30/05/2025
( #সত্য_ঘটনা_অবলম্বনে)
#তাক্বদির
বিয়ের ১৪ বছর পরে আমার স্বামী আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিলেন। আমাদের একবার একটি মৃত কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তারপর আর কোনো সন্তান হয় নি। আমরা ছিলাম সবচেয়ে ভালো স্বামী-স্ত্রী। আমাদের মধ্যে মিল-মহব্বত এতটাই দৃঢ় ছিল যে, একে-অপরকে ছাড়া থাকতে পারতাম না। নিঃসন্তান হওয়া সত্ত্বেও আমরা অনেক ভালো ছিলাম। কিন্তু, লোকেরা এটাই গ্রহণ করতে পারল না।
বাচ্চাকাচ্চা নেই, কেন আমাদের মধ্যে এতো ভালোবাসা থাকবে? একদল আমার স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ের পরামর্শ দিল। আরেকদল বলল আমাকে ডিভোর্স দিতে। দেখা হলেই সবাই বাচ্চা নিয়ে নানানভাবে খোঁচা দিত। আমার স্বামী কাতার প্রবাসী ছিলেন। যখন দেখলেন গ্রামের মানুষ অতিরিক্ত কানপড়া দিয়ে জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে, তখনি একেবারের জন্য দেশে চলে আসেন। সারাক্ষণ আমার পাশে থাকতেন। আমাকে বলতেন ধৈর্য্য ধরার কথা। আমরা অনেক চিকিৎসা করেছি। কিন্তু, দু'জনের কারোর কোনো সমস্যা পাওয়া যায় নি। দেশে চলে আসায় মানুষগুলো ও ভয়ে আরকিছু বলাবলি করতে পারছিল না।
কয়েকমাস পর সবাই বাহিরে চলে যাওয়ার জন্য কানপড়া দিতে লাগল। তাদের ভাষ্যমতে একজন সুস্থ-সবল পুরুষ কেন কাজকর্ম ছেড়ে ঘরে বসে বসে খাবে? লোকেদের কথায় টিকতে না পেরে আবারও তিনি চলে গেলেন। এর বেশ কয়েকদিন পর ডিভোর্স লেটার পেয়ে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমি বারবার তাকে ফোন করেও পেলাম না। আশে-পাশে থাকা মানুষজনও তাড়া দিচ্ছিল দ্রুত এ জায়গাটা ত্যাগ করার। আমি যেন পাথর হয়ে গেলাম। নির্বাক, নিস্তব্ধ আমি সামনে এগোচ্ছি। পিছনে আমার চেনা-পরিচিত জায়গা, যত্নে-গড়া সংসার, ভালোবাসা-মায়া সব ফেলে রেখে। লোকেদের বিদ্রুপ আজ গায়ে লাগছে না। আমার মতো অপয়া থেকে তারা আজ মুক্ত হলো।
বাপেরবাড়ি যাওয়ার পর আমাকে তো আর বসিয়ে রাখবে না। তাই একবছর পরে আমাকে ইউরোপ প্রবাসী এক ব্যক্তির সাথে আবারও বিয়ে দেওয়া হলো। এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে আমার স্বামীর প্রাক্তন স্ত্রী ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে। বাচ্চাদেরকে আমি নিজের সন্তান মনে করতাম। আমার দিনগুলো ভালোই যাচ্ছিলো। এক বছর পর আমিও মা হলাম। একে একে আমার আরো দু'টি সন্তান হয়।
এই খবর আমার প্রাক্তন স্বামীর এলাকার মানুষজনও জানতে পারল। তারা বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমার সাথেও যোগাযোগ করল। তারা ভেবেছিল আমি বন্ধ্যা। কত রকমের ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত আগে। কিন্তু, এখন বুঝল আমি মোটেও বন্ধ্যা নই।
যখন সবাই বুঝল আমার কোনো সমস্যা ছিল না তখন তারা আমার প্রাক্তন স্বামীকে দোষারোপ করা শুরু করল। নানা ধরনের অপবাদ ও তুচ্ছতাচ্ছিল্যমূলক কথায় মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙ্গে দিচ্ছিল। এসব কথা সহ্য করতে না পেরে আমার প্রাক্তন দেশে ফিরে এসে আবারও বিয়ে করেন। বিয়ের দু'টি বছর পরে জানা গেল তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু, দুঃখজনকভাবে মিসক্যারেজ হয়ে যায়। এরপর আবারও ২/৩ বার মিসক্যারেজ হয়। শেষে আমার প্রাক্তন তার স্ত্রী নিয়ে ওই এলাকা ত্যাগ করে। তারা ভিন্ন এক স্থানে গিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করে। বর্তমানে তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে।
লোকেরা এবার থামল। তারা বুঝতে পারল আমাদের কারোর-ই কোনো সমস্যা ছিল না।
আমরা একই বন্ধনে থাকা সত্ত্বেও আমাদের ঔরসজাত সন্তানের ভাগ্য হয় নি। বিচ্ছেদ না হলে কখনো বুঝতেও পারতাম না, আমরা দুজনেই ঠিক ছিলাম। বুঝাপড়া, যত্ন-আত্তি, ভালোবাসা সব-ই চমৎকার ছিল আমাদের। কিন্তু কে জানত আমরা আমাদের বন্ধনে থেকেও ভাগ্যে নেই!
সর্বদিকে সুখী হওয়া সত্ত্বেও সন্তানের সুখ নেই। বিচ্ছেদ না হলে হয়তো আমরা কোনোদিনও সন্তানের সুখটা পেতাম না। ভাগ্য সত্যিই নিদারুণ এক আশ্চর্যজনক। ভাগ্যের খেলা আমরা কেউই বুঝতে পারি না।