জামিয়া আশরাফিয়া জান্নাতুল বাক্বী বরগুনা Jamia Ashrafia Jannatul Baqi

  • Home
  • Bangladesh
  • Barishal
  • জামিয়া আশরাফিয়া জান্নাতুল বাক্বী বরগুনা Jamia Ashrafia Jannatul Baqi

জামিয়া আশরাফিয়া জান্নাতুল বাক্বী বরগুনা  Jamia Ashrafia Jannatul Baqi Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from জামিয়া আশরাফিয়া জান্নাতুল বাক্বী বরগুনা Jamia Ashrafia Jannatul Baqi, Digital creator, Barishal.

বাইতুল আক্‌সা সড়ক,ক্রোক,বরগুনা
আরবী প্রথম জামাত থেকে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পর্যন্ত ভর্তি চলছে। দ্বীনি যে কোন প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন।অত্র মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক,আরেফ বিল্লাহ হযরত মাওলানা মুফতী গোলাম মাওলা জাহিদ কাসেমী, 01712628741--01721365137

সুন্দর একটি কিতাব
26/07/2025

সুন্দর একটি কিতাব

25/07/2025
দোয়া অনুষ্ঠান
25/07/2025

দোয়া অনুষ্ঠান

আহ্ আহ্ আহ্ সময়!
19/07/2025

আহ্ আহ্ আহ্ সময়!

🥀🌹কুরআন সুন্নাহ তথা ইলমে ওহীর আলো পৃথিবীময় ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয়ে বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দের অনুকরনে ...
19/07/2025

🥀🌹কুরআন সুন্নাহ তথা ইলমে ওহীর আলো পৃথিবীময় ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয়ে বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দের অনুকরনে যে সকল দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এদেশে মুসলমানদের তাহযীব তামাদ্দুন ইসলামী চিন্তা চেতনা জাগিয়ে তুলতে ভূমিকা পালন করে আসছে। জামিয়া আশরাফিয়া জান্নাতুল বাক্বী বরগুনা Jamia Ashrafia Jannatul Baqi মাদরাসা সেই ধারাবাহিকতারই এক অনন্য দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বেসরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি বিগত দেড় যুগ যাবৎ কেবলমাত্র ধর্মপ্রান মুসলমানদের দোয়া ও সার্বিক সাহায্য সহযোগিতায় মুসলমানদের সন্তানদেরকে ধর্মীয় ভাবধারায় বহুমুখী যোগ্য গড়ে তোলাসহ ইসলামি শিক্ষার প্রচার প্রসারে ঐতিহ্যবাহি এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীয় পরিচয় লাভ করে প্রসংশনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে।

🌹১৪২৫ হিজরী মোতাবেক ২০০৫ ইং সনের শুরুর দিকে তদানিন্তন বরগুনা পৌরসভা ও তার পার্শবর্তী এলাকায় কোন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় অত্র এলাকায় দিন দিন ধর্মীয় মূল্যবোধ হ্রাস পেতে থাকে। তাই মুসলিম সন্তানদেরকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত এবং নববী আদর্শে আদর্শবান করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্য হাকীম মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল হক সাহেব রহঃ বরিশালী (সাবেক শিক্ষক Darul Uloom Mueenul Islam দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী এর অনুপ্রেরণায় শাইখুল হাদীস মুফতি গোলাম মাওলা জাহিদ কাসেমী দাঃবাঃ মুরুব্বিদের তত্ত্বাবধায়নে বিশেষভাবে তার মা-বাবা ও বড়ভাই মাওলানা ইদ্রিসুল আলম দাঃবাঃ, হাফেজ মুজাম্মেল হক দাঃবাঃ এদের উদ্দিপনা ও অক্লান্ত পরিশ্রমে একটি মক্তব ও হেফজখানা চালু করেন। পরবর্তীতে শাইখুল হাদীস আল্লামা শাহ্ আবদুল মতিন বিন হোসাইন দাঃবাঃ এর কদমের বরকত ও শাইখুল হাদীস আল্লামা মুফতি নজরুল ইসলাম কাসেমী দাঃবাঃ এর পৃষ্ঠপোষকতায়, হযরতওয়ালারই সুযোগ্য খলিফা শাইখুল হাদীস মুফতি গোলাম মাওলা জাহিদ কাসেমী দাঃবাঃ এর সুদক্ষ পরিচালনায় আজ জামিয়া আশ্রাফিয়া জান্নাতুল বাক্বি মাদ্রাসা বর্তমানে দাওরায়ে হাদীস (মাষ্টার্স) পর্যন্ত দেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।

🔴এক নজরে জামিয়া
নামঃ- জামিয়া আশ্‌রাফিয়া জান্নাতুল বাক্বী বরগুনা। ঠিকানাঃ- বাইতুল আকসা সড়ক, ক্রোক, বরগুনা।

🔴আদর্শ
জামিয়া আশ্‌রাফিয়া জান্নাতুল বাক্বী বরগুনা,বিশ্ব-বিখ্যাত মাদারে ইলমি দারুল উলুম দেওবন্দের সিলেবাসভুক্ত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আদর্শ ভিত্তিক একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

🔴লক্ষ্য-উদ্দেশ্য
ক) ইসলামি জ্ঞান ভান্ডার সংরক্ষন ও ব্যাপক প্রচার প্রসার যার মাধ্যমে আল্লাহ তা'য়ালার বিধানাবলি ও সুন্নাতে নববী প্রতিষ্ঠার লক্ষে নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা দীক্ষার মাধ্যমে দূরদর্শী হক্কানী আলেম তৈরি করা এবং তাদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশ-জাতি ও বিশ্ব সেবায় নিয়োজিত হওয়ার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা।
খ) আহ্‌লে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা-বিশ্বাস অনুযায়ী হাদীস, আছার ও ফিকহে হানাফীর সংরক্ষন এবং দেওবন্দী সিলেবাস মোতাবেক শিক্ষা-দীক্ষার যথাযথ বাস্তবায়ন।

🔴জামিয়ার শিক্ষাধারা
জামিয়া আশ্রাফিয়া জান্নাতুল বাক্বী মাদ্রাসা গতানুগতিক কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। সূদুর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এ জামিয়া সাজিয়েছে তার পাঠ পদ্ধতি ও শিক্ষা সিলেবাস। এখানে শিশু শ্রেণী থেকে দ্বীনি শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদীস (মাষ্টার্স) সমমান পর্যন্ত ডিগ্রী অর্জনের নিমিত্তে বেশ কয়েকটি অনুষদ বিদ্যমান। সেখানে অধ্যায়ন ও গবেষণার বিপুল সুযোগ সুবিধা রয়েছে। যেন জাতিকে যোগ্যতা সম্পন্ন আলেম উপহার দেয়া যায়।

🔴তরবিয়ত
১। প্রত্যেক সোমবার বাদ যোহর ছাত্রদের ইসলাহী তরবিয়তী মজলিস হয়। এই মজলিসে ছাত্রদেরকে চরিত্র গঠন ও অভিষ্ট লক্ষ অর্জনে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। বুযুর্গানে দ্বীনের মালফুযাত ও ঘটনাবলি শুনানো হয়। এ উপলক্ষে অনেক সময় মেহমান হিসেবে মুরুব্বিদেরকে দাওয়াত করে আনা হয়।
২। ছাত্রদেরকে আজান একামত ও নামাজের আমলি মশ্‌ক করানো হয়।
৩। দৈনিক বাদ আসর পর্যায়ক্রমে ফাজায়েলে আমল ও ফাজায়েলে সাদাকাত থেকে তালীম হয় এছাড়াও পর্যায়ক্রমে সুন্নাতের আমলী মশ্‌ক হয়।
৪। বাদ মাগরিব ও বাদ ফজর সূরায়ে ওয়াকিয়া, সূরায়ে ইয়াসীন, সূরায়ে এখলাস, সূরায়ে ফালাক, সূরায়ে নাস, আয়াতুল কুরসী, সূরা হাশরের শেষ ৩ আয়াতসহ আদইয়ায়ে মাসনুনার আমল হয়।
৫। সালাতুত্ তাস্‌বীহ জুময়ার দিনের সুন্নাত, খাওয়ার সুন্নাত, ঘুমানোর সুন্নাত, জুমার দিন মাগরিবের পূর্বে বিশেষ দোয়া ইত্যাদি সুন্নাতের আমল মশ্‌ক হয়।

🔴ইসলাহি জলসাঃ
প্রত্যেক ইংরেজী মাসের শেষ শুক্রবার আম মুসলিম উম্মাহ ও ছাত্র শিক্ষকের আত্মশুদ্ধির জন্য জামিয়ার ক্যাম্পাসে এসলাহি জলসা অনুষ্ঠিত হয়। এরদ্বারা উম্মাত আত্মশুদ্ধির সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করার সুযোগ পায়।

🔴ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
১। আসাতিযায়ে কেরামের জন্য মানসম্মত আবাসিক ভবন নির্মাণ করা।
২। ইফতা বিভাগ চালু করা।
৩। উলুমুল হাদীস বিভাগ চালু করা।
৪। দাওয়াহ বিভাগ চালু করা।
৫। বাংলা সাহিত্য ও গবেষণা বিভাগ চালু করা।
৬। মাদ্রাসার জন্য আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করা।
৭। বয়স্ক শিক্ষা চালু করা

🔴জামিয়ার বৈশিষ্ট্য ও অবদান
রাজনীতি মুক্ত অত্র জামিয়া দেশের আনাচে কানাচে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে অনন্য ভূমিকা পালনের সুবাদে ইতিমধ্যে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। সত্য বলতে কি! দোচালা একটি টিনের ঘর তথা নুরাণী মাদ্রাসাকে কঠোর পরিশ্রম, অক্লান্ত সাধনা ও জীবনের সবকিছু উজার করে দিয়ে আজ এত বড় সু-বিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন যিনি। তিনি এই জামিয়ার সম্মানিত মুহ্তামীম মহান শিক্ষাবীদ একনিষ্ঠ জ্ঞান তাপস শাইখুল হাদীস মুফতি গোলাম মাওলা জাহিদ কাসেমী দাঃবাঃ। তার আসাধারণ প্রজ্ঞা, দক্ষতা ও বিচক্ষণতার বদৌলতে জামিয়া আশ্‌রাফিয়া জান্নাতুল বাক্বী মাদরাসা"المدرسة الجنةالباقيه আজ আলেম-ওলামা ও শিক্ষার্থীদের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
🤲দোয়া।
আল্লাহ পাক এ মহান কর্মবীর আমাদের প্রাণ প্রিয় শায়খকে দীর্ঘায়ু করুক এবং তার দক্ষ পরিচালনায় জামিয়া আশ্রাফিয়া জান্নাতুল বাক্বী মাদ্রাসা ও এর আওতাভুক্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ফুলে ফুলে সুবাসিত করুক। আমিন।

Muhammad Abul Hasan
#জান্নাতুলবাকী
#মাদ্রাসা
#জামিয়া

#বরগুনা

সব কাজে সাবধান থাকা চাই
04/07/2025

সব কাজে সাবধান থাকা চাই

আপনার শরীক হ‌ওয়া হতে পারে জান্নাতে যাওয়ার ওসিলা
03/06/2025

আপনার শরীক হ‌ওয়া হতে পারে জান্নাতে যাওয়ার ওসিলা

আমলেই জান্নাত
01/06/2025

আমলেই জান্নাত

জিলহজ মাসের আমল
আসমান-যমীনের সৃষ্টি অবধি আল্লাহ তাআলা বছরকে বার মাসে বিভক্ত করেছেন। এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে এটিই আল্লাহর নিয়ম। এর মধ্য থেকে আল্লাহ চারটি মাসকে করেছেন সম্মানিত ও মহিমান্বিত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِیْ كِتٰبِ اللهِ یَوْمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ مِنْهَاۤ اَرْبَعَةٌ حُرُمٌ.

আল্লাহ যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকেই মাসসমূহের গণনা আল্লাহ তাআলার নিকট তাঁর বিধান মতে বারটি। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। -সূরা তাওবা (৯) : ৩৬

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

إِنّ الزّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللهُ السّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، السّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا، مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ، ثَلاَثٌ مُتَوَالِيَاتٌ: ذُو القَعْدَةِ، وَذُو الحِجّةِ، وَالمُحَرّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الّذِي بَيْنَ جُمَادَى، وَشَعْبَانَ.

নিশ্চয় সময়ের হিসাব যথাস্থানে ফিরে এসেছে, আসমান-যমীনের সৃষ্টির সময় যেমন ছিল (কারণ, আরবরা মাস-বছরের হিসাব কম-বেশি ও আগপিছ করে ফেলেছিল)। বার মাসে এক বছর । এর মধ্য থেকে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক- যিলকদ, যিলহজ্ব, মুহাররম। আরেকটি হল রজব, যা জুমাদাল আখিরাহ ও শাবানের মাঝের মাস। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৬৬২

যিলহজ্ব : সম্মানিত চার মাসের শ্রেষ্ঠ মাস

এ চার মাসের মধ্যে যিলহজ্ব মাসের ফযীলত সবচেয়ে বেশি। কারণ, এ মাসেই আদায় করা হয় ইসলামের অন্যতম প্রধান রোকন ও নিদর্শন হজ্ব এবং অপর নিদর্শন ও মহান আমল কুরবানী।

এ মাস আল্লাহর কাছে সম্মানিত। এতে রয়েছে এমন দশক, আল্লাহ তাআলা যার কসম করেছেন। বিদায় হজ্বের ভাষণে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্ব মাসকে শ্রেষ্ঠ মাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন-

أَلَا وَإِنّ أَحْرَمَ الشُّهُورِ شَهْرُكُمْ هَذَا.

জেনে রাখো! সবচেয়ে সম্মানিত মাস হল, তোমাদের এ মাস (যিলহজ্ব)। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৯৩১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১১৭৬২

ইবরাহীমী ঈমান ও সমর্পণে উজ্জীবিত হওয়ার মাস

এ মাসে আমরা আদায় করি হজ্ব ও কুরবানী। আর এ দুই আমল ধারণ করে আছে ইবরাহীম আ.-এর ঈমান ও সমর্পণের বহু নিদর্শন। শিরক ও মুশরিকদের থেকে চির বিচ্ছিন্নতা ঘোষণা করা এবং আল্লাহর নির্দেশের সামনে সমর্পিতচিত্তে নিজ সন্তানকে কুরবানী করতে উদ্যত হওয়া এবং জনমাবহীন মরু প্রান্তরে স্ত্রী-সন্তানকে রেখে যাওয়ার কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া- এ সবই ছিল ইবরাহীম আ.-এর দৃঢ় ঈমান ও নিঃশর্ত সমর্পণের প্রকৃষ্ট প্রমাণ। তাইতো আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

قَدْ كَانَتْ لَكُمْ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِیْۤ اِبْرٰهِیْمَ وَ الَّذِیْنَ مَعَهٗ، اِذْ قَالُوْا لِقَوْمِهِمْ اِنَّا بُرَءٰؤُا مِنْكُمْ وَ مِمَّا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَ بَدَا بَیْنَنَا وَ بَیْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَ الْبَغْضَآءُ اَبَدًا حَتّٰی تُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَحْدَهٗۤ.

তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর তার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের (আকীদা-বিশ্বাস) অস্বীকার করি। আমাদের ও তোমাদের মাঝে চিরকালের জন্য শত্রæতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়ে গেছে। যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। -সূরা মুমতাহিনা (৬০) : ৪

এটাকেই বলে, ‘আলহুব্বু ফিল্লাহ ওয়াল বুগযু ফিল্লাহ’,-আল্লাহর জন্যই ভালবাসা স্থাপন, আল্লাহর জন্যই বিদ্বেষ পোষণ। ভালবাসা ও বিদ্বেষ পোষণের মানদÐ হল ঈমান। এর মাধ্যমেই ঈমান পূর্ণতা পায়। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

مَنْ أَحَبّ لِله، وَأَبْغَضَ لِلهِ، وَأَعْطَى لِلهِ، وَمَنَعَ لِلهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الْإِيمَانَ.

যে আল্লাহর জন্য (অন্যকে) ভালোবাসে, আল্লাহর জন্যই (কারো সাথে) বিদ্বেষ পোষণ করে, (কাউকে কিছু দিলে) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই দেয়, আর কাউকে কোনো কিছু দেওয়া থেকে বিরত থাকলে সেটাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করে, সে স্বীয় ঈমানকে পূর্ণ করল। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬৮১

আর আল্লাহর হুকুমের সামনে সমর্পণের যে আদর্শ ইবারাহীম আ. আমাদের জন্য রেখে গেছেন সে বিষয়েই ইরশাদ হয়েছে-

اِذْ قَالَ لَهٗ رَبُّهٗ اَسْلِمْ قَالَ اَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعٰلَمِیْنَ.

(স্মরণ করুন,) যখন ইবরাহীমের রব তাকে বললেন, আত্মসমর্পণ কর, সে বলল, জগৎসমূহের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। -সূরা বাকারা (২) : ১৩১

আর ইবরাহীম আ.-এর এ সমর্পণের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা ছিল, আল্লহর হুকুমে নিজ সন্তানকে কুরবানী করতে উদ্যত হওয়া। এ পরীক্ষায় তিনি ও তাঁর সন্তান আল্লাহর ইচ্ছার সামনে সমর্পণের যে পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন সেটিই কুরআনে বিবৃত হয়েছে এভাবে-

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْیَ قَالَ یٰبُنَیَّ اِنِّیْۤ اَرٰی فِی الْمَنَامِ اَنِّیْۤ اَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَا ذَا تَرٰی، قَالَ یٰۤاَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِیْۤ اِنْ شَآءَ اللهُ مِنَ الصّٰبِرِیْنَ، فَلَمَّاۤ اَسْلَمَا وَ تَلَّهٗ لِلْجَبِیْنِ، وَ نَادَیْنٰهُ اَنْ یّۤاِبْرٰهِیْمُ، قَدْ صَدَّقْتَ الرُّءْیَا ۚ اِنَّا كَذٰلِكَ نَجْزِی الْمُحْسِنِیْنَ، اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الْبَلٰٓؤُا الْمُبِیْنُ، وَ فَدَیْنٰهُ بِذِبْحٍ عَظِیْمٍ.

অতপর সে (ইসমাঈল) যখন তার পিতার সাথে কাজ করার মত বয়সে উপনীত হল তখন ইবরাহীম বলল, বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, আমি তোমাকে জবেহ করছি। এখন তোমার অভিমত কী বল! সে বলল, হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন। ইনশাআল্লাহ! আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। অতপর যখন তারা (পিতাপুত্র) দুজনই (আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার সামনে) আত্মসমর্পণ করল এবং ইবরাহীম তাকে কাত করে শুইয়ে দিল। তখন আমি তাকে ডাক দিয়ে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করলে। নিশ্চয় আমি সৎকর্মশীলদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই এটা ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাকে (ইসমাঈলকে) মুক্ত করলাম এক মহান কুরবানীর বিনিময়ে। -সূরা সাফফাত (৩৭) : ১০২-১০৭

আমার সবকিছু আল্লাহর জন্য : এ স্মরণ তাজা করি এ মাসে

হাজ্বী সাহেবান দুনিয়ার সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এমনকি ইহরামের মাধ্যমে দৈনন্দিনের স্বাভাবিক পোশাকও বর্জন করে দুই প্রস্থ সেলাইবিহীন কাপড়ে ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক-হাজির! বান্দা হাজির!!’ বলে নিজেকে আল্লাহর সমীপে পেশ করে। সফেদ পোশাকে, ধুলোধূসরিত বদনে আল্লাহর ঘরে হাজিরি দেয়। এ হাজিরি শুধু আল্লাহর জন্য, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। প্রতিনিয়ত তাদের যবান সতেজ থাকে লাব্বাইক ধ্বনিতে-

لَبّيْكَ اَللّٰهُمّ لَبّيْكَ، لَبّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبّيْكَ، إِنّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيْكَ لَكَ.

আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। আমি হাজির, আপনার কোনো শরীক নেই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নিআমত আপনারই এবং সকল রাজত্ব আপনার। আপনার কোনো শরীক নেই।

তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিম কুরবানী করে। আল্লাহর হুকুমে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে পশু কুরবানী করে। তখন এ দুআ পড়ে-

اِنَّ صَلَاتِیْ وَ نُسُكِیْ وَ مَحْیَایَ وَ مَمَاتِیْ لِلهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ، لَا شَرِیْكَ لَهٗ، وَ بِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَ اَنَا مِنَ الْمُسْلِمِیْن.

আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি এরই জন্য আদিষ্ট হয়েছি। এবং আমি মুসলিমদের একজন।

আল্লাহর দেওয়া সম্পদ ব্যয় করে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কুরবানী করে। আবার সে পশুর গোস্ত আল্লাহ বান্দাকেই দান করেন ভক্ষণ করার জন্য। আর আল্লাহ চান বান্দার তাকওয়া, খালেস নিয়ত ও তাঁর হুকুমের সামনে সমর্পণ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

لَنْ یَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰكِنْ یَّنَالُهُ التَّقْوٰی مِنْكُمْ .

আল্লাহর কাছে না পৌঁছে তাদের গোস্ত আর না তাদের রক্ত, বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে। -সূরা হজ্ব (২২) : ৩৭

এ সবকিছুই বান্দাকে স্মরণ করিয়ে দেয়- আমি আল্লাহর জন্য, আমার সবকিছু আল্লাহর জন্য।

নেক আমলে অগ্রগামী হওয়ার মাস

আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে বান্দাদের দান করেছেন ফযীলতপূর্ণ বিভিন্ন দিবস-রজনী। বছরের কোনো কোনো মাস, দিন বা রাতকে করেছেন ফযীলতপূর্ণ ও বৈশিষ্ট্যমÐিত। যাতে এগুলোকে কাজে লাগিয়ে বান্দা ক্ষমা লাভ করতে পারে, নেক আমলে সমৃদ্ধ হতে পারে এবং আল্লাহর প্রিয় হতে পারে। এর মধ্যে যিলহজ্ব মাস অন্যতম প্রধান ফযীলতপূর্ণ মাস।

এ মাসের প্রথম দশককে আল্লাহ তাআলা করেছেন বৈশিষ্ট্যমÐিত। এ দিনগুলোতেই হজ্বের মৌলিক আমল সম্পাদিত হয়। দশ যিলহজ্ব সারা বিশ্বের মুসলিমগণ কুরবানী করেন। এ দিনগুলোর নেক আমল আল্লাহ তাআলার নিকট অধিক প্রিয়। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

مَا مِنْ أَيّامٍ الْعَمَلُ الصّالِحُ فِيهَا أَحَبّ إِلَى اللهِ مِنْ هَذِهِ الْأَيّامِ يَعْنِي أَيّامَ الْعَشْرِ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ؟ قَالَ: وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ، إِلّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ، فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْءٍ.

অর্থাৎ আল্লাহর নিকট যিলহজ্বের দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও (এর চেয়ে উত্তম) নয়? তিনি বললেন, না, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে হাঁ, সেই ব্যক্তির জিহাদ এর চেয়ে উত্তম, যে নিজের জান-মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়েছে। অতপর কোনো কিছু নিয়ে ঘরে ফিরে আসেনি। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৩৮; সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৬৯; জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৫৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭২৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৯৬৮

হজ্ব : এ মাসের প্রধান আমল

এ মাসের সবচেয়ে প্রধান আমল হল হজ্ব। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ لِلهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الْبَیْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَیْهِ سَبِیْلًا وَ مَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِیٌّ عَنِ الْعٰلَمِیْنَ.

মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্ব করা তার জন্য অবশ্যকর্তব্য। আর যে এই নির্দেশ পালন করতে অস্বীকার করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ দুনিয়াবাসীদের প্রতি সামান্যও মুখাপেক্ষী নন। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৯৭

সুতরাং যাদের উপর হজ্ব ফরয হয়েছে এবং তারা হজ্বে গিয়েছেন, তাদেরকে মোবারকবাদ; আল্লাহ তাদের মাবরুর হজ্ব নসীব করেন। কিন্তু যাদের উপর হজ্ব ফরয হওয়া সত্তে¡ও এখনও হজ্বে যাননি বা যাওয়ার নিয়ত করেননি আজই হজ্বের নিয়ত করুন।

লক্ষ্য করুন, উপরের আয়াতের শেষে আল্লাহ কী বলেছেন-

وَ مَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِیٌّ عَنِ الْعٰلَمِیْنَ.

আর যে এই নির্দেশ পালন করতে অস্বীকার করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ দুনিয়াবাসীদের প্রতি সামান্যও মুখাপেক্ষী নন।

আরো শুনুন ওমর রা. কী বলেছেন। তিনি বলেছেন-

من أطاق الحج فلم يحج، فسواء عليه يهوديا مات أو نصرانيا

যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও হজ্ব করল না তার ইহুদী হয়ে মৃত্যুবরণ করা আর খ্রিস্টান হয়ে মৃত্যুবরণ করা সমান কথা। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৮৪ (সূরা আলে ইমরান ৯৭ নং আয়াতের অধীনে)

সুতরাং আর দেরি নয়; এখনই নিয়ত করুন ও আগামী বছর হজ্বে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করুন। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

تَعَجّلُوا إِلَى الْحَجِّ يَعْنِي الْفَرِيضَةَ فَإِنّ أَحَدَكُمْ لَا يَدْرِي مَا يَعْرِضُ لَهُ.

তোমরা দ্রæততর সময়ের মধ্যে ফরয হজ্ব আদায় কর। কেননা তোমাদের কেউই একথা জানে না যে, আগামীতে তার ভাগ্যে কী আছে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৮৬৭

তাছাড়া কেন আমি নিজেকে হজ্বের এ ফযীলতসমূহ থেকে বঞ্চিত করব? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ حَجّ لِلهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمّهُ.

যে ব্যক্তি একমাত্র অল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্ব করে এবং কোনো অশ্লীল কাজ বা গুনাহে লিপ্ত হয় না, সে সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে বাড়ী ফেরে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫২১

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন-

الحَجّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلّا الجَنّةُ.

মাবরুর (মকবুল) হজ্বের প্রতিদান জান্নাত। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪৯

তালবিয়া : আমিও শামিল এ ধ্বনির মিছিলে

لَبّيْكَ اَللّٰهُمّ لَبّيْكَ، لَبّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبّيْكَ، إِنّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيْكَ لَكَ.

আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। আমি হাজির, আপনার কোনো শরীক নেই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নিআমত আপনারই এবং সকল রাজত্ব আপনার। আপনার কোনো শরীক নেই।

শুভ্র-সফেদ লেবাসের মানুষগুলোর মুখে প্রতিনিয়ত উচ্চারিত হচ্ছে এ ধ্বনি। তারা মক্কার প্রতিটি অলি-গলি সজিব সতেজ করে তুলেছেন এ ধ্বনিতে। এটি বায়তুল্লাহ্য় উপস্থিত হয়ে বাইতুল্লাহর রবের সমীপে হাজিরী ও সমর্পণের ঘোষণা। এ শুধু হজ্ব ও হাজ্বীর ধ্বনি নয়, এ ধ্বনি সারা বিশ্বের প্রতিটি মুমিনের, প্রতিটি মুসলিমের। এ শুধু হজ্ব ও হাজ্বীর ঘোষণা নয়, এ ঘোষণা সারা বিশ্বের প্রতিটি মুমিনের, প্রতিটি মুসলিমের।

কারণ এ ধ্বনিতে রয়েছে- ঈমান, তাওহীদ, তাফবীয, ইহসান, শোকর ও তাওয়াক্কুলের মর্ম ও ব্যঞ্জনা। নিজেকে এবং নিজের সকল কিছুকে আল্লাহ তাআলার হাওয়ালা করে দেওয়ার ঘোষণা। তালবিয়ার মাধ্যমে বান্দা নিজেকে আল্লাহর সমীপে পেশ করে এবং সমর্পিত হয় তাঁর সামনে। এটিই তালবিয়ার মর্মবাণী। আর এ শুধু হাজ্বীর কর্তব্য নয়, সকল মুমিনের কর্তব্য; শুধু হজ্ব মওসুমের কর্তব্য নয়, সারা জীবনের কর্তব্য।

হাজ্বীদের খেদমত : এ মাসের একটি পুণ্যময় আমল

হাজ্বীগণের খেদমত বড় সৌভাগ্যের আমল। কারণ, হাজ্বীগণ হলেন আল্লাহর মেহমান, আমাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর ঘরের উদ্দেশে প্রেরিত প্রতিনিধি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

الْغَازِي فِي سَبِيلِ اللهِ، وَالْحَاجّ وَالْمُعْتَمِرُ وَفْدُ اللهِ، دَعَاهُمْ، فَأَجَابُوهُ، وَسَأَلوهُ، فَأَعْطَاهُمْ. قال البوصيري : إسناده حسن

অর্থাৎ আল্লাহর রাহে (ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে) জিহাদকারী, হজ্ব ও উমরা আদায়কারী- এরা আল্লাহর ওয়াফ্দ (মেহমান)। আল্লাহ তাদের ডেকেছেন আর তারা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তারা আল্লাহর কাছে চেয়েছেন আর আল্লাহ তাদের দিয়েছেন। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪৬১৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৮৯৩

‘ওয়াফ্দ’ বলা হয় সরকারি মেহমানকে। সরকার যত বড় হয় মেহমানের মর্যাদা তত বেশি হয়। এরপর যদি সে হয় সরকারের পক্ষ থেকে দাওয়াতপ্রাপ্ত। তাহলে তো কথাই নেই! ‘ওয়াফ্দ’-এর মাঝে এ বিষয়টিও থাকে যে, তারা দরবারে গিয়ে নিজ কওমের পক্ষ থেকে প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। এ বিষয়টিই একটি হাদীসে এসেছে-

الْحَاجّ وَفْدُ اللهِ، وَالْحَاجّ وَفدُ أَهْلِه. مرسلا عن أبي قلابة، بإسناد رجاله ثقات.

অর্থাৎ, হাজ্বী আল্লাহর মেহমান। এবং নিজের ‘আহলের’ পক্ষ থেকে প্রতিনিধি। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১২৬৫৯

সুতরাং যিলহজ্বের আমলের মধ্যে আল্লাহর মেহমান-হাজ্বীদের খেদমতকে আমরা গনীমত মনে করি। আর হাজ্বীদের (যমযম পান করানোর) খেদমতকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমালুন ছালিহুন-নেক আমল’ বলেছেন। এমনকি নিজেও উক্ত খেদমতে শরীক হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীসে এসেছে-

ثُمّ أَتَى زَمْزَمَ وَهُمْ يَسْقُونَ وَيَعْمَلُونَ فِيهَا، فَقَالَ: اعْمَلُوا فَإِنّكُمْ عَلَى عَمَلٍ صَالِحٍ ثُمّ قَالَ: لَوْلاَ أَنْ تُغْلَبُوا لَنَزَلْتُ، حَتّى أَضَعَ الحَبْلَ عَلَى هَذِهِ يَعْنِي: عَاتِقَهُ، وَأَشَارَ إِلَى عَاتِقِهِ.

অতপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যমযমের কাছে আসলেন। দেখলেন, লোকেরা হাজ্বীদের যমযম পান করানোর খেদমতে নিয়োজিত। এ দেখে তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের কাজে ব্যস্ত থাকো; কারণ, তোমরা নেক কাজের মধ্যে রয়েছ। যদি এ কাজে আমার উপস্থিতির কারণে লোকদের ভিড় বেড়ে গিয়ে তোমাদের কাজে ব্যাঘাৎ হওয়ার আশংকা না হত তাহলে আমি কূপ থেকে পানি তোলার রশি এখানে চড়িয়ে নিতাম, অর্থাৎ নিজ কাঁধে উঠিয়ে নিতাম। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৬৩৫

আর যাদের হজ্বে যাওয়ার সুযোগ হয়নি তারা আরো বেশি করে হজ্বগামীদের খেদমত করি। কারণ, হতে পারে এর ওসিলায় আল্লাহ আমাকেও সেখানে নিয়ে যাবেন, হজ্বের তাওফীক দান করবেন।

আশারায়ে যিলহজ্ব : আল্লাহ কসম করেছেন যে দশ রাতের

আমরা জেনেছি, যিলহজ্ব মাস আশহুরে হুরুম তথা সম্মানিত চার মাসের অন্যতম প্রধান মাস। আবার এ মাসের মধ্যে প্রথম দশক হল প্রধান। এ দশক এতটাই ফযীলতপূর্ণ ও মহিমান্বিত যে, আল্লাহ তাআলা এ দশ রাতের কসম করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-

وَ الْفَجْرِ، وَ لَیَالٍ عَشْرٍ.

শপথ ফযরের, শপথ দশ রাত্রির। -সূরা ফাজ্র (৮৯) : ১-২

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও মুজাহিদ রাহ.-সহ অনেক সাহাবী, তাবেঈ ও মুফাসসির বলেন, এখানে ‘দশ রাত্রি’ দ্বারা যিলহজ্বের প্রথম দশ রাতকেই বুঝানো হয়েছে। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৫৩৫

এ দশককে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলা হয়েছে। হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

أَفْضَلُ أَيّامِ الدّنْيَا أَيّامُ الْعَشْرِ، عَشْرِ ذِي الْحِجّةِ، قَالَ: وَلَا مِثْلُهُنّ فِي سَبِيلِ اللهِ؟ قَالَ: لَا مِثْلُهُنّ فِي سَبِيلِ اللهِ، إِلّا رَجُلٌ عَفّرَ وَجْهَهُ فِي التّرَابِ.

দুনিয়ার সর্বোত্তম দিনগুলো হল, যিলহজ্বের দশদিন। জিজ্ঞাসা করা হল, আল্লাহর রাস্তায়ও কি তার সমতুল্য নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায়ও তার সমতুল্য নেই। তবে ঐ ব্যক্তি, যার চেহারা ধূলিযুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ শাহাদাত লাভ করেছে। -মুসনাদে বাযযার, হাদীস ১১২৮; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ২০১০; মাজমাউল যাওয়াইদ ৪/৮; (قال الهيثمي : إسناده حسن ورجاله ثقات)

সম্মানিত মাস সম্মানিত দশক

গুনাহের মাধ্যমে এর সম্মান বিনষ্ট না করি

মুমিন তো আল্লাহর দেওয়া বিভিন্ন সুযোগকে গনীমত মনে করে কাজে লাগায়। এসকল ফযীলতপূর্ণ মওসুমে নেক আমলের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করে তার আমলের খাতা। কিন্তু কখনো কখনো কারো দ্বারা এমন হয়ে যেতে পারে যে, নেক আমলের তো তাওফীক হল না; কিন্তু গুনাহের কালিমায় কলুষিত হল আমলনামা। এমনটি কখনোই কাম্য নয়। এক কবি বড় সুন্দর বলেছেন-

قوت نيکی نداری بد مکن

নেক আমল করতে যদি নাও পার, গুনাহে লিপ্ত হয়ো না।

নেক আমল যতটুকু করতে পারি-না পারি; গুনাহের মাধ্যমে যেন এ সম্মানিত দিনগুলোর অসম্মান না করি। এর মাধ্যমে তো আমি নিজেকেই অসম্মানিত করছি।

ইবনে রজব হাম্বলী রাহ. লাতাইফুল মাআরিফে যিলহজ্বের আলোচনায় বলেন-

احذروا المعاصي فإنها تحرم المغفرة في مواسم الرحمة.

রহমতের মওসুমসমূহে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা ক্ষমা থেকে বঞ্চিত করে। -লাতায়েফুল মাআরেফ, পৃ. ৩৭৯

আর যে আয়াতে আল্লাহ তাআলা চারটি মাসকে সম্মানিত ঘোষণা করেছেন সে আয়াতের শেষে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

فَلَا تَظْلِمُوْا فِیْهِنَّ اَنْفُسَكُمْ

(...তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত) ...সুতরাং এ মাসসমূহে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করো না। -সূরা তাওবা (৯) : ৩৬

আল্লাহর নাফরমানী নিজের উপর সবচেয়ে বড় যুলুম। কারণ, এর ক্ষতি তো নিজের উপরই আপতিত হবে। সুতরাং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এ মাসের প্রথম কাজ, সাথে সাথে নেক আমলেও যতœবান হওয়া দরকার।

নেক আমলের মাধ্যমে হক আদায় করি এ দশকের

এখন আমরা কীভাবে এ দশকের হক আদায় করতে পারব এবং এর ফযীলত লাভ করতে পারব? হাদীস শরীফে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এ দশকের হক আদায়ের পথ ও পদ্ধতি শিখিয়েছেন। বিভিন্ন আমল বাতলেছেন। এর ফযীলত ঘোষণার মাধ্যমে উৎসাহিত করেছেন আমলের প্রতি। সুতরাং হাদীস শরীফে বর্ণিত আমলের মাধ্যমেই আমরা এ দশকের হক আদায় করতে পারি। আসুন আমরা জেনে নিই কী কী আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে এ দশকের আমল হিসেবে।

যিকির-তাসবীহতে প্রাণবন্ত করি যিলহজ্বের দশককে

যিকির আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক প্রিয় আমল। এ দশকের আমল হিসেবে বিশেষভাবে যিকিরের কথা এসেছে। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَا مِنْ أَيّامٍ أَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ وَلَا أَحَبّ إِلَيْهِ الْعَمَلُ فِيهِنّ مِنْ هَذِهِ الْأَيّامِ الْعَشْرِ، فَأَكْثِرُوا فِيهِنّ مِنَ التّهْلِيلِ وَالتّكْبِيرِ وَالتّحْمِيدِ.

আল্লাহ তাআলার নিকট আশারায়ে যিলহজ্বের আমলের চেয়ে অধিক মহৎ এবং অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সুতরাং তোমরা এই দিনগুলোতে বেশি বেশি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার এবং আলহামদু লিল্লাহ পড়। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৫৪৪৬; আদদাআওয়াতুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ৫৩৪

এছাড়া যিলহজ্বের এ দশকের বিভিন্ন আমলও প্রাণবন্ত থাকে আল্লাহর যিকিরে। হাজ্বীগণ ইহরাম বাঁধার পর থেকে উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে তালবিয়ার মাধ্যমে স্মরণ করতে থাকেন আল্লাহকে। জামরায় কংকর নিক্ষেপের সময়ও বলেন- আল্লাহু আকবার। সারা বিশ্বের মুসলিমগণ আইয়ামে তাশরীকে ফরয নামাযের পর তাকবীরে তাশরীকের মাধ্যমে আল্লাহর যিকির করেন। কুরবানীর দিন কুরবানী করার সময় বলেন- বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার। এমনকি হজ্বের আমলসমূহের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

إِنّمَا جُعِلَ الطّوَافُ بِالْبَيْتِ وَبَيْنَ الصّفَا وَالْمَرْوَةِ وَرَمْيُ الْجِمَارِ لِإِقَامَةِ ذِكْرِ اللهِ.

নিশ্চয়ই বাইতুল্লাহর তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ার সায়ী এবং জামারাতে কংকর নিক্ষেপের আমল বিধিবদ্ধ করাই হয়েছে আল্লাহর যিকিরের জন্য। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৮৮৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ৯০২

মোটকথা, যিলহজ্বের এ দিনগুলো যেন প্রাণবন্ত থাকে আল্লাহর যিকিরে।

যিলহজ্ব শুরু হলে নখ-চুল না কাটি

আমারও সাদৃশ্য হোক হাজীদের সাথে

ইহরাম করার পর হাজ্বী সাহেবদের জন্য নখ-চুল কাটাসহ আরো কিছু বিষয় নিষেধ। কিন্তু যারা হজ্বে যাননি তাদের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে যিলহজ্বের প্রথম দশকে নখ-চুল না কাটার মাধ্যমে অন্যরাও সাদৃশ্য অবলম্বন করতে পারে হাজ্বী সাহেবদের সাথে এবং লাভ করতে পারে বিশেষ ফযীলত। হাদীস শরীফে এ আমলের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ: إِذَا رَأَيْتُمْ هِلَالَ ذِي الْحِجّةِ، وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وَأَظْفَارِهِ.

উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন যিলহজ্বের দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৭৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২৩

এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে ফকীহগণ কুরবানীকারীর জন্য নখ-চুল না কাটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। তাই যিলকদ মাসেই চুল-নখ কেটে যিলহজ্বের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা চাই। যাতে তা বেশি লম্বা হয়ে না যায়, যা সুন্নতের খেলাফ।

আর যে ব্যক্তি কুরবানী করবে না তার জন্য এ হুকুম প্রযোজ্য কি না- এ ব্যাপারে কেউ কেউ বলেছেন, এ হুকুম কেবলমাত্র কুরবানীকারীদের জন্য প্রযোজ্য। তাদের দলীল পূর্বোক্ত হাদীস। আর কেউ কেউ বলেন, কুরবানী যারা করবে না তাদের জন্যও এ আমল রয়েছে। আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত-

أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ لِرَجُلٍ: أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى عِيدًا جَعَلَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلّ لِهَذِهِ الْأُمّةِ، فَقَالَ الرّجُلُ: أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ أَجِدْ إِلّا مَنِيحَةً أُنْثَى أَفَأُضَحِّي بِهَا؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنْ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِكَ، وَتُقَلِّمُ أَظْفَارَكَ، وَتَقُصّ شَارِبَكَ، وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ، فَذَلِكَ تَمَامُ أُضْحِيَّتِكَ عِنْدَ اللهِ عَزّ وَجَلّ.

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে কুরবানীর দিবসে ঈদ (পালনের) আদেশ করা হয়েছে, যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এক সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানীহা থাকে (অর্থাৎ অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী) আমি কি তা কুরবানী করব? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, তবে তুমি চুল, নখ ও মোঁচ কাটবে এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬৫

এই হাদীসে যেহেতু কুরবানীর দিন চুল-নখ কাটার কথা আছে তাহলে এর আগে না কাটার দিকে ইঙ্গিত বুঝা যায়।

২. ওলীদ বিন মুসলিম বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন আজলানকে যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, আমাকে নাফে রাহ. বলেছেন-

أَنّ ابْنَ عُمَرَ، مَرّ بِامْرَأَةٍ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِ ابْنِهَا فِي أَيّامِ الْعَشْرِ فَقَالَ: لَوْ أَخّرْتِيهِ إِلَى يَوْمِ النّحْرِ كَانَ أَحْسَنَ.

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এক নারীর নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। মহিলাটি যিলহজ্বের দশকের ভেতর তার সন্তানের চুল কেটে দিচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, যদি ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তবে বড় ভাল হত। -মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৫২০

৩. এ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনা হল-

قال مسدد وحدثنا المعتمر بن سليمان التيمي سمعت أبي يقول: كان ابن سيرين يكره إذا دخل العشر أن يأخذ الرجل من شعره حتى يكره أن يحلق الصبيان في العشر.

মুতামির ইবনে সুলাইমান আততাইমী বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, ইবনে সীরীন রাহ. যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা অপছন্দ করতেন। এমনকি এই দশকে ছোট বাচ্চাদের মাথা মুÐন করাকেও অপছন্দ করতেন। -আল মুহাল্লা, ইবনে হাযম ৬/২৮

এসব দলীলের কারণে কারো কারো মতে সকলের জন্যই যিলহজ্বে প্রথম দশকে নখ, গোঁফ ও চুল না-কাটা উত্তম। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই, এ বিধানটি কুরবানীদাতার জন্য তাকিদপূর্ণ।

যিলহজ্বের প্রথম নয় দিন রোযা রাখি

অধিকাংশ ফকীহগণ এই নয় দিন রোযা রাখা উত্তম বলেছেন। কারো পক্ষে সম্ভব হলে সে পুরো নয় দিনই রোযা রাখল। কারণ, যিলহজ্বের পুরো দশকের আমলই আল্লাহর কাছে প্রিয়। এ দশককে আমলে প্রাণবন্ত রাখার জন্য রোযার বিকল্প কোনো আমল নেই। কারণ, রোযা আল্লাহর কাছে অত্যধিক প্রিয় আমল। সুতরাং আমাদের যাদের জন্য সম্ভব যিলহজ্বের প্রথম দশক তথা নয় যিলহজ্ব পর্যন্ত রোযা রাখতে চেষ্টা করি। হাদীস শরীফে এসেছে-

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَصُومُ تِسْعَ ذِي الْحِجّةِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্বের নয়টি দিবস রোযা রাখতেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৩৩৪; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ৮৩৯৩

হাফসা রা. থেকে বর্ণিত আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন-

أَرْبَعٌ لَمْ يَكُنْ يَدَعُهُنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: صِيَامَ عَاشُورَاءَ، وَالْعَشْرَ، وَثَلَاثَةَ أَيّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْغَدَاةِ.

চারটি আমল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ছাড়তেন না। আশুরার রোযা, যিলহজ্বের প্রথম দশকের রোযা, প্রত্যেক মাসের তিন দিনের রোযা, ফজরের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামায। -সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৪১৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৬৪২২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৭০৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৬৩৩৯

নয় যিলহজ্বে রোযা রাখি

কারো পক্ষে যদি পুরো নয় দিনই রোযা রাখা সম্ভব হয় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। কিন্তু পুরো নয় দিন যদি সম্ভব না হয়, নয় যিলহজ্বের রোযার ফযীলত থেকে যেন কেউ বঞ্চিত না হয়। কারণ, এ দিনের রোযার ফযীলত সম্পর্কে আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السّنَةَ الّتِي قَبْلَهُ، وَالسّنَةَ الّتِي بَعْدَهُ.

আরাফার দিনের (নয় যিলহজ্বের) রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করি যে, (এর দ্বারা) আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬২

প্রকাশ থাকে যে, উক্ত হাদীসে বর্ণিত ইয়াওমে আরাফা দ্বারা যিলহজ্বের নয় তারিখ উদ্দেশ্য। এই তারিখের পারিভাষিক নাম হচ্ছে ইয়াওমে আরাফা। কেননা এই রোযা আরাফার ময়দানের আমল নয় বরং আরাফার দিন তো হাজ্বীদের জন্য রোযা না রাখাই মুস্তাহাব। হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ أُمِّ الْفَضْلِ بِنْتِ الْحَارِثِ،أَنّ نَاسًا تَمَارَوْا عِنْدَهَا يَوْمَ عَرَفَةَ، فِي صِيَامِ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: هُوَ صَائِمٌ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ: لَيْسَ بِصَائِمٍ، فَأَرْسَلْتُ إِلَيْهِ بِقَدَحِ لَبَنٍ، وَهُوَ وَاقِفٌ عَلَى بَعِيرِهِ بِعَرَفَةَ، فَشَرِبَهُ.

উম্মুল ফযল বিনতে হারেছ বলেন, তার নিকট কতক লোক ইয়াওমে আরাফায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রোযার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছিল। কেউ কেউ বলছিল, তিনি রোযা আছেন। আর কেউ কেউ বলছিল, তিনি রোযা নেই। উম্মুল ফযল একটি পেয়ালাতে দুধ পাঠালেন। নবীজী তখন উটের উপর ছিলেন। তিনি দুধ পান করলেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১২৩

আরাফার দিন আল্লাহর রাসূল রোযা রাখেননি। একারণে ফকীহগণ হাজ্বীদের জন্য আরাফার দিন রোযা না রাখা উত্তম বলেছেন। আবু কাতাদা রা.-এর হাদীস দ্বারা ইয়াওমে আরাফায় রোযা রাখা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। সুতরাং বুঝা গেল, আবু কাতাদাহ রা.-এর হাদীসে ‘ইয়াওমে আরাফা’ দ্বারা নয় যিলহজ্ব অর্থাৎ ঈদের আগের দিনই উদ্দেশ্য। সুতরাং আমাদের দেশের চাঁদের হিসেবে যেদিন নয় তারিখ হয় সেদিনই রোযা রাখা হবে। সৌদির হিসাবে আরাফার দিন অনুযায়ী নয়। উল্লেখ্য, তাকবীরে তাশরীক সংক্রান্ত হাদীসেও ইয়াওমে আরাফা দ্বারা নয় যিলহজ্বই উদ্দেশ্য। কেননা এ আমলও আরাফার সাথে নির্দিষ্ট কোনো আমল নয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, মাসিক আলকাউসার, জানুয়ারি ২০১৩ ঈ. (দুটি প্রশ্ন ও তার উত্তর : ইয়াওমে আরাফার রোযা ও কুরবানীর সাথে আকীকা)

ইয়াওমে আরাফা : গুরুত্ব ও ফযীলত

এ দিন আল্লাহর কাছে অনেক মহিমান্বিত। এদিনেই আল্লাহ তাআলা এ দ্বীনকে পূর্ণতা দানের ঘোষণা দিয়েছেন এবং বান্দাদের প্রতি তাঁর নিআমতকে পূর্ণ করেছেন। এদিনেই হজ্বের মূল আমল উকূফে আরাফা। কুরআনে কারীমে আল্লাহ এ দিনের কসম করেছেন। এ দিনের দুআ আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ দুআ। এ দিনের রোযার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার দুই বছরের গুনাহ মাফ করেন। এদিন আল্লাহ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন।

যে আয়াত নাযিল হয়েছে ইয়াওমে আরাফায়

আরাফার দিনেই ঐ আয়াত নাযিল

হয়েছে, যে আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ দ্বীনের পূর্ণতাদানের ঘোষণা দিয়েছেন। তারেক ইবনে শিহাব বর্ণনা করেন, এক ইহুদী ওমর ইবনে খাত্তাব রা. কাছে এল এবং বলল-

يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ آيَةٌ فِي كِتَابِكُمْ تَقْرَءُونَهَا، لَوْ عَلَيْنَا نَزَلَتْ، مَعْشَر الْيَهُودِ، لَاتّخَذْنَا ذَلِكَ الْيَوْمَ عِيدًا، قَالَ: وَأَيّ آيَةٍ؟ قَالَ: اَلْیَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِیْنَكُمْ وَ اَتْمَمْتُ عَلَیْكُمْ نِعْمَتِیْ وَ رَضِیْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِیْنًا .

হে আমীরুল মুমিনীন! আপনাদের কিতাবে (কুরআনে) একটি আয়াত রয়েছে, উক্ত আয়াত যদি আমরা ইহুদীদের উপর নাযিল হত তাহলে আমরা ঐ দিনকে ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ করতাম। ওমর রা. জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ আয়াত? সে তখন বলল-

اَلْیَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِیْنَكُمْ وَ اَتْمَمْتُ عَلَیْكُمْ نِعْمَتِیْ وَ رَضِیْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِیْنًا .

[আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিআমত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম। -সূরা মায়েদা (৫) : ৩]

ওমর রা. বলেন-

إِنِّي لَأَعْلَمُ الْيَوْمَ الّذِي نَزَلَتْ فِيهِ، وَالْمَكَانَ الّذِي نَزَلَتْ فِيهِ، نَزَلَتْ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِعَرَفَاتٍ فِي يَوْمِ جُمُعَةٍ.

আমি খুব ভালো করে জানি, এ আয়াত কবে নাযিল হয়েছে, কোথায় নাযিল হয়েছে। এ আয়াত নাযিল হয়েছে এক জুমার দিন, আরাফায় (আশিয়্যাতা আরাফা-আরাফার বিকেলে)। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩০১৭; সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৮৮

ইয়াওমে আরাফায় বান্দাকে মুক্তি দেওয়া হয় জাহান্নাম থেকে

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النّارِ، مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ، وَإِنّهُ لَيَدْنُو، ثُمّ يُبَاهِي بِهِمِ الْمَلَائِكَةَ، فَيَقُولُ: مَا أَرَادَ هَؤُلَاءِ؟

আরাফার দিনের মত আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, কী চায় তারা? -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪৮

জাবের রা. থেকে বর্ণিত আরেক বর্ণনায় রয়েছে-

يَنْزِلُ اللهُ إِلَى السّمَاءِ الدّنْيَا فَيُبَاهِي بِأَهْلِ الْأَرْضِ أَهْلَ السّمَاءِ، فَيَق

Address

Barishal

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when জামিয়া আশরাফিয়া জান্নাতুল বাক্বী বরগুনা Jamia Ashrafia Jannatul Baqi posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share