27/06/2025
#চট্টগ্রাম জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ জেলা। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা হিসেবে পরিচিত, যার আয়তন প্রায় ৫,২৮৩ বর্গকিলোমিটার। জেলার মোট জনসংখ্যা ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী প্রায় ৯১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৭৬০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৪৫ লক্ষ ৬৬ হাজার ৩৯ জন এবং মহিলা ৪৫ লক্ষ ৯৭ হাজার ৭৬ জন।
---
📍 ভৌগোলিক অবস্থান ও সীমানা
চট্টগ্রাম জেলা ২১°৫৪´ থেকে ২২°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১৭´ থেকে ৯২°১৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এটি দক্ষিণে কক্সবাজার জেলা, পূর্বে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা, উত্তরে ফেনী জেলা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং পশ্চিমে নোয়াখালী জেলা ও বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত।
---
🏛️ প্রশাসনিক কাঠামো
চট্টগ্রাম জেলা ১৫টি উপজেলা ও ৩৩টি থানা নিয়ে গঠিত। এছাড়া, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (সিসি) ৪১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। জেলার মধ্যে ১৯০টি ইউনিয়ন, ৮৯০টি মৌজা, ১২৬৭টি গ্রাম এবং ১৬টি সংসদীয় আসন রয়েছে।
---
🏞️ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
চট্টগ্রাম জেলা পাহাড়, সমুদ্র, নদী, উপত্যকা ও অরণ্যবেষ্টিত। এ জেলার প্রধান নদীগুলোর মধ্যে কর্ণফুলী, হালদা, সাঙ্গু ও মুহুরী উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, তুলনামূলক ছোট ডলু ও টংকাবতী নদীও রয়েছে।
---
🗣️ ভাষা ও সংস্কৃতি
চট্টগ্রামের প্রধান ভাষা বাংলা হলেও এখানকার আঞ্চলিক ভাষা চাটগাঁইয়া (চট্টগ্রামিয়া) ভাষা। এ ভাষার নিজস্ব ব্যাকরণ ও শব্দভাণ্ডার রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মিলনস্থল, যেখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন সহাবস্থানে রয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের মেজবান, হিন্দুদের বৈশাখী উৎসব, বৌদ্ধদের পূণ্যাহ ও খ্রিস্টানদের বড়দিনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে।
---
🏛️ ঐতিহাসিক গুরুত্ব
চট্টগ্রাম জেলা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। এই ঘোষণা চট্টগ্রামের কালুরঘাট অঞ্চল থেকে প্রচারিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচারের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে গণকবর, বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।
---
🎓 শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষাক্ষেত্রে সমৃদ্ধ। এখানে ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়, ১১৯টি কলেজ, ৩টি মেডিকেল কলেজ, ৩টি আইন কলেজ, ২৯৯টি মাদ্রাসা, ৭১৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৯টি স্কুল-কলেজ, ২টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ১টি নেভাল একাডেমী, ১টি মেরিন ফিশারিজ একাডেমী, ৮টি পাবলিক লাইব্রেরি, ২টি পরীক্ষণ কেন্দ্র এবং ২৯৯৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
---
🏖️ দর্শনীয় স্থান
চট্টগ্রাম জেলা পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানসমৃদ্ধ। এখানে রয়েছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, ডিসি হিল, জাতীয় জাদুঘর, চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, ভাটিয়ারী লেক ও গলফ ক্লাব, বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার, বাটালী হিল, ফয়েজ লেক, গুপ্ত এস্টেট জমিদার বাড়ি, চট্টগ্রাম কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি ইত্যাদি।
---
🏗️ অর্থনীতি ও বাণিজ্য
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর শহর। এটি দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবেও পরিচিত। চট্টগ্রামে অবস্থিত এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন দেশের প্রথম এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (১৯৮৩)। এছাড়া, চট্টগ্রামে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও সেবা খাতের বিকাশ ঘটেছে, যা জেলার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে।
---
চট্টগ্রাম জেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও অর্থনৈতিক অবদানের জন্য বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে বিবেচিত।
#জেলা #চট্টগ্রাম #বাংলাদেশ