23/09/2023
আমাদের সবার একটা গোপন সুইসাইড নোট থাকে।
আমি নিজে দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি। এমন না যে জীবন সহজ। কাছের মানুষ বুঝবেই না। মা বাবার সাথে অনেক অভিমান। বন্ধুরা ভুল বুঝে বসে আছে। বাইরের মানুষ ব্যর্থতার জন্য কথা শোনাচ্ছে। একলা রুমে দরজা বন্ধ করে কাঁদা হয় কত!
তারপর কথা বলেছি করুনাময়ের সাথে। জায়নামাজে বসে সব অকপটে বলা হয়েছে আমার। লুকানোর কিছু নেই। আমার রিজিক, সম্মান, ভালো থাকা, মন্দ থাকা সব সে ঠিক করুক। আমার জীবন শুধুই কী আমার?
মা অসুস্থ হয়েও ছেলের পছন্দের খাবারটা রান্না করেছেন। বাবা বুকের ভেতর পুষে রাখা রাগ ছুড়ে ফেলে ছেলেকে জড়িয়ে ধরবেন বলে ঠিক করেছেন। বন্ধুদের সাথে আড্ডা পাওনা হয়ে আছে। কীভাবে সম্ভব লাশ হয়ে তাদের সামনে হাজির হওয়াটা?
বিজয় একাত্তর হলের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ফিরোজ নামের একটি ছেলে। মৃত্যুর আগে সুইসাইড নোট লিখে গেছে। বন্ধুদের পাওনা পরিশোধ করবার চেষ্টা করেছে। প্রেম ছিলো তার। মেয়ে সম্পর্কে থাকবেনা এই কথা জানানোতে কষ্ট পেয়েছে। জন্ম দিয়েছেন যেই মা সে বারবার হাত জোড় করে বলেছিলেন,'বাবা ফিরোজ, ভুলভাল কিছু করবিনা। আমারে কথা দে।' ছেলে কথা রাখেনি। মায়ের বুক খালি করেছে। মা বিলাপ করেন আর ফিরোজকে ডাকেন। মেয়েটা দিব্যি ভালো আছে। থাকবে না কেন? যে কেউ যে কোন সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। সেই ভালো। কাউকে জোর করে আটকে রাখা যায়না। তাতে সর্বনাশ। সময়ের সাথে সাথে পৃথিবীর সকল ক্ষত শুকিয়ে যায়। ব্যথা ভুলে যাবার কষ্টটা কঠিন আমি জানি ফিরোজ। কিন্তু কঠিন বলেই তো জীবন সুন্দর। এই পরীক্ষা আমাদের দিতেই হয়, হবে। ছাদ থেকে লাফ দেবার আগে একবার বাবার বিষন্ন মুখটার কথা ভাবা গেলোনা। কীভাবে ছেলের নিথর দেহটা বুকে জড়াবেন তিনি। এই আকাশ, বাতাস, টং দোকানের চা, বৃষ্টি, পাতার বাঁশি, পাখিদের কোলাহল সব ফিকে হয়ে গেল একটা মানুষ ফিরিয়ে দিলো বলে?
ফিরোজ বাঁচতে হয়। বেঁচে থাকাটাই সুন্দর। কেউ ছুড়ে ফেলে দিতে চাইলে তার দিকে তাকিয়ে একবার হাসি দিয়ে জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেতে হয়। জীবন সুন্দর। ভালো থাকায় কিংবা সংগ্রামে জীবন সত্যি সুন্দর। একটু নিজের কথা ভাবা দরকার। নিজের জন্য সময় বের করা দরকার। যে মানুষ অবহেলা করলো তার কথা ভেবে অভিমান না করে যারা কাছে টেনে নিলো তাদের কথা ভেবে বাঁচা দরকার। আসুন আমরা বাঁচি। বেঁচে থাকা আনন্দের। ভীষন আনন্দের।
ছবি: সংগ্রহ