10/07/2025
বিয়ে করে আসলে কী পেয়েছি?
সবার আগে পেয়েছি একজন জীবনসঙ্গিনী—যিনি শুধু স্ত্রী নন, আমার প্রতিটি ব্যস্ত দিন শেষে একটুখানি হাসির উৎস। পকেটে ফোন থাকলেও যখন কেউ ফোন করে না, তখন একমাত্র সে-ই ফোন করে জানতে চায়, “তুমি কোথায়?” তখন নিজেকে খুব আপন কারো মতো লাগে।
পেয়েছি একজন প্রাকৃতিক কুক—রান্নার স্বাদে হয়তো কখনও মা’কে হার মানিয়ে দেয় না, কিন্তু খিদে মেটানোর আন্তরিকতায় ঠিক মায়ের মতোই। শুধু বললেই জামাকাপড় ধুয়ে, শুকিয়ে, ভাঁজ করে আমার আলমারিতে চলে আসে—একটা সilent সুপারওম্যান যেন!
তারপর পেয়েছি এক আজব যন্ত্র—অটো টেপরেকর্ডার! কোনও বোতাম না টিপেও বাজে, কখনও উচ্চ স্বরে, কখনও আবেগী সুরে। আর কখনও তার চোখের জল দেখে বুঝে নিই, বাজনা আজ থেমে যাবে না।
পেয়েছি একজন ঘরকন্যা-পরিচালক—যিনি সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বাজারের লিস্ট হাতে ধরিয়ে বলেন, “তেল শেষ, চালও কিনতে হবে!” সেই কেয়ারটেকার যেন ঘরটাকে ঘর বানিয়ে রাখেন।
পেয়েছি একজন দারোয়ান, যিনি দরজায় তালা না লাগালেও নির্দিষ্ট সময়ের পর দরজা খোলা রাখলে জিজ্ঞেস করেন, “এত রাত করলে কেন?”
পেয়েছি একটা ছোট এলার্ম ঘড়ি—ঘুম ভাঙে তার ডাকে, চোখ খুলেই দেখি চায়ের কাপ, সকালটা যেন তার হাত ধরেই শুরু হয়।
পেয়েছি একদল নতুন আত্মীয়—শ্বশুর, শাশুড়ি, দুলাভাই, শালি, যারা এখন আর অপরিচিত নন, আত্মার আত্মীয় হয়ে গেছেন।
সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি—একটা ছোট্ট মুখ, যে ডাকে “বাবা” বলে, কোলের মধ্যে এসে বসে, তার হাসিতে আমি পৃথিবীর সব ক্লান্তি ভুলে যাই। তখন নিজের ভিতরটা গলে যায়, এক ফুলের বাগান যেন রঙিন হয়ে ওঠে।
তবে কিছু হারিয়েছিও! হারিয়েছি একলা থাকা, নিজের সময় নিজের মতো খরচ করার দিনগুলো। হারিয়েছি রিমোটের একচ্ছত্র অধিকার, মানিব্যাগের স্বাধীনতা। এমনকি কখনও কখনও নিজের মোবাইলও “জব্দ” হয়ে যায়!
তবু যা পেয়েছি, তা হারানোর চাইতে বহুগুণ বেশি।
একটা মানুষ, যে রাগ করে আবার নিজেই খাবার এগিয়ে দেয়, অভিমান করে আবার চুপচাপ জামাটা ভাঁজ করে রাখে। এমন একজন সাথী—যাকে সব বলতে পারি, যে আমার আনন্দের হাসি আর কষ্টের কান্না দুটোই বুঝতে পারে। সেই তো আসল প্রাপ্তি।