
14/03/2024
ইতিহাসের সাক্ষী গদখালী রেলস্টেশন!
বাংলাদেশের যশোর জেলার এক প্রাচীন জনপদ গদখালী। ফুলের রাজ্যে হিসেবেও পরিচিত এই গদখালী।
১৮৬৩ সালে কপোতাক্ষ নদের পশ্চিম পাড় তথা বর্তমান গদখালী, যশোরের অন্তর্ভুক্ত হয়।
ইতিহাস থেকে পাওয়া যায় এক সময় এই গদখালী ছিলো ব্যবসার মূল কেন্দ্র। গদখালী রেলস্টেশন থাকার কারনে বর্তমান উপজেলা সদর ঝিকরগাছার চেয়ে গদখালীর ব্যবসা বাণিজ্য ভালো ছিলো।
১৮৭৬-৭৮ সালে ব্রিটিশ ভারতে সংঘটিত হওয়া মহা দুর্ভিক্ষের পর, ফেমিন কমিশনার এ অঞ্চলে ন্যূনতম পাঁচ হাজার মাইল রেলপথ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন।
এর ভিত্তিতে বেঙ্গল সেন্ট্রাল রেলওয়ে রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে।১৮৮২ থেকে ১৮৮৪ সালে দমদম জংশন থেকে দত্তপুকুর, দত্তপুকুর থেকে গোবরডাঙ্গা, রানাঘাট থেকে বনগাঁও এবং বনগাঁও থেকে খুলনা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হয়।
বেনাপোল থেকে যশোরও এই রুটের অন্তর্ভুক্ত।
বেনাপোল থেকে যশোর পর্যন্ত যেতে পথে পড়তে নাভারন, গদখালী, ঝিকরগাছা ঘাট, ঝিকরগাছা ও ধোপাখোলা স্টেশন।
তবে সেকালের গদখালী, ধোপাখোলা, তালতলা হাটের মতো উল্লেখযোগ্য স্টেশনগুলো বর্তমানে পরিত্যক্ত।
ঐতিহ্যবাহী গদখালী এখন ফুলের রাজ্য। গদখালীকে বর্তামানে বলা হয় ফুলের রাজধানী।গদখালী ও এর আশপাশের হাজার হাজার একর জমিতে বছরজুড়ে উৎপাদন হচ্ছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফুল। । সারা বাংলাদেশে ৮০% ফুলের যোগান দেয় এই গদখালী।
কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য যে গদখালীতে অবস্থিত রেলস্টেশনটি একসময় চালু থাকলেও কাল ক্রমে এটি বন্ধ হয়ে যায়। কেন বন্ধ হয়ে যায় এর সঠিক কারণ কেন জানে না।
গদখালী রেলস্টেশন ‘টিকিট লইবেন’ কথাটি আবছা হয়ে গেলেও স্টেশন ভবনের ছাউনিতে ক্রমান্বয়ে ইংরেজি ও বাংলায় গদখালী লেখাটি কষ্ট করে পড়া যায়।শুধু ভবনটি যেন দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে।
যশোরের প্রাচীন জনপদ গদখালীর ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, উনিশ শতকের গোড়ায় এটি বেশ সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু ১৮১০ সাল নাগাদ ম্যালেরিয়া জ্বরের প্রকোপে এই অঞ্চলের মানুষ মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়। বিপর্যয় কাটাতে না কাটাতেই ১৮৪০ সালে পুনরায় আক্রান্ত হয় গদখালীসহ এর আশপাশের অঞ্চল। সে সময় প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে এই এলাকা। ‘গদখালী ফিবার’ নামে যা ইতিহাসে আজও স্থান করে আছে। মনোজ বসু তাঁর ‘সে এক দুঃস্বপ্ন ছিল’ উপন্যাসে গদখালীর এই রূপ তুলে ধরতে গিয়ে লিখেছেন, ‘খানপাঁচেক গ্রামের পরে সুবিখ্যাত গদখালী...মহামারিতে এক সময়ে ওই গ্রাম উজাড় হয়ে যায়, মেয়েপুরুষ একজন-কেউ বেঁচে ছিল না।’ ১৮৭১ সালে প্রকাশিত ‘রিপোর্ট অব দ্য ডিস্ট্রিক্ট অব ইটস এন্টিকুইটিজ, ইটস হিস্টোরি অ্যান্ড ইটস কমার্স’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, গদখালী ছিল বাজার পরিবেষ্টিত একটি বৃহদায়তনের গ্রাম। ১৮৬৩ সালে কপোতাক্ষ নদের পশ্চিম পাড় তথা বর্তমান গদখালী যশোরের অন্তর্ভুক্ত হয়। গভীর বন ও ডাকাতদের অভয়াশ্রম হওয়ায় গদখালীতে একটি পুলিশ স্টেশন স্থাপিত হয়।(সংগৃহীত/Collected)