
25/08/2022
আম্মার একক ইচ্ছায় আমার মেজো ভাইয়া সিলেট ক্যাডেট কলেজে পড়েছেন। ফৌজি লাইফ আম্মার খুব পছন্দ ছিল। গায়ের রংয়ের দিক থেকে ভাইয়া ছিলেন অপেক্ষাকৃত কালো। আমার নানা প্রফেসর একিউএম সিদ্দিকী সাহেব আম্মাকে বলেছিলেন তাঁর এই ব্ল্যাক ডায়মন্ড নাতি একদিন জেনারেল হবে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিন আকবর, ষোলতম লংকোর্স, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন যোগ্যতম সৈনিক হিসেবে নিজের ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টেনেছেন। যতটুকু জানি তিনি চিটাগং ক্যান্টনমেন্টের পাপা টাইগার হিসেবেই শেষ কর্মপ্রক্রিয়া শেষ করেছেন।
মেজো ভাইয়ার ডাক নাম লিটু। স্বল্পভাষী শান্ত প্রকৃতির মানুষ। দেশে কিংবা ইউএন মিশনের বর্ণাঢ্য সামরিক ক্যারিয়ারে কখনোই উচ্চাভিলাষী হননি। সরকারের দেয়া রেশন আর নিয়ম কানুনের মধ্যেই পার করেছেন দায়িত্বশীল এক দীর্ঘ ইনিংস। তিনি তাঁর বাহিনীর ব্যাপারে কোনদিনও আমাদের সাথে শেয়ার করেন নি। এদিক থেকে অবশ্য আমরা ভাইয়েরা যথেষ্ট প্রফেশনাল। ভাইয়া তরুন বয়সে আর্মীতে গিয়েছেন আব্বার উপর থেকে সংসারের চাপ কমাতে। মেধাবী এই মানুষটি আরো রিচ ক্যারিয়ার গড়তে পারতেন অন্য পেশায়। অপেক্ষা করেন নি, ত্যাগ স্বীকার করেছেন সংসারের জন্য। সারাজীবন লেফট রাইটে সহি শুদ্ধ সৎ ঈমানদার জীবন কাটিয়েছেন। সাধারন রেশনেই অভ্যস্ত ছিলেন তিনি, বিলাসিতার ধার ধারেন নি কখনো। একটা ভাল গাড়ীই কিনতে পারেননি নিজের জন্য।
এতোদিন সেনাবাহিনীর অফিসার ছিলেন তাই ভাইয়ার সাথে কাউকে পরিচয় করিয়ে দেইনি, উনার পছন্দ নয়। একটা পর্যায়ে আমার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারনে তাঁর ক্যান্টনমেন্টের বাসায়ও যেতাম না, ভাইয়ের সাথে দেখাও হয়না। এমনিতেই আমার একগুঁয়ে চলাচলের উপর যথেষ্ট বিরক্ত তিনি, আজকের পোস্ট চোখে পরলে হয়তো আর কখনোই যোগাযোগ রাখবেন না। ভাইয়া ছিলেন কমান্ডো ইন্সট্রাক্টর, তিনি একবার এমনিতেই বলেছিলেন - কমান্ডোরা কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করেনা। আমিও তাঁর একজন কমান্ডো, আমি আমার ভাইয়াকে অনেক ভালবাসি। ছোটবেলা থেকে এতোই দূরত্ব ছিলো যে মানুষটাকে বলাই হয়নি- তিনি আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব। আমার সারাজীবনের সেরা আইকন আমার লিটু ভাইয়া। আমার উপর রাগ করার জন্যই পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টি, এটা জন্ম থেকেই জানি। আজ লিটু ভাইয়ার জন্মদিন। এমন একজন ভাইয়ের জন্য হাসতে হাসতে জীবন দেয়া যায় বিনা বাক্য ব্যয়ে। জেনারেল আমিন আকবরকে ভালবাসতে গেলে তখন প্রোটোকল ছিল, লিটু ভাইয়াকে ভালবাসতে আর কোন বাঁধা নেই। সবার কাছে এই মহান মানুষটির জন্য দোয়া চাই, উনার কাছে আমার সমস্ত ভুলের জন্য ক্ষমা চাই।
শুভ জন্মদিন ভাইয়া, অনেক কষ্ট করেছেন আমাদের জন্য। নিজের মত আনন্দে বাঁচুন বাকীটা জীবন।
ভালবাসা অবিরাম…