27/09/2023
সালমান ফারসি (রা) ও সত্য পথের যাত্রীদের জন্য শিক্ষা
১. সত্য ধর্মের জ্ঞান অর্জনের জন্য তিঁনি ইরান থেকে শাম, শাম থেকে যথাক্রমে মসুল, নিসিবিস,তুরস্কের আম্মুরিয়া, ওয়াদি আর কুরা এবং সর্বশেষ মদিনায় গমন করেন৷ এরমধ্যে তিনি নিজের পরিবার,সম্পদ সবকিছু ত্যাগ করেন,এমনকি দাস জীবনও বরণ করে নেন।
শিক্ষা : সত্য জ্ঞান অর্জনের জন্য ( ফরজে ইলম) প্রয়োজনে নিজের সর্বোচ্চটুকু ত্যাগ করতে হবে। সত্য জ্ঞানের বিপরীতে দুনিয়ার সকল সম্পদই মূল্যহীন।
২. সত্য ধর্মের প্রতি সালমান ফারসি (রা) এর আগ্রহ দেখে তিঁনার বাবা তিঁনাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন যাতে তিঁনি সে ধর্মের অনুসারী হতে না পারেন।
শিক্ষা : সত্যের পথে চলতে শুরু করলে সর্বপ্রথম বাঁধাটা পরিবার কিংবা কাছের মানুষদের থেকেই আসবে৷ এ অবস্থায় হতাশ হওয়া যাবে না বরং সবর করতে হবে।
৩. ইরান থেকে শামে যে বিশপের ( গীর্জার পুরোহিত) থেকে তিঁনি শিক্ষা নিচ্ছিলেন তার শিক্ষা সত্য হলেও ব্যাক্তিগতভাবে সে অসৎ ছিলেন। একারণে সালমান ফারসি (রা) তাকে অপছন্দ করলেও তার থেকে শিক্ষা গ্রহণে বিরত থাকেন নি।
শিক্ষা : কোন ব্যাক্তির আচরণ দিয়ে কখনো কোন দল বা ধর্মকে বিচার করবো না, ব্যাক্তির খারাবী তার সাথে সংশ্লিষ্ট আর দল বা ধর্মকে বিচারের মানদণ্ড তার আদর্শ।
৪. একাধিক আলেম থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরেও তাঁদের মৃত্যুর সময় তাঁদের পরামর্শক্রমে নতুন আলিমের সংস্পর্শে থেকেছেন, এরজন অনেক দূরপথ পাড়ি দিতে হলে তাও দিয়েছেন তিঁনি।
শিক্ষা : নিজের জ্ঞান যতই সঠিক ও প্রবল হোক নিজেকে সবসময় একজন হক্কানী আলেমের সংস্পর্শে রাখা জরুরী, সবকিছুতে তাদের পরামর্শ নেওয়াও জরুরী।
৫. আম্মুরিয়ার ( বাইজেন্টাইন) আলিম থেকে পরবর্তী নবীর ৩টি লক্ষণ জেনেছিলেন এবং নবী ﷺ নবুয়তের দাবী করার পর সালমান ফারসি (রা) সবগুলো যাচাই করার পরই নবীর দাওয়াতকে গ্রহণ করে নেন।
শিক্ষা : কেউ নিজেকে পীর,ওলি-আউলিয়া দাবি করলেই নিজের বিবেককে বিসর্জন দিয়ে অন্ধ আনুগত্য বন্ধ করা যাবে না বরং তাঁর কাজকর্ম কোরআন হাদিসের কষ্টিপাথরে যাচাই করে নিতে হবে।
৬. সালমান ফারসি (রা) কে তার মনিবের দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে ৩০০ খেজুর বীজ যার একটি গাছও মরতে পারবে না এবং ৪০ আউন্স স্বর্ণের প্রয়োজন ছিলো। নবী ﷺ ও তাঁর সাহাবারা এর ব্যবস্থা করে তিঁনাকে মুক্ত করে নেন।
শিক্ষা : নতুন করে ধর্মের পথে আসা বিশেষ করে নওমুসলিমদের আধ্যাত্নিক সাহায্যের পাশাপাশি আর্থিক সাহায্যেরও প্রয়োজন হয়, কারণ সে সময় পরিবার, সমাজ তার বিরুদ্ধে থাকে। এমনকি অনেক সময় এই আর্থিক সাপোর্ট না থাকায় অনেকে দ্বীনের পথে এসেও টিকে থাকতে পারে না।
৭. সালমান ফারসি (রা) সত্যের পথে আসতে গিয়ে নিজের পরিবার দেশ ছেড়েছেন, ইরান থেকে শাম,মসুল, নিসিবিস,আম্মুরিয়া,ওয়াদি আল কুরি ও মদিনায় গমন করেন, দাসের জীবন গ্রহণ করতে বাধ্য হোন কিন্তু শেষে আল্লাহ তিঁনাকেও সম্মানীত করেছেন, সত্য পথের অনুসারী হিসেবে কবুল করেছেন।
শিক্ষা : সত্য পথের সন্ধান পেতে হলে, হিদায়াতকে বুকে জড়াতে হলে সর্বপ্রথম পদক্ষেপ নিজেকেই নিতে হবে, সবরের পরীক্ষা দিতে হবে তারপর আল্লাহই বাকিটা সহজ করে দিবেন। কেউ আল্লাহর দিকে হেটে গেলে তিঁনি তার দিকে দৌড়ে যাবেন।
এই সালমান ফারসি (রা) সেই সাহাবী যিনি খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খননের সেই চমৎকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
সিরাতের পাতা থেকে - ৩
মোঃ মিনহাজ উদ্দিন
#সিরাতের_পাতা_থেকে