
29/06/2025
#প্রাণনাশিনী (সামাজিক+ রোমান্টিক +গ্রাম্য )
#পর্ব০১
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122153288516378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্ব০২
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122153528366378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্ব০৩
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122154366434378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্ব০৪
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122155022924378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্ব০৫
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122155381718378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্ব০৬
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122155873328378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্ব০৭
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122156775644378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্ব০৮
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122157321128378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্ব০৯ ( প্রথম অংশ)
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122158629410378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্ব০৯ (দ্বিতীয় অংশ )
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122159124902378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্১০
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122160156830378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্ব০১১
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122160689186378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্ব১২
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122161463774378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্ব১৩
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122161999172378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্ব১৪
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122162652206378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্ব১৫
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122163243494378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্ব১৬
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122163367466378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#পর্ব১৭
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122164167422378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
#অন্তিম_পর্ব
https://www.facebook.com/61561368555773/posts/122164196084378951/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
সমাপ্ত......
--"ছোডু আম্মু, ঐদিক দিয়া যাইয়েন না! আমনে রাস্তা ঘুইরা বেলতলার ঘাট দিয়া যান।"
রফিক মিয়ার কথায় কপালে ভাঁজ পড়ে ষোড়শী কন্যা সুবহার। সদ্য দশম শ্রেণিতে উঠেছে সে। বই পুরোনো হলেও নতুন ক্লাস, নতুন বছর সব কিছুতেই একরকম উচ্ছ্বাস।স্কুলে খেলা চলছে। তবে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী সুবহার আজ কোচিংয়ে পরীক্ষা আছে জামান স্যার এর। বান্ধবী শিউলির সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছে সে।
আজ সকালে দেরি হয়ে গেছে তাদের। তাইতো শর্টকাট হিসেবে সোজা পথটাই বেছে নিয়েছে। যদিও ইদানীং এই রাস্তা দিয়ে আর আগের ন্যায় যাতায়াত করেনা সুবহা। তবু আজ দেরি হওয়ায় এই পথটা বেঁচে নিয়েছিলো তারা। তবে রফিক মিয়ার হঠাৎ সতর্কবার্তায় থমকে যায়। সুবহা।
--"কেন চাচা, এই রাস্তায় কী হইছে? আমাদের এমনিতেই আজ দেরি হয়ে গেছে। আর বেলতলার ঘাট দিয়ে গেলে তো সময় আরও বেশি লাগবে!"
রফিক মিয়া গম্ভীর স্বরে বলল,
--"হোক, কিন্তু অন্তত সুস্থভাবে তো স্কুলে পৌঁছাইতে পারবা! এই পথ দিয়া যাইও না আজ। বেশি দেরি হইলে বরং স্কুলে যাওন লাগতো নাহ। বাড়ি ফিরা যাও।"
সুবহার চোখে উদ্বেগের ছাপ ফুটে ওঠে। পরীক্ষা বাদ পড়লে জামান স্যার তো রেহাই দেবে না! কপালে ভাঁজ ফেলে বলে,
--"কিন্তু চাচা, আজ আমাদের কোচিং পরীক্ষা আছে। না দিলে স্যার আমাদের খবর করে ছাড়বে !"
রফিক মিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল,
--"তাইলে যাও, কিন্তু সাবধানে যেয়ো। এলাকার পরিস্থিতি ভালো না।"
--"কেন কাকা, কী হয়েছে?"
শিউলির প্রশ্নে রফিক মিয়ার চোখেমুখে উৎকণ্ঠার ছাপ পড়ে। গলা ভারী করে বলে,
--"আর কী হইবো! চেয়ারম্যানের পোলায় টং দোকানের উজ্জ্বলরে পিটাইতাসে। দুই দলের লোক নিয়া মারামারি লাগছে। অবস্থা ভালো না। তোমার চাচি শিপনরে দিয়া আমারে ডাকাইয়া নিতাসে বাড়ি।"
সুবহা আতঙ্কিত চোখে শিউলির দিকে তাকায়। স্পষ্ট কিছু না বললেও চোখের ইশারাতেই বুঝিয়ে দেয় সে এই পথ দিয়ে যাবে না। শিউলিরও কিছু বলার সুযোগ হয় না। রফিক মিয়া বেশি কিছু না বলে দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। সুবহা ফিসফিস করে বলে,
--"শিউলি এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া লাগবে নাহ। আজ বাড়িতে ফিরে যাই। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।"
শিউলি মুখ বাঁকিয়ে বলে,
--"আরে বলদী, এত ভয় পাস কেন সবসময়? মুরগির বাচ্চার মতো কলিজা নিয়া এই গ্রামে চলা যায় নাকি?"
সুবহার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ ফুটে ওঠে।
--"আমায় ওনাকে দেখলেই ভয় লাগে। মনে নেই, দুই বছর আগে আমারে অকারণে এক থাপ্পড় দিছিলো? এক সপ্তাহ জ্বরে ভুগেছিলাম ! আমি যাবো না, তুই যা।"
শিউলি হাসল। যেন ব্যাপারটা তেমন গুরুতর কিছুই না।
--"তখন তুই ছোট ছিলি। এখন তো বড় হয়েছি আমরা। ক্লাস টেন এ পড়ি! আমাদের গায়ে হাত তুলতে আসবে কোন দুঃখে শুনি?"
সুবহা মাথা নাড়ে।
--"ওনার মারার জন্য কোনো কারণ লাগে নাকি? অকারণেই গায়ে হাত তোলে! দেখলি না চাচা বলল উজ্জ্বলকে ভাইকে মারতাসে। আমি যাবো না, বোন। তুই যা।"
শিউলি সুবহার কথা কানে তোলে না। বরং তার হাত ধরে টেনে নিয়ে এগোতে থাকে। বুক ফুলিয়ে সাহস সঞ্চয় করে বলে,
--"শুনেছিস সুবি? আযহার ভাই নাকি আগের চেয়েও বেশি সুদর্শন হয়ে গেছে! গতকাল রাসেল ভাইরা বলাবলি করতাসিলো শুনলাম। !"
শিউলির কথায় সুবহার চোখের মণি বিস্ফারিত হয়! মুখে কিছু না বললেও মনের মধ্যে তোলপাড় চলে। এর মাঝেই শিউলি ফেরফের করে বলে,
--"মনি আপা তো নাওফিক ভাইয়ার নাম শুনলেই পাগল! দুই বছর দেশে ছিল না, এই জন্যই নাকি এখনো বিয়ে বসেনি। শুনছি, কত ভালো ভালো সম্বন্ধ এসেছে মনি আপার জন্য, কিন্তু সব ফিরিয়ে দিয়েছে! আর তুই মাইয়া, ওনাকে দেখলেই এত ভয় পাস কেন বুঝি না!"
শিউলির কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না সুবহা। কী বলবে সে? কেমন করে বোঝাবে?
এই দুই বছর ছিল তার জীবনের সবচেয়ে নির্ভার, শান্তির, আরামের দিন। রাস্তায় বের হতে হলে বুকের ভেতর আর শঙ্কার কাঁপুনি ধরত না। ভয় নিয়ে এক পা দু’পা ফেলে চলতে হত না। যেন মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নেওয়ার মতো এক স্বস্তির সময় ছিল সেটুকু।
এই পথ দিয়েই তো কতবার গিয়েছে সুবহা। যেদিনতার বাবা এসে বলেছিল চেয়ারম্যানের বড় ছেলে দেশে ফিরে আসছে" সেদিন থেকেই এই রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে সুবহা। ভুলেও এই পথে পা বাড়ায় নাহ সে।
*
পিচঢালা সরু পথ। দুপাশে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা পাটখেত। সবেমাত্র চারা গজিয়েছে। নরম সবুজ পাতাগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে দক্ষিনা বাতাসের তালে তালে। সকালের সোনালী কিরণে পাতাগুলো চিকচিক করছে। সুবহা চুপ করে আছে। মুখ ফুটে কিছুই বলছে না। শুধু শিউলির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে যাচ্ছে সে। মেয়েটা একবার বলতে নিলে আর থামে না। পাশের মানুষ কি শুনলো না শুনলো না সেসব আর ভাবে। বলতেই থাকে।
পরনে নীল রঙা স্কুলের ড্রেস। দুপাশে ওড়নার মতো আরা আড়াআড়িভাবে রাখা ক্রস-বেল। পিঠে ঝুলছে নেভি-ব্লু রঙের ব্যাগ। এই ব্যাগটা গত মাসে তার বাবা শহর থেকে এনে দিয়েছিল। ব্যাগের জিপারের সাথে ছোট্ট একটা পুতুলের রিং ঝুলিয়ে রেখেছে সুবহা। স্কুলের পাশের লাইব্রেরি থেকে কিনেছিলো ওটা টিফিনের আঁকা জমিয়ে।
চুলগুলো বেনুনি করে রাখা। সকালে সুবহার দাদি বেনুনি টা করে দিয়েছিলো স্কুলে আসার সময়। কয়েকটা আলগা গোছা কপালের ধারে নেমে এসেছে। গোলগাল চেহারা, টুকটুকে ফর্সা গায়ের রং। যে দেখবে এক মুহূর্তের জন্য ভেবে বসতে পারে এই মেয়েটা বুঝি মানব আকৃতি ধারকৃত কোনো জীবন্ত পুতুল! যাকে অনেক সাধনা করে অনেক শ্রম দিয়ে বানিয়েছে কেউ।
তার মা শ্যামবর্ণা। বাবা-ও তেমনি। অথচ সুবহার গায়ের রং যেন দুধে-আলতা মেশানো। প্রথম দেখায় অনেকেই বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে।গ্রামে এমন মেয়ে দেখা বিরল। কেউ কেউ তো রসিকতা করে বলে, “এই মেয়েটার পূর্ব পুরুষ নিশ্চয়ই কোনো ইংরেজ ছিল!”
সুবহা এসব কথায় অভ্যস্ত। ছোট বেলা থেকেই এসব শুনতে শুনতে বড় হয়েছে সে। তার রং, তার চেহারা সবকিছু নিয়ে লোকের এত কথা! কিন্তু সে কখনো কিছু মনে করে না। তার দুনিয়াটা এখন স্কুলের ব্যাগ, বইখাতা, বান্ধবী শিউলি আর তার নিজের ছোট্ট স্বপ্নগুলোর মধ্যেই বন্দী।
আর মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই সুবহার স্কুল। তবে তার আগেই পরে গ্রামের বাজার। আর সেই বাজারেই নাকি এখন চলছে তুমুল মারামারি।
বাজারের সামনে আসতেই হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় সুবহার। শিউলির হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে। সামনে যতই এগোয় কোলাহল ততই স্পষ্ট হয়।
অবশেষে বাজারের সামনে এসে থামে তারা।
বাজারজুড়ে এক অদ্ভুত উত্তেজনা। টং দোকানের পাশের সেই পুরোনো আমগাছের নিচে একজন আম গাছের সাথে বেঁধে রাখার সেই দৃশ্য তাদের চোখে পরে। ছেলেটির নাম উজ্জ্বল। মুখের কোণে র"ক্ত জমাট বাঁধা, শরীরটা অবশ হয়ে ঝুলে পড়েছে। চারপাশে লোকজন ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ আগ্রহভরে দেখছে তো কেউ দূর থেকেই পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। সামনে এগুনোর সাহস নেই কারো।
তার সামনেই রাখা একটা চেয়ার। আর সেই চেয়ারে বসে আছে এক মানব। পা তুলে আয়েশী ভঙ্গিতে হেলান দিয়ে আছে। চোখে একরকম অবজ্ঞা। যেন এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তার কাছে কোনো নাটকের দৃশ্যমাত্র।
সুবহার হৃদস্পন্দন মুহূর্তেই দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
বিগত দুই বছর ধরে যে মানুষটিকে সে এড়িয়ে চলেছে আজ হঠাৎ করেই সামনে দেখতে পেয়ে ভয়ের মাত্রা বাড়ে। অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। ভেতরে ভেতরে এক অজানা আতঙ্ক গেঁথে বসে তার শরীরে। আরো শক্ত করে শিউলির হাত চেপে ধরে মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়তে শুরু করে দেয়। এই যাত্রায় বেঁচে গেলে আর কোম্মিনকালেও এই পথের মুখোমুখি হবেনা সে।
এই মানুষটাকে দেখলেই শরীর শিউরে ওঠে তার। ছোটবেলা থেকেই এমনটা হয়ে আসছে। কারণ লোকটড় সঙ্গে যখনি দেখা হয়েছে, তখনই কোনো না কোনো অঘটন ঘটেছে সুবহার জীবনে।
শিউলি থমকে দাঁড়ায়। তবে তার চোখ বাঁধা উজ্জ্বলের দিকে নয়, বরং চেয়ারে বসে থাকা ব্যক্তির ওপর আটকায়। রাসেল ভাই তাহলে ঠিকই বলেছে। লোকটা যেন দিনদিন আরো যুবকে পরিণত হচ্ছে। অন্যদিকে, শিউলির এই অন্যমনস্কতা দেখে সুবহার শঙ্কা আরও বাড়ে। ইশারায় বোঝাতে চায় এখান থেকে চলে যেতে।
কিন্তু শিউলি অনড়। এক সময় উল্টো সুবহার ধরে রাখা হাত ছেড়ে পুরোপুরি থেমে দাঁড়ায়।
সুবহা বুঝতে পারে না, সে কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি সোজা ফিরে যাবে বাড়িতে? দ্বিধার দোলাচলে দুলতে দুলতে পেছন থেকে হঠাৎ ঘেউ ঘেউ শব্দে চমকে ওঠে সুবহা।
এর মাঝেই পিছন থেকে বাজারের একটি কুকুর এসে ঘেউ ঘেউ শুরু করে দেয়। আচানক কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে সুবহা ভড়কে যায়। দ্রুত কুকুরটিকে তাড়ানোর জন্য চেঁচাতে থাকে সে। পরোক্ষনে চোখ পরে এটা তো তাদের বাজারের কুকুর নয়? দেখতেও অনেকটা বিদেশি কুকুর দেড় মতোই। এই আজব প্রাণী আবার কোথা থেকে উদয় হয়েছে তাদের গ্রামে? এর আগে তো কখনো দেখেনি সুবহা একে।
নিজের পোষা কুকুরের ডাক শুনেই চেয়ারে বসে থাকা মানুষটি দৃষ্টি ফেরায় সেদিকে। শিউলির আড়ালে থাকা সুবহার দিকেই চোখ পড়তেই ডেকে উঠে,
--"মিলো, কাম হেয়ার।"
অবাক করার মতোই ঘটনা ঘটে। কুকুরটি কি বুঝল, কে জানে। একবার ডাকতেই কী সুন্দর লেজ নাড়িয়ে চলে গেল তার কাছে। সুবহা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। মনে মনে ভাবে হয়তো লোকটা তাকে দেখতে পায়নি। কিন্তু তার শ্বাস পুরোপুরি ফেলার আগেই আবারও গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে আসে,
--"অভাবে চোরের মতো লুকিয়ে আছিস কেন? বেরিয়ে আয় সামনে।"
সুবহার মাথা ঝিম ধরে। বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ করে ওঠে। লোকটা তাহলে তাকে দেখেই ফেলেছে! এই পুরো ঘটনার জন্য দায়ী শুধু এই শিউলি! কতবার বলেছিল, আজ না হয় স্কুলে না-ই যায়। কিন্তু এই শিউলির বাচ্চা শুনলে তোহ! শেষমেশ এখন ফেঁসে গেল সে!
--"কিরে! তোকে ডাকছি না? এদিকে আয়।"
ভয়ার্ত পায়ে শিউলির আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে সুবহা। ছোট ছোট কদমে এগিয়ে যায় সামনে। মাথা নিচু করে রাখা। চোখ তুলে তাকানোর সাহসটুকুও যেন অবশিষ্ট নেই শরীরে। চেয়ারে বসে থাকা লোকটি এক নজরে পরখ করে নেয় সুবহাকে।
মাত্র দুই বছর আগে এই মেয়েটা কতটুকুন ছিল! অথচ এখন এক লহমায় কেমন যেন বড় হয়ে গেছে! গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করে,
--"স্কুলে যাচ্ছিস?"
--"জি... জি হ!"
--"কোন ক্লাসে?"
--"টেন..."
--"নিউ টেন?"
--"জ... জি।"
লোকটা তার দিকে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সেই দৃষ্টির ভারে সুবহার আরও অসহায় হয়ে পরে। হাঁসফাঁস লাগে। অস্থিরতা বাড়ে। যেন মাটি ফুঁড়ে হারিয়ে যেতে পারলেই সে সবচেয়ে স্বস্তি পেতো এই মুহূর্তে!
--"সামনের বছর তাহলে কলেজে উঠবি?"
সুবহা বুঝতে পারেনা লোকটা তার সঙ্গে কী বোঝাপড়া করতে চাচ্ছে। সে ফেল ফেল করে তাকায় লোকটির দিকে। সাথে সাথে চোখা চোখি হয় দুজনের। তৎযলদি চোখ নামিয়ে নেয় সুবহা। ইতোমধ্যেই লোকটা উঠে দাঁড়িয়েছে। রোদের তাপে তার স্পষ্ট অবয়ব এক অজানা আভাস ফেলে সুবহার ছোট্ট অন্তকরণে। সুবহার নজরে পড়ে লোকটা একটুও বেশিই লম্বা। পরনে জুতাগুলো রোদের তাপে চকচকে ঝিলমিল করছে। জুতায় আবার কিসের যেন একটা অক্ষর লেখা।সুবহা শুনেছে এই লোকের সৌখিনতা সম্পর্কে। সবকিছু নাকি ব্রান্ডের জিনিস ব্যবহার করে। হয়তো জুতা টাও কোনো ব্রান্ডের হবে। নামি দামি কোনো ব্র্যান্ড।
--"বয়স কত রে তোর এখন?"
সরাসরি এমন প্রশ্নে একটু বিব্রত হয়ে পরে সুবহা। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে কাপা কাপা গলায় আওড়ায়,
--"জি!"
তবুও লোকটি বিরত না হয়ে পুনরায় জিজ্ঞাসা করে,
--"তোয় বয়স কত চলছে?"
--"ষোলো!"
--"১৭ ও হয়নি এখনো?"
--"সামনের মাসে হবে।"
লোকটা আর কিছু বলল না। চোখের দৃষ্টি আরও গভীর হয়ে এল সুবহার উপর। একবার ভালো করে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় শুধালো,
--"বাড়ি ফিরে যা। আজ স্কুলে যাওয়া লাগবে না।"
সুবহা যেন এই অপেক্ষাতেই ছিল। বলা মাত্রই এক মুহূর্তও দেরি না করে পিছন ফিরে হাঁটা দেয়। তবে তার যাওয়ার আগেই লোকটা একদম কাছে এসে দাঁড়ায়। মাথা টা একটুও নিচু নামিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
--"কাল থেকে স্কুলে যাওয়ার সময় শরীরে এক্সট্রা ওড়না পরবি। মাথায় হিজাব পেচাবি। চাচাকে বলবি, বোরকা কিনে দিতে। এরপর যদি বোরকা ছাড়া তোকে বাড়ির বাইরে দেখি তাহলে পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেবো। এখন বাড়ি যা।"
শরীরের সমস্ত র"ক্ত যেন জমে যায় সুবহার। গা শিউরে উঠে। মুহূর্তে যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চাইল। মাথা নিচু করে সে আর দাঁড়ায় না। এক দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসে। এমনকি শিউলিকেও ডাকে না সে। মেয়েটার জন্যই আজ এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হলো তাকে। ফাজিল মেয়ে কোথাকার! বাড়ি গিয়ে ইচ্ছেমতো ধোলাই দেবে ওকে!
হাঁটতে হাঁটতে বুকের ভেতর ধুকপুকানি কমার বদলে যেন আরও বেড়ে যায়। এই দু'বছর সে কতটা শান্তিতে ছিল! অথচ আজ আবার সেই দুঃস্বপ্নের বাস্তবতায় ফিরে এসেছে। সেই পুরোনো আতঙ্ক। সেই চেপে আসা নিঃশ্বাস। সেই দৃষ্টির দগদগে আগুন! তেজওয়ান নাওফিক চৌধুরী!
#সূচনা_পর্ব
#প্রাণনাশিনী
#সুহাসিনি_মিমি
(আমি হলাম মেন্টাল মানুষ। মনের ভিত্বে একবার যেটা ঢুকবো ঐটা না করা পর্যন্ত খুট খুট হয় সারাক্ষন। না লিখলে শান্তি পাচ্ছিলাম নাহ। আপনারা বললে এটা কন্টিনিউ করবো সিজন ২ এর পাশাপাশি। সপ্তাহে দু পর্ব করে পাবেন। যদি চান তাহলেই। কেমন লাগলো জানাবেন।)