19/04/2025
বিচার শুধু আদালতের জন্য না, বিবেকেও বিচার হতে হয়।
তারিখ ছিল ১৯ এপ্রিল ২০২৫। সকালে মহাখালীতে একজন রোগীর জন্য প্লাটিলেট দিতে যাই। রক্ত পরীক্ষার ফাঁকে রোগীর লোকজনের সাথে কথা বলতে বলতে এক সময় জানলাম—তিনি তার মেয়ের জন্য রক্ত খুঁজছেন। একটু খোলামেলা কথা বলতেই তিনি বললেন, "তুমি আমার ছেলের মতো, তাই বলছি…"
তার ১৭ বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল একজন গার্মেন্টস কর্মীর সাথে। এখনো আমাদের সমাজে অনেক গ্রামেই এই বয়সেই মেয়েদের ‘বিয়ের বয়স’ ধরে নেওয়া হয়। শিক্ষা নয়, স্বপ্ন নয়—একটা মেয়ের জীবনকে আটকে ফেলা হয় চার দেয়ালে, বাল্যবিবাহের চক্রে।
বিয়ের কয়েক বছর পরও সন্তান না হওয়ায় মেয়েটির উপর শুরু হয় মানসিক নির্যাতন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন সন্তান চাই। তারা মেয়েটিকে এক তথাকথিত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়, জোর করে খাওয়ানো হয় ওষুধ। কিছুদিন পর শুরু হয় শরীরে অসংগতি—হালকা ব্লিডিং, দুর্বলতা। কিন্তু কেউ পাত্তা দেয় না। একদিন হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে মেয়েটি। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ধরা পড়ে—ব্লাড ক্যান্সার।
এখানেই শেষ নয়। মেয়েটিকে ঢাকায় আনা হয়, কিন্তু শ্বশুরবাড়ির কেউ পাশে দাঁড়ায় না। স্বামী এসে এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে চলে যায়, জানায় না কিচ্ছু। চিকিৎসার খরচ চাইলেও উত্তর আসে, "আমরা কিছু করতে পারবো না।" এমনকি একবার জোর করে মেয়েটিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে আবার বিপদের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়।
প্রশ্ন রইলো—
এই অন্যায়ের বিচার কে করবে?
একজন মানুষ শুধু স্বামী নামের পরিচয়ে একজন নারীর সঙ্গে এমন নিষ্ঠুরতা করতে পারে—এটা কি আমরা মেনে নেব?
বাল্যবিবাহের দায় কে নেবে? মেয়েটির স্বপ্নহীন শৈশবের খেসারত কি শুধু ক্যান্সারে ভুগে জীবন হারিয়ে দিয়ে দিতে হবে?
এখনো কি সময় আসেনি এই কুসংস্কার ভাঙার?
এই সমাজে ন্যায়বিচার কেবল আদালতে না, মানুষের বিবেকেও শুরু হতে হয়। একজন মেয়ের জীবন, স্বপ্ন, শরীর—কোনোটাই কারো মালিকানা না।
এই পোস্টটি শেয়ার করে আওয়াজ তুলুন। ন্যায়বিচারের জন্য, সচেতনতার জন্য।
বাল্যবিবাহ বন্ধ হোক। নারী নির্যাতনের বিচার হোক। মানবতা জাগ্রত হোক।
- Atik Hasan (Admin)