আমতলী বরগুনা জেলার অর্ন্তগত একটি উপজেলা। এ উপজেলার উত্তরে পটুয়াখালী সদর উপজেলা, দক্ষিণ পশ্চিমে তালতলী উপজেলা ও বঙ্গোপসাগর, পূর্বে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলাও কলাপাড়া উপজেলা এবং পশ্চিমে বুড়ীশ্বর বা পায়রা নদী।
লোকশ্রুতি আছে যে, সুদূর অতীতকালে পায়রা নদীর তীরে বহু আম গাছ ছিল। মাঝিরা তাদের নৌকা বাঁধত সেই আম গাছের সাথে। নৌকা বাঁধার স্থানটি কালে কালে হয়ে যায় আমতলা থেকে আমতলী।
অন্যদিকে, পায়রা নদীর
একটি প্রবাহ আমতলী বন্দরের পূর্ব দিক দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে আমতলী নদী প্রবাহিত হয়েছিল। নৌযান চলাচল মুখরিত আমতলী নদীর তীরে পাঠান আমলে গড়ে ওঠেছিল জনবসতি ও বাণিজ্যিকেন্দ্র। মোগল যুগে পায়রা নদীতে মগ, পর্তুগীজদের লুণ্ঠন ও অত্যাচার বেড়ে গেলে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ আমতলী নদীই ছিল একমাত্র ভরসা। এ নদীর নাম অনুসারে এলাকার নাম হতে পারে আমতলী।
আবার, অতীতে আমতলী যখন অরণ্য আচ্ছাদিত হয়ে দুর্গম এলাকা হিসেবে ছিল তখন আরকান থেকে আগত জনৈক আমপাটি নামক মগ দলপতি ইংরেজি সরকার থেকে ইজরা নিয়ে আমতলী প্রথম আবাদ শুরু করে ছিলেন। সম্ভবতঃ আমপারিট মগের নাম অনুসারেও এলকায় নাম আমতলী হতে পারে।
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় মুসলিম আধিপত্য বিস্তারকালে রাজা দনুজমর্দন কর্তৃক ‘‘চন্দ্রদ্বীপ’’ নামে একটি সাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। দতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত এ অঞ্চল চন্দ্রদ্বীপ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। অতি প্রাচীন বৈদেশিক মানচিত্রে চন্দ্রদ্বীপ নাম বড় অক্ষরে অঙ্কিত দেখা যায়। ১৭৯৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ জেলা বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে ১৭৯৭ ঢাকা জেলার দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে বাকেরগঞ্জ, ১৮০১ বাকেরগঞ্জ জেলাকে বরিশালে (গিরদে বন্দর) স্থানান্তরিত করা হয়।
১৮১২ সালে এ জেলায় ১৫ টি থানা ছিল। পাকিস্তান আমলে বরিশাল জেলায় মোট ০৬ টি মহকুমা ছিল । ১৯৬৯ সালে পটুয়াখালী ও বরগুনা মহাকুমার সমনয়ে পটুয়াখালীতে একটি জেলা গঠন করা হয়। পরবর্তীতে প্রশাসনিক পূনর্বিন্যাসের ফলে ১৯৮৪ সালে বরগুনা একটি নতুন জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। জেলাগুলো হলো- বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী।
১৮৫৯ সালে বর্তমানে আমতলী, বরগুনা ও কলাপাড়াকে নিয়ে গুলিশাখালী থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। সদর দপ্তর স্থাপন করা হয় পায়রা নদীর পাড়ে গুলিশাখালী গ্রামে। ১৮৭১ সালে পটুয়াখালীকে মহকুমায় রূপান্তর করা হলে গুলিশাখালীকে তার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯০১ সালে নদী ভাঙ্গণের কারণে থানা সদর বর্তমান আমতলী এ, কে, স্কুল সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৪৪ সালে গুলিশাখালী আমতলী থানায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৮২ সালে আমতলী থানা উপজেলায় রূপলাভ করে।
প্রশাসনিক এলাকা[সম্পাদনা]
আমতলী উপজেলায় ১টি পৌরসভা, ৭টি ইউনিয়ন, ৬৬টি মৌজা ও প্রায় ২০০টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এর আয়তন প্রায় ৬৯৫ বর্গ কিলোমিটার তন্মধ্যে জলাশয় ও প্রশস্ত নদী প্রায় ২১২ বর্গ কিলোমিটার।
আমতলী উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম আমতলী থানার আওতাধীন।
পৌরসভা:
আমতলী
ইউনিয়নসমূহ:
১নং গুলিশাখালী
২নং কুকুয়া
৩নং আঠারগাছিয়া
৪নং হলদিয়া
৫নং চাওড়া
৬নং আমতলী
৭নং আড়পাঙ্গাশিয়া
জনসংখ্যার উপাত্ত[সম্পাদনা]
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী আমতলী উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২,৭০,৮০২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,৩২,১৬৮ জন এবং মহিলা ১,৩৮,৬৩৪ জন। মোট পরিবার ৬৩,২১২টি।[২]
শিক্ষা[সম্পাদনা]
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী আমতলী উপজেলার সাক্ষরতার হার ৫২.৮%।[২]
এ উপজেলায় রয়েছে:
সরকারী কলেজ: ১ টি
ডিগ্রী কলেজঃ ৩টি
উচ্চ মাধ্যমিক কলেজঃ ৪টি
কারিগরী কলেজঃ ১টি
কৃষি কলেজ : ১ টি
সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় : ১ টি
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ঃ ৩৪টি
জুনিয়র বিদ্যালয়ঃ ৩২টি
সিনিয়র মাদ্রাসাঃ ৪টি
আলিম মাদ্রাসাঃ ৬টি
দাখিল মাদ্রাসাঃ ৩০টি
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ ১০১টি
বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ ১২৫টি
কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ ১৬টি
এবদেতায়ী মাদ্রাসাঃ ৪৩টি
দর্শনীয় স্থান[সম্পাদনা]
গাজী কালুর দরগাহ
চাওড়া মাটির দুর্গ
ফকিরখালী গ্রামের দীঘি ও মাটির টিলা
পায়রা নদীর পাড়
কৃতী ব্যক্তিত্ব[সম্পাদনা]
হযরত শাহ্সুফী খাজা ফয়জুদ্দীন রহঃ
হযরত শাহ্সুফী খাজা নাছের আলী রহঃ
মফিজ উদ্দিন তালুকদার - সাবেক এমপি ও শিক্ষাবিদ ;
মতিউর রহমান তালুকদার - সাবেক এমপি।
হযরত মাওলানা শাহ আবুল খায়ের মুহাম্মদ ইসমাইল
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "এক নজরে আমতলী উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
↑ ঝাঁপ দাও: ক খ "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (PDF)। web.archive.org। Wayback Machine। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৯।