Balakoigari - বালাকৈগাড়ী

Balakoigari - বালাকৈগাড়ী আমাদের গ্রাম, আমাদের ঠিকানা, আমাদের হৃদস্পন্দন

বগুড়া জেলার সদর উপজেলাধীন ৭ নং শেখেরকোলা ইউনিয়নের অন্তভুক্ত বালাকৈগাড়ী গ্রাম বগুড়া সাতমাথা হতে উত্তর পূর্ব কোনে অবস্থিত। সাতমাথা হতে বালাকৈগাড়ী গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। যোগাযোগের মাধ্যম বগুড়া সাতমাতা হতে রিক্সা যোগে দ্ত্তবাড়ী , দত্তবাড়ী হতে সি এন জি যোগে উত্তর দিকে নওদাপাড়া, ঠেংগামারা, বাঘোপাড়ার স্টান্ডে নামতে হয়। এখন নওদাপাড়া, ঠেংগামারা, বাঘোপাড়া হতে রিক্সা, অটোরিক্সা যোগে উত্তর পূর্ব কোনে বালাকৈগাড়ী গ্রাম অবস্থিত।

01/11/2025
বগুড়ায় নতুন বিয়ের অর্ধেকই গড়াচ্ছে বিচ্ছেদেবগুড়ায় বিয়ের পর নতুন সংসার টিকছে না। প্রতি বছর যে পরিমাণ বিয়ে হচ্ছে, তার অর্ধে...
27/10/2025

বগুড়ায় নতুন বিয়ের অর্ধেকই গড়াচ্ছে বিচ্ছেদে

বগুড়ায় বিয়ের পর নতুন সংসার টিকছে না। প্রতি বছর যে পরিমাণ বিয়ে হচ্ছে, তার অর্ধেক তালাকে রূপ নিচ্ছে। মূলত পরকীয়া, স্বামী মাদকাসক্ত, যৌতুক নিয়ে দ্বন্দ্ব, মতের অমিল, স্বামী-স্ত্রীর আয়ের টাকা নিয়ে বিরোধ, পারিবারিক অশান্তিসহ নানা কারণে তালাক হচ্ছে।

নিম্নবিত্ত ও ধনীদের মধ্য বেড়েছে ঘর ভাঙার প্রবণতা। গ্রামাঞ্চলে তালাকের মূলে রয়েছে— স্বামীদের মাদক সেবন আর জুয়ায় আসক্তি। এ দুই সমস্যার সঙ্গে শহরাঞ্চলে অহংবোধ (ইগো) আর পরকীয়ার কারণে হুটহাট ঘর ভাঙছে অনেকের। বাবা-মার বিচ্ছেদে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। এতে করে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বগুড়া জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১২ উপজেলায় গত পাঁচ বছরে নতুন বিয়ে নিবন্ধন হয়েছে ৮০ হাজার ৫২৭টি। এ সময়ে তালাকের ঘটনা ঘটেছে ৩৮ হাজার ৪০৮টি। এরমধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে নতুন বিয়ে হয়েছে ১৬ হাজার ৬৪৫টি, তালাক হয়েছে ৭ হাজার ৮৫৫টি।

একইভাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিয়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৮৯০টি, তালাক ৬ হাজার ৮৩০টি। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিয়ে হয়েছে ১৫ হাজার ৮০টি, তালাক ৭ হাজার ৩৫৫টি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিয়ে ১৫ হাজার ৮০টি, তালাক ৭ হাজার ৩৫৫টি। তবে পরিসংখ্যান বলছে, তালাক বেশি দিচ্ছেন নারীরা। শহরের মধ্যে বগুড়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে এবং গ্রাম পর্যায়ে কাহালু উপজেলার মুরইল ইউনিয়নে তালাকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

এ প্রসঙ্গে মুরইল ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজি বেলাল হোসেন জানান, জুয়ায় আসক্ত হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যায় স্বামী। তখন সেই স্বামী আর স্ত্রীর পুরোপুরি ভরণপোষণ দিতে পারে না। তাই স্বামী তালাক বেশি হচ্ছে।

বগুড়ার বিকশিত নারী নেটওর্য়াকের সভানেত্রী ফজিলাতুনন্নেছা ফৌজিয়া বলেন, নেশা ও পরকীয়া—এ দুটি কারণ বড় আকার ধারণ করেছে। আবার অনেক নারী চাকরি করে স্বাবলম্বী হওয়ায় তাদের মধ্যে একরকম অহংবোধ জন্ম নিচ্ছে। যে কারণে তারা স্বামীদের তালাক দিচ্ছেন। বাবা-মার বিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা বাড়িয়ে তুলছে সামাজিক সংকট।

এ প্রসঙ্গে বগুড়ার শিশু আদালতের পিপি ও সমাজকর্মী সুফিয়া বেগম বলেন, হয়তো স্বামী বিয়ে করে নতুন বউ পাচ্ছে, মা হয়তো বিয়ে করে আবার নতুন স্বামী পাচ্ছে; কিন্তু সমস্যায় পড়ছে বাচ্চা। সে হয়তো মায়ের কাছে থাকছে, বাবাকে পাচ্ছে না; আবার বাবার কাছে থাকছে; কিন্তু মাকে পাচ্ছে না। এতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

তালাকের প্রবণতা বন্ধে স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরে প্রতি সহনশীল ও যত্নবান হবার পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় করার পরামর্শ সুশীল সমাজের।

সমাজ বিশেষজ্ঞদের অভিমত, মাদকাসক্ত, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, পরকীয়া, শারীরিক অক্ষমতা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিভিন্ন অ্যাপস, স্মার্টফোনের অপব্যবহার, ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহপ্রবণতা, স্বামী প্রবাসী হলে স্ত্রীর শ্বশুরপক্ষের লোকজনের অসহযোগিতা, সন্তান না হওয়া বা ছেলে সন্তান না হওয়া, একাধিক বিয়ের প্রবণতা, দম্পতিদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহনশীলতার অভাব, ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি কারণে সংসার ভাঙছে।

বগুড়ার নামুজা ডিগ্রি কলেজের সিনিয়র প্রভাষক রফিকুল ইসলাম ভাণ্ডারি বলেন, বর্তমান সমাজে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রায় অনুপস্থিত। বর্তমান প্রজন্মের কাছে মেনে নেওয়ার কিংবা সহ্য করার প্রবণতা নেই বললেই চলে। কেউ কারও কথা শুনতে চায় না, সব সময় ‘আমিই সেরা’ মানসিকতা লালন করে। নিজের মধ্যে আমিত্বই বেশি। সংসারে এসব নেতিবাচক কার্যক্রমের শেষ পরিণতি এবং সমাপ্তি ঘটে তালাকের মাধ্যমে।

বগুড়া জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল ওহাব বলেন, সমাজে তালাকের ঘটনা বাড়ছে, তা সত্য। আমরা মনে করি, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, পারিবারিক অস্থিরতা, সামাজিক বন্ধন কমে যাওয়া, যৌথ পরিবারে না থাকা, নারী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ থাকা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা কারণে তালাক বাড়ছে। ধর্মীয়-সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই এমনটি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা রেজিস্ট্রার সিরাজুল করিম বলেন, নারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে তালাকের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, একটি সংসার ভেঙে গেলে সন্তানের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কাউকে না কাউকে ছাড় দিয়ে হলেও সংসারজীবন টিকিয়ে রাখতে হবে।

ইসলাম নারীকে শুধু গৃহিণী বা সংসারের দায়িত্বশীল হিসেবে নয়, বরং সম্মানিত মা হিসেবে মর্যাদাশীল বানিয়েছে। একজন নারী যখন সংসা...
24/10/2025

ইসলাম নারীকে শুধু গৃহিণী বা সংসারের দায়িত্বশীল হিসেবে নয়, বরং সম্মানিত মা হিসেবে মর্যাদাশীল বানিয়েছে। একজন নারী যখন সংসারের কাজে পরিশ্রম করেন, স্বামী ও সন্তানের জন্য ভালোবাসা ও ত্যাগের মাধ্যমে ঘরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে ফেলেন, তখন সেই কাজগুলোও ইবাদতে পরিণত হয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের জন্য পোশাক এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাক।’ (সুরা আল-বাকারা : ১৮৭) এই আয়াতটি স্পষ্ট করে দেয়, স্ত্রী ও স্বামী একে অপরের পরিপূরক। সংসারে নারীর ভালোবাসা, যত্ন ও পরিশ্রম কেবল পার্থিব দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি ইবাদত। আর সংসারের এ কাজের মাঝে নারীরা পরম তৃপ্তি খুঁজে পান।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘সৎকর্মশীল নারী সে-ই, যে স্বামীর প্রতি অনুগত এবং আল্লাহ যে গোপনীয়তা রক্ষা করতে বলেছেন, তা রক্ষা করে।’ (সুরা আন-নিসা : ৩৪)। এ আয়াত প্রমাণ করে, সংসারের ভেতরে আনুগত্য ও দায়িত্ব পালনই নারীর জন্য জান্নাতের পথ খুলে দেয়। একজন নারী যখন ঘর ঝাড়ু দেন, তখন মনে মনে সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ বলে জিকির করতে পারেন। এতে করে সংসারের কাজের সঙ্গে সঙ্গে আমলনামায় নেকি জমা হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, নিজের পবিত্রতা রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, তবে তাকে বলা হবে—‘তুমি যেকোনো দরজা দিয়ে চাও জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (ইবনু মাজাহ : ১৮৫৩)। বোঝা গেল সংসারের দায়িত্ব ও স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনও একজন নারীর জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম করে। তাই নারীদের উচিত এই হাদিস অনুসারে জীবন পরিচালনা করা।

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে নারী স্বামীর ঘরে থেকে তার সন্তানের লালনপালন করে, পরিবারের জন্য রান্নাবান্না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রভৃতি করে—আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিটি কষ্টের বিনিময়ে নেকি লেখেন। (বুখারি : ৫৩৫১)

এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি, নারীর সব শ্রম, তা হোক রান্না করা, সন্তানকে খাওয়ানো বা ঘর গোছানো—সবই ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়, যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়। একজন নারী যখন ঘরের কাজে ক্লান্ত হয়ে যায়, তবুও ধৈর্য ধরে দায়িত্ব পালন করে, তখন সে এমন সওয়াব পায় যা এক মুজাহিদের ত্যাগের সমান হতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে নারী পরিবারের জন্য কষ্ট সহ্য করে, আল্লাহ তার প্রতিটি ঘামের বিনিময়ে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করেন।’ (তাবরানি, আল-মুজাম আল-কাবির : ১৩৮৪২)

সংসারের কাজ শুধু দায়িত্ব নয়, এটি নারীর জন্য নেকি ও জান্নাত অর্জনের এক বিশাল সুযোগ। একজন নারী যখন তার পরিবারকে ভালোবাসা, ধৈর্য ও ঈমানের সঙ্গে পরিচালনা করে, তখন তার প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে যায় ইবাদত। ইসলামের দৃষ্টিতে গৃহিণী হওয়া কোনো অবমূল্যায়ন নয়, বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক মহৎ মাধ্যম।

যে ওয়াজ-মাহফিল উপকারী নয়বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে ‘ওয়াজ মাহফিল’ এক জনপ্রিয় ধর্মীয় আয়োজন। ইসলামি শিক্ষার প্রচার, মানুষকে নৈতিক...
24/10/2025

যে ওয়াজ-মাহফিল উপকারী নয়

বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে ‘ওয়াজ মাহফিল’ এক জনপ্রিয় ধর্মীয় আয়োজন। ইসলামি শিক্ষার প্রচার, মানুষকে নৈতিকতার পথে আহ্বান ও সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্যে এই মাহফিলের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, ওয়াজ মাহফিল অনেক ক্ষেত্রে তার মূল লক্ষ্য থেকে সরে গিয়ে উল্টো বিভ্রান্তি, বিদ্বেষ ও বিভেদ তৈরির উৎসে পরিণত হচ্ছে।

ফলে মাহফিলের সংখ্যা বাড়লেও এর কার্যকারিতা ও উপকার ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। আজ আমরা জানার চেষ্টা করব কেন ওয়াজ মাহফিল এতটা উপকারী হচ্ছে না।

ইখলাস না থাকা

মহান আল্লাহর কাছে কেবল সেই আমলই গ্রহণযোগ্য, যা ইখলাস ও লিল্লাহিয়তের ওপর নির্ভরশীল। অনেক বক্তা ইখলাসের সঙ্গে ওয়াজ না করে লৌকিকতা অবলম্বন করেন, অথচ কোরআন শরিফে সব আমলের ক্ষেত্রে ইখলাস অবলম্বন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও জাকাত দিতে, এটাই সঠিক দীন।’ (সুরা বাইয়্যিনাহ : ০৫)

জ্ঞান ও গবেষণার ঘাটতি

ইউটিউবে ভাইরাল বেশিরভাগ বক্তা ইসলামি শাস্ত্রের গভীর জ্ঞান রাখেন না। তারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোরআন, হাদিস, ফিকহ ও তাফসিরের প্রমাণভিত্তিক শিক্ষা না নিয়ে কেবল মৌখিক প্রচলিত গল্প ও উপাখ্যানের ওপর নির্ভর করেন। ফলে তাদের বক্তব্যে অপ্রমাণিত হাদিস, বানোয়াট কিসসা ও অতিশয়োক্তি বেশি দেখা যায়। এ কারণে তাদের ওয়াজ উপকারী হয় না। অথচ মহাগ্রন্থ আল কোরআন মনগড়া কথাবার্তা বলা থেকে নিরুৎসাহিত করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না; কর্ণ, চোখ, হৃদয়—এদের প্রত্যেকটি সম্পর্কেই কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (সুরা বনি-ইসরাইল : ৩৬)

বক্তা আমলদার না হওয়া

যে আলেম ওয়াজ করবেন তাকে আমলদার হতে হবে। যদি কোনো আলেম আমল না করে ওয়াজ করেন, তাহলে তার কথার প্রভাব মানুষের মধ্যে পড়বে না। যেসব আলেম অন্যদের সদুপদেশ দেন, অথচ নিজেরা সৎ আমল করেন না, তাদের প্রতি হুঁশিয়ারবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে এসেছে—‘তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও, আর নিজেদের বিস্মৃত হও? অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন কর। তবে কি তোমরা বোঝ না।’ (সুরা বাকারা : ৪৪)

ওয়াজের বিনিময়-চুক্তি করা

ওয়াজ করার ক্ষেত্রে বক্তাদের জন্য উচিত ছিল নিঃস্বার্থভাবে বিনিময়-চুক্তি ছাড়া ওয়াজ করা এবং আয়োজকদের জন্য প্রয়োজন ছিল বক্তাদের আসা-যাওয়ার খরচ বহনসহ প্রয়োজনীয় সম্মানী দেওয়া। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ওয়ায়েজরা চুক্তি করে ওয়াজ করতে যান। যদি নির্ধারিত টাকা দেওয়ার চুক্তি না করা হয়, তাহলে ওয়াজে যেতে সম্মত হন না। আবার উল্টোটাও দেখা যায়, অনেক কষ্ট করে বক্তারা মাহফিলে যাওয়ার পর তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকুও আয়োজকরা দেন না এবং আসা-যাওয়ার ভাড়া ও প্রয়োজনীয় সম্মানী দিতে কার্পণ্য করেন। এমন দুঃখজনক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আয়োজকরা বক্তাদের আল্লাহর জন্য সম্মান করলে এবং ওয়ায়েজরা নিঃস্বার্থভাবে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দ্বীন প্রচারের লক্ষ্যে ওয়াজ করলে, তা উপকারী হতে বাধ্য। নবী-রাসুলরা দ্বীন প্রচারে কোনো ধরনের পারিশ্রমিক গ্রহণ করতেন না। আল কোরআনে এসেছে—‘আমি তোমাদের কাছে এটার জন্য কোনো প্রতিদান চাই না; আমার পুরস্কার তো জগৎসমূহের প্রতিপালকের কাছেই আছে।’ (সুরা শুআরা : ১০৯)

বিনোদন ও ব্যবসায় রূপান্তর

ওয়াজ মাহফিল এখন অনেক ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিনোদন বা বাণিজ্যিক ইভেন্টে পরিণত হয়েছে। দুনিয়া লাভ করার উদ্দেশ্যে ওয়াজ করা বিপজ্জনক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ইলমের দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা যায়, কোনো লোক যদি দুনিয়াবি স্বার্থ লাভের জন্য তা শেখে, তবে সে কেয়ামতের দিন জান্নাতের সুগন্ধি পাবে না।’ (আবু দাউদ : ৩৬৬৪)

বিভেদ সৃষ্টি ও কটূক্তি

কোনো কোনো ওয়াজ মাহফিলে মতবাদগত বিরোধ ও রাজনৈতিক ইঙ্গিত অশোভন পন্থায় উল্লেখ করার সঙ্গে সঙ্গে অন্য মাজহাব ও সম্প্রদায়ের নিন্দা করা হয়। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয় এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতা নষ্ট হয়। অথচ আল্লাহ তায়ালা মানুষের বোধগম্য ভাষায় ও সুন্দর পন্থায় দাওয়াত দিতে উৎসাহিত করেছেন। ইসলামে দাওয়াতের পদ্ধতি হলো যুক্তি, ভালোবাসা ও উদাহরণের মাধ্যমে মানুষকে সত্যের পথে ডাকা। আল-কোরআনে এসেছে—‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর হিকমত ও সদুপদেশ দিয়ে এবং এদের সঙ্গে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়। তোমার প্রতিপালক, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়, সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা নাহল : ১২৫)

ইসলামি শিক্ষার বিকৃতি

ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে অনেক সময় ইসলামকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন সেটি কেবল ভয়, অলৌকিক কাহিনি বা মৃত্যুভয়ের ধর্ম। অথচ ইসলামে বুদ্ধিবৃত্তি, ন্যায়বিচার, মানবতা ও বিজ্ঞানও অন্তর্ভুক্ত । আল কোরআনে ভাষ্য হলো, ‘তবে কি তারা কোরআন সম্বন্ধে অনুধাবন করে না? এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছ থেকে আসত, তবে তারা তাতে অনেক অসংগতি পেত।’ (সুরা নিসা : ৮২)। অর্থাৎ চিন্তা, বিচার ও প্রমাণভিত্তিক জ্ঞানই ইসলামি শিক্ষার ভিত্তি, কিন্তু অনেক ওয়াজে তা অনুপস্থিত।

শেষ কথা

ওয়াজ মাহফিল সত্যিকার অর্থে সমাজের জন্য উপকারী হতে পারে, যদি তা ইখলাস, জ্ঞান ও নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। আলেম ও বক্তাদের উচিত গবেষণাধর্মী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা, অপ্রমাণিত হাদিস বা বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকা এবং দ্বীনি দাওয়াতকে সংক্ষিপ্ত, সুশৃঙ্খল ও হৃদয়স্পর্শীভাবে উপস্থাপন করা। আয়োজক ও মিডিয়ার দায়িত্ব হলো, ওয়াজকে বাণিজ্য বা বিনোদনে রূপান্তরিত হতে না দেওয়া এবং সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি রোধ করা। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ওয়াজ মাহফিল শুধু মানুষের ধর্মীয় জ্ঞান বৃদ্ধি করবে না; বরং নৈতিকতা, মানবিকতা ও সমাজ সংস্কারের আলোও জ্বালাবে।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা

Address

Bogura
5800

Telephone

01920917982

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Balakoigari - বালাকৈগাড়ী posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share