21/12/2024
প্রসঙ্গ : রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জন্মবৃত্তান্ত বা সম্মান নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করার বিষয়ে শরিয়তের নির্দেশনা কী?
- মুহাম্মদ রুবাইয়াত বিন মুসা
প্রভাষক : সাঁইদাইর গাউছিয়া তৈয়্যবিয়া দিলোয়ারা বেগম সুন্নিয়া ফাজিল মাদ্রাসা।
#হুকুম
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সম্মান নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করা, বিশেষত তাঁর মিলাদ বা জীবনবৃত্তান্ত, তাঁর পবিত্র গুণাবলীসমূহ নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, অবজ্ঞা করা স্পষ্টভাবে কুফর হিসেবে বিবেচিত। এর শাস্তি ইসলামি হুকুমত অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড। নিম্নে এ বিষয়ে কুরআন, হাদীস ও ফিকহের কিতাব থেকে দলিল তুলে ধরা হলো:
কুরআনের প্রমাণ-
"قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ"
- তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টা করছিলে? অজুহাত দাঁড় করিও না। তোমরা ঈমান আনার পর কাফির হয়ে গেছ।
[ আল কুরআন : আত-তওবা, ৯:৬৫-৬৬]
এ আয়াতের তাফসিরে ইমাম কুরতুবি লিখেছেন,
"الاستهزاء بالنبي صلى الله عليه وسلم أو بسنته كفر، لأنه يدل على كراهية الشريعة."
“রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বা তাঁর সুন্নাহ নিয়ে ঠাট্টা করা কুফর, কারণ এটি শরিয়তের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করে।”
[ ইমাম কুরতুবী : আত তাফসির, আত-তওবা, আয়াত ৬৫-৬৬]
হাদিসের প্রমাণ
"لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّىٰ أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ نَفْسِهِ وَمَالِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ"
“কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে নিজের জীবন, সম্পদ, সন্তান-সন্ততি এবং সকল মানুষের চেয়ে প্রিয় না হই।”
[ বুখারী : আস সহীহ,কিতাবুল ঈমান, হাদিস নম্বর: ১৫]
মুসলিম: আস সহীহ, কিতাবুল ঈমান, হাদিস নম্বর: ৪৪]
#ফিকহের কিতাব থেকে প্রমাণ
১. আল-হিদায়া (ইমাম মারগিনানি, হানাফি)
ইমাম মারগিনানি লিখেছেন:
"من شتم النبي صلى الله عليه وسلم أو استخفّ به أو سبّه أو استهزأ به فقد كفر بالإجماع."
- যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে গালি দিল, অবজ্ঞা করল, বা তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা করল, সে সর্বসম্মতভাবে কাফির।”
[আল-হিদায়া, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৯৩]
২. আল-আশবাহ ওয়ান-নাযায়ের (ইবনে নুজাইম, হানাফি)
"من استهزأ بشيء متعلق بالنبي صلى الله عليه وسلم كفر لأنه يطعن في النبوة."
- রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করা কুফর, কারণ এটি নবুয়তের প্রতি আক্রমণ।
[আল-আশবাহ ওয়ান-নাযায়ের, পৃষ্ঠা ১২৩]
৩. আল-ইকনা (ইমাম খাত্তাব, শাফেয়ি)
من تكلم بكلمة فيها استخفاف بحق النبي صلى الله عليه وسلم، فقد كفر وخرج عن ملة الإسلام.
- যে ব্যক্তি এমন কথা বলল যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করে, সে কাফির হয়ে গেছে এবং ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছে।
[আল-ইকনা, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৩৮]
৪. ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়া (ফিকহে হানাফি)
"إذا أظهر رجل كلمة استهزاء بالنبي صلى الله عليه وسلم، فإنه يكفر ويُقتل حَدًّا."
- যদি কেউ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি ঠাট্টারত কোনো কথা প্রকাশ করে, তবে সে কাফির হবে এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।
[ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়া, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৭৬]
৫. আল-মুহাল্লা (ইবনে হাযম, জাহিরি)
ইবনে হাযম বলেন,
"من استهزأ برسول الله صلى الله عليه وسلم أو بشيء من شريعته فهو كافر بإجماع المسلمين."
- যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বা তাঁর শরিয়তের কোনো বিষয়ে ঠাট্টা করে, সে সর্বসম্মতভাবে কাফির।
[আল-মুহাল্লা, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ৪১৩]
৬.আল-ফতাওয়া আল-কারিয়াহ (ইমাম ইবনে আবেদিন, হানাফি)
ইবনে আবেদিন লিখেছেন:
"السخرية بشيء من شعائر الدين كفر، سواء كان ذلك بالقول أو بالفعل."
- দ্বীনের কোনো নিদর্শন নিয়ে ঠাট্টা করা কুফর, তা কথায় হোক বা কাজে।
[আল-ফতাওয়া আল-কারিয়াহ, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৭৫]
৭. আল-ইখতিয়ার (ইমাম মাওয়ারদী, শাফেয়ি)
"ما يتعلق باحترام النبي صلى الله عليه وسلم واجب، ومن خالف ذلك فهو كافر."
- রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সম্মান রক্ষা করা বাধ্যতামূলক। আর যে এতে ব্যত্যয় ঘটায়, সে কাফির।
[আল-ইখতিয়ার, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১০]
উপসংহার
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সম্মান নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করা ইসলামে সর্বসম্মতভাবে কুফর। এটি ব্যক্তি ঈমান হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কুরআন, হাদিস এবং ফিকহের গ্রন্থসমূহের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত।