04/02/2025
িবস তথা সমাপনী
ঐতিহাসিক তাফসীরুল কুরআন মাহফিল'২৫
উপস্থিত নোট ও মোডিফাইডঃ
মোঃ মিনহাজুল ইসলাম Md. Minhazul Islam
#প্রধান_মুফাচ্ছির: ড. মিজানুর রহমান আল আজহারী।
#বিষয়বস্তুঃ সুরা নাহল এর ৯০ নং আয়াতের আলোকে আদর্শ সমাজ গঠনের উপায়।
আয়াত:
اِنَّ اللّٰهَ يَاۡمُرُ بِالۡعَدۡلِ وَالۡاِحۡسَانِ وَإِيۡتَآىٕ ذِى الۡقُرۡبٰى وَيَنۡهٰى عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَالۡمُنۡكَرِ وَالۡبَغۡىِ ۚ يَعِظُكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُوۡنَ
আল্লামাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন- আজ আমি যদি শ্রোতার কাতারে থেকে প্রিয় আল্লামার নূরানি চেহারা দেখে তার মুখে তাফসীর শুনতে পারতাম তাহলে আমাদের হৃদয় ঠান্ডা হয়ে যেতো/ তৃষ্ণার্ত হৃদয় শীতল হতো।
তিনি আরো বলেন- প্রতি ১০০ বছরে আল্লাহ একজন মুজাদ্দিদ পাঠান,যিনি সমাজকে সংস্কার করেন,আল্লামা সাঈদী ছিলেন তেমন একজন মুজাদ্দিদ। তিনি শিরক বিদাতের আস্তানাকে গুড়ে দিয়ে, তাওহীদের বাণীকে সমুন্নত করেছেন। আজীবন তিনি ইসলামকে বিজয়ী শক্তি হিসাবে দেখার স্বপ্ন দেখতেন। "He is a strong mouthpiece of Islamic revivalism." "তিনি ইসলামী পুনর্জাগরণের শক্তিশালী মুখপাত্র।"
আল্লামাকে নিয়ে তিনি সর্বশেষ বলেন- উনার মৃত্যু যে মেডিক্যাল কিলিং ছিলো সেটা আমরা ধারণা করতেই পারি,কারণ তিনি ছিলেন -আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার। তাই তিনি জাতীর কাছে উনার মৃত্যু কি স্বাভাবিক নাকি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড ছিলো সেটা পরিষ্কার করতে বলেছেন সরকারের কাছে।
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ
বাংলা অর্থ: 'প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু ' (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)
লুতফুর রহমানকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন- তিনি বলতেন মিজান আবার আসবে, হুজুর আমি তো আসলাম আপনি তো আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তিনি আরো বলেন- উনার গলায় সুর ছিলোনা কিন্তু উনার কথার গাঁথুনি/ শব্দের বুনন, এত্ত চমৎকার প্রেজেন্টেশনে ঐতিহাসিক বর্ণনা গুলো দিতেন যা আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছি।
বায়তুশ শরফের মরহুম পীর সাহেব সহো ২৪ এর ছাত্র- নাগরিক আন্দোলনে তথা বৈষম্যেবিরোধী আন্দোলনে যারা তাদের বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়ে নতুন বাংলাদেশ আমাদের উপহার দিয়েছে তাদেরকে এই ঐতিহাসিক ময়দান থেকে স্মরণ করছি। বিশেষ করে চট্টগ্রামের শহিদ ফয়সাল ও ওয়াসীমকে স্মরণ করছি।
আল্লাহ সবাইকে শহিদ হিসাবে কবুল করে তুমি উত্তমস্থানে স্থান করে দিয়ো।
✅ মুল আলোচনা:
শুরুতেই তিনি বলেন- আমি একজন কুর-আনের নগণ্য ছাত্র। এই প্রোগ্রাম যদি আমাদের জীবনকে পরিবর্তণ করে ,চিন্তার DNA কে পরিবর্তন করে দেয় তাহলেই চট্টগ্রামের এই প্যারেড মাঠের আয়োজন সার্থক।
اِنَّ اللّٰهَ يَاۡمُرُ بِالۡعَدۡلِ وَالۡاِحۡسَانِ وَإِيۡتَآىٕ ذِى الۡقُرۡبٰى وَيَنۡهٰى عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَالۡمُنۡكَرِ وَالۡبَغۡىِ ۚ يَعِظُكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُوۡنَ
বাংলা অনুবাদ:
"নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়বিচার, সদাচার ও আত্মীয়স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কার্যকলাপ ও অবিচারের নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো।"(সূরা আন-নাহল: ৯০)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (র) বলেন- এটি কুরআনের সবচেয়ে জানেমানে আয়াত। এটির আবেদন, দ্যোতনা, এবং অর্থ বেশি।
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ৩টা আদেশ এবং ৩টা নিষেধ এর কথা বলেছেন (Three does and three don’t): এটিতে আল্লাহ গোটা শরীয়ার মূল নির্জাসকে ডুকিয়ে দিয়েছেন।
🔵 আদেশসমূহ:
১। ন্যায়পরায়ণতা/ন্যায়বিচার (আল আদল)- Justice
অর্থ- সমন্ময় করা -ভারসাম্য রক্ষা করা,মধ্যমপন্থা
The core message of every Devine scripture was to uphold justice. "প্রতিটি আসমানি গ্রন্থের মূল বার্তা ছিল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।"
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يُوصِيكُمُ ٱللَّهُ فِىٓ أَوْلَـٰدِكُمْ ۖ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ ٱلْأُنثَيَيْنِ ۚ فَإِن كُنَّ نِسَآءًۭ فَوْقَ ٱثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ ۖ وَإِن كَانَتْ وَٰحِدَةًۭ فَلَهَا ٱلنِّصْفُ ۚ وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَٰحِدٍۢ مِّنْهُمَا ٱلسُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِن كَانَ لَهُۥ وَلَدٌۭ ۚ فَإِن لَّمْ يَكُن لَّهُۥ وَلَدٌۭ وَوَرِثَهُۥٓ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ ٱلثُّلُثُ ۚ فَإِن كَانَ لَهُۥٓ إِخْوَةٌۭ فَلِأُمِّهِ ٱلسُّدُسُ مِنۢ بَعْدِ وَصِيَّةٍۢ يُوصِى بِهَآ أَوْ دَيْنٍۢ ۗ ءَابَآؤُكُمْ وَأَبْنَآؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًۭا ۚ فَرِيضَةًۭ مِّنَ ٱللَّهِ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًۭا
বাংলা অনুবাদ:
"আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের বিষয়ে তোমাদের নির্দেশ দেন: একজন পুরুষের অংশ দুই নারীর অংশের সমান। যদি তারা (সন্তান) দুইয়ের অধিক হয়, তবে তাদের জন্য রয়েছে ত্যাগকৃত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ। আর যদি একজন কন্যা হয়, তবে তার জন্য রয়েছে অর্ধেক। মৃত ব্যক্তির যদি সন্তান থাকে, তবে তার পিতা-মাতার প্রত্যেকের জন্য রয়েছে ত্যাগকৃত সম্পদের এক-ষষ্ঠাংশ। যদি তার কোনো সন্তান না থাকে এবং তার পিতা-মাতা-ই উত্তরাধিকারী হয়, তবে তার মায়ের জন্য রয়েছে এক-তৃতীয়াংশ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে, তবে তার মায়ের জন্য রয়েছে এক-ষষ্ঠাংশ, তবে এসব অংশ নির্ধারিত হবে তার করা ওসিয়ত এবং ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতামাতা ও সন্তানদের (সম্পর্কে) তোমরা জানো না, তাদের মধ্যে কে কল্যাণের দিক থেকে তোমাদের নিকটবর্তী। এটা আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।" (সূরা আন-নিসা: ১১)
হাদিস:📜 الظُّلْمُ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
🔹 বাংলা অর্থ:"অন্যায় (জুলুম) কিয়ামতের দিন অন্ধকারে পরিণত হবে।" সহিহ মুসলিম (হাদিস নং ২৫৭৯)
এই আয়াতের শিক্ষায় তিনি বলেন-একটি শান্তিময় সমাজ, সমৃদ্ধ সমাজ, মানবিক সমাজ গড়তে চাই তাহলে এই আয়াতে যতগুলো পয়েন্ট আছে সবগুলোর বাস্তবায়ণ লাগবে।
আল্লাহ তায়ালা হাদিসে কুদসিতে আরো বলেন-
يا عبادي! إني حرمت الظلم على نفسي وجعلته بينكم محرماً، فلا تظالموا
🔹 বাংলা অনুবাদ: “হে আমার বান্দাগণ! আমি নিজের জন্য জুলুমকে হারাম করেছি এবং তোমাদের মধ্যেও একে হারাম করেছি। অতএব, তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম করো না।”📖 সহিহ মুসলিম (হাদিস নং ২৫৭৭)
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُم بَيْنَ النَّاسِ أَن تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ ۚ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُم بِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا
বাংলা অনুবাদ: "নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দেন, যাতে তোমরা আমানত তাদের নিকট পৌঁছে দাও, যারা তার উপযুক্ত। এবং যখন তোমরা মানুষের মধ্যে বিচার করো, তখন ন্যায়ের সাথে বিচার করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে যে উত্তম উপদেশ দেন, তা অত্যন্ত চমৎকার। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও দেখেন।"(সূরা আন-নিসা: ৫৮)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-
يَا أَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ كُونُوا۟ قَوَّٰمِينَ لِلَّهِ شُهَدَآءَ بِٱلْقِسْطِ ۖ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَـَٔانُ قَوْمٍ عَلَىٰٓ أَلَّا تَعْدِلُوا۟ ۚ ٱعْدِلُوا۟ هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ ۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرٌۭ بِمَا تَعْمَلُونَ
বাংলা অনুবাদ: "হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য প্রতিষ্ঠিত থাকো ন্যায়বিচারের সাক্ষ্যদাতা হিসেবে, এবং কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে ন্যায়বিচার করতে বাধা না দেয়। তোমরা ন্যায়বিচার করো, এটাই তাকওয়ার সবচেয়ে নিকটবর্তী। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সব কাজের খবর রাখেন।"(সূরা আল-মায়েদা: ৮)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন-
سَمَّـٰعُونَ لِلْكَذِبِ أَكَّـٰلُونَ لِلسُّحْتِ ۚ فَإِن جَآءُوكَ فَٱحْكُم بَيْنَهُم أَوْ أَعْرِضْ عَنْهُمْ ۚ وَإِن تُعْرِضْ عَنْهُمْ فَلَن يَضُرُّوكَ شَيْـًۭٔا ۖ وَإِنْ حَكَمْتَ فَٱحْكُم بَيْنَهُم بِٱلْقِسْطِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُقْسِطِينَ
বাংলা অনুবাদ: "তারা মিথ্যা কথা শোনার জন্য সদা প্রস্তুত এবং হারাম উপার্জন ভক্ষণে লিপ্ত। যদি তারা তোমার নিকট বিচার চাইতে আসে, তবে তুমি ইচ্ছা করলে তাদের মাঝে বিচার করো অথবা তাদের উপেক্ষা করো। যদি তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করো, তবে তারা তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু যদি তুমি বিচার করো, তবে ন্যায়বিচারের সঙ্গে বিচার করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।"(সূরা আল-মায়েদা: ৪২)
وَنَضَعُ ٱلْمَوَٰزِينَ ٱلْقِسْطَ لِيَوْمِ ٱلْقِيَـٰمَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌۭ شَيْـًۭٔا ۖ وَإِن كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍۢ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا ۗ وَكَفَىٰ بِنَا حَـٰسِبِينَ
বাংলা অনুবাদ: "আর কিয়ামতের দিনে আমরা ন্যায়বিচারের জন্য ওজনের দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করব। সেখানে কারও প্রতি সামান্যও অবিচার করা হবে না। কারও আমল যদি সরিষা দানার ওজন পরিমাণও হয়, তবে আমরা তা নিয়ে আসব। এবং হিসাব গ্রহণের জন্য আমরাই যথেষ্ট।"(সূরা আল-আনবিয়া: ৪৭)
মক্কা বিজয় ৮ম হিজরীতে, চুরীতে ধরা পড়লো বনু মাখজুম গোত্রের একটা সম্ভ্রান্ত নারী যেটার হাত আল্লাহর রাসুল কাটতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
✅ প্রাসঙ্গিক শিক্ষনীয় ঘটনাঃ(সম্পূর্ণ ঘটনা খুজে পড়ে নিবেন)
মক্কা বিজয়ের পর, একদিন বনু মাখজুম গোত্রের এক সম্ভ্রান্ত মহিলা, যার নাম ছিল ফাতিমা বিনত আসলাম, চুরির অপরাধে ধরা পড়েন। তিনি মক্কার একটি ধনী ও ক্ষমতাশালী পরিবার থেকে ছিলেন। চুরির অপরাধে তার হাত কেটে ফেলার শাস্তি ছিল, যা ইসলামী আইন অনুসারে নির্ধারিত ছিল।
তবে, তার পরিবারের সদস্যরা রাসূল (সা.)-এর কাছে তদবির করতে আসেন, তাকে দয়া করার অনুরোধ করেন। এর পর, উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) রেগে গিয়ে বললেন, "হে আল্লাহর রাসূল! তুমি যদি এই মহিলা থেকে হাত কাটার শাস্তি নাও কার্যকর করো, তাহলে অন্যরা বুঝবে যে, এই আইন শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের জন্য।"
তখন রাসূল (সা.) কঠোরভাবে বললেন:"এটা তো আল্লাহর আইন, এবং কেউ যেন তা এড়িয়ে না যায়।"
ফাতিমার হাত কেটে ফেলা হলো, এবং ইসলামী আইনের গুরুত্ব ও ন্যায়বিচারের প্রতি আনুগত্য দেখা গেল।
🔵 শিক্ষা:
এই ঘটনাটি আমাদের শেখায় যে, ইসলাম কোনো প্রকারের ভেদাভেদ বা পক্ষপাতিত্ব না করে ন্যায়বিচারের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে, এবং আইন সবার জন্য সমান।
✅ ঘটনা ২ (সম্পূর্ণ ঘটনা খুজে পড়ে নিবেন)
একদিন খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) এর ছেলে আব্দুর রহমান (রা.) মদ পান করেন। এই অপরাধের জন্য ইসলামিক আইনে তার বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। উমর (রা.) কঠোরভাবে তার ছেলেকে ৮০ বার বেত্রাঘাত করতে বলেন, এবং সবার সামনে ঘোষণা করেন যে, ইসলামী আইন সবার জন্য সমান—এটি প্রমাণ করে যে, আইনের মধ্যে কোনো পক্ষপাতিত্ব থাকবে না, এমনকি খলিফার ছেলে হলেও নয়।
এই ঘটনা দেখায়, উমর (রা.) ছিলেন ন্যায়বিচারের মূর্ত প্রতীক, এবং তিনি অন্যায়কে রুখে দিতে সবসময় অটল ছিলেন।
✅ ঘটনা-৩ (সম্পূর্ণ ঘটনা খুজে পড়ে নিবেন)
একদিন আমর ইবনুল আস (রা.)—মিশরের গভর্ণর—তার ছেলে, আবদুল্লাহ ইবন আমর-কে একটি সঙ্গীকে বেত্রাঘাত করতে দেখে। তিনি তার ছেলেকে শাস্তি দেন, কিন্তু তার আচরণ নিয়ে সন্দেহ হয়। ঘটনাটি শোনার পর, খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) তাকে একটি চিঠি পাঠান।
চিঠিতে উমর (রা.) লিখেন: "যদি তুমিও নিজে একজন শাসক হও, তবে তোমার ছেলের জন্য কোনো বিশেষ সুবিধা থাকতে হবে না, আল্লাহর আইন সবার জন্য সমান। তোমার ছেলের বিরুদ্ধে কোনো অন্যায় হলে, তাকে শাস্তি দিতে হবে, অন্যথায় তোমাকেও তার শাস্তি দিতে হবে।"
উমরের নির্দেশনায়, আমর ইবনুল আস (রা.) তার ছেলেকে শাস্তি দেন এবং খলিফা উমরের কাছে আসেন। তখন উমর (রা.) নিজে উপস্থিত হয়ে আমর (রা.)-এর ছেলেকে বেত্রাঘাত করেন এবং সবার সামনে ঘোষণা করেন যে, আইন সবার জন্য সমান।
🔵 শিক্ষা:
এই ঘটনাটি ন্যায়বিচারের এক বিশাল উদাহরণ, যেখানে খলিফা উমর (রা.) তাদের সবার প্রতি ইসলামী আইনের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন—শাসক, শাসিত, ধনী, গরিব, অথবা তার নিজের পরিবারও কেন, কোনো পক্ষই ইসলামী আইনের বাইরে নয়।
রাসুল সঃ বলেন-
إِنَّ ٱلْمُقْسِطِينَ عِندَ ٱللَّهِ فِى ٱلْجَنَّةِ عَلَىٰٓ مَنَابِرِ مِنْ نُورٍۢۖ ٱلَّذِينَ يَعْدِلُونَ فِى حُكْمِهِمْ وَٰلَىٰٓهِمْ وَمَا وَلَّوْا۟
বাংলা অনুবাদ: "নিশ্চয়ই, ন্যায়পরায়ণরা আল্লাহর কাছে জন্নাতে (স্বর্গে) نور (আলো) দিয়ে গড়া মঞ্চে বসবে, যারা তাদের বিচার এবং পরিবারে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে এবং যা তাদের দায়িত্বে ছিল তার মধ্যে ন্যায়কানুন অনুসরণ করেছে।" (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৩৫৪৮)
২। সদাচরণ
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
أَنَّ ٱللَّهَ يَأْمُرُ بِٱلْعَدْلِ وَٱلْإِحْسَـٰنِ وَإِيتَاءِ ذِى ٱلْقُرْبَىٰ وَيَنهَىٰ عَنِ ٱلْفَحْشَاءِ وَٱلْمُنْكَرِ وَٱلْبَغْىِ ۚ يَعِظُكُم لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
বাংলা অনুবাদ:"নিশ্চয়ই আল্লাহ আদেশ দেন ন্যায়বিচার, সদাচরণ এবং আত্মীয়স্বজনের প্রতি সহানুভূতি প্রদানের, এবং নিষেধ করেন অশ্লীলতা, মন্দ ও অত্যাচারের ব্যাপারে। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।" (সুরা আল-নাহল: ১৬:৯০)
✅ প্রাসঙ্গিক ঘটনাটি:
সুমামা ইবনু উসাল (রা.) ইয়ামামার এক প্রভাবশালী নেতা ছিলেন, এবং তিনি ইসলাম ও রাসূল (সা.) এর বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করতেন। একদিন, সুমামা (রা.) মক্কা থেকে গোপনে নবী (সা.) কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে মদীনা যাচ্ছিলেন। তবে, পথিমধ্যে তিনি মুসলিম বাহিনীর হাতে আটক হন।
নবী (সা.) তাকে বন্দী করে মসজিদে নিয়ে আসেন। সুমামা (রা.) এর পরবর্তী তিনদিন বন্দী অবস্থায় নবী (সা.) এর কাছে সঠিক উপদেশ ও নসিহত শোনেন। নবী (সা.) তার সাথে সদাচরণ করেন এবং তাকে ইসলাম সম্পর্কে জানাতে সাহায্য করেন। এই তিনদিনের পর সুমামা (রা.) ইসলামের সঠিক বার্তা বুঝতে পারেন এবং তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
তিনি পরবর্তীতে একজন সাহাবী হয়ে ওঠেন এবং ইসলাম প্রচারে অবদান রাখেন।
🔵শিক্ষা:
এ ঘটনা প্রমাণ করে যে, ইসলাম সহানুভূতি ও নসিহতের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সদাচরণের মাধ্যমে দিশা পরিবর্তন হতে পারে।
✅ You can win the heart of your enemies. এহসান দিয়ে আপনি আপনার শত্রুর মন জয় করতে পারবেন। আল্লাহ বলেন, وَأَنفِقُوا۟ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا تُلْقُوا۟ بِأَيْدِيكُمْ إِلَى ٱلتَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُحْسِنِينَ
বাংলা অনুবাদ:"আর তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ফেলো না। আর তোমরা সদাচার করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সদাচারীদের ভালোবাসেন।"📖 (সুরা আল-বাকারা: ২:১৯৫)
🔵 শিক্ষা:এই আয়াত আমাদের শেখায় যে—
✅ আল্লাহর পথে ব্যয় করা (দান-সদকা ও ভালো কাজে সম্পদ খরচ করা) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
✅ নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়, অর্থাৎ কৃপণতা বা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষতির মুখে ফেলা ঠিক নয়।
✅ সদাচরণ ও উত্তম ব্যবহার করা উচিত, কারণ আল্লাহ সদাচারীদের ভালোবাসেন।
আবার আল্লাহ তায়ালা বলেন- هَلْ جَزَآءُ ٱلْإِحْسَـٰنِ إِلَّا ٱلْإِحْسَـٰنُ
বাংলা অনুবাদ:"সদাচারের প্রতিদান কি সদাচার ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে?"📖 (সুরা আর-রহমান: ৫৫:৬০)
🔵শিক্ষা:
✅ ভালো কাজের ফল ভালোই হয়।
✅ যে সদাচার করে, সে আল্লাহ ও মানুষের কাছ থেকে সদাচারই পাবে।
✅ উত্তম কাজের মাধ্যমে শান্তি, কল্যাণ ও বরকত অর্জন করা যায়।
ইহসান ২ প্রকার-
১। ইহসান ফিল ইবাদাহ- নামাজে একাগ্রচিত্তে নিজেকে উতসর্গ করে দেয়া।
২। মুয়ামালা ফিল ইবাদাহ- দৈনন্দিন কাজে কোমলতা, অনুগ্রহের সাথে করা।
ইহসান মানে কি সে ব্যাপারে নবী স. বলেন- "أنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ، فَإِنَّهُ يَرَاكَ."
বাংলা অনুবাদ:"ইহসান হলো—তুমি আল্লাহর ইবাদত এভাবে করো যেন তুমি তাকে দেখছো। আর যদি তুমি তাকে না দেখতে পাও, তাহলে অন্তত এই বিশ্বাস রাখো যে, তিনি তোমাকে দেখছেন।"📖 (সহিহ বুখারি: ৫০, সহিহ মুসলিম: ৯)
🔵শিক্ষা:
✅ ইবাদতে গভীর মনোযোগ ও আন্তরিকতা থাকা উচিত।
✅ যদি আল্লাহকে সরাসরি না দেখি, তবুও আমাদের তার প্রতি গভীর বিশ্বাস থাকতে হবে।
✅ আল্লাহ সবকিছু দেখছেন—এই অনুভূতি আমাদের জীবনকে আরও সংযমী ও ধার্মিক করতে সাহায্য করে।
কাজের ইহসান মানে কি,সে ব্যাপারে নবী বলেন-
إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ، فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ، وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذِّبْحَةَ، وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ، وَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ
বাংলা অনুবাদ:"নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ইহসান (উত্তম আচরণ) নির্ধারিত করেছেন। সুতরাং যখন তোমরা হত্যা করো, তখন তা উত্তমভাবে করো। যখন তোমরা পশু জবেহ করো, তখন তা সুন্দরভাবে করো। তোমাদের কেউ যেন তার ছুরি ধারালো করে নেয় এবং তার জবেহকৃত প্রাণীকে যেন কষ্ট না দেয়।"📖 (সহিহ মুসলিম: ১৯৫৫)
🔵শিক্ষা:
✅ সর্ব ক্ষেত্রে ইহসান বা উত্তম আচরণ করা উচিত।
✅ এমনকি প্রাণী জবেহের ক্ষেত্রেও যত্নবান ও দয়ালু হওয়া উচিত।
✅ ইসলাম কেবল মানুষের সাথেই নয়, পশু-পাখির প্রতিও সদাচার শিক্ষা দেয়।
৩। নিকটাত্মীয়দের দানের আদেশ দেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَآتِ ذَا ٱلْقُرْبَىٰ حَقَّهُۥ وَٱلْمِسْكِينَ وَٱبْنَ ٱلسَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا
বাংলা অনুবাদ:"আত্মীয়স্বজনের প্রাপ্য তাদের দাও, দরিদ্র ও মুসাফিরদেরও (অধিকার দাও) এবং অপচয় করো না।" 📖 (সুরা আল-ইসরা: ১৭:২৬)
🔵শিক্ষা:
✅ আত্মীয়স্বজনের হক আদায় করা ফরজ।
✅ গরিব ও মুসাফিরদের সাহায্য করা উচিত।
✅ অপচয় করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
নবী সঃ বলেন- لَا يَدْخُلُ ٱلْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ
বাংলা অনুবাদ:"আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।"📖 (সহিহ মুসলিম: ২৫৫৬, সহিহ বুখারি: ৫৯৮৪)
🔵শিক্ষা:
✅ আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
✅ পরিবার ও আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জরুরি।
✅ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও এটি জান্নাতে প্রবেশের বাধা হতে পারে।
✅ কোনো আত্মীয় অন্যায়ের জন্য কষ্ট দিলেও ধৈর্য ধরে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
নবী সঃ আরো বলেন- إِنَّ الصَّدَقَةَ عَلَى الْمِسْكِينِ صَدَقَةٌ، وَعَلَى ذِي الرَّحِمِ اثْنَتَانِ: صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ
বাংলা অনুবাদ:"দরিদ্রকে দান করলে তা সাধারণ দান হিসেবে গণ্য হয়, কিন্তু আত্মীয়কে দান করলে তা দ্বিগুণ সওয়াব অর্জন করে—একদিকে দান, অন্যদিকে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা।"📖 (সহিহ তিরমিজি: ৬৫৮, সহিহ ইবন মাজাহ: ১৮৪৪)
🔵শিক্ষা:
✅ গরিবদের দান করা অত্যন্ত পুণ্যের কাজ।
✅ নিজ আত্মীয়দের দান করলে দ্বিগুণ সওয়াব হয়—একটি দানের জন্য, আরেকটি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার জন্য।
✅ দান শুধু অর্থ নয়, বরং সময়, সহানুভূতি ও ভালো ব্যবহারের মাধ্যমেও হতে পারে।
✅ আত্মীয়দের প্রতি দায়িত্ব বেশি, তাই তাদের প্রয়োজন মেটানো বেশি সওয়াবের কাজ।
আবার অন্য হাদিসে তিনি বলেন- مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ وَيُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ
বাংলা অনুবাদ:"যে ব্যক্তি চায় তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ হোক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।"📖 (সহিহ বুখারি: ৫৯৮৫, সহিহ মুসলিম: ২৫৫৭)
🔵শিক্ষা:
✅ আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধি করেন।
✅ আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখলে আয়ু বরকতময় হয়।
✅ যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে, সে বরকত থেকে বঞ্চিত হয়।
✅ পরিবার ও আত্মীয়দের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া ইসলামের অন্যতম শিক্ষা।
🔵 নিষেধসমূহ :
১। অশ্লীলতা হারাম/ পরিহার করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ ٱلْفَوَٰهِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلْإِثْمَ وَٱلْبَغْيَ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا۟ بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِۦ سُلْطَٰنًا وَأَنْ تَقُولُوا۟ عَلَىٰ ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ: "বলো, নিঃসন্দেহে আমার রব (প্রভু) এমন অপবিত্র কাজগুলো হারাম করেছেন, যা প্রকাশ্য এবং গোপন, পাপ, অন্যায়ভাবে অত্যাচার, এবং এমন কিছু যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে শরীক করার ভিত্তি নেই, এবং আল্লাহর নামে অজানা কথা বলা।"📖 (সুরা আল-আনআম: ৬:১৪৫)
🔵শিক্ষা:
✅ খাবার-দাবার, আচরণ ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও ইসলাম সাফ এবং স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়।
✅ অপবিত্রতা, পাপ, অন্যায় অত্যাচার এবং আল্লাহর শরীক নির্ধারণের প্রতি কঠোর নিষেধাজ্ঞা।
✅ ইসলামে কেবল আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখা এবং তার হুকুম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
🔵এই আয়াত থেকে নারী জগতের জন্যে শিক্ষা হচ্ছে-
✅ নারী জগত সকল ধরণের বেহায়াপনা/ উলঙ্গপনা থেকে বিরত থাকতে হবে।
✅ এই মায়ের জাতকে তারা ভোগের বস্তু/ পণ্য/ বিলবোর্ড বানাতে চাই,সাবধান হতে হবে।
✅ এইটা মানবতাকে অপমান করে, নিজেকে অসম্মানিত করে।
নবী সঃ বলেন- الدُّنْيَا كُلُّهَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا ٱمَرْأَةٌ صَٰلِحَةٌ
বাংলা অনুবাদ:"দুনিয়ার সবকিছুই উপভোগ্য (মাতা), এবং দুনিয়ার সেরা উপভোগ্য বস্তু হলো একটি ভালো স্ত्री।"📖 (সহিহ মুসলিম: ৩৫৪৮)
🔵শিক্ষা:
✅ দুনিয়া সাময়িক উপভোগের বস্তু, কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো উপহার হলো সৎ স্ত্রী।
✅ একজন ভালো স্ত্রী মানুষকে নৈতিকভাবে উন্নত করতে এবং আল্লাহর দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে।
✅ তবে, দুনিয়া স্বল্পস্থায়ী, তাই তাতে অতিরিক্ত বিনোদন ও মমতা হারানোর পেছনে সময় ব্যয় করা উচিত নয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا۟ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ:"নিশ্চয়ই যারা চান যে, যারা বিশ্বাসী তারা তাদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, কিন্তু তোমরা জানো না।" 📖 (সুরা আন-নূর: ২৪: ১৯)
🔵শিক্ষা:
✅ অশ্লীলতা বা গর্হিত কাজের প্রচার ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
✅ গোপনভাবে বা প্রকাশ্যে পাপকর্মের প্রচার সমাজে ফিতনা সৃষ্টি করে এবং এর ফলে শাস্তি আসবে।
✅ বিশ্বাসী ব্যক্তির কর্তব্য হলো সমাজে খারাপ কাজের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকা এবং সেটা রোধ করা।
তিনি আরো বলেন- وَلَا تَقْرَبُوا۟ الزِّنَآ إِنَّهُۥ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
বাংলা অনুবাদ:"এবং তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয়ই তা একটি নিকৃষ্ট কাজ এবং একটি পথহীনতা।"📖 (সুরা আল-ইসরা: ১৭: ৩২)
🔵শিক্ষা:
✅ ব্যভিচার বা অশ্লীল সম্পর্ক ইসলামে নিষিদ্ধ এবং তা ভয়াবহ পাপ।
✅ এটি শুধুমাত্র শাস্তির কারণ নয়, সমাজে বিশৃঙ্খলা ও পাপের প্রবাহ সৃষ্টি করে।
✅ এ আয়াতটি আমাদের সতর্ক করে যে, এমন কাজের কাছেও যাওয়া উচিত নয়, যা শিরক বা পাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
অন্য আয়াতে তিনি বলেন- قَالَ لِقَوْمِهِۦٓ أَتَأْتُونَ ٱلْفَٰحِشَةَ وَأَنتُمْ تُبْصِرُونَ
বাংলা অনুবাদ:"তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, 'তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছো, অথচ তোমরা তা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছো।'" 📖 (সুরা আল-আরাফ: ৭: ৮০)
🔵শিক্ষা:
✅ এটি হজরত লূতের (আ.) সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছিল, যারা তাদের অশ্লীল কাজের দিকে প্রবৃত্তি হয়েছিল।
✅ এই আয়াতটি আমাদের শেখায় যে, পাপ বা অশ্লীলতার দিকে ধাবিত হলে, আমাদের আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে এবং বুঝতে হবে যে, আমরা কী করছি।
✅ আল্লাহর বিধান মেনে চলা এবং পাপ থেকে দূরে থাকা আমাদের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে।
২। সমস্ত মন্দ কাজ/অবাধ্যতা
আল্লাহ বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا۟ لَا تَتَّبِعُوا۟ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَٰنِ ۚ وَمَن يَتَّبِعْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَٰنِ فَإِنَّهُۥ يَأْمُرُ بِٱلْفَحْشَاءِ وَٱلْمُنْكَرِ ۚ وَلَوْلَا فَضْلُ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُۥ مَا زَكَآ أَحَدٌۭ مِّنْكُمْ أَبَدًۭا وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يُزَكِّي مَن يَشَآءُ ۚ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ: "হে যারা বিশ্বাস রেখেছো, তোমরা শয়তানের পদচিহ্ন অনুসরণ করোনা। আর যে শয়তানের পদচিহ্ন অনুসরণ করবে, সে অবৈধ কাজ ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেবে। আর যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত না থাকতো, তবে তোমাদের মধ্যে কেউই কখনো পরিশুদ্ধ হতে পারতো না, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পরিশুদ্ধ করেন। আল্লাহ শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।" 📖 (সুরা আল-নূর: ২৪: ২১)
🔵শিক্ষা:
✅ এ আয়াতটি আমাদের শয়তানের পথ অনুসরণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়।
✅ যে ব্যক্তি শয়তানের পদচিহ্ন অনুসরণ করে, সে মন্দ কাজ এবং অসৎ পথের দিকে ধাবিত হয়।
✅ এটি আমাদের সতর্ক করে যে, আল্লাহর রহমত ছাড়া আমাদের মধ্যে কেউ পবিত্র হতে পারবে না।
✅ আল্লাহ যখন চান, তখনই আমাদের তাওবা এবং পরিশুদ্ধি সম্ভব হয়।
তিনি অন্যত্র বলেন- كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِ