27/06/2025
সিঙ্গাপুর ও হংকং—ব্যক্তিগতভাবে এই দুই দেশের প্রতি আমার সবসময়ই অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করে। মনে মনে সবসময় চেয়েছি, এশিয়ার ক্রিকেটে যেন একদিন তারা পরাশক্তি হয়ে উঠে।
২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে বাংলাদেশকে হারিয়ে হংকং তাদের সম্ভাবনার জানান দিয়েছিল। ২০১৮ এশিয়া কাপেও ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল তারা—যদিও শেষ পর্যন্ত জয়টি আসেনি সেদিন। তবুও হংকং নিয়ে একটা আলাদা আশাবাদ কাজ করত। মনে হতো, একদিন তারা নিয়মিত এশিয়া কাপ খেলবে এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলবে।
২০২২ টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপে খেলার পর ২০২৫-এর আসরেও হংকং অংশ নিতে যাচ্ছে, যা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে বলতেই হয়, যেভাবে এগিয়ে যাবে ভেবেছিলাম—হংকং সেভাবে এগোয়নি।
সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রেও একই রকম অনুভব। একবার তারা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে টেস্ট খেলুড়ে জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছিল। আর টিম ডেভিড তো ছিল যেন আশার এক আলোকবর্তিকা। ২০২১ সালে যখন তিনি আইপিএলে আরসিবির হয়ে ডাক পান, তখনো ছিলেন একজন সিঙ্গাপুরিয়ান। তবে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে তিনি ডাক পান অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে এবং সেখান থেকেই হয়ে যান একজন অজি।
যদিও তার জন্ম সিঙ্গাপুরে, বেড়ে ওঠা ও ক্রিকেটের বিকাশ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং খেলেন বিগ ব্যাশে হোবার্ট হারিকেন্স-এর হয়ে।
টিমের বাবা রড ডেভিড ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফিতে সিঙ্গাপুরের হয়ে খেলেছিলেন। পরিবারসহ তারা পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়ায়, তখন টিমের বয়স ছিল মাত্র ২ বছর। সেখানেই তার ক্রিকেটের শেকড় গড়ে ওঠে—পার্থের বয়সভিত্তিক দল থেকে উঠে খেলেন বিগ ব্যাশ, এরপর ফিরে গিয়ে ২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরের জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ঘটান।
একইভাবে হংকংয়ের হয়ে ২০১৪ ও ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা মার্ক চ্যাপম্যান এখন নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে নিয়মিত সদস্য। তার মা হংকঙ্গার, বাবা কিউই। ২০১৫-১৬ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে নাম লেখান স্থানীয় ক্রিকেটার হিসেবেই। এরপর নিয়মিতই খেলতেন নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া লিগে৷ হঠাৎই একদিন শুনি ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য নিউজিল্যান্ডের স্কোয়াডে ডাক পেয়ে যান তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কিউইদের হয়ে অভিষেক হয়ে যায় চ্যাপম্যানের। তারপর থেকে তিনি পুরোপুরি নিউজিল্যান্ডেরই খেলোয়াড়।
বর্তমানে টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে হংকং ২৪ নম্বরে এবং সিঙ্গাপুর ৩৮ নম্বরে। ২০২৫ এশিয়া কাপের বাছাইপর্ব পার করে হংকং মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে—এটা নিঃসন্দেহে স্বস্তির খবর। তবে সবচেয়ে হতাশাজনক হলো—এই দুই দলই ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেই। কারণ তারা নিজেদের অঞ্চল, এশিয়া-প্যাসিফিক কোয়ালিফায়ারের সাব-রিজিওনাল রাউন্ডেই থেমে গেছে।
দুই দলই ‘এ' গ্রুপে ৬টি করে ম্যাচ খেলে চারটিতে জিতে যথাক্রমে ৩য় ও ৪র্থ স্থানে থেকে আসর শেষ করে। আর নিয়ম অনুযায়ী গ্রুপের শীর্ষ দুই দলই রিজিওনাল ফাইনালে ওঠে।
'এ' গ্রুপ থেকে উঠেছে মালয়েশিয়া ও কুয়েত, 'বি' গ্রুপ থেকে উঠেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার। ইস্ট এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে এসেছে জাপান ও সামোয়া। এর বাইরে স্বাগতিক ওমান, পাপুয়া নিউগিনি ও নেপালসহ মোট ৯টি দল রিজিওনাল ফাইনাল খেলবে, যেখানে শীর্ষ ৩ দলই পাবে ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ।
এই অঞ্চল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাশাপাশি আমি ব্যক্তিগতভাবে জাপান ও কাতারকে বিশ্বকাপে দেখতে চাই—যদিও নেপাল ও ওমান যথেষ্ট যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী।
অনেকেই হয়তো একমত হবেন না, তবে আমার বিশ্বাস—টিম ডেভিড এবং মার্ক চ্যাপম্যান যদি তাদের জন্মভূমির হয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে যেতেন, তাহলে আজ হয়তো এই দুই দেশ—সিঙ্গাপুর ও হংকং—ক্রিকেটে ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছে যেত। এখন আপনি পালটা যুক্তি দিতেই পারেন যে যেকোনো একজন তো আর হিসেবনিকেশ পালটে দিতে পারে না তবে এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমি আসলেই মনে করি এরা নিজ নিজ জন্মভূমির হয়ে খেললে দেশ দুটি আজ অন্য অবস্থানে থাকতো৷
যদিও স্বীকার করি, একজন খেলোয়াড় ভালো সুযোগ পেলে তা লুফে নিতেও দোষের কিছু নেই৷ তারা সে সুযোগটিই নিয়েছেন যা শ্রদ্ধা করি৷
তবুও আফসোস থেকে যায়—বিশ্বকাপ যখন ২০ দলের, তখনো এই প্রিয় দুই দল নেই। এখন হংকং ও সিঙ্গাপুর না থাকায় এশিয়া অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপে আরব আমিরাতের পাশাপাশি কাতার ও জাপানকে দেখতে চাই।
---
শেষ কথা:
এই লেখাটি পুরোপুরি আমার ব্যক্তিগত মতামতের ভিত্তিতে। আপনি একমত হতে পারেন, নাও হতে পারেন। আপনার মতামত জানাতে পারেন কমেন্টে। ধন্যবাদ!