12/08/2025
ক্ষুদিরাম বসু: ১৮ বছরের এক অমর নাম
"একজন তরুণ, হাতে বিপ্লবের পতাকা, হৃদয়ে দেশের ভালোবাসা—যিনি হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন।"
১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার হাবিবপুর গ্রামে জন্ম নেন ক্ষুদিরাম বসু। জন্মের পরপরই তার জীবন শুরু হয় এক কঠিন অধ্যায় দিয়ে—খুব অল্প বয়সেই বাবা-মা দুজনকেই হারান। বড় বোন তাকে লালন-পালন করেন। তার নামের পেছনে রয়েছে এক মর্মস্পর্শী গল্প—মায়ের আগের দুই সন্তান মারা যাওয়ার পর, এই সন্তানকে বাঁচানোর জন্য তিন মুঠো খুদ (শস্যের ভাঙা দানা) বিনিময়ে বড় দিদির কাছে "বিক্রি" করা হয়। তাই নাম রাখা হয় ক্ষুদিরাম।
🩶 কিশোর বয়সে বিপ্লবের আগুন
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ও স্বদেশী আন্দোলন ক্ষুদিরামের মনে জ্বালিয়ে দেয় স্বাধীনতার শিখা। তিনি পড়াশোনা ছেড়ে সত্যেন বসুর নেতৃত্বে একটি গুপ্ত বিপ্লবী দলে যোগ দেন। সেখানে তিনি শরীরচর্চা, রাজনৈতিক শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা এবং অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। হাতে পিস্তল, মনে অদম্য সাহস—তিনি ব্রিটিশবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে ওঠেন—ব্রিটিশ পণ্যের বর্জন, বিপ্লবী ইশতেহার বিলি, এবং গোপন সভায় অংশগ্রহণ ছিল তার প্রতিদিনের কাজ।
কিংসফোর্ড হত্যা চেষ্টা
১৯০৮ সালে যুগান্তর বিপ্লবী দল সিদ্ধান্ত নেয়—ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে হবে। তিনি ছিলেন বাঙালিদের কাছে দমননীতির প্রতীক, এক নিষ্ঠুর বিচারক। এই মিশনের দায়িত্ব পান ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী।
৩০ এপ্রিল, বিহারের মুজফফরপুর—রাতের অন্ধকারে তারা কিংসফোর্ডের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস—সেই গাড়িতে কিংসফোর্ড ছিলেন না, ছিলেন দুই ব্রিটিশ মহিলা, যারা ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
💔 শেষ অধ্যায়
প্রফুল্ল চাকী আত্মহত্যা করেন গ্রেপ্তার এড়াতে। ক্ষুদিরাম ধরা পড়েন ওয়ানি রেলস্টেশন থেকে। আদালতে তিনি সমস্ত দোষ নিজের ওপর নেন—কিন্তু দলের আর কারো নাম প্রকাশ করেননি।
রায় ঘোষিত হলো—মৃত্যুদণ্ড।
১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট, মুজফফরপুর কারাগারে, ভোরের আলো ফোটার আগে… ক্ষুদিরাম হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে পা রাখেন। বয়স তখন মাত্র ১৮।
তিনি শুধু শহীদ নন, তিনি সাহসের প্রতীক, আত্মত্যাগের মূর্তি, আর অমর এক অনুপ্রেরণা—যিনি শিখিয়েছেন, দেশের জন্য ভালোবাসা মানে নিজের জীবনকেও তুচ্ছ করে দেওয়া।
---
আজও বাংলার আকাশে প্রতিধ্বনিত হয় সেই অদম্য কণ্ঠস্বর—বীর যৌদ্ধা
#ক্ষুদিরাম_বসু #বাংলার_বীর #শহীদ