অস্র ছাড়ো কলম ধরো। জ্ঞানের আলোয় জীবণ গড়ো।× অস্র চেয়ে কলমের শক্তি বেশি √ আর সৃষ্টিকে ধ্বংস করা অস্ত্রের ধর্ম।
আমি সাজ্জাদ বলছি : পৃথিবীতে যত অস্ত্রের মহড়া চলবে ততই ক্ষুধা, দারিদ্র্যতা বাড়বে। বাড়বে হাহাকার, মৃত্যু, বীভৎসতা আর রক্তপাত।
আধুনিক বিশ্ব আজ অস্ত্রের মহড়ায় ব্যস্ত। যেভাবে অস্ত্রের ব্যবহার এবং বাণিজ্যিকীকরণ এবং তৈরি হচ্ছে তাতে রক্তের বন্যা বইতে আর বেশি সময় নেই।
ইতিহাস থেকেও অস্ত্রের ব্যবহারকারীদের অবস্থান জানা যায়। তাদের মানুষ কতটুকু শ্রদ্ধা করে যারা অস্ত্র দিয়ে বিশ্বজয় করতে চেয়েছিলেন? বিশ্বকে কখনো অস্ত্র দিয়ে জয় করা যায়না। অস্ত্র দিয়ে কেবলমাত্র অশান্তি আর রক্তপাতই করা যায়। শান্তি আর সুশাসন স্থাপন করা যায়না। কেউ কখনো পারেনি।
অস্ত্রের ধারে পৃথিবীকে ধ্বংস করা সম্ভব, কিন্তু রক্ষা করা সম্ভব নয়। মানুষ সৃষ্টিশীলতা, মানুষের কীর্তি, গৌরব সব ধ্বংস করা যায় অস্ত্র দিয়ে। যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ টুইন টাওয়ার ধ্বংস করে দেয়া। কি লাভ হয়েছিলো এটি করে? নিরীহ মানুষ কে নরক যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো মাত্র।
যত অস্ত্রের সমাহার বাড়বে ততই মানুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে হিংসা, বিদ্বেষ আর সংঘাত বাড়বে। এবং বাড়ছেও।
ইতিহাসের ঘৃণিত নামগুলো অস্ত্রের কারণেই আজো ঘৃণার সাথে স্মরণ করে মানুষ। হিটলার, মুসোলিনী,চেঙ্গিস খান,হালাকু খা প্রমুখ ব্যক্তিরা অস্ত্র দিয়ে পৃথিবীকে রক্তাক্ত করে দিয়েছেন। মানবতাকে অস্ত্রের কাছে বলী দিয়েছিলেন। মানুষ তাদের ঘৃণা করে। মানবতার চরম শত্রু তারা। পৃথিবীর যত হাহাকার আর কান্না সব তাদের কীর্তি। তারা কখনোই মানুষের ভালোবাসা বা শ্রদ্ধার যোগ্য নয়, করুণার যোগ্যও নয়। শুধুই ঘৃণার যোগ্য।
মেধার সবচেয়ে বড় শক্তি কলম। কলম দিয়ে ভালোবাসা অর্জন করা যায়।
অস্ত্র মানুষের শরীরে ঢুকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। কিন্তু কলম মানুষের হৃদয়ে প্রাণের স্পন্দন তৈরি করে দেয়। হৃদয়ে সাড়া জাগাতে পারে কলম। আর মানুষের যন্ত্রণার জোগান দেয় অস্ত্র।
আজ পৃথিবীর সমস্ত সৃজনশীলতা, সমস্ত অর্জন, সমস্ত সুখের অনুভুতি তার সবই কলমের আচড়েই হয়েছে। সাহিত্য, শিল্প, কবিতা, গান, উপন্যাস সবই কলমের অবদান। কলম ধরলে প্রাণে বিবেকের জাগ্রত হয়, আর অস্ত্র ধরলে অন্তরে প্রতিহিংসা আর হিংস্রতার উদ্রেক হয়। কলমের আচড়ে কবি-সাহিত্যিকরা ফুটিয়ে তোলেন সমাজের বৈষম্যতা আর সুন্দর প্রকৃতির নৈসর্গিকতা। কলম দিয়েই কবি নজরুল লিখেছেন ‘বিদ্রোহী’যা আজো বিদ্রোহী স্বত্বাকে বাচিয়ে রেখেছে। যা আজো শাসকের গা ভয়ে শিউরে ওঠে।
কলমের হিম্মতেই রোকেয়া, সুফিয়া কামালেরা আন্দোলন করে গেছেন। মাইকেল তৈরি করে গেছেন সাহিত্যের নতুন অধ্যায়। বাঙ্গালিকে বিশ্বের দরবারে উচু করে গেছেন রবীন্দ্রনাথ। বাংলা সাহিত্যকে সর্বোচ্চ সম্মানের মুকুট পরিয়ে গেছেন কলমের শক্তিতে।
কলমের শক্তিতেই বলীয়ান হয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান আজ বিশ্বে সমাদৃত। জ্ঞানের ভাণ্ডার, সাহিত্যের ভাণ্ডার, বিজ্ঞানের ভাণ্ডার সবই পরিপূর্ন আজ কলমের জোরে। মানুষের অভাব, অনটন, দুঃখ, দুর্দশা, হৃদয়ের অনুভূতি সবই তুলে ধরতে পারে কলম। আহমদ ছফা, বদরুদ্দীন উমর, আহমদ শরীফ এর মতো ব্যক্তিরা রাষ্ট্রের অনিয়ম আর অনাচারের প্রতিবাদ করেন কলম দিয়েই। জয়নুল আবেদীন, এসএম সুলতানেরা রঙ-তুলির আচড়ে দুর্ভিক্ষের ছবি একেছেন আর অস্ত্র একে দেয় দুর্ভিক্ষের হাহাকার।
কলমধারীরা বিশ্বের বুকে সমাদৃত থাকেন চিরকাল।
শেকসপিয়র, আইনস্টাইন, সক্রেটিস, প্লেটো, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কলম দিয়ে বিশ্বজয় করে নিয়েছেন। বিদ্যাসাগর বাংলা সাহিত্যকেই শুধু পথ দেখাননি, হিন্দু নারীসমাজকেও উদ্ধার করে গেছেন কলমের দ্বারা। অস্ত্রের প্রয়োজন পরেনি তার। আজ তার নাম স্মরন হয় ভক্তির সাথে।
কলমের জয় হলেই মানবতার জয় হবে। আর অস্ত্রের জয় হলে মানবতার ধ্বংস হবে। মানুষে মানুষে ভালোবাসার সেতু গড়ে দেয় কলম আর সম্প্রীতি নষ্ট করে দেয় অস্ত্র।
কবি-সাহিত্যিকেরা মানুষের অন্তরের কথা, অনুভুতি, জরা, দুঃখ-বেদনা সব ফুটিয়ে তোলেন লেখনীতে। তাদের লেখায় উঠে আসে সমাজের নানান অসংগতি। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রাপ্তি সবই কলম ফুটিয়ে তোলে অভিনব কায়দায়।
কলমের লেখনী শক্তিমান। কলম কখনো মানবতার বিরুদ্ধে লেখেনা। কলমের শক্তি অবিনশ্বর। অস্ত্রের শক্তি ক্ষণস্থায়ী।
কলম জ্ঞানের দ্বার কে উন্মোচিত করে দেয়। সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করে কলম। মেধার গতিকে প্রাণ দিতে পারে কলম। মনকে অনুপ্রেরণার পরিতৃপ্তিতে ভরে দিতে পারে কলম।
একমাত্র কলমই পারে বিশ্বে শান্তি স্থাপন করতে। কলম ভালোবাসার কথা বলে, শান্তির কথা বলে, মানবতার কথা বলে।
সৃষ্টিশীলতা কলমের বৈশিষ্ট্য। আর সৃষ্টিকে ধ্বংস করা অস্ত্রের ধর্ম।
বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো-আমেরিকা, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, চীন এরা ভয়ংকর অস্ত্রের খেলায় মত্ত। অস্ত্রের মহড়ায় সবার সেরা হবার কি ঘৃণ্য প্রচেষ্টা! অস্ত্রের কাছে মানবতাকে বিসর্জন দিচ্ছে মানুষেরাই! অতীতেও দিয়ে এসেছে। যার সাক্ষী জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকি।
আজো সেই খেলা চলছে। অস্ত্রের জোরে বড় হবার খেলা। অস্ত্রের বিজয় চিরস্থায়ী হয়না। কারণ এতে মানুষের দীর্ঘশ্বাস থাকে! হা-হুতাশ থাকে! অভিশাপ থাকে!
অস্ত্র কখনো বিশ্বজয় করতে পারেনা। ভালোবাসা দিয়েই বিশ্বজয় করা সম্ভব। হিটলররা কখনো বিশ্বজয় করতে পারেনা; মাদার তেরেসারাই বিশ্ববিজেতা।
অস্ত্র নয়, কলম চাই। বাচার মতো বাচতে চাই। যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।
আসুন আমরা অস্ত্র ফেলে কলম ধরি। প্রগতিকে রক্ষা করি।
পেশীশক্তির নয়, অস্ত্রের নয়, জয় হোক কলমের।
কলমই শক্তি, কলমই মুক্তি।।