30/10/2023
বাগাদী দরবারে মরহুম পীরের স্মরণ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত
বাগাদী বার্তা চাঁদপুর বিবিসি নিউজঃ
বাগাদী দরবার শরীফের মরহুম পীর ও বাগাদী আহমাদিয়া ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ ছায়াদ উল্যাহ খান রহঃ বড়মিয়া হুজুর এর ৪০তম ওফাত দিবস ছিল আজ। তিনি ১৩৯০ সালের ১৪ কার্তিক মংগলবার ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। মরহুমের ওফাত দিবস উপলক্ষে বাগাদী আহমাদিয়া ফাজিল মাদরাসায় দুপুর ১২টায় স্মরণ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান এবং বাগাদী দরবারে বাদ জোহর দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। মরহুমের দৌহিত্র সহকারী অধ্যাপক পীরজাদা আল্লামা মাহফুজ উল্যাহ ইউসূফী এর পরিচালনায় পীর ছালামত উল্যাহ খান রহঃ ফুরফুরাভী ফাউন্ডেশন এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত স্মরন সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাগাদী আহমাদিয়া ফাজিল মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা বাগাদী দরবারের পীর আলহাজ্ব মাওঃ মোঃ ছালামত উল্যাহ খান রহঃ এর বড় ছাহেবজাদা বাগাদী মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ দরবারের মরহুম পীর আল্লামা শাহসূফী মাওঃ মোঃ ছায়াদ উল্যাহ খান বড় মিয়া হুজুর রহঃ এর বড় ছাহেবজাদা বাগাদী দরবারের বর্তমান পীর আলহাজ্ব মাওলানা একেএম নেয়ামত উল্যাহ খান। সভাপতিত্ব করেন বাগাদী আহমাদিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ খান। বক্তব্য রাখেন উপাধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল মান্নান, হেড মৌলভি মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, সহকারী শিক্ষক আলী আকবর গাজী প্রমুখ। সঞ্চালনায় মাওলানা আহমাদ উল্যাহ গাজী, কুরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ সাব্বির হাওলাদার, না'তে রাসূল পরিবেশন করেন হাফেজ ইয়াহিয়া।
মরহুমের নাতি বাগাদী দরবার শরীফ ছাহেবজাদা
বাগাদী মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক পীরজাদা আল্লামা মাহফুজ উল্যাহ খান ইউসূফী জানান, মরহুম পীরসাহেব আল্লামা শাহসূফী ছায়াদ উল্যাহ খান বড় মিয়া হুজুর রহ: ১৩১০ বাংলা, ১৯০২ খ্রীস্টাব্দে জন্মগ্রহন করেন এবং ১৪ কার্তিক ১৩৯০ বাংলা, ০১ নভেম্বর ১৯৮৩ ইংরেজি, রোজ মংগলবার ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।
তিনি বাগাদী আহমাদিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১ জানুয়ারি ১৯৩৬ খ্রীস্টাব্দ থেকে ১৪ জুন ১৯৮২ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত। তিনি তার কর্মময়জীবনে মাদরাসা বোর্ডের সদস্য, চাঁদপুর মাদরাসা পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্র সচিব, জমিয়াতুল মোদাররেসিন এর প্রতিষ্ঠাকালিন উপদেষ্ঠা ও চাঁদপুর জেলা সভাপতি ছিলেন। ঢাকা আলিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষকদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। ঢাকা আলিয়ার মুফাসসির মুফতি কাজী দ্বীন মোহাম্মাদ এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।
তিনি নেজামে ইসলাম পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ ১৭ বছর দায়িত্ব পালন করেন, সহ-সভাপতি হিসেবে ছিলেন ছারছিনার দরবারের মরহুম পীর আবু জাফর মোহাম্মদ ছালেহ রহঃ।
পীর আল্লামা মো: ছায়াদ উল্যাহ খান রহ: সভাপতি পদ ছেড়ে দিয়ে আবু জাফর ছালেহ রহ: কে সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। নেজামে ইসলাম পার্টি হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তান এর প্রধান ২টি রাজনৈতিক দলের একটি, দ্বিতীয়টি ছিল আওয়ামী মুসলিমলীগ।
তিনি বাগাদী দরবারের প্রতিষ্ঠাতা জৈনপুরী ছিলছিলার খলিফা মরহুম মৌলভি আমির খান মুন্সী রহ: এর এর বড় নাতি, ফুরফুরার প্রতিষ্ঠাতা মোজাদ্দেদে জামান আবু বকর সিদ্দিকী রহ: এর বিশিষ্ট খলিফা এবং জৈনপুরের হাফেজ আহমাদ জৈনপুরী হুজুরের ঘনিষ্ঠ সহচর বাগাদী দরবার ও মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম পীর আলহাজ্ব মাও: ছালামত উল্যাহ খান রহ: এর বড়ছাহেবজাদা। তিনি কুমিল্লা আদালতের জুরিবোর্ড এর সদস্য ছিলেন, ১৯৬৪ সালে তিনি বাগাদী ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন (উল্লেখ্য তার বাবা মরহুম পীর ছালামত উল্যাহ খান রহঃ ১৯১৪ সাল থেকে ১৯৪৪সাল পর্যন্ত মহকুমা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। ফলে ক্ষুব্ধ পাক বাহিনী বাগাদী মাদরাসায় আর্মি ক্যাম্প স্থাপন করে প্রতিরোধের চেস্টা করে। পরে বাগাদীর পীরের কারামত দেখে তারা ক্যাম্পগুটিয়ে ভয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়। প্রসঙ্গতঃ পরে এ মাদরাসায় ওনার বড় ছাহেবজাদা বর্তমান গদ্দীনশীন পীর বাগাদী মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ(১৯৮২ থেকে ২০১১সাল) আলহাজ্ব নেয়ামত উল্যাহ খান আবু হুজুরের(জন্ম আগস্ট ১৯৪৬সাল) নেতৃত্বে সরাইখানা খুলে নিয়মিত মুক্তিকামী অসহায় মানুষের খাবার রুটি ও খিচুড়ি বিতরণ করেন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে রিলিফ সামগ্রী, ডান্ডী কার্ড বিতরণ করেন। আবু হুজুরের শশুর ছিলেন সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ পাটোয়ারী এমএবিএবিটি, চাচা শশুর সাব সেক্টর কমান্ডার ফরিদগঞ্জ মদনের গাও এর কর্নেল বজলুল গনি পাটোয়ারী, সমুন্দী আউয়াল পাটোয়ারী সেলিম ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় তিনি জেনারেল এমএজি ওসমানি স্বাক্ষরিত পাসধারী ছিলেন।
মরহুম পীর অধ্যক্ষ মাও: ছায়াদ উল্যাহ খান রহঃ ছিলেন দীর্ঘদেহী ভরাট কন্ঠের অধিকারী গভির জ্ঞানের অধিকারী। যার ছোহবতে সারা বাংলার হাজার হাজার আলেম ও পীর ধন্য হয়েছেন। আজো তার বহু ছাত্র জীবিত রয়েছেন। তার সময়েই কুমিল্লা অঞ্চল থেকে আলিয়া মাদরাসার সুনাম সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে এবং বাগাদী মাদরাসার ছাত্রদের মাধ্যমে বহু মাদরাসা, মসজিদ ও খানকাহ প্রতিষ্ঠিত হয়। যা স্থানিয় ভাবে টিকে রয়েছে।
তার সময়েই চাঁদপুর অঞ্চলে ফুরফুরা, জৈনপুর ও ছারছিনার হুজুরদের ব্যাপক খেদমত করার সুযোগ ঘটে এবং সে কারণেই আজো এ অঞ্চলের মানুষ বাগাদী দরবারের পাশাপাশি বিভিন্ন দরবারের পীরদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি লালন করে আসছে। ওনার বড় ছাহেবজাদ বর্তমান পীর আলহাজ্ব মাও: একেএম নেয়ামত উল্যাহ খানও বাবার যোগ্য প্রতিনিধি হিসেবে তা ধরে রেখেছেন। ফলে আজো বাগড়া বাজারে জৈনপুরী হুজুরদের আগমন অব্যাহত আছে, ফুরফুরার পীর আবুল আনসার আব্দুল কাহহার সিদ্দিকী জীবনের শেষ পর্যন্ত বাগাদী দরবারে নিয়মিত এসেছেন, বর্তমানেও তার আওলাদদের বিচরণ রয়েছে। নেয়ামত উল্যাহ খান আবু হুজুরের সভাপতিত্ব ও আয়োজনে বাগড়া বাজারে জীবনের শেষ মাহফিল করে ইন্তেকাল করেছন ছারছিনার মরহুম পীর আবু জাফর ছালেহ রহ:।
মরহুম পীর ছায়াদ উল্যাহ খান রহ: বাবার যোগ্য সন্তান হিসেবে বহু মসজিদ এবং ঈদগাহ কায়েম করেছেন। যেগুলোর ইমাম ও খতিব হিসেবে খেদমতে আজো তার সন্তান, নাতি এবং ছাত্ররা রয়েছেন।
তিনি এ অঞ্চলের মানুষের কাছে বড় মিয়া হুজুর নামেই বেশী পরিচিত ছিলেন। নতুন প্রজন্ম হয়তো তাদের দাদা-নানার কাছে তা জেনে থাকবেন।
এই মহান পুরুষের অবদানে বাগাদী আহমাদিয়া ফাজিল মাদরাসা ১৯৩৬ সালে ফাজিল স্বীকৃতি লাভ করে। সেই থেকে বাগাদী মাদরাসায় মশহুর আলেমগন শিক্ষক হিসেবে খেদমত করে গেছেন এবং তারই সুযোগ্য বড় ছাহেবজাদা ১৯৮২ সাল থেকে অত্র মাদরাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১১সালে অবসরের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি হিসেবে এবং দরবারের পীর হিসেবে খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
আল্লাহ পাক চাঁদপুর অঞ্চলের গৌরব পীর অধ্যক্ষ আল্লামা ছায়াদ উল্যাহ খান রহ: এর বর্ণাঢ্য কর্মময় ও ধর্মিয় জীবনের সকল খেদমতগুলোকে ছাদকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করুন এবং তাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম নসীব করুন, আমিন।