08/06/2023
১০ বছরের জেল
পার্ট :১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮
প্রায় ১০বছর পর জেল থেকে বের হয়ে আজ বাড়িতে পা রাখলাম... সেই ১৬বছর বয়সে আপন দোলাভাইকে খুন করার অপরাধে জেলে গিয়েছিলাম...
বাড়ির সামনে আসতেই একদম অবাক হয়ে গেছি..পুরো বাড়িটা সাজানো আছে বিভিন্ন রকমের বাতি আর ফুল দিয়ে.. গেইটের সাজানো দেখে বুঝলাম বড় কোনো অনুষ্টান আছে কিন্তু কিসের অনুষ্টান... আপু ত দুই দিন আগেই আমার সাথে দেখা করেছিল তাহলে সেদিন সে কেন বলে নাই আমাকে এই কথা...
ভিতরে যাবো কি নাহ ভাবছিলাম গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে তখন পিছন থেকে কেউ একজন আমাকে ধাক্কা দিল...
- কি মশায় কি চাই এখানে?(১৪-১৬ বছরের একটা যুবক ছেলে বলল কথাটা)
আমি- আজ এখানে কিসের অনুষ্টান?
ছেলে- আমার ছোট খালামনি নিহার বিয়ে...
ছেলেটার মুখে এমন একটা নিউজ শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম...
ছেলে- তা আপনি কে আর এখানে কি চান?
আমি- আমাকে তুমি চিনবে নাহ তোমার খালামনিকে গিয়ে বলও তার কলিজা আজ ছাড়া পেয়েছে...
ছেলে- মানে কি?
আমি- যা বলছি তাই কর....
ছেলে- আম্মু আম্মু.... নানা ভাই..
বলে চিৎকার করতে করতে বাড়ির ভিতর গেল.
মিনিট খানেক পর পরিবারের সবাই এখানে হাজির শুধু ছেলেটার খালামনি ছাড়া.
বাড়ির কর্তা মানে আমার বাবা রায়হান সাহেব আমাকে দেখতেই রেগে বলে উঠলেন
- এখানে কি চাই?
আমি- তোমাদের দেখতে এসেছি বাবা.
বাবা- আপনিকে আপনাকে ত আমি চিনলাম নাহ...
আমি- আমি এই পরিবারের সন্তান...
- এই পরিবারের সন্তান আজ থেকে দশ বছর আগে মারা গেছে, (আম্মুর মুখে এত বড় একটা কথা শুনে আমার চোখের বাধ যেন আর মানছেই নাহ)
আমি- তোমাদের সবার মনে আমার জন্য এখনও অনেক রাগ জমে আছে...
- রাগ ত তার উপর করা যায় যে বেঁচে আছে মরা মানুষের উপর আবার কিসের রাগ(কথাটা বললেন আমার বড় আপু নিলা)
আব্বু- আপনি এখন এখান থেকে যেতে পারেন, বর যাত্রী আসার সময় হয়ে গেছে, ওরা এখানে আপনার মত খুনিকে দেখলে বিয়ে ভেঙে দিবে...
আমি- জী অব্যশই চলে যাব তার আগে আমি আমার কলিজার টুকরার সাথে একবার দেখা করতে চাই...
আম্মু- কার সাথে?
আমি- নিহার সাথে দেখা করতে চাই...
নিলা আপু- সে এখন দেখা করতে পারবে নাহ...
আব্বু- আপনি এখান থেকে ভালোয় ভালোয় যাবেন না কি আমি লোক ডাকব.
আমি- ডাকতে হবে নাহ আমি নিজেই চলে যাচ্ছি...
বলে চোখের জল মোছতে মোছতে বাড়ি থেকে বের হতে লাগলাম...
বাড়ির গেইট পেরিয়ে যেতেই নিহা আসল সেখানে..
নিহা- আম্মু কে আসছিল?
আম্মু- জানি নাহ কে আসছিল...লুকিয়ে চোখের জলটা মোছে বললেন..
নিহা- কে আসছিল আপু..?
নিলা- শুনলি নাহ আম্মু কি বলল? আমরা কেউ জানি নাহ কে আসছিল?
নিহা সবাইকে জিজ্ঞেস করল কেউ উত্তর দিল নাহ...
তখন শেষ মেষ নিলা আপুর ছেলে অনিকে জিজ্ঞেস করল.
অনিক- কথা শুনে বুঝতে পারলাম সে যেই হোক না কেন এই বাড়ির কোনো সদস্য.
নিহা- তকে কি কিছু বলেছিল?
অনিক- প্রথমে আমি যখন তাকে গেইটের সামনে দেখি তখন বলেছিল তোমাকে গিয়ে বলতে তোমার কলিজা আজ জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে...
নিহা চোখে টলমল জল আর মুখে হাল্কা হাসি নিয়ে ছোট করে বলল ভাই...
অনিক- আম্মু নানা ভাই নানু সবাই মিলে তাকে তাড়িয়ে দিল কেন?
নিহা- সে কোন দিকে গেছে?
অনিক- এই ত একটু আগে ডান দিকে গেল...
অনিকের কথা শেষ হতেই নিহা এক দৌড়ে গেইটের কাছে চলে যায়...
তখন পিছন থেকে আব্বু ডাক দিয়ে বললেন-
এখানে কি করছ বরযাত্রী আসার সময় হয়ে গেছে।
নিহা- ভাইকে তোমরা তাড়িয়ে দিলে কেন? (চোখে টলমল পানি নিয়ে অভিমানি সুরে বলল কথাটা)
আব্বু- কে ভাই কার ভাই, তুমি জানও নাহ তোমার ভাই আজ থেকে দশ বছর আগে মারা গেছে.
নিহা- হুম মারা গেছে তোমাদের জন্য হতে পারে। কিন্তু আমার জন্য আমার ভাই এখনও বেঁচে আছে।
নিহার মুখে এমন কথা শুনে আব্বু তার কাছে এসে তাকে কসে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললেন..
- বেশ তর্ক শিখে গেছিস... চুপ চাপ রুমে গিয়ে এখনী রেডী হ একটু পরেই বরযাত্রী আসবে।
নিহা- আমি কবুল বলার সময় আমার ভাই আমার সামনে না তাকলে কবুলের ১০সেকেন্ড পর আমি বিশ খাব.. এখন আমি জানি নাহ তোমরা কিভাবে আমার ভাইকে আমার সামনে নিয়ে আসবে।
বলে গাল ফুলিয়ে চলে যায় নিহা সেখান থেকে সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল...
এদিকে আমি হাটছিলাম নতুন কোনো ঠিকানার উদ্দেশ্যে...ফুতপাত দিয়ে হাট হাটতে শহরের মধ্যবৃন্দুতে একটা বেঞ্চে এসে বসলাম...
তখন কয়েকটা গাড়ি এসে আমার সামনে থামল.
দেখে লাগছে এটা কোনো বিয়ের বাড়িতে যাবে হয় তো...
কিন্তু এখানে এসে কেন থামল..
তখন দেখি একটা গাড়ির টায়ার পান্সার হয়েছে। যে গাড়িটা নষ্ট হয়েছে সেটাকে রেখে সব গাড়ি চলে গেল... ড্রাইভার টায়ার চেঞ্জ করছিল... খুব গরম ও ছিল তাই গাড়িতে থাকা সবাই বের হয়ে গেছে...
প্রায় দশ থেকে বারো জন তাদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা বেশি আমি এক সাথে এতগুলা মেয়েদের দেখে সেখান থেকে উঠে গেলাম...
ফুতপাথে আরও মানুষ জনও হাটছিল সবার ভীড়ে কাটিয়ে যাওয়ার সময় অনিচ্ছা শর্তে একটা মেয়ের বুকের সাথে আমার হাতটা লেগে গেল...
আমি- সরি সরি...
মেয়ে- বেয়াদবের বাচ্চা...
আমি- গালি দিলেন কেন?
মেয়ে- লুচ্চামি করতাছিস ত করতাছিস তর উপর বড় গলা, দাড়া দেখাচ্ছি মজা।
বলে চিৎকার চেচামেছি করে মেয়েটা সেখানে অনেক গুলা মানুষের ভীড় জুড়ো করল...
মেয়ে- এদের মত লুচ্চাদের জন্য আজ মেয়েরা স্বাধীন ভাবে চলা ফেরা করতে পারে নাহ।
আমি- আমি দেখি নাই সরি বললাম ত
মেয়ে- প্রথমে ইচ্ছা করে আমার সাথে লুচ্চামি করেছে আর এখন আপনাদের দেখে সরি বলতাছে আপনারাই বলেন এর কি করা যায়...
তখন ভীড় থেকে একটা লোক বলে উঠল মারও শালা বদমাইশ বেটাকে,,, লোকটার কথা শুনতেই আমার কথায় কেউ কানে না নিয়ে ঝাপিয়ে পরল আমার উপর...
কারো ঘুষি আর কারো লাত্তি খেয়ে পরে গেলাম মাটিতে সবাই মিলে আমাকে গণধুলাই দিল প্রায় দশ মিনিট...
আমাকে আদ মরা বানিয়ে সবাই চলে গেল.
রক্তাত অবস্থায় পরে রইলাম আমি মাঝ রাস্তায়...
এদিকে মেয়েটার গাড়ি টিক হতেই সে চলে যায়...
যতক্ষন জ্ঞান ছিল আমার দেখলাম একটা বিশাল ট্রাক খুব দ্রুত গতিতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে...শরীরে একটুও শক্তি নাই সেখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য...............