, বলবে কোন ট্রাভেল ভ্লগার!"

সবাই হেসে ওঠে।

সিহাব একটু নরম হয়ে যায়। ক্যামেরার ব্যাগটা তার কোলের উপর। সে হাত দিয়ে ব্যাগটা ছুঁয়ে থাকে কিছু সময়।

এই ক্যামেরাটা তার নিজের কেনা নয়। বন্ধ একটি দোকান থেকে অল্প টাকায় কিনে নেওয়া, পুরোনো DSLR। কিছুটা জুড়ে দেওয়া, কিছুটা ভালোবাসায় টিকিয়ে রাখা।এটা শুধু একটা যন্ত্র নয়, ওর স্বপ্নের অংশ।
হুমায়রা গুগল ম্যাপ এ পাটকাউলীর ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখলো এর ব্যাপারে তেমন কোন তথ্য ই নেই। ব্যাপার টা তার কাছে খটকা লাগলেও সে এই নিয়ে কারো সাথে আর আলোচনা করলো না ‌। এ কেমন গ্ৰাম।

পড়ন্ত বিকেল। সূর্যের আলো ধীরে ধীরে লালচে ছায়া ফেলে দিচ্ছিল চারপাশে। ট্রেন তাদের পৌঁছে দিয়েছে উজিরপুর স্টেশনে। সময় তখন প্রায় বিকেল সাড়ে পাঁচটা। আর এক ঘণ্টার মধ্যেই অন্ধকার নামবে।

পাঁচজন ট্রেন থেকে নেমে চারদিকে তাকালো।
স্টেশনটি ছোট, প্রায় জনশূন্য। দু-একজন স্থানীয় লোক ঘোরাফেরা করছে, কিন্তু কারো চোখে যেন কেমন এক শূন্যতা।

"এটাই উজিরপুর?" — বর্ষা অবাক চোখে জিজ্ঞেস করল।
"হ্যাঁ, এখান থেকেই আমাদের নেবার কথা। পাটকাউলির কেউ আসবে," — বলল মেহেমেদ।

তারা ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে রইল। ৫ মিনিট, ১০ মিনিট… সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কারো দেখা নেই।
মেহেমেদ বারবার ফোন করার চেষ্টা করছে পাটকাউলির পঞ্চায়েত প্রধানকে, কিন্তু ফোনে সংযোগই পাওয়া যাচ্ছে না।

"নেটওয়ার্ক কাজ করছে না ঠিকমতো," — বিরক্ত মুখে বলল সে।

"তাহলে দাঁড়িয়ে থাকব নাকি সারারাত?" — সিহাব ব্যাগ কাঁধে ঠিক করে নিলো।

বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর তারা আর দেরি করল না। সবাই সিদ্ধান্ত নিল, হাঁটা শুরু করবে। স্টেশন চত্বরের বাইরে বেরোতেই সামনে দূরে দেখা গেল দুজন লোককে। তাদের দেখে এগিয়ে গেল ফাহিম।

"ভাই, পাটকাউলি গ্রামের রাস্তা কোন দিকে?" — জিজ্ঞেস করল সে।

লোক দুটো হঠাৎ থেমে দাঁড়াল। তাদের মুখের অভিব্যক্তি আচমকা পাল্টে গেল—চোখে একটা চাপা ভয়, মুখে দ্বিধা।

"আপনারা… আপনারা পাটকাউলি যাবেন?" — গলা নিচু করে একজন জিজ্ঞেস করল।

ফাহিম একটু বিরক্ত হয়ে বলল,
"না গেলে কি আর জিজ্ঞেস করতাম? দয়া করে রাস্তা বলবেন?"

দ্বিতীয় ব্যক্তি আস্তে বলল,
"এই রাস্তা ধরে বামে যান, প্রায় বিশ মিনিট হাঁটলেই একটা নদী পাবেন। সেখান থেকে নৌকায় ওই পার যেতে হবে। পার হলেই একটা জঙ্গল পড়বে। সেই জঙ্গলের ভেতর দিয়েই যেতে হয়… তারপরই পাটকাউলি।"

বর্ষা কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
"জঙ্গল? সন্ধ্যার মুখে?"

লোক দুটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল,
"আপনারা কি জায়গাটা সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন?"

মেহেমেদ কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
"মানে? কী রকম খোঁজ?"

লোক দুটো মুখে কোনো উত্তর না দিয়ে ধীরে ধীরে পেছন ফিরল। যাওয়ার আগে একজন শুধু বলল,
"সাবধান থাকবেন।"

তারা চলে গেল। পেছনে রইল কিছু অজানা সংকেত, কিছু অপ্রকাশিত ভয়।

পাঁচজন একে অপরের মুখের দিকে তাকাল। পরিবেশটা হঠাৎ করে যেন আরও নিঃস্তব্ধ হয়ে উঠল। বাতাস ভারি লাগছে। সন্ধ্যা নামছে… আর তারা এগিয়ে চলেছে এক অজানা গন্তব্যের দিকে—যেখানে কী অপেক্ষা করছে, কেউ জানে না.
লোক দু’জনের কথামতো তারা রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করল। সূর্য তখন প্রায় অস্তাচলে। চারপাশে হলদে-কমলা আলো, বাতাসে একটা গা ছমছমে নিস্তব্ধতা।

হাঁটতে হাঁটতে হুমায়রা হঠাৎ থেমে গিয়ে বলল,
"আমার কেমন জানি একটা খটকা লাগছে।"

সিহাব পাশে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
"কী রকম?"

হুমায়রা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
"ঠিক বলতে পারছি না। ওই লোক দুটোর চোখে কিছু ছিল। ভয়… বা দ্বিধা। আর জায়গাটাও কেমন যেন অচেনা লাগে।"

এই সময় ফাহিম হঠাৎ আঙুল তুলে দেখাল,
"ওই যে, নদীটা দেখা যাচ্ছে!"

তারা সবাই থেমে দাঁড়াল। সামনেই নদী। খুব প্রশস্ত না হলেও গভীর মনে হয়।
নীরব, শান্ত… অস্বাভাবিকভাবে। কোন নৌকা ও দেখা যাচ্ছে না

নদীর ওপারে তাকালেই জঙ্গলটা চোখে পড়ে—ঘন, সবুজে চাপা অন্ধকার।
কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয়—নদীতে কোনো নৌকা নেই।

"এইরকম বড় একটা নদী, কিন্তু একটা নৌকাও নেই?" — অবাক হয়ে বলল বর্ষা।

সিহাব ধীরে ধীরে বলল,
"এটা লোকালয় থেকে অনেকটা আলাদা। পাটকাউলি যেন নিজের মধ্যেই আবদ্ধ…"

তারা নদীর কূল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকল কিছুক্ষণ। হঠাৎ মেহেমেদ বলল,
"দূরে একটা নৌকা দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এদিকেই আসছে!"

সত্যিই, নদীর ওপাশ থেকে একটি ছোট কাঠের নৌকা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। মাঝি বয়সে বেশ বয়স্ক, গায়ের রং পুড়ে যাওয়া, চোখে একটা অদ্ভুত দৃষ্টিভঙ্গি। বেশ গম্ভীর।

নৌকাটা কূলে এসে থামতেই সিহাব এগিয়ে গিয়ে বলল,
"চাচা, আমরা পাটকাউলি যাব। আপনি যাবেন?"

মাঝি থমকে গেল। চোখ কুঁচকে তাদের কয়েক মুহূর্ত দেখল। তারপর নিচু গলায় বলল,
"ওখানে আপনাদের কাজ কী, সাহেব? আমি... আমি ওদিকে যেতে পারব না।"

মেহেমেদ কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
"কেন? কোনো সমস্যা আছে?"

কিন্তু মাঝি উত্তর দিল না। মুখ ফিরিয়ে নিল। যেন কিছু বলতে চায়, কিন্তু ভয় বা সংকোচে আটকে আছে।

অবশেষে অনেক অনুরোধ, বোঝানো আর তিনগুণ ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাবে মাঝি ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে রাজি হলো।

নৌকা নদীর স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভেসে চলে। কেউ কিছু বলছে না। শুধু মাঝেমধ্যে মাঝির চোখে এক ধরনের অস্বস্তি ভেসে ওঠে। যেন সে জানে কিছু, যা বাকিরা জানে না।

পাঁচজন তরুণ, একটি নীরব নদী, আর অদ্ভুত এক জঙ্গল পেরিয়ে তারা এগিয়ে চলেছে অজানা এক গন্তব্যের দিকে—পাটকাউলি।
নৌকা ধীরে ধীরে নদীর বুকে ভেসে চলছে। জল নিস্তব্ধ, যেন দম নিয়ে আছে। নদীর জল স্বাভাবিক এর তুলনায় কালো। মাঝি হঠাৎ মুখ ফিরিয়ে তাকাল পাঁচজন তরুণের দিকে।

"ওখানে আপনাদের কাজ কী, সাহেব? মনে হচ্ছে শহর থেকে এসেছেন," — প্রশ্ন করল সে।

ফাহিম সোজাসুজি উত্তর দিল,
"আমরা এখানে মেডিকেল ক্যাম্প করতে এসেছি। পাটকাউলি গ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে শুনে আমাদের সংস্থা পাঠিয়েছে।"

মাঝি কিছুক্ষণ চুপ থেকে ধীরে বলল,
"এসেছেন, ভালো কথা… তবে সাহেব, আপনারা শহরের মানুষ। বাবু লোক। আপনাদের বিপদ চাই না। ও গ্রাম… অভিশপ্ত গ্রাম, সাহেব। ওখানে না, যাওয়াই ভালো।" ওই গ্ৰাম এক মৃত্যুপুরী।

সকলেই চুপ করে গেল। এতক্ষণ নীরব থাকা মেহেমেদ এবার যেন চমকে উঠল।

"মানে কী বলতে চাইছেন আপনি?" — গলা একটু কঠিন করে বলল সে। মেহেমেদের লোকটিকে একটু পাগল মনে হলো । কথার কোন মাথা মুন্ডু নেই

নৌকার মধ্যে এক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা নেমে এলো।

সিহাব, বর্ষা, হুমায়রা, ফাহিম—সবাই একই দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মাঝির দিকে। যেন একসঙ্গে সবাই জানতে চায়, 'এই গ্রামের গল্পটা কী?'

মাঝি গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
"আমি সব জানি না সাহেব। শুধু জানি আমার দাদার মুখে শুনেছি—ওই গ্রামে যে একবার যায়, সে আর আগের মতো ফিরে আসে না। কেউ চিরতরে হারিয়ে যায়, কারও মন-মানসিকতা পাল্টে যায়।ওই গ্ৰামে নাকি অশরীরীদের বাস"

তার চোখে ভয়। কণ্ঠস্বরটা আরেকটু নিচু হয়ে এলো,
"ওখানে কিছু একটা আছে সাহেব… একটা অশুভ ছায়া। ওখান কার মানুষ কখনো গ্ৰামের বাইরে আসেনা সাহেব . ওরা যেন চিরতরে ওই গ্ৰামে বন্দি হয়ে গেছে"

তার কথাগুলো কুয়াশার মতো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল। সবাই যেন নিজের মধ্যে গুটিয়ে নিল নিজেকে। কেউ কিছু বলছে না, কিন্তু প্রত্যেকের মনে একটা অস্বস্তি, একটা দম বন্ধ করা অনুভূতি—যা ধীরে ধীরে জমে উঠছে। তবে মেহেহেদ এর এইসব নিছকই গল্প মনে হয়। গ্ৰামের মানুষ যে এই রকম গল্প বানিয়ে তা ছড়াতে পারে তার অজানা নয়

অবশেষে নৌকা কূলে এসে থামল। ওপারে বেশ ঘন বন, মাটির রাস্তা, আর নিস্তব্ধতা। যেন সময় থেমে আছে।

সেখানে অপেক্ষা করছিল একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি—৫০-৬০ বছর বয়সের, মুখে গভীর ভাঁজ, গায়ে সাদা পাঞ্জাবি।

"স্বাগতম। আমি পঞ্চায়েত প্রধানের লোক। আপনাদের নিতে পাঠিয়েছেন। নৌকা না পাওয়ায় স্টেশনে যেতে পারিনি, ক্ষমা করবেন।" — বলল তিনি।

মাঝি চটজলদি নৌকা ঘুরিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলো। তার মুখে কিছু বলার ছিল না, চোখে ছিল শুধু তাড়া। যাবার সময় সে আবার ও সাধারণ করে দিয়ে যায়। " ও মৃত্যুপুরী যে যাবেন না সাহেব।ও গ্ৰাম মানুষ খেকো। কাউকে ছাড়বে না,, কাউকে না"

এক মুহূর্তে সে দূরে মিলিয়ে গেল নদীর স্রোতে।

পাঁচজন দাঁড়িয়ে রইল অচেনা এক জায়গায়। সামনে বৃদ্ধ, পেছনে ঘন বন, আর মাথার উপর নামা সন্ধ্যার ছায়া।পাঁচজন ধীরে ধীরে বৃদ্ধের পেছনে পেছনে জঙ্গলের পথে পা বাড়াল। বৃদ্ধ তেমন একটা কথা বলেন না। তার পা পড়ে নিঃশব্দে, যেন বছরের পর বছর এই পথ হেঁটে হেঁটে তার শরীরের সঙ্গে মাটি মিশে গেছে।

সাধারণত ওরা একসঙ্গে থাকলে মজা-মশকরা করে, গল্পে গলা ফাটায়। কিন্তু আজ... আজ যেন কিছু ভেতর থেকে চেপে রেখেছে সবাইকে। স্টেশনে দেখা সেই দু'জন লোক, মাঝির অস্বস্তিকর সতর্কতা, আর নদীর অদ্ভুত নিস্তব্ধতা—সবকিছুই তাদের শব্দ কেড়ে নিয়েছে।

জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে একটি সোজা পথ চলে গেছে। দুই পাশে বিশাল বিশাল গাছ—ডালপালা ছায়া ফেলে ঢেকে রেখেছে আকাশ। বাতাস ভারী, শ্বাস নিতে কষ্ট হয় না ঠিকই, কিন্তু একটা অদৃশ্য চাপ যেন বুকের ওপর বসে। উপরে তাকালে আকাশ ঠিক মতো দেখা যায় না। দিনের বেলায় ও যেন রাতের মতো অন্ধকার।

হাঁটতে হাঁটতে সূর্য প্রায় পুরোপুরি ডুবে যায়। হঠাৎ দূর থেকে ভেসে আসে মাগরিবের আজানের সুর। এই পবিত্র সুর যেন সংকেত বহন করছে গ্ৰাম বেশি দূরে নেই।

হুমায়রা ধীরে বলে, "মনে হচ্ছে গ্রাম কাছেই।"

এই সময় সিহাব থেমে পিছন ফিরে তাকায়। তার চোখে সন্দেহ।

মেহেমেদ সাথে সাথে জিজ্ঞেস করে,
"কি হয়েছে?"

সিহাব নিচু গলায় বলে,
"আমার মনে হচ্ছে… আমাদের কেউ দেখছে। দূর থেকে। খুব নিরবে। মনে হচ্ছে কোন কালো ছায়া আমাদের গাছের আড়াল থেকে দেখছে"

একটা কাঁপুনি যেন মুহূর্তে সবার শরীরে বয়ে গেল। তারা থেমে পড়লেও, মেহেমেদ নিজেকে সামলে বলে,
"মন বোঝে যা চায়। ভাবছো অতিরিক্ত। চল।"

বর্ষা এবার একটু ভরসা করে বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করে,
"চাচা, এই গ্রাম নিয়ে আসার সময় অনেক অদ্ভুত কথা শুনেছি। আপনি কি কিছু বলতে পারবেন এই বি"

বৃদ্ধ থামে না। ধীরে হাঁটতে হাঁটতেই বলে,
"ওসব কানে দেবেন না।"

তার কণ্ঠ ঠান্ডা, শীতল… যেন চিরকাল কোনো আবেগই তাকে ছুঁতে পারেনি। বর্ষা বুঝে ফেলে—বৃদ্ধ কথাটা এড়াচ্ছেন। ইচ্ছা করে।

আর কেউ কথা বাড়ায় না।

শেষমেশ ওরা পাটকাউলি গ্রামের সীমানায় পৌঁছায়।

গ্রামে ঢুকতেই... চারপাশের নিস্তব্ধতা যেন হঠাৎ আরও ঘন হয়ে আসে। মানুষের কণ্ঠ নেই, গরু ছাগলের ডাক নেই, এমনকি পাখিও চুপ। শুধু বাতাস বইছে—ঠান্ডা, শীতল, অস্বাভাবিকভাবে ভারী।

গ্ৰামে প্রবেশ করতেই হঠাৎ একটা শিতল বাতাস তাদের গা ছুয়ে বেরিয়ে গেল। যেন একদল অশরীরী তাদের নিঃশব্দে স্বাগতম জানাচ্ছে।

বর্ষা ফিসফিস করে বলে,
"এই বাতাসটা... কেমন যেন..."

হুমায়রা নিচু গলায় বলল,
"একদম... যেন কেউ অদৃশ্য হয়ে হেঁটে গেছে আমাদের পাশ দিয়ে।"

মেহেমেদ কিছু না বলে গ্রামের দিকে তাকিয়ে থাকে।

গ্রামের মেঠো পথ ধরে পাঁচজন হাঁটতে থাকে বৃদ্ধের পেছনে। চারপাশ নিস্তব্ধ—পাখির ডাকও নেই, গরুর ঘণ্টার আওয়াজও না। যেন শব্দ নিজেই এই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সাধারণ গ্ৰামে রাতের বেলা শান্ত ই থাকে তবে এতটা যে শান্তি তা একটু অস্বাভাবিক ই বটে‌।

পথের দু’ধারে ছড়ানো-ছিটানো কয়েকটা ঘর চোখে পড়ে। বেশিরভাগই মাটির। একেকটা ঘর যেন সময়ের কাছে হেরে বসে আছে—চুপচাপ, অবহেলিত। ভাবতেই অবাক লাগে, ২০২৫ সালের বাংলাদেশে এখনও এমন একটি গ্রাম রয়েছে, যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি।

"এটা কি সম্ভব?" ফাহিম নিচু গলায় বলে ওঠে।

মেহেমেদ ধীরে মাথা নাড়ে, "যা দেখছি, তাই তো মনে হচ্ছে।"

কয়েকটি ঘরে অবশ্য ছোট ছোট সোলার প্যানেল চোখে পড়ে। হয়তো দিনের আলোতেই এখানকার রাতগুলো জ্বলে উঠে কিছুটা।

অবশেষে তারা পৌঁছায় পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে।

একটি বড়, মাটির দালান। অনেকটা পুরনো আমলের, কিন্তু যত্নে রাখা। সামনে ছোট্ট উঠোন, পাশে কুয়ো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গ্রামের প্রধান, আবু মিয়া।

গায়ের গড়ন মাঝারি, বয়স পঞ্চাশের ঘরে। মুখে অনাবিল শান্তি, কিন্তু চোখে কিছু একটা লুকিয়ে আছে—যা সহজে ধরা যায় না।

"স্বাগতম আপনাদের," শান্ত কণ্ঠে বললেন আবু মিয়া, "দূর শহর থেকে কষ্ট করে এসেছেন। আশা করি আমাদের আতিথেয়তায় কোনো অসুবিধা হবে না।"

আবু মিয়ার স্ত্রী, নরম স্বভাবের এক মহিলা, চায়ের ব্যবস্থা করেন। ঘরের ভেতরে গিয়ে তারা দেখে, তাদের জন্য আগে থেকেই দুটি ঘর প্রস্তুত। ছেলেরা এক ঘরে—মেহেমেদ, সিহাব, আর ফাহিম। আর মেয়েরা—বর্ষা ও হুমায়রা, অন্য ঘরে।

বাড়িতে বেশি লোকজন নেই। আবু মিয়া, তার স্ত্রী, তাদের বিশ বছর বয়সী ছেলে—রাফি, আর একমাত্র মেয়ে—নাজমা, যার বয়স আঠারো। আরও আছেন একজন নীরব, গম্ভীর স্বভাবের কাজের মেয়ে, যিনি চোখে চোখ রাখেন না কারো।

রুমগুলোতে আলো-জ্বলার ব্যবস্থা নেই। শুধু একটি ছোট সৌর লাইট ঘরের মেঝেতে রাখা। সে আলোতে মুখের অবয়ব ঠিক বোঝা যায়, কিন্তু দেয়ালের কোণায় ছায়াগুলো কেমন অস্থির লাগে।

"রাতের খাবার তৈরি হচ্ছে," জানালেন আবু মিয়া, "খেয়ে নেবেন, তারপর কাল সকাল থেকে কাজ শুরু করতে পারেন।"

হাঁটতে হাঁটতে ওরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিল একটাই প্রশ্ন—কেন এই গ্রাম এত নিঃসঙ্গ, এত আলাদা? কেন এখানে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি? কেন এতো রহস্য?

তবে সেই উত্তর তখন কেউই খুঁজে পায়নি।

সন্ধ্যার বাতাসে কেমন যেন এক শীতলতা—নতুন জায়গার নয়, বরং পুরোনো কোনো বেদনার গন্ধ নিয়ে বইছিল। রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সকলে নিজেদের ঘরে ফিরে আসে। ছেলেরা এক রুমে, আর মেয়েরা অন্য রুমে। আবু মিয়া অতিথি আপ্যায়ন এ কোন ত্রুটি রাখলেন না। তবুও ক্লান্ত শরীরে তৃপ্তি লেগে ছিল সকলের।

ঘরে ফিরে পাঁচজন মিলে একটু পরিকল্পনা করে নিচ্ছিল আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া মেডিকেল ক্যাম্প নিয়ে। কে কোন কাজ সামলাবে, কোন ঘরটাকে ওষুধ রাখার জন্য ব্যবহার করা হবে, আর কীভাবে মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে—এসব নিয়ে আলোচনা চলছিল।

বাইরে তখন বেশ বাতাস। জানালা খোলা, পাতাগুলোর ফিসফাস আর মাটির ঘরের দেয়ালে বাতাসের চাপ—মনে হচ্ছিল রাতটা জড়াবে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতায়। আকাশে ঘন কালো মেঘ জমছে। কালবৈশাখীর সম্ভাবনা। আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়। তাদের কাছে বেশ লাগে।

ফাহিম চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে" এই রকম মাটির ঘর সাথে চা আর বৃষ্টি। জীবনে আর কি লাগে বলতো"

ঠিক তখনই দরজায় টোকা পড়ে। আবু মিয়া।

"ভেতরে আসতে পারি?"—তার কণ্ঠে চিরাচরিত ভদ্রতা।

সিহাব দরজা খুলে দেয়। আবু মিয়া এসে জিজ্ঞেস করেন, "সব ঠিক আছে তো? কিছু দরকার?"

মেহেমেদ জানায়, সবকিছু ঠিক আছে। তখন আবু মিয়া একটু থেমে বলেন,
"আপনাদের একটাই অনুরোধ, জানালাগুলো বন্ধ করে রাখবেন রাতে। আর কেউ যেন বাইরে না যায়। রাতে কারো ডাকে সারা দেবেন না। এই গ্রামের রাতটা... একটু অন্যরকম।"

তার কথায় একটা অদৃশ্য ছায়ার ইঙ্গিত ছিল। কিন্তু তিনি কিছু না বলেই দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেলেন।

ওরা সবাই মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে। সিহাব মজা করে নিচু গলায় বলে, "ভয়ের গল্প শুরু হয়ে গেল বুঝি?"

মেহেমেদ হেসে বলে, "লোকালয়ে তো এরকম কথাবার্তা থাকেই। বেশি পাত্তা দিও না।"

রাত গভীর হয়। একে একে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে।

---

হুমায়রা আর বর্ষার ঘরে নিস্তব্ধতা নেমে আসে। বাইরে বাতাস বাড়ছে। একটু পর পর ভারি বজ্রপাতের আওয়াজ।জানালার পর্দা মাঝে মাঝে একটু একটু করে দুলে ওঠে।

হঠাৎ বর্ষার ঘুম ভেঙে যায়।

সে বসে পড়ে। বুকটা যেন হঠাৎ ভারী হয়ে গেছে। অন্ধকারে ঘরের দিকে তাকায়। কিছু একটা অস্বাভাবিক অনুভব করে। হঠাৎ সে জানালার দিকে চোখ যায় তার।

আর তারপরই...

তার শরীরটা হিম হয়ে যায়। সে তার চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। একি তার ভ্রম নাকি কল্পনা।

জানালার পাশে, অন্ধকারে, একরাশ ছায়ার মতো কিছু দাঁড়িয়ে আছে। কালো অশরীরী ।গড়ন মানুষের মতো—কিন্তু মুখ, হাত, গঠন... সব যেন বিকৃত। তারা একসাথে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে। চোখ নেই, কিন্তু তাকানোটা অনুভব করা যায়। তারা যে বর্ষা কে তাদের সাথে নিয়ে যেতে এসেছে। তারা যেন কিছু বলতে চায়। তাদের ওই গভীর কালো চোখ যেন বর্ষা কে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তাদের কাছে

বর্ষা নড়তে পারে না। চিৎকার করতে চায়, কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বের হয় না। সে হুমায়রাকে ডাকতে গিয়ে বোবা হয়ে পড়ে।

আচমকা—

সে চিৎকার দিয়ে উঠে বসে। ঘামে ভিজে গেছে।

হুমায়রাও জেগে উঠে, "বর্ষা? কি হয়েছে?"

"আমি... আমি একটা দুঃস্বপ্ন দেখলাম।"

হুমায়রা পানি এগিয়ে দেয়। তখনই বর্ষার চোখ যায় জানালার দিকে।

আর সেখানে দাঁড়িয়ে নেই কেউ... তবে—

জানালা খোলা।

বর্ষা স্তব্ধ হয়ে যায়। মনে পড়ে যায়—সে নিজেই তো জানালাটা বন্ধ করে ঘুমিয়েছিল।

"হুমায়রা... আমি জানালাটা বন্ধ করেই ঘুমিয়েছিলাম... এটা খোলা কিভাবে হলো?"

সারাদিন নানা রকমের কথা বার্তা শুনেছো তাই এখন আজে বাজে স্বপ্ন দেখছো। বর্ষা কিছু বলে না। হুমায়রা চুপচাপ জানালাটা গিয়ে বন্ধ করে আসে।

ঘরের ভেতরে আবার নিস্তব্ধতা নামে। কিন্তু এবার সেটা ছিলো অনেক ভারী। যেন রাতের অন্ধকার ঘরের দেয়াল ছুঁয়ে ওদের মনেও ঢুকে পড়েছে। যেন পুরো ঘরটায় আছে কোন অশরীরীদের বিচরন। তারা যেন এই গ্ৰামের অতিথি দের নিরবে স্বাগতম জানাতে এসেছে।

ভোরের প্রথম আলো ফোটার আগেই মেহেমেদের ঘুম ভেঙে যায়। শরীরে ক্লান্তি থাকলেও তার ভেতরের কৌতূহল তাকে ঠেলে নিয়ে যায় বাইরের দিকে।

গতরাতে গা ছমছমে পথ পেরিয়ে গ্রামে আসার পর ঘর ছাড়া সে আর কিছুই দেখতে পায়নি। তাই সকালে সূর্য ওঠার আগেই সে একাই বেরিয়ে পড়ে গ্রামের পরিবেশটা একটু কাছ থেকে বুঝে নিতে।

গ্রামটা ছোট—তবে যেন ঘুমিয়ে আছে এখনো। কোথাও কোনো মানুষের সাড়া নেই। হালকা আলো ছড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু তার মধ্যেও একটা চাপা অন্ধকার রয়ে গেছে। সাধারণ গ্ৰামের পরিবেশ এই রকম থাকে না । গ্ৰামে ঘর তো আছে। তবে অনেক ঘরে দেখলে ঘরে মানুষ আছে বলে ঠিক মনে হয় না

চলবে '''''''''''''''''''''''''''''''

#মরা_গ্ৰামের_অতিথি
#গল্প #ভৌতিক

21/07/2025

In the silence of the old village tree, I found a thousand untold stories hidden in the bark and breeze... 🌳

30/06/2025

16/05/2025

🔍 যদি সত্যটাই আসলে গোপন রাখতে হতো?
একটি ছায়া নীরব দাঁড়িয়ে আছে। বাতাস ভারী।
কিছু একটা লুকিয়ে আছে... ঠিক মুখোশের আড়ালে।

🎬 BEHIND THE MASK

✍ Written & Directed by Saikhul ISLAM
📽️ Produced by: Nigar Sultana Bonna
🎨 Graphics Design by Tahsin Graphics

🕯 সব ছায়া আলো থেকে তৈরি হয় না...
কিছু ছায়া জন্ম নেয় আমরা যা লুকাতে চাই, তার ভিতর থেকে।

👇
📌 আপডেট, দৃশ্যের পেছনের গল্প এবং অফিসিয়াল ট্রেইলারের জন্য পেজটি লাইক ও ফলো করুন।

#আসছে_শিগগিরই

05/05/2025

Coming Soon

এক অদ্ভুত ঘ্রাণ... এক আতঙ্কের শুরু।

এক নতুন সাইকোলজিকাল থ্রিলার
“ঘ্রাণ”
পরিচালনা এবং সম্পাদনায় : Saikhul ISLAM
গ্রাফিকস : Tahsin Graphics

শিগগিরই আসছে শুধুমাত্র FILM MICTICO YouTube চ্যানেলে

#ঘ্রাণ #ঘ্রাণTheFilm

16/04/2025

💝💖

13/04/2025

নিঃসঙ্গতা, স্মৃতি আর এক ভিন্ন বৈশাখের গল্প…
"একলা বৈশাখ" আসছে কাল ।
প্রতিটি মুহূর্ত ছুঁয়ে যাবে মনকে।

শুধুমাত্র Film Mistico ইউটিউব চ্যানেলে!
লিংক কমেন্টে — দেখে নিও, অনুভব করো

14/03/2025

Coming Soon channel link in comment 🖇️

12/03/2025

🌸 **বসন্তের ছোঁয়ায় প্রকৃতির নতুন জাগরণ, রঙে রঙে ভরে উঠুক হৃদয়ের আঙিনা!** 🌿✨

Face: Mehedi Hasan Miad
Framed by: Saikhul Islam Hesam
Saikhul ISLAM | March | 2025

"Capture your moments in stunning detail! Reach out to book our photography & cinematography services today!"

Drop a message for more details or Connect to us by
via whatsapp : 01834969225



#বসন্তেররং 🌸 #প্রকৃতিরজাগরণ 🍃 #ফুলেরমেলা 🌼 #রঙিনবিশ্ব 🌿

11/03/2025

বাবার পথ অনুসরণ ☺️