07/12/2022
ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বের হইছি, তো এলাকায় কিছু ছোট ভাইদের লগে দেখা। দেইখা কইলো, ভাই দুআ কইরেন সহ সভাপতি হইছি। কইলাম তোমার জন্য তো দুআ আছেই। সাথে সাথে আশেপাশের আরও ৪-৫ জন বইলা উঠলো, ভাই আমাদের জন্যও দুআ কইরেন। কইলাম ঠিক আছে, তোমরা নাহয় পরের বার হবা। ওমা, কয় ভাই এইবারই তো হইছি সবাই। শুইনা কিছু কইলাম না, মুচকি হাইসা হাঁটা দিলাম।
অটো তে উঠলাম, ড্রাইভারের পাশের সিটে। অটো চালাইতেছে আর গল্প করতেছে আমার লগে। হটাৎ কয়, "বুঝলেন মামা, খুব ব্যস্ততা যাইতেছে এই কয়দিন। সহ সভাপতি হইছি তো!" আমি ঢোক গিললাম, বেটায় বলতে লাগলো, "আমার মেজো আর ছোট পোলাও পদ পাইছে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।" আমি আচ্ছা বইলা অটো থেকে নাইমা গেলাম। ভাড়া মিটায়া জিজ্ঞাসা করলাম,"তাইলে তো আর অটো চালানো লাগবো না, নাকি মামা?" কি জানি, মুখে খুব একটা আলোর রেখা পাইলাম না!
যাইহোক বাসে উঠলাম। সামনে এক যাত্রীর লগে হেল্পারের ভাড়া নিয়া কথা কাটাকাটি। যাত্রী বলতেছে, "ওই বেটা জানোস কার লগে তর্ক করোস? আমি ভেড়ামারার সাধারণ সম্পাদক। একদম দিমু ধইরা।" হেলপারও কম যায়না, কইলো "আমি খেজুরবাগের যুগ্ম আহ্বায়ক। ভাড়া দেন মিয়া ।" এই কাইজ্জা শেষে আমার কাছে আসার পর দিলাম হাফ ভাড়া, আমারে জিগায় আমি কম দিছি কেন। কইলাম, "মামা আমার আসলে তোমার মতো কোনো পদ নাই, তয় আমি হইলাম স্টুডেন্ট।" লোকটার মলিন চেহারা চোখে ভাসে এখনও।
বাস থেকে নাইমা রিক্সা নিলাম। একটু পর দেখি রাস্তায় একটু পরপর এক রিক্সাওয়ালা আরেক রিক্সাওয়ালা রে সালাম দেয়। জিগাইলাম ঘটনা কি? কইলো ওরা সবাই নাকি সহ সভাপতি।
ভার্সিটি তে ঢুকার সময় সিকিউরিটি মামা রে জিগাইলাম, "আপনিও কি পদ পাইছেন এবার?" উত্তর দিলো, "এককালে সহ সভাপতি ছিলাম মামা, সামনে আবারও হওয়ার ইচ্ছা আছে।"
ক্লাসে বইসা আছি, স্যার লেকচার দিতেছে। সেদিকে আমার মন নাই, মন টা খুব খারাপ। নিজেরে ছোট লাগতেছে খুব। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে আমি বাদে সবাই সহ সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক/যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক! জীবন যুদ্ধে এতোটা পিছানোও কি সম্ভব!