
08/05/2025
🏵 *মোহিনী একাদশী মাহাত্ম্য* :-
********************************************
💥 *আজ ০৮ ই মে , বৃহস্পতিবার* ,২০২৫ , ২৪ ই বৈশাখ , ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। গৌড় একাদশী ।
💥 *শুভ মোহিনী একাদশী ব্রত* উপবাস সবাই এই একাদশী পালন করবেন, এবং অন্যকে একাদশী ব্রত পালনে উৎসাহিত করবেন এবং মনুষ্য জীবনকে সার্থক করে তুলুন।🙏
💥 কুর্মপুরাণে বৈশাখ শুক্লপক্ষের ‘মোহিনী’ একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন- ‘হে জনার্দন! বৈশাখ শুক্লপক্ষীয়া একাদশীর কি নাম, কি ফল, কি বিধি-এসকল কথা আমার নিকট বর্ণনা করুন।’ উত্তরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন হে ধর্মপুত্র! আপনি আমাকে যে প্রশ্ন করেছেন পূর্বে শ্রীরামচন্দ্রও বশিষ্ঠের কাছে এই একই প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন- হে মুনিবর! আমি জনকনন্দিনী সীতার বিরহজনীত কারণে বহু দু:খ পাচ্ছি। তাই একটি উত্তম ব্রতের কথা আমাকেবলুন। যার দ্বারা সর্বপাপ ক্ষয় হয় ও সর্বদু:খ বিনষ্ট হয়।
💥 এই কথা শুনে বশিষ্ঠদেব বললেন- হে রামচন্দ্র! তুমি উত্তম প্রশ্ন করেছ। যদিও তোমার নামগ্রহণেই মানুষ পবিত্র হয়ে থাকে। তবুও লোকের মঙ্গলেরজন্য তোমার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ও পরম পবিত্র একটি ব্রতের কথা বলছি। বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষীয়া একাদশী ‘মোহিনী’ নামে প্রসিদ্ধা। এই ব্রত প্রভাবে মানুষের সকল পাপ, দু:খ ও মোহজাল অচিরেই বিনষ্ট হয়। তাইমানুষের উচিত সকল পাপক্ষয়কারী ও সর্বদু:খবিনাশী এই একাদশী ব্রত পালন করা। একাগ্রচিত্তে তার মহিমা তুমি শ্রবণ কর। এই কথাশ্রবণমাত্রেই সমস্ত পাপ বিনষ্ট হয়।
💥 পবিত্র সরস্বতী নদীর তীরে ভদ্রাবতী নামে এক সুশোভনা নগরী ছিল। চন্দ্রবংশজাত ধৃতিমান নামে এক রাজা সেখানে রাজত্ব করতেন। সেই নগরীতেইধনপাল নামে এক বৈশ্য বাস করতেন। তিনি ছিলেন পুণ্যকর্মা ও সমৃদ্ধশালী ব্যক্তি। তিনি নলকূপ, জলাশয়, উদ্যান, মঠ ও গৃহ ইত্যাদি নির্মাণ করেদিতেন। তিনি ছিলেন বিষ্ণুভক্তি পরায়ণ ও শান্ত প্রকৃতির মানুষ। সুমনা, দ্যুতিমান, মেধাবী, সুকৃতি ও ধৃষ্টবুদ্ধি নামে তার পাঁচজন পুত্র ছিল। পঞ্চমপুত্র ধৃষ্টবুদ্ধি ছিল অতি দুরাচারী। সে সর্বদা পাপকার্যে লিপ্ত থাকত। পরস্ত্রী সঙ্গী, বেশ্যাসক্ত, লম্পট ও দ্যুতক্রীড়া প্রভৃতি পাপে সে অত্যন্ত আসক্তছিল। দেবতা, ব্রাহ্মণ ও পিতামাতার সেবায় তার একেবারেই মতি ছিল না। সে অন্যায়কার্যে রত, দুষ্টস্বভাব ও পিতৃধন ক্ষয়কারক ছিল। সবসময় সেঅভক্ষ ভক্ষণ ও সুরাপানে মত্ত থাকত।🙏
💥 পিতা ধনপাল একদিন পথ চলছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন ধৃষ্টবুদ্ধি এক বেশ্যার গলায় হাত রেখে নি:সঙ্কোচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার নির্লজ্জপুত্রকে এভাবে চৌরাস্তায় ভ্রমণ করতে দেখে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হলেন। এই কুস্বভাব দর্শনে ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি তাকে গৃহ থেকে বার করে দিলেন।তার আত্মীয়-স্বজনও তাকে পরিত্যাগ করল। সে তখন নিজের অলংকারাদি বিক্রি করে জীবন অতিবাহিত করত। কিছুদিন এইভাবে চলার পরঅর্থাভাব দেখা দিল। ধনহীন দেখে সেই বেশ্যাগণও তাকে পরিত্যাগ করল। অন্নবস্ত্রহীন ধৃষ্টবুদ্ধি ক্ষুধা-তৃষ্ণায় অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়ল। অবশেষে নিজের গ্রামে সে চুরি করতে শুরু করল। একদিন রাজপ্রহরী তাকে ধরে বন্দীকরল। কিন্তু পিতার সন্মানার্থে তাকে মুক্ত করে দিল। এভাবে বারকয়েক সে ধরা পড়ল ও ছাড়া পেল। কিন্তু তবুও সে চুরি করা বন্ধ করল না। তখনরাজা তাকে কারাগারে বদ্ধ করে রাখলেন। বিচারে সে কষাঘাত দন্ডভোগ করল। কারাভোগের পর অনন্য উপায় ধৃষ্টবুদ্ধি বনে প্রবেশ করল। সেখানেসে পশুপাখি বধ করে তাদের মাংস ভক্ষণ করে অতি দু:খে পাপময় জীবন যাপন করতে লাগল।🙏
💥 দুষ্কর্মের ফলে কেউ কখনও সুখী হতে পারে না। তাই সেই ধৃষ্টবুদ্ধি দিবারাত্রি দু:খশোকে জর্জরিত হল। এভাবে অনেকদিন অতিবাহিত হল। কোনপুণ্যফলে সহসা একদিন সে কৌন্ডিন্য ঋষির আশ্রমে উপস্থিত হল। বৈশাখ মাসে ঋষিবর গঙ্গাস্নান করে আশ্রমের দিকে প্রত্যাবর্তন করছিলেন।শোককুল ধৃষ্টবুদ্ধি তার সম্মুখে উপস্থিত হল। ঘটনক্রমে ঋষির বস্ত্র হতে একবিন্দু জল তার গায়ে পড়ল। সেই জলস্পর্শে তার সমস্ত পাপ দূর হল।হঠাৎ তার শুভবুদ্ধির উদয় হল।
💥 ঋষির সামনে সে কৃতাঞ্জলিপুটে প্রার্থণা করতে লাগল ‘হে ঋষিশ্রেষ্ঠ! যে পুণ্য প্রভাবে আমি এই ভীষণ দৃ:খযন্ত্রণা থেকে মুক্তিলাভ করতে পারি, তাকৃপাকরে আমাকে বলুন।’ ঋষিবর বললেন-‘বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষে মোহিনী নামে যে প্রসিদ্ধ একাদশী আছে, তুমি সেই ব্রত পালন কর। এই ব্রতের ফলে মানুষের বহুজন্মার্জিত পর্বত পরিমাণ পাপরাশিও ক্ষয় হয়ে থাকে। মহামুনি বশিষ্ঠ বললেন-কৌন্ডিন্য ঋষির উপদেশ শ্রবণ করে প্রসন্ন চিত্তে ধৃষ্টবুদ্ধি সেই ব্রত পালন করল। হে মহারাজ রামচন্দ্র! এই ব্রত পালনে সে নিষ্পাপ হল। দিব্যদেহ লাভ করল। অবশেষে গরুড়ে আরোহন করে সকল প্রকার উপদ্রবহীনবৈকুন্ঠধামে গমন করল। হে রাজন, ত্রিলোকে মোহিনী ব্রত থেকে আর শ্রেষ্ঠ ব্রত নেই। যজ্ঞ, তীর্থস্থান, দান ইত্যাদি কোন পুণ্যকর্মই এই ব্রতেরসমান নয়। এই ব্রত কথার শ্রবণ কীর্তনে সহস্র গোদানের ফল লাভ হয়।🙏
🏵 *পারনের সময় (পরের দিন)*: ---
*******************************************
💥 *কলকাতা, ভারত সময়* :-
সকাল ০৪ টা ৫৮ থেকে ০৯ টা ২১ মি: মধ্যে l🙏
💥 *ঢাকা, বাংলাদেশ সময়* :-
সকাল ০৫ টা ১৯ থেকে ০৯ টা ৪৩ মি: মধ্যে।
🏵 *একাদশী পারন মন্ত্র* :-
******************************************
👉 অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥
(বৃ: না: পু: ২১/২০)
👉 অনুবাদ : হে কেশব! আমি অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। হে নাথ! এই ব্রত দ্বারা আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন।🙏
💥 একাদশী তিথির পরদিন উপবাস ব্রত ভাঙার পর অর্থাৎ, উপবাসের পরদিন সকালে যে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া থাকে, সেই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে ভোগ নিবেদন করে একাদশীর পারণ মন্ত্র তিনবার ভক্তিভরে পাঠ করতে হয়। এরপর প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করা একান্ত ভাবে দরকার, নতুবা
একাদশীর পূর্ণ ফল লাভ হবে না। আর অবশ্যই একাদশীর আগের দিন ও পরের দিন নিরামিষ
প্রসাদ গ্রহণ করতে হবে। 🙏
🏵 *একাদশীতে পাঁচ প্রকার রবিশস্য গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে* : --
*******************************************
👉 ১) ধান জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন, চাল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস, খিচুড়ি ,চালের পিঠা, খৈ, ইত্যাদি।🙏
👉 ২) গম জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন, আটা, ময়দা, সুজি, বেকারির বিস্কুট, বা সকল প্রকার বিস্কুট, বেকারির রুটি, হরলিক্স জাতীয় ইত্যাদি।🙏
👉 ৩) যব বা ভূট্টা জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন, ছাতু, খই, রুটি ইত্যাদি।🙏
👉 ৪) ডাল জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন, মুগ, মসুরী, মাসকলাই, খেসারী, ছোলা, অড়হর, বিউরি, মটরশুঁটি, বরবটি, সিম ইত্যাদি।🙏
👉 ৫) সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, তিল তেল, ইত্যাদি।🙏
👉 একাদশীতে রান্নার সময় পাঁচ ফোড়ন ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত। কারন, পাঁচ ফোঁড়নে অনেক সময় সরিষার তেল ও তিল থাকে, যা বর্জনীয়।🙏
👉 একাদশীতে চা, বিড়ি, সিগারেট, পান, কফি, মদ, আফিম, গাঁজা, বা অন্য কোনও জাতীয় নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করবেন না।🙏
সুতরাং, আমরা ভোজনে মাত্র একটি দানা নয়, হাজার হাজার রবিশস্য দানা ভক্ষণ করি। ভাববার বিষয় হল, যে পাপকর্ম আমি করিনি সেই পাপকর্মের ভাগীদার আমাকে নিতে হবে।
● একাদশীতে খাদ্যশস্য গ্রহণ করলে যে পাপ হবে অন্যকে খাওয়ালেও সেই একই পাপ হয়।🙏
💥 উপরোক্ত পঞ্চ রবি শস্য যে কোনো একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয় ও পাপ ভক্ষণ করা হয়। কারন, মাত্র ১টি খাদ্য শস্যের মধ্যে চার ধরনের পাপ থাকে। পাপ গুলো হল : —
👉 ১। মাতৃ হত্যার পাপ।
👉 ২। পিতৃ হত্যার পাপ।
👉 ৩। ব্রহ্ম হত্যার পাপ।
👉 ৪। গুরু হত্যার পাপ।
🏵 একাদশী এমনই একটি মহাব্রত যে, সে যদি পাপীর থেকেও মহাপাপী হয় এই একাদশী ব্রত পালন করার ফলে তার অতীতের সমস্ত পাপ-তাপ সমুলে নাশ হয়ে যায়। তাই যারা নিয়মিত একাদশী ব্রত পালন করেন, তারা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে ভগবৎ ধামে প্রবেশ করেন।🙏
💥 আমাদের কখনো হরি নাম জপকে হেলার সহিত নেয়া উচিত নয়। হরিনাম সাধারণ কোন মন্ত্র নয়। হরিনাম সাক্ষাৎ শ্রীকৃষ্ণের অভিন্ন রূপ। তাই আমাদের খুব যত্নের সহিত হরিনাম জপ করা উচিত।
💥 "হরেরনাম হরেরনাম হরেরনামৈব কেবলম
কলৌ নাস্তেব নাস্তেব নাস্তেব গতিরন্যথা।।"
🙏🙏🙏🙏
💥 হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। 🙏
💥 হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। 🙏
বাঞ্ছাকল্পতরুভ্যশ্চ কৃপাসিন্ধুভ্য এব চ।
পতিতানাং পাবনেভ্যা বৈষ্ণবেভ্যে নমো নমঃ ।।🙏
🙏 এই মহামন্ত্র জপ করুন