28/06/2020
করোনা পরিস্থিতি ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা
আমার স্পষ্ট মনে আছে- আমাদের দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। সেই থেকেই আমরা অভিভাবকগণ উদ্বিগ্ন ছিলাম- আমাদের সন্তানদের স্কুলে যাওয়া আসা নিয়ে। আমরা অব্যাহতভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের প্রতি চাপ প্রয়োগ করতে থাকি। কিন্তু উল্লেখিত উভয় কর্তৃপক্ষের "ড্যাম কেয়ার" ভাব আমাদের ভীষণভাবে ভাবনায় ফেলে দিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম স্কুল ছুটি ঘোষণা করলে এক শ্রেণির শিক্ষকের প্রাইভেট কিংবা কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সরকারের প্রতি আমাদের চাপ প্রয়োগের মাত্রা আরো জোরদার করা হলো। আমাদের এই উদ্বিগ্ন প্রশমনে ফেইসবুক তথা সোস্যাল মিডিয়া এক অনবদ্য ভুমিকা রেখেছিল।
পরিস্থিতি দিন দিন এতো জটিলতর হতে লাগলো যে, আমরা কতিপয় অভিভাবক ১৪ মার্চ থেকে সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিলাম। এখানে বলে রাখা ভালো যে, আমার দুটি মেয়ে ঢাকার মোটামুটি উল্লেখযোগ্য একটি পাবলিক স্কুলে পড়ে। যে স্কুলের মর্নিং লিফটে একটি ক্যাম্পাসে প্রায় দশ হাজার ছাত্রী অধ্যয়নরত। সেখানে আমার বড় মেয়ে দশম শ্রেণী এবং ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। সুতরাং আমার উদ্বেগের কারণ নিশ্চয়ই সকলের কাছে বোধগম্য হওয়ার কথা।
অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সরকার ১৭ মার্চ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিলেন। আমরা অভিভাবকগণ হাফ ছেড়ে যেনো বেচে গেলাম। এর সপ্তাহ খানেক পর সাড়া দেশের সরকারি- বেসরকারি অফিস আদালতও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন।
এইভাবে কিছু দিন কাটতে না কাটতেই স্কুলের কিছু কিছু শিক্ষক ফোনে নক করা শুরু করলেন এবং অভিনব এক প্রস্তাব দিতে শুরু করলেন। প্রস্তাবটি হলো - অনলাইনের মাধ্যমে তারা ক্লাস নিতে চান। কারণ তারা চান না যে, স্কুল বন্ধ থাকার কারণে তাদের ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি হয়ে যাক। তাদের এই প্রস্তাব আমার কাছে হাস্যকর বলে মনে হলো। আমি কিছুতেই পাত্তা দিতে চাইছিলাম না। এরপর তারা আমাদের কাউন্সিলিং এর কৌশল হিসাবে বললেন - "বোর্ডের পরীক্ষাসমুহ সঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।"
এই কথা শোনার পরে আবেগের বশবর্তী হয়ে তাদের "পাতা ফাদে" পা দিতেই হলো!! কিছুদিন পড়ানোর শুরু হলো- এস.এম.এস-এর মাধ্যমে বিকাশ নম্বর পাঠানো। এই প্যানডেমিক সিচুয়েশনে কিছুটা বিরক্তবোধ করতে লাগলাম। একে একে যোগাযোগ করতে লাগলাম- অনলাইন টিউশন ফি বাবদ কি পুরো টিউশন দিতে হবে, নাকি কিছু কম দেয়া যাবে। এর প্রতি উত্তরে প্রত্যেকের একই জবাব- সবাই পুরো পেমেন্ট ই দিচ্ছে!! এর উপর তো আর কোনো বার্গেনিং চলতে পারে না। এখানে বলে রাখা ভালো যে, এইসব দেন দরবার বাচ্চাদের অগোচরে করতে হয়েছে। যাতে করে তারা তাদের শিক্ষকের কাছে হীনমন্যতায় না ভোগে!!
এখন এভাবেই বেশ চলে যাচ্ছে। অনলাইনের ক্লাস আর পেমেন্টও প্রদান করছি - অনলাইনে, বিকাশের মাধ্যমে।
কিন্তু ইদানীং বিভিন্ন গণমাধ্যমের বদৌলতে জানতে পারছি যে, সরকার চলতি শিক্ষাবর্ষ আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে পারেন!!! হায় হায়, তাহলে আমাদেরকে যে বলা হয়েছিল যে, সঠিক সময়ে শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষাসমুহ অনুষ্ঠিত হবে!!! সেটা কি তাহলে শুধুমাত্র বানিজ্য হাসিলের উদ্দেশ্যেই বলা হয়েছিল???
এখন তো মনে হয়- আগামী মার্চের আগে আমরা অভিভাবকরা এই প্রাইভেট আর কোচিং বাণিজ্য থেকে রেহাই পাচ্ছি না!!
বর্তমান সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের অভিভাবকদের চুষে খাওয়ার একটা কুট-কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। এই শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের কখনোই কাম্য ছিল না। এই শিক্ষা ব্যবস্থা শুধুমাত্র শিক্ষা সংশ্লিষ্ট হোমড়াচোমরাদের টু-পাইস এক্সট্রা ইনকামের একটা নিরাপদ রাস্তা ছাড়া আর কিছুই নয়!!
আমি আগামী প্রজন্মের স্বার্থে এই সৃজনশীল পদ্ধতির বিলুপ্তি চাই এবং অনতি বিলম্বে নাহিদ পূর্ববর্তী শিক্ষা ব্যবস্থা পূর্নবহাল করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ফয়সল খালিদ আশরাফী
উত্তরা, ঢাকা
২৮.০৬.২০২০