13/07/2023
আমরা মানুষ বড়ই অদ্ভুত জীব। আমাদের চিন্তা ভাবনা আরো বড় অদ্ভুত, আমরা যেমন দুনিয়ার জীবনে ধোকা বাজি করে পার হয়ে যেতে চাই। তেমনি আবার আল্লাহ কে ধোকা দিয়ে পার হয়ে যেতে চাই। কিন্তু, আল্লাহ কি আমাদের অন্তরের খবর জানেন নাহ! আমরা ইসলামের মৌলিক বিষয় গুলোকে কেমন জানি নিজের সুবিধামত পালনের চেষ্টা করি। আল্লাহর সাথে প্রতারণা করি, কিন্তু আসলে আমরা নিজেরাই প্রতারিত হয়। দেখুন আমরা কিভাবে আল্লাহ সাথে প্রতারিত করি-
১. নামাজ:-
এটা প্রত্যেক নর নারীর উপর ই ফরজ। কিন্তু আমরা কতজন আছি ঠিক ভাবে এই ফরজ আদায় করতে পারছি। দিনের একটা বিশাল সময় আমরা ব্যয় করছি অনর্থক কাজে ফেসবুক, ইউটিউব বা গেম খেলে। নামাজের প্রতি বিন্দু মাত্র আগ্রহ নাই। এই নামাজ টাকে আজ আমরা সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, এই একটা দিন সেজেগুজে মসজিদে যাই, সেলফি তুলি ফেসবুকে জুম্মা মোবারক লিখে পোস্ট করি শেষ। এটাই কি আল্লাহ আমাদের কাছে চেয়েছেন? আবার কিছু সুবিধা বাদি লোক দেখা যায় সমাজে। তারা একটু বিপদে পড়লে পাক্কা নামাজী বোণে যান, তখন মসজিদ আর নামাজ ছাড়া তার জীবনে কিছুই নাই। যেই না সে বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে যায়,তারপর আর তাকে মসজিদে পাওয়া যায় না। এটা কি আল্লাহর সাথে প্রতারণা নয়? আরো কিছু লোক পাওয়া যায় যারা নামাজ পড়ে লোক লজ্জার ভয়ে, সমাজের ভয়ে। নামাজ না পড়লে লোকে কি বলবে! কিন্তু তারা আল্লাহর ভয়ে মসজিদে আসে না।
২. যাকাত:-
বর্তমান সময়ে খোজ খবর নিলে দেখা বেশির ভাগ মানুষের কাছে যাকাত ফরজ হওয়ার মত সম্পদ আছে। কিন্তু আমরা তা যাকাত দেওয়ার ভয়ে কখনো প্রকাশ করি না। কখনো নিজের সম্পদ হিসাব করি না। আবার যারাও একটু আদায় করে, তারা তা ঠিক ভাবে আদায় করে না, দেখা যায় দুই চারটা কম দামি শাড়ী - লুঙ্গি কিনে গরীব দের মাঝে দান করে দায় সারে। এটা কি প্রকৃত যাকাত আদায় হলো। এটা নির্ঘাত আল্লাহর সাথে প্রতারণা করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
৩. ফেতরা আদায়:-
এখনকার সময় হিসেবে প্রায় সকল মানুষের উপর ই ফেতরা ওয়াজিব,কিন্তু আমরা বিভিন্ন অযুহাত দিয়ে তা আদায় থেকে বিরত থাকি। যারা আদায় করি তাদের মধ্যে দেখা যায় ঠিক ভাবে করে না। ইসলামি ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রতি বছর সর্বনিম্ন আর সর্বোচ্চ দুই পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা ঢালাও ভাবে সর্বনিম্ন টাকে নিজের ফেতরা মনে করে আদায় করি। এদের সমাজের প্রতিষ্ঠিত সরকারি চাকরিজীবি, বিত্তশালী,প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, এবং অন্যান্য সম্পদশালী ব্যক্তি সর্বনিম্ন টাকে ধরে ফেতরা আদায় করে। আমার সামর্থ্য থাকা সত্বেও আমি কোনো রকমে চালিয়ে দিলাম। এটা কি আল্লাহর সাথে প্রতারণা নয়?
৪.হজ্জ:-
হজ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ হজ্জ ফরজ হওয়ার অনেক পরে হজ্জ আদায় করে। মানুষের চিন্তা ভাবনা এমন যে, এখন দুনিয়ায় যাই কিছু করি আকাম- কুকাম পরে বয়স হইলে একটা হজ্জ দিয়া আসবো, আল্লাহ গিলাপ ধরে কান্নাকাটি করবো। আল্লাহ মাপ করে দিবেন-" সুবহান আল্লাহ " তাদের চিন্তা ভাবনা টাই এমন। আর কিছু মানুষ দেখা যায় হজ্জ ফরজ হয়েছে, কিন্তু টাকা বেশি খরচ হওয়ার ভয়ে উমরাহ আদায় করে দ্বায় সাড়ে এটা কি আল্লাহর সাথে প্রতারণা নয়? আর যারা জমি বন্ধক রেখে বা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে হজ্জে যায় তাদের হজ্জ আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে কিনা! আল্লাহ মায়ালুম।
৫.পর্দা :-
ফরজ ইবাদতের অন্যতম একটি হলো পর্দা। কিন্তু আমরা কি পরিপূর্ণ ভাবে তা পালন করতে পারছি। মেয়ে যেমন পর্দা রয়েছে, তেমনি ছেলেদেরও পর্দা রয়েছে। আজকাল দেখা যায় পর্দার নামে ফ্যাশন শো চলে। সারা বছর পর্দা করে, কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান দেখা যায় খোলা মেলা পোশাক পরে হাজির হয়। মনে করে একদিন ই তো কিছুই হবে না। এসব কিছু পর্দা নিয়ে ফাজলামি ছাড়া আর কিছু না।
৬. ব্যবসা:-
ব্যবসা ইসলামের সবচেয়ে উত্তম পেশা। হাদিসের ঘোষণায় বলা হয়েছে - সৎ ব্যবসায়ীগণ জান্নাতে নবী (স.) এর সাথে থাকবেন। কিন্তু আমরা কয়জন সৎ ভাবে ব্যবসা করতে পারি। সর্বসময় আমরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকি। বিশেষ করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ব্যবসায়ীদের দেখা যায় কম দামে জিনিস কিনে রাখে, যখন দেখে বাজার মূল্য বেড়ে গেছে একদিনের মধ্যে তখন তারা ওই জিনিসটাও দাম বাড়িয়ে দিতে বলে কেনা বেশি পড়ছে। আর যখন দাম কমে তখন এক সপ্তাহ পাড় হলেও দাম কমে না,তখন প্রচার করে নতুন মাল আসে নাই। এই ব্যবসায়ীদের চরিত্র। এটা কিভাবে জান্নাত আশা করে। যেখানে রাসুল স. নিজে বলেছেন যে, আমরা উম্মতের সাথে প্রতারণা করলো, সে আমার দলভুক্ত নয়। এখন স্বয়ং রাসুল ( স.) যদি আপনাকে উম্মত হিসেবে গ্রহণ না করে তাইলে কিয়ামতের দিন আপনার অবস্থাটা হবে একবার ভেবে দেখেছেন। সময় থাকতে সাবধান হউন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুণ, আমীন।
~ হাসিব হামিদ