12/09/2025
১০ সেকেন্ড ব্যাক টু ব্যাক, পাশে থাকলে পাশে পাবেন, 🤣🤣🤣
ইত্যাদি যে ধরনের কমেন্ট ফেসবুকে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে এগুলো দেখে আমরা কেউ হয়তো মজা পাচ্ছি, কেউ বিরক্ত হচ্ছি। কিন্তু তাদের কাছে বিষয়টা খুবই সিরিয়াস৷ এবং এটার একটা বিশাল ফেসবুক কমিউনিটি গড়ে উঠেছে। সকল শ্রেণীর মানুষ এসবে যুক্ত৷
আমি অবাক হয়েছি সেদিন দেখে আমার পরিচিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের স্ত্রী এইসব করছেন। উনি নাকি মনিটাইজেশন পেয়েছেন। ঘরে বসে সফল হবেন৷ ইনকাম করবেন। দিন রাত ফেসবুকে কার কত ফলোয়ার হলো, কে কত সেলিব্রেট করছে এসব নিয়ে পোস্ট। তারা সবাই মিলে কাকে নাকি ভালোবাসা দেয়, স্টার আদান প্রদান করে, লাইভ করে, অযথাই রান্নাঘরে যায় আসে। মোবাইল পাশে রেখে আলমারি পরিস্কার করে। আরও নানান কিছু৷
ফেসবুক আপনাকে একটা ইনকামের পথ করে দিচ্ছে এটা সত্য। অনেক পথহীন, বেকার না খেয়ে থাকা মানুষের জীবনে ফেসবুক একটা আয় নিয়ে এসেছে৷ তারা এগুলো করছে। কিছু টাকা পয়সা পাচ্ছে৷ এতে আমি খারাপ কিছু দেখি না৷ দুনিয়াতে কেউই তো আর তাদের হেল্প করবে না। তাদের আয়ের পথ তাদের ই বের করতে হবে। জীবন সংগ্রামে অন্তত টিকে থাকুক৷
কিন্তু আমার কথা হচ্ছে অন্যসব শ্রেণী নিয়ে। ফেসবুক একটা ইনকাম গেইম দিয়ে আমাদের নিয়ে খেলছে। তারা আপনাকে নামমাত্র একটা ইনকাম দেখিয়ে, বিজ্ঞাপন দাতাদর কাছ থেকে বিলিয়ন ডলার আয় করছে৷ ফেসবুক চায় দুনিয়ার সব মানুষ ফেসবুকের প্লাটফর্ম চলে আসুক। তারা আপনাকে টাকার লোভ দেখাচ্ছে। এবং এই টাকার পরিমান এবং পাওয়ার স্ট্রাটেজিটা তারা এমন ভাবে সাজিয়েছে যেখানে কিছু সংখ্যক মানুষকেই তারা নিজেরাই রিচ দিয়ে সেলিব্রিটি টাইপের একটা কিছু বানিয়ে দিবে। তার ইনকাম বাড়িয়ে দিবে৷ এরপর বাকী সবাইকে এই মধু দেখিয়ে কন্টেন্ট বানাতে উদ্ভুদ্ধ করবে৷
আপনি ভাববেন এরা পেরেছে, আমিও পারব। কিন্তু আপনি পারবেন কি পারবেন না সেটা তো নির্ধারন করবে ফেসবুক।ফেসবুক ই সব এলগ্যারিদম সেট করে নিজেদের ইচ্ছেমতো একেক জনের আইডিতে। সুতরাং কাকে কত টাকা দিলে ফেসবুকের আয় বেশি হয় সেটা হিসাব করেই মনিটাইজেশনের টাকার এলগ্যারিদম বদল করে৷ বহু লোক চেষ্টা করতে করতে এক সময় হাল ছেড়ে ভালো হয়ে গেছে। আবার কেউ কেউ শুরু করেই অনেক কিছু পেয়ে গেছে। এগুলো হচ্ছে ফেসবুকের স্ট্রেটেজি৷ কিছু মানুষকে তারা বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যাবহার করছে৷
ফেসবুক আগে একজনকে ১০০ টাকা দিতো। এখন ১০০ টাকা ই ১০০ জনকে ১ টাকা করে ভাগ করে দিচ্ছে। এতে মানুষ টাকার লোভে পড়ছে। ফেসবুকে দেদারসে ভিডিও আপলোড হচ্ছে। ফেসবুক চায় ভিডিও। আর যত ভিডিও তত বিজ্ঞাপন আয়। কিন্তু আপনাকে দিচ্ছে সেই ১ টাকাই। আপনি এক সময় গিয়ে দেখবেন যে টাকা পেয়েছেন সেটা দিয়ে বড়জোর বন্ধুবান্ধব নিয়ে একবেলা রেস্টুরেন্টে খাওয়া যায়৷ জীবন চালানো যায় না। অথচ জীবনের মুল্যবান কাজের সময় এবং পেশা, ব্যাক্তিত্ব সব কিছু ভুলে কিছু মানুষ এগুলোতে নেমে গেছে।
গ্রামের বেকার যুবক থেকে শুরু করে, রিক্সাওয়ালা, সবজিওয়ালা, গৃহি/নী, চোর বা/টপার, সন্ত্রাসী, ভিক্ষুক, অশি/ক্ষিত, মাওলানা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আর্মি, কর্পোরেট জগৎ, সাংস্কৃতিক জগৎ, হাবিযাবি সব জগৎ, কে নেই এই দলে? সবাই ঝুকছে এসবে!!! যাদের মেধা বলতে কিছুই নেই তারা শরীর খুলে দিচ্ছে। এক কথায় ভিডিও আপলোড হলেই হলো।
মানুষ ফেসবুকের জগৎ এ আটকে যাচ্ছে। একটা নিজের জীবন যে তার আছে সেটার উপভোগ ভুলে যাচ্ছে। সারাদিন যা ই করছে সব ফেসবুকে আপলোড দেবার চিন্তা থেকে করছে। তার জগৎ এখন ফেসবুকের দখলে। এভাবে পুরো পৃথিবীকে ফেসবুক নিয়ন্ত্রণে নিবে। পুরো ভারচুয়াল জগতের সব আয় ফেসবুকের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ফেসবুকের বাইরে আর কিছুই থাকবে না।
আপনি আপনার সুন্দর একটা জীবন আর উপভোগ করতে পারলেন না। ভারচুয়ালের ফাঁদে পা দিয়ে এই চক্রে ঘুরতেই থাকবেন সারাক্ষণ।
ফেসবুক আপনাকে মানসিক বিকারগস্ত বানিয়ে দিচ্ছে না তো?
©Jayef Khan Nadim