16/07/2025
দুআ করার আদব
দুআ হচ্ছে অস্ত্রের মতো। তবে অস্ত্র হলেই চলবে না, সেটার ধারও থাকতে হবে। তদ্রুপ দুআ কেবল করলেই চলবে না, সেটা নিয়ম-মাফিক হতে হবে। যে দুআতে অন্তর এবং মুখের মিল না থাকে, সে দুআ ফলপ্রসূ হয় না। কেবল আদবহীন বুলি আওড়িয়ে গেলে তা কবুল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এখন আমরা দেখব দুআর ক্ষেত্রে কী কী আদব বজায় রাখতে হয়।
ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা
[২১] ইখলাসের সাথে দুআ করা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَادْعُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَفِرُونَ )
কাজেই, আল্লাহকে ডাকো তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে, যদিও কাফিররা এটা অপছন্দ করে। [২৯।
আল্লাহর ওপর আস্থা রাখা
[২২] আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, নবি বলেছেন, 'কবুল হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আল্লাহর কাছে তোমরা দুআ করো। জেনে রাখো, আল্লাহ তাআলা অমনোযোগী ও অসাড় মনের দুআ কবুল করেন না।' [৮]
বিনীতভাবে দুআ করা
[২৩] বিনয়ের সাথে, সওয়াবের আশায় দুআ করতে হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন,
مِنَ الْغَفِلِينَ )
তুমি মনে মনে আপন রবকে স্মরণ করো সকাল-সাঁঝে, অনুনয়-বিনয় করে, ভীতি সহকারে এবং অনুচ্চ স্বরে। আর গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।।।
একাগ্রতা নিয়ে দুআ করা
[২৪] আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, 'তোমাদের কেউ এমনটা বলবে না যে, হে আল্লাহ! আপনার ইচ্ছে হলে আমাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনার ইচ্ছে হলে আমাকে দয়া করুন। বরং একাগ্রতা নিয়ে দুআ করবে। কারণ আল্লাহকে কেউ বাধ্য করতে পারে না।'০০]
দুআর শুরুতে যা পড়তে হবে
[২৫] ফাদালা ইবনু উবাইদ বলেন, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা আর নবি-এর ওপর দরুদ না পড়েই দুআ শুরু করেছে শুনে রাসূল বললেন, 'সে তাড়াহুড়া করেছে।' তারপর ওই ব্যক্তিকে ডেকে তিনি বললেন, 'তোমাদের কেউ যখন দুআ করে, সে যেন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা এবং নবির ওপর দরুদ পড়ে।'[*]
[২৬] আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ বলেন, আমি নামাজ আদায় করছিলাম। আবু বকর, উমর এবং আল্লাহর রাসূল তখন সেখানে ছিলেন। নামাজ শেষে আমি বসে প্রথমে আল্লাহর গুণকীর্তন করলাম এবং রাসূল -এর ওপর দরুদ পাঠ করলাম। এরপর আমার নিজের জন্য দুআ করলাম। এই সময় রাসূল বললেন, 'চাও, তোমাকে দেওয়া হবে। চাও, তোমাকে দেওয়া হবে।'৪৫
সকল অবস্থায় দুআ করা
[২৭] আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, 'কেউ যদি এটা পছন্দ করে যে দুঃখ এবং বিপদের সময়ে তার দুআ আল্লাহ কবুল করবেন, তবে সে যেন সুখের সময় বেশি বেশি দুআ করে।'***।
অভিশাপ না দেওয়া
[২৮] জাবির থেকে বর্ণিত আছে, এক সফরে রাসূলুল্লাহ-এর সাথে থাকা অবস্থায় জনৈক ব্যক্তি নিজের উটকে অভিশাপ দিল। এটা জানতে পেরে রাসূল সে ব্যক্তিকে বললেন, 'উটটি থেকে নেমে যাও। অভিশপ্ত উটটি নিয়ে আমাদের সাথে তুমি থাকতে পারবে না। তোমরা নিজেদের ওপর বদদুআ কোরো না, নিজেদের সন্তানদের প্রতি বদদুআ কোরো না, এমনকি নিজের ধন-সম্পদের ওপরও না। এটা যেন না হয় যে, এমন মুহূর্তে তোমরা বদদুআ করছো যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া হলে তা দিয়ে দেওয়া হয়।'
মৃদু শব্দে দুআ করা
[২৯] আবু মূসা আশআরী বলেন, এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ-এর সাথে ছিলাম। কোনো উপত্যকায় আরোহণ করলে আমরা তাকবির এবং তাহলিল বলতাম। আমাদের আওয়াজ বেশি জোরে হয়ে যাচ্ছে দেখে নবি বললেন, 'হে লোকসকল! নিজেদের প্রতি দয়া করো। তোমরা তো বধির বা দূরবর্তী কোনো সত্তাকে ডাকছো না। বরং তিনি তোমাদের সঙ্গেই আছেন। তিনি তো শ্রবণকারী, অতি-নিকটবর্তী।'
কাকুতি-মিনতি করা
বিনয় এবং নম্রতার সাথে কাতরসুরে আল্লাহর কাছে মিনতি জানানো উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন,
তোমরা বিনীতভাবে এবং চুপিসারে নিজেদের প্রতিপালককে ডাকো। তিনি সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না।।।
ইয়া যাল-জালালি ওয়াল ইকরাম বলা
[৩০] রবীআ ইবনু আমির বলেন, নবি-কে আমি এ কথা বলতে শুনেছি,
يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
হে গৌরব ও মহত্ত্বের অধিকারী
(দুআতে এটা) বলা তোমরা অপরিহার্য করে নাও।'
ওসিলা দিয়ে দুআ করা
ওসিলা অর্থ নৈকট্য, আনুগত্য এবং কোনো কিছুর কাছে নিয়ে যাওয়া মাধ্যম। রাগিব আসবাহানি লিখেছেন, আল্লাহ তাআলার কাছে ওসিলা গ্রহণের সারকথা হলো ইলম এবং ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যের রাস্তা অবলম্বন করা এবং শরীয়তের বিধি-বিধান মেনে চলা। যেসব ওসিলা দিয়ে দুআ করা যায়:
⇨
ক) আল্লাহ তাআলার ওসিলা: তাঁর কোনো নাম বা গুণের ওসিলা
দিয়ে কিছু চাওয়া। এই ব্যাপারে অসংখ্য হাদীস রয়েছে।
[৩১] বুরাইদা আসলামি করতে শুনলেন, বলেন, নবি জনৈক ব্যক্তিকে এ দুআ
[৩৬] সূরা আরাফ, ৭: ৫৫
[৩৭] আলমুসতাদরাক লিল হাকিম, হাদীস নং: ১৮৩৬, সহীহ
[৩৮] মুফরাদাতু গারীবি আলফাযিল কুরআন, পৃষ্ঠা নং: ৮৭১
[৩৩] সুনানুত তিরমিজি, হাদীস নং: ৩৩৮২, হাসান
[৩৪] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ৩০০৯, সহীহ
[৩৫] সহীহুল বুখারি, হাদীস নং: ২৯৯২, সহীহ
[২৯] সূরা আরাফ, ৭: ২০৫
[৩০] সহীহুল বুখারি, হাদীস নং: ৬৩৩৯, সহীহ
[৩১] সুনানু আবী দাউদ, হাদীস নং: ১৪৮১, হাসান
[৩২] সুনানুত তিরমিজি, হাদীস নং: ৫৯৩, হাসান
[২৭] সূরা মুমিন, ৪০: ১৪
[২৮] সুনানুত তিরমিজি, হাদীস নং: ৩৪৭৯, হাসান