17/02/2025
জীবন সৃষ্টির আসল রহস্য
কোষই (Cell) প্রতিটি প্রাণীর জৈবদেহ জীবন্ত থাকার মৌলিক কারণ। কেমন করে জ বিকোষ সৃষ্টি হয়, অতি আশ্চর্যভাবে জীবকোষের সৃষ্টি হয়। নারী এবং পুরুষ দুই শ্রেণীর মানুষ। একটি নারীশিশু চারি লক্ষ ডিম্বকোষ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর অঙ্গে থাকে ডিম্বকোষ নামে জীবকোষ। ফ্যালোপিয়ন টিউব নামে চার ইঞ্চি লম্বা একটা টিউব নারীর গর্ভের উভয় পার্শ্বে অবস্থান করে। সেই টিউবের মাথায় একটি থলের মত থাকে তাকে বলে ডিম্বাধার (O***y) অর্থাৎ ডিম্বকোষ বাস করার ঘর। পরিণত বয়স হলে এই ডিম্বাধারের ভিতরে ডিম্বকোষ পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়, অর্থাৎ সন্তান ধারণের ক্ষমতা (Mature) প্রাপ্ত হয়। এই ডিম্বেকোষে মোট ৪৬টি ক্রোমোজম থাকে যার কথা আগেই বলা হয়েছে। ফ্যালোপিয়ন টিউবটির মাথা নারীর সন্তানের ঘরের (Uterus)-এর সঙ্গে সংযোজিত হয়েছে, অর্থাৎ যেখানে সন্তানের জন্ম হয় সেই স্থানে এসে মিশেছে। প্রতি মাসে নারীর শরীর নাপাক (Menstruation) হওয়ার পরে ডিম্বকোষ ডিম্বাধার ছেড়ে পরিপক্ক অবস্থায় ফ্যালোপিয়ন টিউবের ভিতর দিয়ে ক্রমাগতভাবে বেরিয়ে আসতে থাকে গর্ভাশয়ের দিকে। এ সময়ে গর্ভাশয় সন্তান ধারণের জন্য তৈরী হয়। বেশী করে রক্ত জমায় এবং তার পেশীগুলো জোরালো হয়। ডিম্বাধার থেকে বেরিয়ে আসার সময় ডিম্বকোষের ভিতর থেকে ২৩টি অপ্রয়োজনীয় ক্রোমোজম ঝরে যায়, বাকী থাকে আর ২৩টি এই ২৩টি ক্রোমোজম নিয়ে গর্ভাশয়ের দিকে যখন ডিম্বকোষটি আসতে থাকে, তখন নারী-পুরুষের মিলন হয়ে পুরুষের ভেতর থেকেও শুক্রকোষ বেরিয়ে যায়। শুক্রকোষ কতগুলো কীটের সমষ্টি যাকে স্পার্ম বা শুক্রকীট বলে। শুক্রকীটেও (S***m) রয়েছে ২৩টি ক্রোমোজম, শুক্রকীটগুলো দেখতে অতি ক্ষুদে সাপের মত মাথা মোটা, লেজ তার দশগুণ। এ লেজ দিয়ে সে অনায়াসে সাঁতার কেটে সামনে বেড়ে চলতে পারে। একজন পুরুষের এক ফোটা বীর্যের ভিতরে প্রায় সাড়ে আট কোটি কীট রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, এ প্রত্যেকটির ভিতরে রয়েছে ২৩টি করে ক্রোমোজম এবং এর প্রত্যেকটিই এক একটি মানুষ হওয়ার যোগ্যতা রাখে। বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, এ দুনিয়াকে কয়েকবার জনাকীর্ণ করার জন্য একজন পুরুষই যথেষ্ট।
নারী-পুরুষ মিলনের পরে কোটি কোটি শুক্রকোষ নারীর গর্ভের দিকে দৌড় দেয়। এত জোড়ে তারা দৌড়ায় এবং তাদের মধ্যে এত ঠেলাঠেলি হয় এবং দৌড়ের এত প্রতিযোগিতা হয় যে, অলিম্পিক দৌড় প্রতিযোগিতাও এরূপ হয় না। শুক্রকীটগুলো এত দৌড়ের প্রতিযোগিতা করে কার আগে কে নারীর ঐ ডিম্বাশয়ে ঢুকে যেতে পারে। যে আগে ঢুকবে সেই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হয়ে উঠবে। এদিকে নারীর ডিম্বাশয় বা কোষটি দরজা খুলে অপেক্ষায় আছে কোনসময় তার দরজার ভিতরে একটা শুক্রকীট মাথা ঢুকাবে, অমনি তার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। নারীর ডিম্বকোষ ও পুরুষের শুক্রকোষ যেই মাত্র মিলন হবে অমনি মানুষ সৃষ্টি শুরু হবে। শুক্রকীটগুলো অতি দ্রুত দৌড়ায়। প্রতি আট ঘন্টায় তারা এক ইঞ্চি জায়গা সাতরায়ে পার হয়। দৌড় পাল্লার সময় তারা এত কাছাকাছি এবং এত লাগালাগি হয়ে থাকে যে আণবিক দূরত্বের (Moleculer Distance) চেয়েও কম। বিজ্ঞানীরা বলেন, দু'টো শুক্রকীট যদি একবারে একই সময় একটা ডিম্বকোষের ভিতরে ঢুকে তবে সন্তান ধরবে না, একটি ডিম্বকোষে একটি শুক্রকীটই ঢুকতে হবে।
ভাববার কথা
<
田
স্বামী স্ত্রী মিলনের পর শুক্রকীটগুলো ডিম্বাশয়ের দিকে ছুট না দিয়ে উল্টো দিকে দৌড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে যেতে পারত। আরো ভাবার কথা হচ্ছে, গর্ভাশয়টি নিম্নগামী। শুক্রকীটগুলো উর্দ্ধগামী হয় কেন? কোটি কোটি মানুষ যখন এত লাগালাগি এত নিকটতম এবং তারা যখন ডিম্বকোষের ঠিক দরজার সামনে যায়, তখন তাদের ভিতরে থেকে আরও কোটি কোটি মানুষ পোকাও অতি নিকটবর্তী অবস্থা থেকে একটা পোকা যখনই একটু মাথা বাড়িয়ে ডিম্বাশয়ে অতি সামান্য একটু অংশ ঢুকাতে চায় তখনই তাকে ভেতরে ঠেলে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখের পলকে এ ডিম্বাশয়ের দরজাটি কে বন্ধ করে দেয় এবং বাদ বাকী কোটি কোটি মানুষ কীট অন্ধকার পথে ঝরে যায়, নালা নর্দমায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। যিনি এ মানুষ সৃষ্টি করেছেন তিনি বলেন, বলত গভীর রাতে মিলনের পর যখন তোমার মাতা ঘুমিয়েছিল তুমি আজকের এই পরিপাটি সাহেবটি তো তোমার মায়ের ডিম্বাশয়ের দিকে কোটি কোটি ভাইবোনের সঙ্গে অত্যন্ত জটিলতরভাবে ঢুকতে গিয়েছিলে, তোমার একটুখানি দেহকে তোমার মায়ের ডিম্বকোষে ঢুকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে এ ডিম্বাশয়ের মুখটি কে বন্ধ করে দিয়েছিল? আমি, না তুমি নিজে? তোমার সঙ্গে যদি আরও একটা পোকা ঢুকতে সুযোগ পেত তবে আজ তুমি প্রস্রাব-পায়খানার নর্দমায় আবর্জনা হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে। মানুষ নামে কেউ তোমাকে চিনত না। একথা ভেবে কি দেখে কোনদিন নিবিষ্ট মনে? অনেক বিজ্ঞানীরা, যুক্তিবাদীরা বলে ঐ সব একাই হয়েছে। আসলে তোমার জন্মকালে, অতি অন্ধকারে মাতৃগর্ভের সূচনায় কিভাবে তোম-ার জন্ম শুরু হয়েছিল, তা কি তোমার মনে আছে এবং তুমি কি থেকে এসেছ কেউ কি তা সঠিক করে বলতে পার? যেখানে তোমার কোন শক্তি খাটেনি, বুদ্ধি খাটেনি একান্ত অসহায় একটা পোকা জন্মের কোন কথাই মনে নেই সেখানে এত জোর দিয়ে কেমন করে বলছ, মানুষ একা একাই হয়েছে? তাই আল্লাহ্ বলেন, বিবেকী মানুষ যেন ভেবে দেখে কি থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। "মিন আইউ শাইয়েন খুলেকা" (আল-কুর'আন)। তিনি আরও বলেন, "তুমি কি একাই সৃষ্ট হয়েছো, না তোমাকে কেউ সৃষ্টি করেছে?" (আল-কুর'আন) আর একটি প্রশ্নের জবাব বিজ্ঞানীরা দিতে পারেনি। শুক্রকীট ধীরে ধীরে স্ত্রীর ডিম্বকোষের দিকে এগিয়ে যায়। ডিম্বকোষটি ক্রমে ক্রমে গর্ভাশয়ে এসে পড়ে। পুরুষের শুক্রকোষে থেকে ২৩টি ক্রোমোজম, নারীর ডিম্বেকোষে থাকে ২৩টি ক্রোমোজম। উভয়কোষ যখন একত্রে মিলিত হয়, তখনই ৪৬টি ক্রোমোজম মিলে অতি অদ্ভুতভাবে এবং এক অজানা অভিনব রূপে জীবনের শুরু হয়। বিজ্ঞানীরা মাথা ভেঙ্গে আজও এ অভিনব জীবনধারার কারণ খুঁজে বের করতে পারেননি। তাই তারা মাথা নুইয়ে বলেছেন,
জীবনের এই অভিনব ধারা কোথা হতে নেমে আসে, কে যেন হেথায় খেলা খেলে যায় বুঝিনা থাকিয়া পাশে।
বিজ্ঞানীরা আরও হতবাক হয়ে স্রষ্টার কাছে নতি স্বীকার করেছেন। ডিম্বকোষের ২৩টি ক্রোমোজম এবং শুক্রকোষের ২৩টি ক্রোমোজম একত্র মিলিত হলে ৪৬টি ক্রোমোজ মেরই এক পূর্ণাঙ্গ কোষ বা সেল সৃষ্টি হল এবং এটিই হল প্রথম জীবকোষ যা থেকে এখন ধীরে ধীরে মানব শিশু বেড়ে উঠতে থাকবে। কিন্তু এ কোষটি কোথায় মানুষ সৃষ্টি ফ্যাক্টরী পাবে। নারীর গর্ভের ভিতরের যে কোন এক স্থানে এ মিলিত কোষটি সট করে এক জায়গায় আটকে যায়। শত ঝাকিতেও নড়ে না খসে পড়ে না। অত্যাশ্চর্যের বিষয় এই যে, এ কোষটির গায়ে শিরিষ আঠার মত কোন আঠা নেই। বড়শীর মত কোন বাকানো ফাল নেই, নেই কোন হুক। বিজ্ঞানীরা হয়রান হয়েছেন যে, কি করে এ কোষটি মাতৃগর্ভে একা একা আটকে থাকে। মহাস্রষ্টা উত্তর দেন, 'এ আমার আদেশ, আমার অলক্ষ্য নির্দেশ, আমি নাপাক পানি থেকে একটি মাংস পিণ্ড সৃষ্টি করি, পরে মানুষের আকার নেই।' (আল-কুর'আন)
#কিতাব : জীবন রহস্য ও দেহতত্ত
(সংগৃহীত)