13/07/2025
ওটস (Oats) হলো এক ধরণের খাদ্যশস্য যা Avena sativa নামক ঘাস পরিবারের উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। এটি মূলত ঠান্ডা আবহাওয়ায় ভালো জন্মে এবং বিশ্বজুড়ে প্রধানত রাশিয়া ও কানাডায় এর উৎপাদন বেশি হয়। একসময় এটি পশুখাদ্য হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হলেও, বর্তমানে মানুষের জন্য এটি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে বিবেচিত।
ওটসের পুষ্টিগুণ
ওটস পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাবার। এতে রয়েছে:
* ফাইবার: প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় ফাইবার, বিশেষ করে বেটা-গ্লুকান, যা হজমে সাহায্য করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। এটি কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে।
* প্রোটিন: এটি উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিনের একটি ভালো উৎস, যা পেশী তৈরি ও মেরামতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
* কার্বোহাইড্রেট: কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট যা ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে।
* ভিটামিন ও খনিজ: থায়ামিন, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, আয়রন এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ।
* অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: অ্যাভিন্যানথ্রামাইডসের মতো বিশেষ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা প্রদাহ কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
ওটসের প্রকারভেদ
ওটস বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত রূপে পাওয়া যায়, যার ফলে তাদের রান্নার সময় এবং পুষ্টিগুণে কিছুটা ভিন্নতা আসে:
* ওট গ্রোটস (Oat Groats): এটি ওটসের সম্পূর্ণ দানা, যার বাইরের তুষটুকু সরানো হয়েছে। এটি রান্না হতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে।
* স্টিল-কাট ওটস (Steel-Cut Oats): ওট গ্রোটসকে স্টিলের ব্লেড দিয়ে ২-৩ টুকরায় কাটা হয়। এগুলো রান্না হতে কিছুটা সময় লাগে এবং টেক্সচারে চিবিয়ে খাওয়ার মতো হয়।
* স্কটিশ ওটস (Scottish Oats): এটি পাথর-ভাঙ্গা ওটস, যা রান্না করলে একটি পোরিজের মতো মসৃণ টেক্সচার তৈরি করে।
* রোলড ওটস/ওল্ড-ফ্যাশনড ওটস (Rolled Oats/Old-Fashioned Oats): ওট গ্রোটসকে ভাপিয়ে চ্যাপ্টা করা হয় এবং শুকানো হয়। এটি সবচেয়ে প্রচলিত এবং দ্রুত রান্না করা যায়।
* কুইক/ইনস্ট্যান্ট ওটস (Quick/Instant Oats): এটি সবচেয়ে বেশি প্রক্রিয়াজাত ওটস। এগুলো আরও পাতলা করে রোল করা হয় এবং আংশিকভাবে রান্না করা হয়, যার ফলে খুব দ্রুত তৈরি করা যায়। তবে, এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে।
ওটসের উপকারিতা
ওটস নিয়মিত খেলে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়:
* ওজন নিয়ন্ত্রণ: এতে থাকা ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়া কমে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
* হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস: দ্রবণীয় ফাইবার, বিশেষত বেটা-গ্লুকান, খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
* ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারের কারণে এটি ধীরে ধীরে হজম হয়, যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
* হজম উন্নত করে: ফাইবারের উপস্থিতির কারণে এটি হজম প্রক্রিয়াকে মসৃণ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ওটস প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, যা অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
* ক্যান্সার প্রতিরোধ: এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট কিছু নির্দিষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
ওটসকে সকালের নাস্তা হিসেবে দুধ, ফল, মধু বা বাদামের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়াও, ওটস দিয়ে রুটি, বিস্কুট, কেক, স্যুপ বা খিচুড়ির মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করা যায়।