Romantic love story

  • Home
  • Romantic love story

Romantic love story রোমান্টিক ইসলামিক ভালোবাসার গল্প https://plus.google.com/collection/YALBUE

 #প্রাণনাশিনী (সামাজিক+ রোমান্টিক +গ্রাম্য ) #পর্ব০১https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122153288516378951/?mi...
29/06/2025

#প্রাণনাশিনী (সামাজিক+ রোমান্টিক +গ্রাম্য )

#পর্ব০১

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122153288516378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্ব০২

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122153528366378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্ব০৩

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122154366434378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্ব০৪

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122155022924378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্ব০৫

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122155381718378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্ব০৬

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122155873328378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্ব০৭

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122156775644378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্ব০৮

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122157321128378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্ব০৯ ( প্রথম অংশ)

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122158629410378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্ব০৯ (দ্বিতীয় অংশ )

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122159124902378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্১০

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122160156830378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্ব০১১

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122160689186378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্ব১২

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122161463774378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্ব১৩

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122161999172378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্ব১৪

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122162652206378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্ব১৫

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122163243494378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্ব১৬

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122163367466378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#পর্ব১৭

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122164167422378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

#অন্তিম_পর্ব

https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122164196084378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

সমাপ্ত......

--"ছোডু আম্মু, ঐদিক দিয়া যাইয়েন না! আমনে রাস্তা ঘুইরা বেলতলার ঘাট দিয়া যান।"

রফিক মিয়ার কথায় কপালে ভাঁজ পড়ে ষোড়শী কন্যা সুবহার। সদ্য দশম শ্রেণিতে উঠেছে সে। বই পুরোনো হলেও নতুন ক্লাস, নতুন বছর সব কিছুতেই একরকম উচ্ছ্বাস।স্কুলে খেলা চলছে। তবে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী সুবহার আজ কোচিংয়ে পরীক্ষা আছে জামান স্যার এর। বান্ধবী শিউলির সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছে সে।

আজ সকালে দেরি হয়ে গেছে তাদের। তাইতো শর্টকাট হিসেবে সোজা পথটাই বেছে নিয়েছে। যদিও ইদানীং এই রাস্তা দিয়ে আর আগের ন্যায় যাতায়াত করেনা সুবহা। তবু আজ দেরি হওয়ায় এই পথটা বেঁচে নিয়েছিলো তারা। তবে রফিক মিয়ার হঠাৎ সতর্কবার্তায় থমকে যায়। সুবহা।

--"কেন চাচা, এই রাস্তায় কী হইছে? আমাদের এমনিতেই আজ দেরি হয়ে গেছে। আর বেলতলার ঘাট দিয়ে গেলে তো সময় আরও বেশি লাগবে!"

রফিক মিয়া গম্ভীর স্বরে বলল,

--"হোক, কিন্তু অন্তত সুস্থভাবে তো স্কুলে পৌঁছাইতে পারবা! এই পথ দিয়া যাইও না আজ। বেশি দেরি হইলে বরং স্কুলে যাওন লাগতো নাহ। বাড়ি ফিরা যাও।"

সুবহার চোখে উদ্বেগের ছাপ ফুটে ওঠে। পরীক্ষা বাদ পড়লে জামান স্যার তো রেহাই দেবে না! কপালে ভাঁজ ফেলে বলে,

--"কিন্তু চাচা, আজ আমাদের কোচিং পরীক্ষা আছে। না দিলে স্যার আমাদের খবর করে ছাড়বে !"

রফিক মিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল,

--"তাইলে যাও, কিন্তু সাবধানে যেয়ো। এলাকার পরিস্থিতি ভালো না।"

--"কেন কাকা, কী হয়েছে?"

শিউলির প্রশ্নে রফিক মিয়ার চোখেমুখে উৎকণ্ঠার ছাপ পড়ে। গলা ভারী করে বলে,

--"আর কী হইবো! চেয়ারম্যানের পোলায় টং দোকানের উজ্জ্বলরে পিটাইতাসে। দুই দলের লোক নিয়া মারামারি লাগছে। অবস্থা ভালো না। তোমার চাচি শিপনরে দিয়া আমারে ডাকাইয়া নিতাসে বাড়ি।"

সুবহা আতঙ্কিত চোখে শিউলির দিকে তাকায়। স্পষ্ট কিছু না বললেও চোখের ইশারাতেই বুঝিয়ে দেয় সে এই পথ দিয়ে যাবে না। শিউলিরও কিছু বলার সুযোগ হয় না। রফিক মিয়া বেশি কিছু না বলে দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। সুবহা ফিসফিস করে বলে,

--"শিউলি এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া লাগবে নাহ। আজ বাড়িতে ফিরে যাই। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।"

শিউলি মুখ বাঁকিয়ে বলে,

--"আরে বলদী, এত ভয় পাস কেন সবসময়? মুরগির বাচ্চার মতো কলিজা নিয়া এই গ্রামে চলা যায় নাকি?"

সুবহার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ ফুটে ওঠে।

--"আমায় ওনাকে দেখলেই ভয় লাগে। মনে নেই, দুই বছর আগে আমারে অকারণে এক থাপ্পড় দিছিলো? এক সপ্তাহ জ্বরে ভুগেছিলাম ! আমি যাবো না, তুই যা।"

শিউলি হাসল। যেন ব্যাপারটা তেমন গুরুতর কিছুই না।

--"তখন তুই ছোট ছিলি। এখন তো বড় হয়েছি আমরা। ক্লাস টেন এ পড়ি! আমাদের গায়ে হাত তুলতে আসবে কোন দুঃখে শুনি?"

সুবহা মাথা নাড়ে।

--"ওনার মারার জন্য কোনো কারণ লাগে নাকি? অকারণেই গায়ে হাত তোলে! দেখলি না চাচা বলল উজ্জ্বলকে ভাইকে মারতাসে। আমি যাবো না, বোন। তুই যা।"

শিউলি সুবহার কথা কানে তোলে না। বরং তার হাত ধরে টেনে নিয়ে এগোতে থাকে। বুক ফুলিয়ে সাহস সঞ্চয় করে বলে,

--"শুনেছিস সুবি? আযহার ভাই নাকি আগের চেয়েও বেশি সুদর্শন হয়ে গেছে! গতকাল রাসেল ভাইরা বলাবলি করতাসিলো শুনলাম। !"

শিউলির কথায় সুবহার চোখের মণি বিস্ফারিত হয়! মুখে কিছু না বললেও মনের মধ্যে তোলপাড় চলে। এর মাঝেই শিউলি ফেরফের করে বলে,

--"মনি আপা তো নাওফিক ভাইয়ার নাম শুনলেই পাগল! দুই বছর দেশে ছিল না, এই জন্যই নাকি এখনো বিয়ে বসেনি। শুনছি, কত ভালো ভালো সম্বন্ধ এসেছে মনি আপার জন্য, কিন্তু সব ফিরিয়ে দিয়েছে! আর তুই মাইয়া, ওনাকে দেখলেই এত ভয় পাস কেন বুঝি না!"

শিউলির কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না সুবহা। কী বলবে সে? কেমন করে বোঝাবে?
এই দুই বছর ছিল তার জীবনের সবচেয়ে নির্ভার, শান্তির, আরামের দিন। রাস্তায় বের হতে হলে বুকের ভেতর আর শঙ্কার কাঁপুনি ধরত না। ভয় নিয়ে এক পা দু’পা ফেলে চলতে হত না। যেন মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নেওয়ার মতো এক স্বস্তির সময় ছিল সেটুকু।

এই পথ দিয়েই তো কতবার গিয়েছে সুবহা। যেদিনতার বাবা এসে বলেছিল চেয়ারম্যানের বড় ছেলে দেশে ফিরে আসছে" সেদিন থেকেই এই রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে সুবহা। ভুলেও এই পথে পা বাড়ায় নাহ সে।

*

পিচঢালা সরু পথ। দুপাশে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা পাটখেত। সবেমাত্র চারা গজিয়েছে। নরম সবুজ পাতাগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে দক্ষিনা বাতাসের তালে তালে। সকালের সোনালী কিরণে পাতাগুলো চিকচিক করছে। সুবহা চুপ করে আছে। মুখ ফুটে কিছুই বলছে না। শুধু শিউলির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে যাচ্ছে সে। মেয়েটা একবার বলতে নিলে আর থামে না। পাশের মানুষ কি শুনলো না শুনলো না সেসব আর ভাবে। বলতেই থাকে।

পরনে নীল রঙা স্কুলের ড্রেস। দুপাশে ওড়নার মতো আরা আড়াআড়িভাবে রাখা ক্রস-বেল। পিঠে ঝুলছে নেভি-ব্লু রঙের ব্যাগ। এই ব্যাগটা গত মাসে তার বাবা শহর থেকে এনে দিয়েছিল। ব্যাগের জিপারের সাথে ছোট্ট একটা পুতুলের রিং ঝুলিয়ে রেখেছে সুবহা। স্কুলের পাশের লাইব্রেরি থেকে কিনেছিলো ওটা টিফিনের আঁকা জমিয়ে।

চুলগুলো বেনুনি করে রাখা। সকালে সুবহার দাদি বেনুনি টা করে দিয়েছিলো স্কুলে আসার সময়। কয়েকটা আলগা গোছা কপালের ধারে নেমে এসেছে। গোলগাল চেহারা, টুকটুকে ফর্সা গায়ের রং। যে দেখবে এক মুহূর্তের জন্য ভেবে বসতে পারে এই মেয়েটা বুঝি মানব আকৃতি ধারকৃত কোনো জীবন্ত পুতুল! যাকে অনেক সাধনা করে অনেক শ্রম দিয়ে বানিয়েছে কেউ।

তার মা শ্যামবর্ণা। বাবা-ও তেমনি। অথচ সুবহার গায়ের রং যেন দুধে-আলতা মেশানো। প্রথম দেখায় অনেকেই বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে।গ্রামে এমন মেয়ে দেখা বিরল। কেউ কেউ তো রসিকতা করে বলে, “এই মেয়েটার পূর্ব পুরুষ নিশ্চয়ই কোনো ইংরেজ ছিল!”

সুবহা এসব কথায় অভ্যস্ত। ছোট বেলা থেকেই এসব শুনতে শুনতে বড় হয়েছে সে। তার রং, তার চেহারা সবকিছু নিয়ে লোকের এত কথা! কিন্তু সে কখনো কিছু মনে করে না। তার দুনিয়াটা এখন স্কুলের ব্যাগ, বইখাতা, বান্ধবী শিউলি আর তার নিজের ছোট্ট স্বপ্নগুলোর মধ্যেই বন্দী।

আর মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই সুবহার স্কুল। তবে তার আগেই পরে গ্রামের বাজার। আর সেই বাজারেই নাকি এখন চলছে তুমুল মারামারি।
বাজারের সামনে আসতেই হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় সুবহার। শিউলির হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে। সামনে যতই এগোয় কোলাহল ততই স্পষ্ট হয়।

অবশেষে বাজারের সামনে এসে থামে তারা।
বাজারজুড়ে এক অদ্ভুত উত্তেজনা। টং দোকানের পাশের সেই পুরোনো আমগাছের নিচে একজন আম গাছের সাথে বেঁধে রাখার সেই দৃশ্য তাদের চোখে পরে। ছেলেটির নাম উজ্জ্বল। মুখের কোণে র"ক্ত জমাট বাঁধা, শরীরটা অবশ হয়ে ঝুলে পড়েছে। চারপাশে লোকজন ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ আগ্রহভরে দেখছে তো কেউ দূর থেকেই পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। সামনে এগুনোর সাহস নেই কারো।

তার সামনেই রাখা একটা চেয়ার। আর সেই চেয়ারে বসে আছে এক মানব। পা তুলে আয়েশী ভঙ্গিতে হেলান দিয়ে আছে। চোখে একরকম অবজ্ঞা। যেন এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তার কাছে কোনো নাটকের দৃশ্যমাত্র।

সুবহার হৃদস্পন্দন মুহূর্তেই দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
বিগত দুই বছর ধরে যে মানুষটিকে সে এড়িয়ে চলেছে আজ হঠাৎ করেই সামনে দেখতে পেয়ে ভয়ের মাত্রা বাড়ে। অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। ভেতরে ভেতরে এক অজানা আতঙ্ক গেঁথে বসে তার শরীরে। আরো শক্ত করে শিউলির হাত চেপে ধরে মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়তে শুরু করে দেয়। এই যাত্রায় বেঁচে গেলে আর কোম্মিনকালেও এই পথের মুখোমুখি হবেনা সে।

এই মানুষটাকে দেখলেই শরীর শিউরে ওঠে তার। ছোটবেলা থেকেই এমনটা হয়ে আসছে। কারণ লোকটড় সঙ্গে যখনি দেখা হয়েছে, তখনই কোনো না কোনো অঘটন ঘটেছে সুবহার জীবনে।

শিউলি থমকে দাঁড়ায়। তবে তার চোখ বাঁধা উজ্জ্বলের দিকে নয়, বরং চেয়ারে বসে থাকা ব্যক্তির ওপর আটকায়। রাসেল ভাই তাহলে ঠিকই বলেছে। লোকটা যেন দিনদিন আরো যুবকে পরিণত হচ্ছে। অন্যদিকে, শিউলির এই অন্যমনস্কতা দেখে সুবহার শঙ্কা আরও বাড়ে। ইশারায় বোঝাতে চায় এখান থেকে চলে যেতে।
কিন্তু শিউলি অনড়। এক সময় উল্টো সুবহার ধরে রাখা হাত ছেড়ে পুরোপুরি থেমে দাঁড়ায়।

সুবহা বুঝতে পারে না, সে কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি সোজা ফিরে যাবে বাড়িতে? দ্বিধার দোলাচলে দুলতে দুলতে পেছন থেকে হঠাৎ ঘেউ ঘেউ শব্দে চমকে ওঠে সুবহা।

এর মাঝেই পিছন থেকে বাজারের একটি কুকুর এসে ঘেউ ঘেউ শুরু করে দেয়। আচানক কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে সুবহা ভড়কে যায়। দ্রুত কুকুরটিকে তাড়ানোর জন্য চেঁচাতে থাকে সে। পরোক্ষনে চোখ পরে এটা তো তাদের বাজারের কুকুর নয়? দেখতেও অনেকটা বিদেশি কুকুর দেড় মতোই। এই আজব প্রাণী আবার কোথা থেকে উদয় হয়েছে তাদের গ্রামে? এর আগে তো কখনো দেখেনি সুবহা একে।

নিজের পোষা কুকুরের ডাক শুনেই চেয়ারে বসে থাকা মানুষটি দৃষ্টি ফেরায় সেদিকে। শিউলির আড়ালে থাকা সুবহার দিকেই চোখ পড়তেই ডেকে উঠে,

--"মিলো, কাম হেয়ার।"

অবাক করার মতোই ঘটনা ঘটে। কুকুরটি কি বুঝল, কে জানে। একবার ডাকতেই কী সুন্দর লেজ নাড়িয়ে চলে গেল তার কাছে। সুবহা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। মনে মনে ভাবে হয়তো লোকটা তাকে দেখতে পায়নি। কিন্তু তার শ্বাস পুরোপুরি ফেলার আগেই আবারও গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে আসে,

--"অভাবে চোরের মতো লুকিয়ে আছিস কেন? বেরিয়ে আয় সামনে।"

সুবহার মাথা ঝিম ধরে। বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ করে ওঠে। লোকটা তাহলে তাকে দেখেই ফেলেছে! এই পুরো ঘটনার জন্য দায়ী শুধু এই শিউলি! কতবার বলেছিল, আজ না হয় স্কুলে না-ই যায়। কিন্তু এই শিউলির বাচ্চা শুনলে তোহ! শেষমেশ এখন ফেঁসে গেল সে!

--"কিরে! তোকে ডাকছি না? এদিকে আয়।"

ভয়ার্ত পায়ে শিউলির আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে সুবহা। ছোট ছোট কদমে এগিয়ে যায় সামনে। মাথা নিচু করে রাখা। চোখ তুলে তাকানোর সাহসটুকুও যেন অবশিষ্ট নেই শরীরে। চেয়ারে বসে থাকা লোকটি এক নজরে পরখ করে নেয় সুবহাকে।

মাত্র দুই বছর আগে এই মেয়েটা কতটুকুন ছিল! অথচ এখন এক লহমায় কেমন যেন বড় হয়ে গেছে! গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করে,

--"স্কুলে যাচ্ছিস?"

--"জি... জি হ!"

--"কোন ক্লাসে?"

--"টেন..."

--"নিউ টেন?"

--"জ... জি।"

লোকটা তার দিকে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সেই দৃষ্টির ভারে সুবহার আরও অসহায় হয়ে পরে। হাঁসফাঁস লাগে। অস্থিরতা বাড়ে। যেন মাটি ফুঁড়ে হারিয়ে যেতে পারলেই সে সবচেয়ে স্বস্তি পেতো এই মুহূর্তে!

--"সামনের বছর তাহলে কলেজে উঠবি?"

সুবহা বুঝতে পারেনা লোকটা তার সঙ্গে কী বোঝাপড়া করতে চাচ্ছে। সে ফেল ফেল করে তাকায় লোকটির দিকে। সাথে সাথে চোখা চোখি হয় দুজনের। তৎযলদি চোখ নামিয়ে নেয় সুবহা। ইতোমধ্যেই লোকটা উঠে দাঁড়িয়েছে। রোদের তাপে তার স্পষ্ট অবয়ব এক অজানা আভাস ফেলে সুবহার ছোট্ট অন্তকরণে। সুবহার নজরে পড়ে লোকটা একটুও বেশিই লম্বা। পরনে জুতাগুলো রোদের তাপে চকচকে ঝিলমিল করছে। জুতায় আবার কিসের যেন একটা অক্ষর লেখা।সুবহা শুনেছে এই লোকের সৌখিনতা সম্পর্কে। সবকিছু নাকি ব্রান্ডের জিনিস ব্যবহার করে। হয়তো জুতা টাও কোনো ব্রান্ডের হবে। নামি দামি কোনো ব্র্যান্ড।

--"বয়স কত রে তোর এখন?"

সরাসরি এমন প্রশ্নে একটু বিব্রত হয়ে পরে সুবহা। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে কাপা কাপা গলায় আওড়ায়,

--"জি!"

তবুও লোকটি বিরত না হয়ে পুনরায় জিজ্ঞাসা করে,

--"তোয় বয়স কত চলছে?"

--"ষোলো!"

--"১৭ ও হয়নি এখনো?"

--"সামনের মাসে হবে।"

লোকটা আর কিছু বলল না। চোখের দৃষ্টি আরও গভীর হয়ে এল সুবহার উপর। একবার ভালো করে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় শুধালো,

--"বাড়ি ফিরে যা। আজ স্কুলে যাওয়া লাগবে না।"

সুবহা যেন এই অপেক্ষাতেই ছিল। বলা মাত্রই এক মুহূর্তও দেরি না করে পিছন ফিরে হাঁটা দেয়। তবে তার যাওয়ার আগেই লোকটা একদম কাছে এসে দাঁড়ায়। মাথা টা একটুও নিচু নামিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,

--"কাল থেকে স্কুলে যাওয়ার সময় শরীরে এক্সট্রা ওড়না পরবি। মাথায় হিজাব পেচাবি। চাচাকে বলবি, বোরকা কিনে দিতে। এরপর যদি বোরকা ছাড়া তোকে বাড়ির বাইরে দেখি তাহলে পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেবো। এখন বাড়ি যা।"

শরীরের সমস্ত র"ক্ত যেন জমে যায় সুবহার। গা শিউরে উঠে। মুহূর্তে যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চাইল। মাথা নিচু করে সে আর দাঁড়ায় না। এক দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসে। এমনকি শিউলিকেও ডাকে না সে। মেয়েটার জন্যই আজ এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হলো তাকে। ফাজিল মেয়ে কোথাকার! বাড়ি গিয়ে ইচ্ছেমতো ধোলাই দেবে ওকে!

হাঁটতে হাঁটতে বুকের ভেতর ধুকপুকানি কমার বদলে যেন আরও বেড়ে যায়। এই দু'বছর সে কতটা শান্তিতে ছিল! অথচ আজ আবার সেই দুঃস্বপ্নের বাস্তবতায় ফিরে এসেছে। সেই পুরোনো আতঙ্ক। সেই চেপে আসা নিঃশ্বাস। সেই দৃষ্টির দগদগে আগুন! তেজওয়ান নাওফিক চৌধুরী!

#সূচনা_পর্ব
#প্রাণনাশিনী
#সুহাসিনি_মিমি

(আমি হলাম মেন্টাল মানুষ। মনের ভিত্বে একবার যেটা ঢুকবো ঐটা না করা পর্যন্ত খুট খুট হয় সারাক্ষন। না লিখলে শান্তি পাচ্ছিলাম নাহ। আপনারা বললে এটা কন্টিনিউ করবো সিজন ২ এর পাশাপাশি। সপ্তাহে দু পর্ব করে পাবেন। যদি চান তাহলেই। কেমন লাগলো জানাবেন।)

 #রোদ_পোহাবার_ছুতোয়  #নাজমুন_নাহার~সব পর্বের লিংক ~১। https://www.facebook.com/share/p/1BZsmN1RYu/২। https://m.facebook....
29/06/2025

#রোদ_পোহাবার_ছুতোয়
#নাজমুন_নাহার

~সব পর্বের লিংক ~
১।
https://www.facebook.com/share/p/1BZsmN1RYu/

২।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122148072866517790&id=61565533700279&mibextid=RtaFA8

৩।
https://www.facebook.com/share/p/18fUsUCpBM/

৪।
https://www.facebook.com/share/p/1BKhVH1p7R/

৫।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122149621196517790&id=61565533700279&mibextid=RtaFA8

৬।
https://www.facebook.com/share/p/161BP4XspY/

৭।
https://www.facebook.com/share/p/17WsfSB5yG/

৮।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122151653504517790&id=61565533700279&mibextid=RtaFA8

৯।
https://www.facebook.com/share/p/1KsBT9bVGu/

১০।
https://www.facebook.com/share/p/1E5rmgdFkz/

১১।
https://www.facebook.com/share/p/18YeMg6A4K/

১২।
https://www.facebook.com/share/p/1WkUxRg57C/

১৩।
https://www.facebook.com/share/p/155QHAeQFn/

১৪।
https://www.facebook.com/share/p/19HtQZvYvN/

১৫।
https://www.facebook.com/share/p/1AW15JDv1u/

১৬।
https://www.facebook.com/share/p/16F6L8Uy1u/

১৭।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122156769650517790&id=61565533700279&mibextid=RtaFA8

১৮।
https://www.facebook.com/share/p/16BWM4sN3G/

১৯।
https://www.facebook.com/share/p/1ATEbHJaan/

২০।
https://www.facebook.com/share/p/1Bfv4Qn5Ru/

২১।
https://www.facebook.com/share/p/1FtZ1Ld5BJ/

২২।
https://www.facebook.com/share/p/16L78uRyDN/

২৩।
https://www.facebook.com/share/p/16nNW9iTvN/

২৪।
https://www.facebook.com/share/p/16UqZ376SY/

২৫।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122161387328517790&id=61565533700279&mibextid=RtaFA8

২৬।
https://www.facebook.com/share/p/1AnJXTMbYs/

২৭
https://www.facebook.com/share/p/1AhdVf6Aa4/

২৮
https://www.facebook.com/share/p/19Ri1FnAfu/

২৯
https://www.facebook.com/share/p/14GbbE6L8fa/

৩০।
https://www.facebook.com/share/p/19QcixNDqJ/

৩১।
https://www.facebook.com/share/p/16SCmRcqTA/

৩২।(শেষ পর্ব)
https://www.facebook.com/share/p/1AnGR33Nu8/ #রোদ_পোহাবার_ছুতোয়
#নাজমুন_নাহার

~সব পর্বের লিংক ~
১।
https://www.facebook.com/share/p/1BZsmN1RYu/

২।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122148072866517790&id=61565533700279&mibextid=RtaFA8

৩।
https://www.facebook.com/share/p/18fUsUCpBM/

৪।
https://www.facebook.com/share/p/1BKhVH1p7R/

৫।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122149621196517790&id=61565533700279&mibextid=RtaFA8

৬।
https://www.facebook.com/share/p/161BP4XspY/

৭।
https://www.facebook.com/share/p/17WsfSB5yG/

৮।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122151653504517790&id=61565533700279&mibextid=RtaFA8

৯।
https://www.facebook.com/share/p/1KsBT9bVGu/

১০।
https://www.facebook.com/share/p/1E5rmgdFkz/

১১।
https://www.facebook.com/share/p/18YeMg6A4K/

১২।
https://www.facebook.com/share/p/1WkUxRg57C/

১৩।
https://www.facebook.com/share/p/155QHAeQFn/

১৪।
https://www.facebook.com/share/p/19HtQZvYvN/

১৫।
https://www.facebook.com/share/p/1AW15JDv1u/

১৬।
https://www.facebook.com/share/p/16F6L8Uy1u/

১৭।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122156769650517790&id=61565533700279&mibextid=RtaFA8

১৮।
https://www.facebook.com/share/p/16BWM4sN3G/

১৯।
https://www.facebook.com/share/p/1ATEbHJaan/

২০।
https://www.facebook.com/share/p/1Bfv4Qn5Ru/

২১।
https://www.facebook.com/share/p/1FtZ1Ld5BJ/

২২।
https://www.facebook.com/share/p/16L78uRyDN/

২৩।
https://www.facebook.com/share/p/16nNW9iTvN/

২৪।
https://www.facebook.com/share/p/16UqZ376SY/

২৫।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122161387328517790&id=61565533700279&mibextid=RtaFA8

২৬।
https://www.facebook.com/share/p/1AnJXTMbYs/

২৭
https://www.facebook.com/share/p/1AhdVf6Aa4/

২৮
https://www.facebook.com/share/p/19Ri1FnAfu/

২৯
https://www.facebook.com/share/p/14GbbE6L8fa/

৩০।
https://www.facebook.com/share/p/19QcixNDqJ/

৩১।
https://www.facebook.com/share/p/16SCmRcqTA/

৩২।(শেষ পর্ব)
https://www.facebook.com/share/p/1AnGR33Nu8/

#গল্প #রোদ_পোহাবার_ছুতোয়
#পর্বঃ১
#নাজমুন_নাহার

ক্যালেন্ডারের পাতায় এখন বৈশাখের মাঝামাঝি সময়। দিনে কাঠফাটা রোদ আর রাতে মাঝে মাঝেই তুমুল ঝড়-বৃষ্টি ধরণের আবহাওয়া। চারদিন ধরে ভ্যাপসা গরম পড়েছে। প্রকৃতিতে কেবলই গুমোটভাব। আজ অবশ্য সারাদিন তেমন রোদের প্রকোপ দেখা যায়নি। রাতের আকাশও পরিস্কার। শুভ্র সুদূর আকাশে কেবল উজ্জ্বল চাঁদ আর ঝিলমিলে তাঁরাদের বিচরণ।

পরনে লাল টুকটুকে ছোপ ছোপ ডিজাইনের বেনারসী। মাথার আটপৌরে সিথিখোঁপার উপর লাল দোপাট্টা। হাতে-গলায় হাল্কা কারুকাজের সোনার গহনা। ধরে বেঁধে কোনোমতে সাজালেও বলা বাহুল্য, এই সারল্য রূপেই চমৎকার মানিয়েছে নিরাকে। ফর্সা গোলগাল মুখের সরু, চিকন নাকটাতে এক নজর চোখ বুলালে অকপটে তাকে ইর্ষা করবে পৃথিবীর তাবত সৌন্দর্যেরাও। ঝিল চোখদুটোয় যেনো একবুক সমুদ্র আছড়ে পড়ছে। বিরক্তিমাখা অপ্রতিরোধ্য চেহারাটা তুলে একপলক চাইলো দরজার পানে সে। রাগান্বিত,রক্তিম নাকের স্বর্নের নাকফুলটা জ্বলজ্বল করছে তখনও। চোখের কোটরে কেমন মায়া মায়া করে কাজল লেপ্টানো। পেলব প্রতিমা মুখশ্রীটায় আজ শুধুই অসন্তুষ্টি। এই অসন্তুষ্টিভাবটা অবশ্য শতগুন বাড়িয়ে দিয়েছে তার ছোটফুপুর আধপাগল ছেলেটা। অসভ্য, বেয়াড়া, ছিটখারাপ নাবিল ভাই!

লাল বঁধুয়ার এহেম আঁধার মুখখানা দেখে ভারী দুঃখ পায় চন্দ্রিমা। বেলীফুলের কৈশোর থেকে তপ্ত যৌবনের প্রমোশন পাওয়ার পর রমণীরা মনে মনে যে বিশেষ দিনের আকাঙ্ক্ষা করে থাকে? শিউলিফুলের মালার মতো করে স্বপ্ন বুনে? আজ নিরার জীবনের সেই শিহরণ জাগানো একটা দিন। কিন্তু এই হিরন্ময় সাজ, এই লাজুক আয়োজন, কিছুই মেয়েটাকে স্পর্শ করতে পারছে না। না পারছে একটু স্বস্তি দিতে তার ছটফটে হৃদয়কে। মনটা আজ কেবল পালাই পালাই করছে।

আজ নিরার বিয়ে। কিন্তু এই শুভলগনে মেয়েটা এমন ফাঁসির আসামীদের মতো করে মুখ করে রেখেছে কেন? ওকে দেখে মনে হচ্ছে, মৃত্যুর আগে তার শেষ ইচ্ছেটা জানতে চাওয়া হচ্ছে। নিরা সে-ই ইচ্ছাটা নিয়েই বিভ্রান্ত। তার ইচ্ছেকে জেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট কতটুকু প্রাধান্য দেবে? কেননা আসামী মৃত্যুসজ্জায় দাঁড়িয়ে নিজেকে বাঁচাতে চায়। বেকসুর খালাস চায়। বিনা অপরাধের শাস্তি থেকে পাখির মতো মুক্ত হতে চায় সে। অথচ এরা আসামীকে এক আনার পাত্তাও দিচ্ছে না। আশ্চর্য ব্যাপার!

বিরক্তিতে দাঁত কিড়মিড় করছে নিরা। পাখির মতো চঞ্চলা চোখ তুলে এদিক-ওদিক ঘাড় বাঁকিয়ে কাকে যেনো খুঁজছে । সময় বোধহয় ফুরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কোথায় সেই গুনধর লোক? লোকটা কি জানে না, আর কিছু মুহূর্ত পেরোলেই দু'জনের বলি হয়ে হবে? জবাই করা হবে দু’টোকে। অসহ্য লাগছে নিরার। এতোটা ইরেসপন্সিবল কী করে হতে পারে, নাবিল ভাই? যে যাই বলুক, যা-ই করুক, নিরা কিছুতেই নাবিল ভাইকে বিয়ে করবে না। না মানে না-ই। তার জীবনটাকে সকলে মগের মুল্লুক পেয়েছে নাকি এরা? বললেই হলো? একজনকে ভালোবেসে আরেকজনের গলায় কী করে ঝুলে পড়বে নিরা? সেই কিশোরী বয়স থেকে যে মানুষটাকে পাগলের মতো চেয়ে এসেছে, যাকে নিয়ে আজও দিবালোকে, নিশির প্রহরে সংসার সাজায় অবুঝ মনটা, সে-ই নিলয় ভাইকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করার কথা ভাবতেই পারছে না নিরা। আচ্ছা, নিলয় ভাই কি জানে না আজ নিরার বিয়ে? মানুষটা কি কখোনও নিরার তৃষ্ণার্থ মনটা পড়ে দেখেনি? সে কি জানে না, বাংলাদেশে বসে থাকা একটা ছোট্ট প্রাণ চাতক পাখির মতো তার জন্য দিবারাত্রি অপেক্ষা করছে? নিলয় ভাই কি কখনোই সেসব একপাক্ষিক ভালোবাসা টের পায়নি? কেন পায়নি! একটা বার কি বাবাকে ফোন করে বলা যেতো না, 'মামা, নিরুকে আমার জন্য রেখে দিন। ওকে আমি বিয়ে করবো৷ নিলয় ছাড়া নিরা অন্য কারো কাছে নিজেকে মানিয়ে পারবে না,মামা। নিরা শুধু নিলয়কে চায়।'

মহিলাদের ভীর ঠেলে নিরার ঘরে ঢুকলো সাত বছর বয়সী ইফরান। নাবিল চাচ্চুর আদেশ মেনেই বেচারাকে এই আতঙ্কপুরীতে প্রবেশ করতে হলো। ইফরান বরাবরই লাজুক স্বভাবের ছেলে। তার উপর এতোগুলো মেয়েকে একসঙ্গে দেখে সে বেশ বিব্রতবোধ করছে। পাছে কেউ তাকে একা পেয়ে মশকরা না করে বসে। বিশেষ করে দাদী সমাজ। এরা তাকে পেলে অসম্ভব লজ্জা দেয়। কিন্তু কী আর করা? চাচ্চু যা হোমওয়ার্ক দিয়েছে, সেটা করতে না পারলে কপালে দুঃখ আছে।

ভীর ডিঙিয়ে পিঁপড়ার মতো পা ফেলে কোনোমতে নিরার পাশে দাঁড়ালো। তবে প্রাইভেসি কম। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বুঝল, কাঙ্ক্ষিত বার্তা নিরা পর্যন্ত পৌঁছানো দুরূহ ব্যাপার এই মুহূর্তে। বার্তা পাঠানোর জন্য জন্য একটু চুপিচুপি টাইপ পরিস্থিতি দরকার। যেটা এই মুহূর্তে নেই। মানে এখন ফুপ্পির সঙ্গে কথা বলার সুযোগই নেই। এমনকি নিরাও ওকে খেয়াল করলো না। বোকা বোকা মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলো ইফরান। নিরা ফুপ্পিকে আজ তার বড়োই ভালো লাগছে। কণে সাজে কী যে সুন্দর লাগছে ফুপ্পিকে। ইফরান চোখ ফেরাতে পারছেনা। নাবিল চাচ্চুর সাথে খুব মানাবে। আচ্ছা, বাবা তো বলেছিল নিরা ফুপ্পি আর নাবিল চাচ্চু কাজিন ব্রাদার এন্ড সিস্টার হয়। তাহলে সকলে যে বলছে আজ ওদের বিয়ে? কাজিনকে আবার বিয়ে করা যায়? অদ্ভুত তো! তাহলে তো তারও অনেক কাজিন সিস্টারস আছে। সে বড় হলে বাবা-মা-ও কি তাকে কোনো এক কাজিনের সঙ্গে বিয়ে করাবে? হ্যা, যুক্তি তো তা-ই বলে। ইফরান চিন্তায় পড়ল।

"এই জুয়ান বর, তোমার এখানে কী গো?"

সকলে হো হা করে হেসে ফেললো। ইফরান ভ্রু বাঁকিয়ে চাইলো ওদের দিকে। এই শাহানা দাদুটা তাকে নিয়ে সবসময় মশকরা করে। মা বলেছে সে নাকি নিরা ফুপ্পির ছোট খালা। কিন্তু উনি কেন সবসময় ইফরানকে দেখলেই এমন পঁচা কথা বলে? ধ্যাত! একদম লজ্জায় ফেলে দেয়। এতো লোকের ভীরে এভাবে বর ডেকে দিলো? ছিহহ! ইফরানের বুঝি লজ্জা করেনা?

"ফুপ্পিকে দেখতে এলাম।"

"দেখা হলো?"

ইফরান একপলক নিরার দিকে চেয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

"কেমন লাগছে তোর নিরা ফুপ্পিকে?"

কানের কাছে এসে পাশ থেকে প্রশ্নটা করলো রিমি। ইফরান পূনরায় নিরাকে দেখে নিলো।

"সবার থেকে বেশি সুন্দর লাগছে।"

হেসে ফেললো সকলে।

"তা-ই? তাহলে এক কাজ কর, তোর নাবিল চাচ্চুকে গিয়ে বল, ফুপ্পিকে আজ সবার থেকে বেশি সুন্দর লাগছে। ব্যাটা কী রিয়াকশন দেয় এসে জানাবি। যদি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে চায় সেটাও এসে বলবি। কেমন?"

ইফরান বিভ্রান্ত মুখে চেয়ে রইলো। আজব তো! নিরা ফুপ্পিকে সুন্দর লাগছে সেটা চাচ্চুকে জানানোর কী আছে? চাচ্চু তো কতোই দেখেছে ফুপ্পিকে। আলাদা করে বলার কী হলো?

ঘরময় পায়চারি করছে নাবিল। বিচ্ছুটাকে সেই কখন পাঠালো, এখোনও কোনো আপডেট নিয়ে এলো না। ও কি নিরাকে প্ল্যানটা জানাতে পারেনি? কিন্তু সময় যে নেই হাতে আর! এই নিরাটা আস্ত চিবিয়ে খাবে আজ।

কোথা থেকে এক দৌড়ে ঘরে ঢুকে হাঁটুতে হাত ভর করে হাপাতে লাগলো ইফরান৷ নাবিল দুই হাত বুকে ভাজ করে দাঁড়াল। অগ্নিচোখে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। বিচ্ছুটাকে মাথায় তুলে আছার মারতে ইচ্ছে করলেও এই মুহূর্তে উত্তরের আশায় চেয়ে রইলো।

'চাচ্চু, ফুপ্পিকে রিচ করতে পারিনি। আই মিন, পেরেছি তবে দ্যেয়ার আর সো ম্যানি লেডিস এরাউন্ড নিরা ফুপ্পি। ওরা ফুপ্পির সাথেই বসে আছে। ওদের ওভারকাম করে ফুপ্পি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। এন্ড দ্যিস ওল্ড লেডি, 'শাহানা' শি ইজ টু মাচ। আমাকে বলে আমি নাকি তার জুয়ান বর। আজব কথা! আমি কেন তার বর হতে যাবো! শি ইজ নিরা ফুপ্পি'স আন্টি। তাছাড়া শি হ্যাভ এন ওল্ড হাজবেন্ট এন্ড থ্রি কিডস। তাকে জানিয়ে দেবে, আমি কোনো ম্যারিড ওল্ড লেডিকে বিয়ে করবো না, হু।'

নাবিল চোখ বড় বড় চাইলো। মেজাজ খারাপ হলো তার।

"তোকে ওল্ড লেডিদের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করতে পাঠিয়েছি? এমন চর লাগাবো ব্যাটা ইংরেজের বাচ্চা! গর্ধব, নিরা কী করছিল?"

ইফরান সহসাই মুখ গোমড়া করে ফেললো। এই পঁচা নাবিল চাচ্চুটা ছাড়া সবাই তার সাথে কত আদর করে কথা বলে। পঁচা পঁচা ধমকে আবার নিজেই আদর করবে, চকলেট কিনে দিবে। এই চাচ্চুটা একটা জংলী।

ইফরান ঠোঁট ভেঙ্গে বললো, "মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। ম্যাবি শি ইজ এংগ্রি উইথ সামওয়ান।"

মেজাজ অত্যাধিক চটলো বোধহয় নাবিলের। দাঁত কিড়মিড় করতে করতে চাইলো।রেগেমেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফোন বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নিরার তীব্র ক্ষোভ মিশ্রিত কর্কশ কন্ঠ ভেসে এলো। কঠিন স্বরে ঝাঁঝিয়ে উঠলো মেয়েটা।

"নাবালকের বাচ্চা! তোকে সামনে পাই একবার। তোর চান্দি ভেজে যদি ইঁদুরকে না খাইয়েছি, তো আমার নামও নিরা না! বিয়ে করার শখ হয়েছে? যা বললাম সেটা না করে টোপর পরে রোস্টে কামড় মেরে বসে আছো কেন? আমার মাথা গরম করাবা না, নাবিল ভাই। ঘর-বাড়ী ভেঙে একাকার করে ফেলবো বললাম। কিছু একটা করোওওওওওও! এরা আমায় চিতায় তুলবে,নাবিল ভাইইই!"

ব্যাপক বিরক্তবোধ করলো নাবিল। এত উটকো কাজবাজ অসহ্য ঠেকছে। মা'য়ের সোনার টুকরো ছেলের উপর কি-না এই মেয়ে শেষ কয়েক ঘন্টা ধরে হুকুম চালাচ্ছে! এত স্পর্ধা!

"এই ছেমরি, এই, তোর কি মনে হয় তোকে বিয়ে করার খুশিতে আমি লুঙ্গি ডান্স করতেসি? বেহুদাই কেঙ্গারুর মতো লাফায় উঠোস ক্যান? বাপ লাফাইতে লাফাইতে দুইদিনের মধ্যে বিয়ে ঠিক করসে, মেয়ে লাফাইতে লাফাইতে দুই মিনিটে ঢিশমিশ l৷ লাফালাফিটা তোদের বংশগত রোগ নাকি রে?"

নিরা বিরক্তি নিয়ে বলে, "গলা উচাবা না। একে-তো একটা কাজ ঠিকঠাক করতে পারলা না, আবার ভাব নিচ্ছো?"

"ফর্টি ফাইভ ডিগ্রি এঙ্গেলে ধরে বন চটকানা মারবো, বলদি। কাজ ঠিকঠাক করতে পারিনাই মানে কী? সার্ভেন্ট পাইছিস? একদম বউয়ের মতো ঝাড়িঝুড়ি মারবি না। তোর বাপ, আই মিন আমার শ্রদ্ধেয় মামু পালে আমারে? যৌতুকে একটা ওডি দিলে নাহয় তোর গরম গরম ঝাড়ি নরম ভাত ভেবে গিলে নিতাম। আমার চেহারায় কী জোকার টাইপ কিছু লেখা আছে? এতো তেজ দেখাস ক্যান? পৃথিবীতে আমার ইম্পরট্যান্স কতো জানিস তুই? নাবিলের মার্কেট ভ্যালু জানিস? বিয়ে করার নাম করে এখানে বাংলা সিনেমার টিকেট ধরিয়ে দিয়েছে বাপ-মেয়ে। তোদের বস্তাপঁচা, লো বাজেট সিনেমার টিকেট অন্য কোথাও বিলা। ঘুমাবো, বাসায় যাইতে দে।"

নিরা মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেও পারছে না। এই নাবিল ভাইকে তার আগাগোড়া বরাবরই বিরক্তিকর লাগে। এখন তো আরও লাগছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছুই করার নেই! হাতি কাঁদায় পড়লে চামচিকি, টিকটিকি, এমনকি সাপও ঠ্যাং দেখায়। এখন সে শুধু কাঁদায় পড়েনি, গলা সমান চোরাবালিতে ডুবতে যাচ্ছে। না চাইতেও বিটকেলটার সাহায্য দরকার। যার জন্য তার গাঁজাখুরি মার্কা কাজগুলোও হজম করে নিতে হবে।

"দেখো নাবিল ভাই,

নাবিল মুখের কথা কেঁড়ে নিয়ে বলে,

"কী দেখবো? হু হু দেখছি, দেখা।

নিরা দাঁত কটমট করলো।

"গন্ডারের বাচ্চা! আমি বাথরুমে ঢুকে ফোন করেছি তোকে। দয়া করে কিছু একটা কর, নাবিল্লায়ায়া। কাজী আসবে একটু পরেই। বিয়েটা যদি হয়ে যায়, তোকে জিন্দা চাবাই খাবো আই স্যয়ার।"

"ওয়াক থুউউউউউ! খেচ্চর, ফোন করতে কেউ বাথরুমে ঢুকে? আর এই বেয়াদব, এই, গুনে গুনে তোর থেকে বয়সে চার-পাঁচ বছরের বড় আমি। একটু তো রেসপেক্ট দেখা।"

"ওসব চার-পাঁচ বছর কোনো কেলকুলেশন হলো? রেসপেক্টের বয়সসীমা হওয়া চাই অন্তত আট বছরের। নিলয় ভাইয়ের মতো। তাছাড়া তোমার সঙ্গে এতো রেসপেক্টের সম্পর্ক কোনো বেলাতেই আমার ছিল না। জংলীর মতো সারাক্ষণ পেছনে লেগে থাকলে সম্মান আমদানি হবে কোথা থেকে শুনি?"

"নিরা রে, তুই কিন্তু সত্যিই একটা ফালতু মহিলা। চাপা ধরে না? এতো কথা প্যাচাস ক্যান? কতোটা লাইফলেস আর ইউজলেস হলে মানুষ সারাদিন আকামের কথা বাড়াতে পারে। ভালো হয়ে যা,আমি দিবো ফ্রি ট্রেইনিং।"

"আমি ফালতু? লাইফলেস আমি? তুমি, দ্য ফাজিল বয় নাবালক ছাড়া আর কারো সাথে এতো কথা বলেছি কখনোও? বলেছি কেন বললাম? বলতে তো বাধ্য করো৷ আমার পেট উগলানো তেতো কথা না শুনলে তো তোমার পেটের ভাত হজম হয়না। এমন কেন করো আমার সাথে? কোন কালে তোমার বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছি?"

নাবিল আঙুল দিয়ে কপাল ঘষে নিঃশব্দে হাসলো। বুঝলো, বেজায় খেপেছে মেয়েটা।

"ছল্লিবাজি সাইডে রেখে ডিলে আয়। বল, তোকে হেল্প করার বিনিময়ে কী পাবো? জলজ্যান্ত একটা বিয়ে ভেঙে ফেলা তো আর চারটিখানি কথা না, মামাতো সিস্টার। খাটনি আছে বহুত।"

"কী চাই তোমার?"

"উমমমমমমমমম... মাল কতো আছে তোর পকেটে?"

নিরা বিরক্তিতে দাঁত কটমটালো। কত বড় ছোটলোক হলে নিজের আপন ফুপাতো বোনের কাছ থেকে-ও কমিশন মারা চাই।

"হাজার পাঁচেক হবে।"

"ইউউউউ ব্লাডি গরীবসস। দুর্ভিক্ষ লেগেছে নাকি বাপের ব্যবসায়? লাখ খানেকের দু-একটা চেক ছুঁড়ে মারতে পারছিস না? মামীর গহনা-টহনা নাই কিছু? তল্লাশি চালিয়ে দেখ না, কিছু পাওয়া যায় কি-না।"

নিরা প্রকট রাগ দেখিয়ে দুম করে ফোন কেটে দিলো। আর সহ্য করা যাচ্ছেনা অসহ্য লোকটাকে। মাথাটা ধরেছে খুব। এত অত্যাচার কি মেনে নেওয়া যায়? বুঝতে বাকি নেই, নাবিল ভাই ইচ্ছে করে ওকে রাগাচ্ছে।
পরমুহূর্তেই ফোন করলো নাবিল।

"রেগে যাচ্ছিস কেন ব্রো? ব্লাড প্রেশার বাড়বে তো। ওপপস! তুই তো আবার লো আয়রন, লো প্রেশারের রুগি। ব্লাড প্রেশার বাড়ে না। কিছু হলেই পৃথিবী গোলগোল করে ঘুরে। রিলাক্স, শান্ত হ। রাগ কমা, নয়তো গালের মাংস ফুলে ব্লাস্ট হবে যেকোনো সময়। মাথা ঠান্ডা করে বোস, ভাবতে দে।"

নিরা ক্লান্ত ভঙ্গিতে হাহাকার করে। "আমি কিন্তু গলায় ফাঁস দিবো, নাবিল ভাই। তোমার চৌদ্দ গোষ্ঠীকে ফাঁসাবো জেনে রেখো।"

কৌতুক শোনার ভঙ্গিতে হেসে উঠলো নাবিল। "হু হা হা। তোর মদন মার্কা আরজি শুনে হাল্কা করে মরে গেলাম। এমন চিপ মুখস্থ ট্রাজেডি লাইন কে শেখায়? ঠিক মত তর্কও করতে পারিস না। আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর মধ্যে তোর গোষ্ঠীই তো অর্ধেক রে বলদের বলদ। এমন আবুল কিসিমে’র যুক্তি নিয়ে নাবিলের সঙ্গে তর্কে জড়াস? সাচ্চা মূর্খ রমণী।"

নিরা ফুঁসে উঠলো। তখনও নাবিলের হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে অপর প্রান্ত থেকে। গগন কাঁপিয়ে হাসছে ছেলেটা৷ জলজ্যান্ত আগ্নেয়গিরির লাভাটাকে আরেকটু উস্কে দিতে মন্দ লাগে না তার। নিরুটার রাগটা বরাবরের মতোই একটু বেশি। ওকে রাগানো মানে নাবিলের সারাটাদিন বিন্দাস।
ইফরান বিভ্রান্ত মুখে চেয়ে আছে চাচ্চুর পানে। হুট করেই হাসছে কেন চাচ্চু!

"হাসছো কেন তুমি? নিরা ফুপ্পি কী বললো?"

নাবিল কাঁধে হাত রাখে ভাতিজার। গা দুলিয়ে বলে, "ফুপ্পি না রে পাগলা, চাঁচি বল। একটু পরেই পৃথিবীকে সাক্ষী রেখে তোর নিরা ফুপ্পি তোর চাচাকে তিন বার কবুল করবে। তোর ফুপ্পির অবস্থা বেগতিক। যেকোনো সময় ইন্না-লিল্লাহ হয়ে যেতে পারে। আবার না-ও হতে পারে। শুনেছি স্বামীর সোহাগে নাগা মরিচও দুধভাত হয়ে যায়। তোর ফুপ্পিও হবে। অহংকারী বেডি তোর চাচ্চুর কথায় উঠবে আর বসবে। চাঁচি বলার অভ্যাসটা এখন থেকেই কর বাপ। আমার বিয়ে করা বউকে ভবিষ্যতে এমন এবড়োখেবড়ো ডাকে সম্মোধন করলে মাথায় তুলে আছাড় মারবো। চাঁচি বলবি,বুঝলি? সাথে আম্মা এড করলেও প্রব্লেম নেই। আমাদের নাদুসনুদুস ছাওয়াল-পাওয়াল হওয়ার আগে তোকেই নাহয় পালিত সন্তান বানিয়ে নিলাম। কী বলো, প্রি-অর্ডারি বউ?"

নিরা ভারী একটা হতাশ শ্বাস ফেললো। মেজাজ ঠান্ডা করার চেষ্টা করে বললো,

"নাবিল ভাই, প্লিজ তাড়াতাড়ি বলো কী করতে হবে? তোমার সঙ্গে আজাইরা প্যাচার করার জন্য পুরা জীবন পড়ে আছে। এখন বাঁচাও। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু ম্যারি নাউ,আর তোমাকে বিয়ে করার তো প্রশ্নই আসে না। প্ল্যান আছে কিছু? নাকি ওটাও মেয়ে হয়ে আমাকে দিয়েই করাবা?"

" তোর মাথা! এই তুই কি রে? সাহায্য চাইছিস আবার অকৃতজ্ঞের মতো এটিটিউড দেখাচ্ছিস? কংক্রিটের শরীর নাকি? মায়া-দয়া, ম্যানার্স,সফ্টনেস,কুলনেস, লাভনেস বলতে কিছু আছে, নাকি সেটাও সিমেন্ট ভেবে গিলে নিয়েছিস? কই হাতে-পায়ে ধরে নাকের পানি চোখের পানি এক করে ভ্যাঁ করে একটু কাঁদবি, তা না, উল্টো এমনভাবে বলছিস মনে হয় তোর মতো ব্রিটিশ মরিচকে বিয়ে করার জন্য আমি খুব আনন্দবোধ করছি। আহা কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে টাইপ ব্যাপার? আয়নায় নিজেকে দেখেছিস কোনোদিন? ইউউউউ ব্লাডি ব্রিটিশ মরিচ!"

নিরা ফের নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো লম্বা শ্বাস টেনে। মেয়েটা বরাবরই এই এক রাগের কাছে কাবু হয়ে যায়।

"শ্রদ্ধেয় নাবালক এহসান, প্লিজ আমার প্রতি একটু এহসান করুন। এই মাইনকার চিপা থেকে উদ্ধার করুন ফুপাতো ভাই। আপনার প্রানপ্রিয় মামা আমাকে কিছুক্ষণের মধ্যেই বলি দেবেন। শত্রুতা আমরা পরে মিটমাট করতে পারবো। বাট আজকে আপনি প্লিজ জল্লাদের রোলটা প্লে করবেন না। একটু সদয় হোন এই দুঃখী মানবীর প্রতি।"

বেশ রসিয়ে রসিয়ে কথাগুলো বললো নিরা। নাবিল বিরক্ত হলো। মুখে চ সূচক শব্দ করে বললো,

"তুই নাবালক, তোর নানার সাত গোষ্ঠী নাবালক! বাপের সঙ্গে না পেরে আমার মধুর মতো মিষ্টি নাম বিকৃত করতে আসছে। এতো কাহিনী না মারিয়ে নিজে গিয়ে বললেই তো পারো, হাঙ্গা তুমি করবে না। আমাকে কেন ফাঁসালি? তোকে আসলে থাপ্রানো উচিত, ফাজিল। মুখে বেহুদা পটরপটর সারাদিন, কাজের বেলায় খালি কলসি।"

নিরার কন্ঠ নরম হয়ে এলো। রয়ে সয়ে বলল,

"অসময়ের সুযোগ নিও না তো, নাবিল ভাই। মেলা পেরায় আছি। আপুর বিপদ আমার ঘাড়ে এভাবে চেপে বসবে জানলে জীবনেও ওকে হেল্প করতাম না। না থাকতো বাঁশ,না বাজতো বাঁশরি। হারামিটা প্রেমিক নিয়ে ভেগে আমায় ফাঁসিয়ে গিয়েছে। আব্বুকে কী করে বোঝাই বলো তো? মিরাপু ভেগেছে বলে কি আমিও মানইজ্জত ডুবাবো? এই চিনলো আমায়?"

নাবিল হাই তুলতে তুলতে বললো,

"তোদের বিশ্বাস নেই। করতেই তো পারিস। তলে তলে টেম্পু চালালে আমার সহজ-সরল মামার গতি কী? কন্সপিরেসি তো কম জানিস না। বাপের বংশ বাদ দিয়ে নানার বংশের রীতি ধরলে এমনই হওয়ার কথা। তোদের নানার বংশে আমাদের মতো খাঁটি লোক দেখা তো একটা? এমন শুদ্ধ বংশ আর পাবি কোথাউ? তোদের আসলে রুচির সিস্টেম ভালো না। তোর বোন ধরেছে গরু বেপারী আর তুই ধরবি ছাগল বেপারী। দুই বোন মিলে হাম্বা হাম্বা, ভ্যা ভ্যা ছাড়া উপায় নাই। আমাদের মতো ক্লাসিদেরকে তো আর ভাল্লাগবে না। অবশ্য, দেশের প্রোডাক্টিভিটিতে তোদের অবদান কিছুটা বাড়বে।"

নিরার এবার সত্যি ইচ্ছে করছে গড়াগড়ি করে কাঁদতে। লোকটা ওকে এক রত্তিও স্বস্তি দিচ্ছেনা। জন্ম থেকে জ্বালিয়ে মারছে শয়তানটা!

"আমি গরু বেপারী না, দরকার হয় গরু চোরকে বিয়ে করবো, তা-ও তোমাকে না। "

"হাহ্, যার টেস্ট যেমন।"

দরজার ধুপধাপ আওয়াজ হচ্ছে। মা ডাকছে নিরাকে,

"নিরা, তাড়াতাড়ি বের হ মা। কাজী সাহেব এসে পড়েছে, বাবু। তোর আব্বু রেগে যাচ্ছে। বের হ জলদি।"

নিরা দাঁত দিয়ে নোখ খুঁটতে খুঁটতে ঠোঁট উল্টে মৃদু শব্দ করে গোঙ্গালো।

"নাবিল ভাইইইই!"

নাবিলের হাসি ঠেকায় কে। উদভ্রান্তের মতো গা দুলিয়ে পৈশাচিক হাসলো ছেলেটা। সে কী বিশ্ব জয় করা হাসি!

"এহহে রেএএএএএ! নিরুপমার ডাক পড়েছে। যা নিরু, যা, জি লে আপনি সাসুরাল। তোর ফুপ্পি ওরফে আমার একমাত্র আম্মা তোকে বরন করার জন্য প্রস্তুত। যাও বউ। বলবো কথা বাসর ঘরে।"

-----

সিকদার বাড়িতে ইতিমধ্যে হৈ-হুল্লোড় পড়ে গেছে। বর-বউ উভয়ই নাকি একইসঙ্গে উধাও। অবাক কান্ড! পালাতে হয় একজন পালাবে, দু'জন কেন? বিরল ঘটনা। রিমির মতে এসব ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখা উচিত। মানবজাতি বিয়ে থেকে পালানো ইতিহাসের ভিন্নরকম দৃষ্টান্ত দেখতে পাবে।
রাহেলা বেগম ভাইয়ের শিউরে বসে আছেন। ঘটনা সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত না হওয়া অব্দি কোনোকিছুই বলা যাচ্ছে না। ছেলেটা তার এমন কান্ড করে বসবে কে জানতো? বিয়ে করবি না তা আগে জানালে কী হতো? খামোখা লোক হাসানো তামাশা।
আমিনা বেগম চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছেন খাটের এক কোনে৷ মেয়ে দু'টোকে এতো দেখেশুনে, কঠোর পরিবেশে বড় করার এই ফল দিলো? কীসের অভাব ছিল এদের? একটা বার বাপটার দিকে চাইলো না?

রিমি কোথা থেকে উড়ে এলো কে জানে। হাতে একটা সাদা কাগজের চিঠি৷ রাহেলা বেগমের সম্মুখে ধরে বললো,

"নিরাপুর রুম থেকে পেয়েছি।"

শোকসভায় পরিনত হওয়া নিস্তব্ধ বাড়িটা জেগে উঠার মতো একটা কারণ পেলো এবার। যারা বসেছিল ওরা উঠে দাঁড়ালো। আর দাঁড়ানো লোকগুলো আরও কাছে এলো। চোখে-মুখে তীব্র কৌতুহল। মুহূর্তটাকে বাংলা সিনেমার ক্লাইমেক্সও বলা যায়। শুধু অভাব একটা ধুম তা-না-না ধরণের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের। সেই কাজটা অবশ্য নিরার মামি-খালারা করে দিবেন। কুটনামিতে এদের ভালো সুনাম আছে। মার চেয়ে মাসির দরদ বেশি টাইপ হা-হুতাশে এরা পিএইচডি প্রাপ্ত।

চিঠির খবর পেয়ে বড়ঘরে ছুটে এলো সকলে। চেয়ে রইলো অধির আগ্রহ নিয়ে। ডাকপিয়ন রিমি মেলে ধরলো চিঠি। সকলের অপেক্ষার অবসান এই বুঝি ঘটল। কখন পড়বে চিঠি? কী আছে এতে? চিঠিটা কি সকলের উদ্বিগ্নতা কমাতে সক্ষম হবে, নাকি নতুন করে মাথায় হাত দিয়ে চক্কর খাওয়ার মতো কোনো বিষয়? রহস্য রহস্য রহস্য!

['রোদ পোহাবার ছুতোয়' স্বাগতম। রমজানে কোন সময়ে গল্প দিলে আপনাদের পড়তে সুবিধা হবে, জানাবেন। প্রথম পর্ব নিয়ে মতামত লিখতে ভুলবেন না কমেন্টে।]

Address


Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Romantic love story posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Romantic love story:

Shortcuts

  • Address
  • Telephone
  • Alerts
  • Contact The Business
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share