14/12/2024
টাকশালের গল্প: অদৃশ্য এক দুনিয়া
আপনি কি কখনও ভেবেছেন, যে টাকা প্রতিদিন ব্যবহার করেন, সেটি কোথায় এবং কীভাবে তৈরি হয়? এই রহস্যময় জগৎটির নাম টাকশাল। সরকারি ভাষায়, এটি দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ লিমিটেড (SPCBL)। কিন্তু আমাদের কাছে, এটি কেবল একটি অফিস নয়; এটি দেশের অর্থনীতির হৃদস্পন্দন।
টাকশাল একটি অত্যন্ত সুরক্ষিত এলাকা। গাজীপুরের ৬৬ একর জমিতে বিস্তৃত এই ক্যাম্পাসটি বাইরের চোখের আড়ালে রয়ে গেছে। এখানে শুধু অফিস নয়, রয়েছে কোয়ার্টার, খেলার মাঠ, ক্লাব, স্কুল, মেডিকেল সেন্টার, এমনকি ছোট্ট একটি লেক। পাখির ডাকে সকালে ঘুম ভাঙে, আর কাজের শেষে লেকের পাশে বসে প্রকৃতির শান্তি অনুভব করা যায়। কিন্তু এই সুন্দর জগতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো প্রোডাকশন ইউনিট।
প্রোডাকশন ইউনিট মানেই গোপনীয়তার সর্বোচ্চ সীমা। ঢোকার আগে প্রতিটি কর্মীকে চেকিং, পাঞ্চ কার্ড, এবং গেটপাস নিয়ে যেতে হয়। এখানে কোনো মোবাইল বা নগদ টাকা ব্যবহার নিষিদ্ধ। সব কিছু সুরক্ষিত পদ্ধতিতে হয়। মেশিন ঘরের ভেতর কাঁচা সিকিউর পেপার থেকে আস্ত একটি টাকার নোট তৈরি হয়। চেক বই, স্ট্যাম্প, এমনকি সনদপত্রও এখানে তৈরি হয়।
অনেকেই ভাবেন, টাকশালে কাজ করা সহজ। কিন্তু প্রোডাকশন কর্মীদের প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, যার মধ্যে ৭ ঘণ্টা ওভারটাইম থাকে। সেই কঠোর পরিশ্রমের ফলেই আপনি প্রতিদিন নিরাপদে টাকা ব্যবহার করতে পারেন।
এই জায়গা নিয়ে মানুষের কৌতূহল অসীম। কারণ বাইরের কেউ কখনো এখানে প্রবেশ করতে পারে না। যারা এখানে কাজ করেন, তারাই জানেন, কীভাবে টাকার জন্ম হয়, কীভাবে দেশকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করা হয়।
টাকশাল শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি দেশের জন্য একটি গর্বের নাম। আমাদের প্রতিদিনের নোট, চেক বই বা স্ট্যাম্পের পেছনের গল্প যদি জানতেন, তাহলে আপনিও এই জায়গাকে নিয়ে গর্ব করতেন।
"টাকশাল: যেখানে প্রতিটি টাকা দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতীক।"