24/05/2025
একটা দৃশ্যমান চূড়ান্ত আত্মহত্যার চিঠি লেখার আগে মানুষ বহুবার মনে মনে আত্মহত্যার চিঠি লিখে ফেলে, হুট করে কেউ পৃথিবীকে বলে না 'বিদায়'
জন্মের ছয়-সাত বছর পর যে ছেলেটা হঠাৎ করে জানতে পারে, তার জন্ম একটা অবৈধ জন্ম! তার জন্মের আগেই তার মাকে ছেড়ে গেছে তার বাবা, অস্বীকার করেছে তার জন্মের বৈধতাকে! রাগে, দুঃখে, লজ্জায় সে সময় সে ছেলেটা মগজে লম্বা একটা আত্মহত্যার চিঠি লিখেছে! শেষমেশ তার আত্মহত্যাটা করা হয়নি মায়ের কথা ভেবে! কেন মরবে সে? মা তো তাকে অনাদরে ছুড়ে ফেলেনি ডাস্টবিনে, কুকুর-বেড়ালের খাবার হতে! মা তো তাকে পৃথিবী দেখিয়েছে! তার মনে হয়, মা তাকে ভালোবাসে!
বয়স যখন তার কুড়ি, এক ভোরে মা’কে ডাকতে গিয়ে দেখে মা কথা বলে না! মা চলে গেছে সেই দেশে, যে দেশে গেলে আর কেউ ফিরে আসে না! মায়ের জন্যে বেঁচে থাকা ছেলেটা সেদিন আরও একটা খসখসে আত্মহত্যার চিরকুট মাথায় নিয়ে ঘুরে ফিরে!
একটা বেঁচে থাকার কারণ খোঁজে, একটু আশ্রয় চায় পৃথিবীর কাছে! একদিন প্রেম আসে তার হৃদয়ে! সে আশ্রয় খুঁজে পায় শ্যামবর্ণের কোনো এক তরুণীর হাসিতে, চোখের চাহনিতে, গালের টোলে, কপালের টিপে! ছেলেটাও ভালোবাসে খুব!
জীবনের সমস্ত ব্যর্থতা, সমস্ত পরাজয়, অবসাদ, দুঃখ-কষ্ট ছেলেটা ভুলে থাকে ওই তরুণীকে জয় করার আনন্দে! সময় যত গড়ায়, তত বিশ্বাসের সেতুটা আরও পোক্ত হয়, ভালোবাসা গভীর হয়!
আচমকা একদিন সে বিশ্বাসের ঘরও তার পুড়ে যায়! প্রেমিকা নয়কে ছয় বানিয়ে অন্য কারো বুকে পাড়ি জমায়! জটিল একটা অঙ্ক কষতে বসে ছেলেটা! হিসাব শেষে যখন দেখে, পৃথিবীর কেউ তাকে ভালোবাসেনি, ভালোবাসার ভান করেছে, করুণা করেছে, কপাল দোষ বলে মেনে নিয়েছে, তখন সে চূড়ান্তভাবে আত্মহত্যার চিঠিটা লিখে ফেলে! পৃথিবীকে বলে ‘বিদায়‘
সুনয়না;
আমি এমন অসংখ্য আত্মহত্যার চিঠি মনে মনে লিখে আবার ছিঁড়ে ফেলে এসেছি! আমার জীবনেও আছে বহু পরাজয়, বহু ব্যর্থতা, বহু অপ্রাপ্তি! আমিও পেয়েছি পৃথিবী হতে বিপুল তাচ্ছিল্য! আমি ক্লান্ত প্রাণ এক— অবশেষে আমি তোমার কাছে এসেছিলাম আশ্রয়ের জন্য! আমাকে তুমি করুণা নয়, সত্যি সত্যি ভালোবাসো বলেই আমি বিশ্বাস করেছিলাম! পৃথিবী আমায় ঘৃণা করুক বা না করুক তাতে আমার কিছু যায় আসে না! তুমি আমায় ঘৃণা করবে না, তুমি শুধু আমার বিশ্বাস ভেঙে দিবেনা! এতটুকু আত্মবিশ্বাস ছিল! আমি বড্ড হতাশাগ্রস্ত, আমি বড্ড ইনসিকিউর, আমি বড্ড উন্মাদ, আমি ভীষণ এলোমেলো! যেদিন আমার বিশ্বাস ভেঙে যাবে, সেদিন পরাজিত সোহাগের বেঁচে থাকার মতো আর কোনো উদ্দেশ্য থাকবে না! আমিও লিখে ফেলতে পারি চূড়ান্ত আত্মহত্যার চিঠি, আমিও পৃথিবীকে বলে দিতে পারি ‘বিদায়‘
— Shohag Mkks