07/10/2025
আপনি মরে গেলে আপনার বউ-বাচ্চা কী খাবে, ভেবেছেন? নাকি কবরে শুয়ে ভাববেন?
শুনুন! হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি। যিনি এই মুহূর্তে খুব আয়েশ করে মোবাইল স্ক্রল করছেন, চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন আর ভাবছেন জীবনটা বেশ চলছে। আপনার জন্য আমার কাছে কোনো মিষ্টি কথা বা সস্তা অনুপ্রেরণার বাণী নেই। আমার কাছে আছে এক টুকরো নরক। সেই নরকের ছবি আমি আপনার চোখের সামনে আজ মেলে ধরব। যে ছবিটা আপনি প্রতিদিন দেখেও না দেখার ভান করেন, যে সত্যটা আপনার কানের পাশে ২৪ ঘণ্টা ধরে চিৎকার করলেও আপনি বধির সেজে থাকেন।
আজ আমি আপনার সেই সাজানো মিথ্যের দুনিয়াটাকে একটা হাতুড়ি দিয়ে ভাঙতে এসেছি। প্রস্তুত হোন, কারণ এই লেখা পড়ার পর আপনার পায়ের তলার মাটি সরে যেতে পারে। আপনার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেতে পারে। আপনার হাসিখুশি চেহারার পেছনে লুকিয়ে থাকা ভয়ংকর দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কদর্য রূপটা আয়নার মতো স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে। যদি দুর্বল চিত্তের মানুষ হন, তাহলে এখনই কেটে পড়ুন। কারণ এখানে আবেগের কোনো স্থান নেই, আছে শুধু হাড় হিম করা বাস্তবতার নির্মম কশাঘাত।
জীবনের একটা তিতা সত্য কথা শুনবেন? আপনার মৃত্যুর পর, আপনার আদরের সন্তান, আপনার ভালোবাসার স্ত্রী—যাদের জন্য আপনি আজ জীবনপাত করছেন—তারা দুবেলা ঠিকমতো খেতে পারছে কিনা, সেই খোঁজ নেওয়ার জন্য এই পৃথিবীতে একটা কুকুরও থাকবে না।
বিশ্বাস হচ্ছে না? ভাবছেন, "আমার ভাই আছে, বোন আছে, কত আত্মীয়-স্বজন! তারা দেখবে।"
কী হাস্যকর ভাবনা! আপনার এই অলীক বিশ্বাস আর রূপকথার গল্পের ওপর আমার আজকের এই লেখার প্রতিটি অক্ষর একেকটা পেরেক হয়ে বিঁধবে। চলুন, আপনার মৃত্যুর পরের পৃথিবীতে একটা ছোট্ট সফর করে আসি। তৈরি তো?
ভাবুন, সেই ভয়ংকর দিনটার কথা। হার্ট অ্যাটাক, দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে আপনি আর নেই। আপনার নিথর দেহটা পড়ে আছে ঘরের মাঝখানে। চারপাশে কান্নার রোল। আপনার স্ত্রী আছড়ে-পিছড়ে কাঁদছে, কারণ তার মাথার ওপরের আকাশটা ভেঙে পড়েছে। আপনার সন্তানেরা ভয়ে, বিভ্রান্তিতে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আর বাকিরা? আপনার ভাইয়েরা, বোনেরা, বন্ধুরা? তারাও কাঁদছে। কেউ হয়তো সত্যিই কষ্ট পেয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগের কান্নাটাই একটা সামাজিক প্রটোকল। একটা লোক দেখানো দায়িত্ব। "আহা, বড্ড ভালো মানুষ ছিল," "বড্ড তাড়াতাড়ি চলে গেল"—এইসব সস্তা, মুখস্থ করা বুলি আওড়ানো হবে।
আপনার জানাজায় বা শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে উপচে পড়া ভিড় হবে। শত শত মানুষ আসবে। কেউ আসবে সামাজিকতা রক্ষা করতে, কেউ আসবে আপনার পরিবারের বর্তমান অবস্থাটা জরিপ করতে, আর বেশিরভাগই আসবে একবেলা ভালো-মন্দ খাওয়ার লোভে। বিরিয়ানির প্যাকেটের জন্য হুড়োহুড়ি লাগবে। মানুষ পেটপুরে খাবে, আপনার আত্মার শান্তি কামনা করে ঢেকুর তুলবে, তারপর নিজের বাড়ির পথ ধরবে।
এই বিশাল ভিড়ের মধ্যে ক'জন মানুষ genuinely আপনার স্ত্রীর কাঁধে হাত রেখে বলবে, "ভাবী, চিন্তা করবেন না। আমি আছি। আপনার বাচ্চার পড়াশোনার দায়িত্ব আমার"?
আমি বলে দিচ্ছি, একজনও না। যদি কেউ বলেও, সেটা নিছকই কথার কথা। আবেগের মুহূর্তে বলে ফেলা একটা ফাঁপা প্রতিশ্রুতি। কারণ সেই মুহূর্তে সমবেদনা জানানোটা খুব সহজ। কঠিন হলো সেই সমবেদনাকে বছরের পর বছর ধরে দায়িত্বে রূপান্তরিত করা। আর মানুষ কঠিন কাজ করতে পছন্দ করে না।
আপনার লাশের পাশে দাঁড়িয়ে যে ভাই কান্নায় ভেঙে পড়েছিল, এক সপ্তাহ পর তার নিজের সংসারের কিস্তির চিন্তা তাকে তাড়া করবে। যে বন্ধু আপনার জন্য জান দিয়ে দেওয়ার কথা বলত, সে তার নিজের বাচ্চার স্কুলের অ্যাডমিশনের জন্য দৌড়াবে। পৃথিবী থেমে থাকবে না, মিস্টার। শুধু আপনার পরিবারের পৃথিবীটা ধ্বংস হয়ে যাবে। আর সেই ধ্বংসস্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ ফটোসেশন করতে আসবে না।
আপনার মৃত্যুর প্রথম কয়েক সপ্তাহ বা বড়জোর এক মাস। ফোন আসবে। আত্মীয়-স্বজন খোঁজ নেবে। "কেমন আছো?", "কোনো অসুবিধা হচ্ছে?", "টাকা-পয়সা লাগলে বলো।"
আপনার স্ত্রী হয়তো ভাববে, যাক, পৃথিবীতে এখনো ভালো মানুষ আছে। সে হয়তো একটু ভরসা পাবে। কিন্তু সে জানে না, এই সহানুভূতিগুলোর একটা 'Expiry Date' আছে। খুব তাড়াতাড়িই এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।
প্রথম মাস পেরোতেই ফোন আসা কমে যাবে। দ্বিতীয় মাসে প্রায় বন্ধ। তৃতীয় মাসে আপনার স্ত্রী যখন সত্যিই আর্থিক সংকটে পড়ে আপনার সবচেয়ে কাছের ভাইটিকে ফোন করবে, তখন উত্তর আসবে, "ভাবী, এই মাসে খুব টানাটানি যাচ্ছে। সামনে মাসটা দেখি কী করা যায়।"
সেই 'সামনের মাস' আর কোনোদিন আসবে না।
এরপর শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব: পরামর্শ এবং বিচার।
যে আত্মীয়রা একদিন আপনার বাড়িতে এসে আপনার স্ত্রীর হাতের রান্না খেয়ে প্রশংসার বন্যা বইয়ে দিত, তারাই এখন পেছন থেকে বলাবলি করবে, "লোকটা মরার পর তো মেয়েটার মতিগতি ভালো ঠেকছে না," "শোক করার নামে সারাদিন ঘরে বসে থাকে, কিছু একটা করলেই তো পারে," "বাচ্চাটাকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানোর কী দরকার? সাধারণ স্কুলেই তো দেওয়া যায়।"
আপনার স্ত্রীর সামান্য শখ, একটা নতুন পোশাক কেনা বা বাচ্চাদের নিয়ে একটু বাইরে খেতে যাওয়া—এগুলো তখন তাদের চোখে 'বিলাসিতা' হয়ে উঠবে। মানুষ আঙুল তুলে বলবে, "স্বামীর শোক নেই, দ্যাখো কেমন সেজেগুজে ঘুরছে!"
তারা ভুলে যাবে যে, আপনি বেঁচে থাকতে আপনার স্ত্রীকে রানির মতো রেখেছিলেন। আপনার সন্তানের প্রতিটি আবদার আপনি হাসিমুখে পূরণ করতেন। আপনার অনুপস্থিতিতে সেই শখ বা আবদারগুলোই আপনার পরিবারের জন্য এক একটা সামাজিক অপরাধ হয়ে দাঁড়াবে। আপনার রেখে যাওয়া সামান্য কিছু টাকা যদি আপনার স্ত্রী নিজের বা সন্তানের জন্য খরচ করে, তাহলে সমাজের চোখে সে হয়ে যাবে একজন 'উড়নচণ্ডী' এবং 'দায়িত্বজ্ঞানহীন' মহিলা।
এই তথাকথিত 'আপনজন'-রাই আপনার পরিবারের মানসিক শান্তিকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেবে। তারা সাহায্য করবে না, কিন্তু বিচারকের আসনে বসে রায় দিতে এক মুহূর্তও দেরি করবে না।
আপনি কি জানেন, 'হাজবেন্ড' বা 'বাবা' শব্দটার অর্থ শুধু একজন মানুষ নয়? এর অর্থ হলো একটা ছাদ, একটা ভরসার দেয়াল, একটা চলমান এটিএম মেশিন, এবং সবচেয়ে বড় কথা—স্বপ্ন দেখার লাইসেন্স।
আপনি যখন বেঁচে থাকেন, আপনার স্ত্রী হয়তো একটা ভালো শাড়ির আবদার করে। আপনার সন্তান হয়তো একটা নতুন ভিডিও গেমের জন্য বায়না ধরে। আপনি হয়তো মাঝে মাঝে বিরক্ত হন, কিন্তু দিন শেষে তাদের সেই ছোট ছোট শখগুলো পূরণ করেন। কারণ আপনি জানেন, এই ছোট ছোট আনন্দগুলোই জীবন।
কিন্তু আপনার মৃত্যুর পর?
'শখ' এবং 'আবদার'—এই শব্দ দুটো আপনার পরিবারের অভিধান থেকে মুছে যাবে। ওগুলো তখন হয়ে যাবে 'বিলাসিতা'।
আপনার স্ত্রীর কাছে তখন সবচেয়ে বড় শখ হবে মাসের শেষে বাড়িওয়ালার ভাড়াটা ঠিকমতো দেওয়া।
আপনার সন্তানের কাছে সবচেয়ে বড় আবদার হবে, বন্ধুদের মতো তারও যেন স্কুল থেকে নামটা কেটে না দেওয়া হয়।
যে স্ত্রী আপনার সাথে রেস্টুরেন্টে গিয়ে মেন্যু কার্ডের সবচেয়ে দামী ডিশটা অর্ডার করত, সে তখন হয়তো রাস্তার পাশের দোকানে দাঁড়িয়ে দশ টাকার চপ-মুড়ি কিনে বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে, নিজের খিদে ভুলে।
যে সন্তান জন্মদিনে পাঁচ হাজার টাকার খেলনা পেয়েও খুশি হতো না, সে তখন হয়তো ছেঁড়া স্কুলব্যাগটা সেলাই করতে করতে ভাববে, "বাবা থাকলে আজ নতুন একটা ব্যাগ হতো।"
এটাই বাস্তবতা। আপনার অনুপস্থিতি মানে শুধু একজন মানুষের চলে যাওয়া নয়, এর মানে হলো একটা সুন্দর জীবনযাত্রার নির্মম পতন। এর মানে হলো, স্বপ্নের অপমৃত্যু। আপনার রেখে যাওয়া পরিবার তখন শুধু 'বেঁচে থাকবে', কিন্তু 'জীবনযাপন' করবে না। তাদের প্রতিটি দিন হবে একটা সংগ্রাম, প্রতিটি রাত হবে দুশ্চিন্তার নরক।
এখন প্রশ্ন হলো, কেন এমন হয়? যে মানুষগুলো আপনার সামনে এত আপন সাজার অভিনয় করে, তারা আপনার মৃত্যুর পর এত দ্রুত কিভাবে বদলে যায়?
উত্তরটা খুব সহজ এবং ভয়ংকর: স্বার্থপরতা।
মানুষ জন্মগতভাবে স্বার্থপর। আপনার ভাই প্রথমে তার নিজের সন্তানের কথা ভাববে, তারপর যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে, তাহলে আপনার সন্তানের কথা ভাবার 'বিলাসিতা' সে করতে পারে। আপনার বন্ধু প্রথমে তার নিজের পরিবারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করবে, তারপর আপনার পরিবারের দিকে তাকানোর কথা ভাববে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। এখানে আবেগ বা সম্পর্কের কোনো স্থান নেই।
তাছাড়া, আমাদের সমাজ একটা ভয়ংকর দ্বিচারী কাঠামোয় দাঁড়িয়ে আছে। এই সমাজই একজন পুরুষকে 'পরিবারের কর্তা' বানিয়ে তার কাঁধে সমস্ত দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়। আবার সেই পুরুষটা মরে গেলে, তার অসহায় পরিবারকে রক্ষা করার কোনো সামাজিক কাঠামো এই সমাজের নেই।
এই সমাজ বিধবা নারীকে দেখে सहानुভূতির চোখে নয়, বরং সন্দেহের চোখে। তাকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখা হয়। তার চরিত্র নিয়ে কাটাছেঁড়া করা হয়। তাকে দুর্বল ভেবে তার সম্পত্তি গ্রাস করার চেষ্টা করা হয়।
আপনার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে আপনার ভাইয়েরা ভাগ বসাতে চাইবে। আপনার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা হয়তো আপনার স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে দায় সারতে চাইবে। চারপাশ থেকে শকুনদের মতো আপনার অসহায় পরিবারটাকে ছিঁড়ে খেতে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়বে।
আপনি কি এই শকুনদের ভরসায় আপনার প্রিয় মানুষদের রেখে যেতে চান? আপনি কি চান, আপনার মৃত্যুর পর আপনার স্ত্রী আর সন্তানরা মানুষের দয়ার পাত্র হয়ে বেঁচে থাকুক? দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করুক একটু সম্মান আর সাহায্যের জন্য?
এতক্ষণ যা বললাম, তা যদি আপনার মস্তিষ্কে সামান্যতমও আঘাত করে থাকে, যদি আপনার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং স্বার্থপর পিতা বা স্বামী বলে মনে হতে শুরু করে, তাহলে বুঝবেন—আমার লেখার উদ্দেশ্য সফল।
এখন কান্নাকাটি বা হা-হুতাশ করার সময় নয়। এখন অ্যাকশন নেওয়ার সময়। আপনি বেঁচে থাকতে আপনার ক্ষমতা থাকতে, আপনাকে কিছু কাজ করতে হবে। আবেগের আঠালো সমুদ্র থেকে বেরিয়ে এসে যুক্তির কঠিন মাটিতে পা রাখুন।
আর্থিক পরিকল্পনা করুন, ভিক্ষুকের মতো মরবেন না: আপনি কি ভাবেন, আপনার জমানো দুই-চার লাখ টাকা আপনার পরিবারের জন্য যথেষ্ট? মুদ্রাস্ফীতির এই যুগে ঐ টাকা কয়েক বছরেই শেষ হয়ে যাবে। আজই, হ্যাঁ, আজই একজন ভালো আর্থিক উপদেষ্টার সাথে কথা বলুন। আপনার আয়ের একটা অংশ নিয়মিত সঞ্চয় করুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—একটা ভালো মেয়াদের জীবন বিমা (Term Insurance) করুন। এমন একটা অংকের বিমা করুন, যা আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার পরিবারের আগামী ১৫-২০ বছরের খরচ, আপনার সন্তানের পড়াশোনা এবং বিয়ের খরচ বহন করতে পারে। মনে রাখবেন, বিমা কোনো খরচ নয়, এটা আপনার পরিবারের প্রতি আপনার ভালোবাসার এবং দায়িত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এটাকে অবহেলা করাটা একটা অপরাধ।
আপনার স্ত্রীকে স্বাবলম্বী করুন, অথর্ব বানিয়ে রাখবেন না: আপনি কি আপনার স্ত্রীকে ভালোবেসে ঘরের সব কাজ থেকে মুক্তি দিয়ে, তাকে সম্পূর্ণ আপনার ওপর নির্ভরশীল করে রেখেছেন? তাহলে আপনি তার সবচেয়ে বড় শত্রু। ভালোবাসা মানে কাউকে পঙ্গু করে দেওয়া নয়, ভালোবাসা মানে কাউকে শক্তি দেওয়া। আপনার স্ত্রীকে শিক্ষিত করুন। তাকে কোনো কাজে দক্ষ করে তুলুন। ড্রাইভিং শেখান, ব্যাংকের কাজ শেখান, বিনিয়োগ সম্পর্কে ধারণা দিন। তাকে এমনভাবে তৈরি করুন, যেন আপনার অনুপস্থিতিতে সে একাই একটা ঝড় সামলে নেওয়ার মতো শক্তিশালী যোদ্ধা হয়ে উঠতে পারে। আপনার দায়িত্ব শুধু টাকা রোজগার করা নয়, আপনার দায়িত্ব হলো আপনার সঙ্গীকে জীবনের জন্য প্রস্তুত করা।
সন্তানকে বাস্তবতার শিক্ষা দিন: আপনার সন্তানকে শুধু রূপকথার গল্প শোনাবেন না। তাদের জীবনের কঠিন বাস্তবতা সম্পর্কেও ধারণা দিন। টাকার মূল্য বোঝান। কষ্ট করে কীভাবে টিকে থাকতে হয়, সেই শিক্ষা দিন। তাদের এমনভাবে মানুষ করুন, যেন তারা শুধু আপনার পরিচয়ে নয়, নিজের পরিচয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।
সম্পত্তি এবং আইনি বিষয়গুলো পরিষ্কার রাখুন: আপনার সমস্ত সম্পত্তি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিনিয়োগ—সবকিছুর পরিষ্কার উইল বা নমিনেশন করে রাখুন। এমনভাবে সবকিছুর ব্যবস্থা করুন, যেন আপনার মৃত্যুর পর আপনার স্ত্রীকে এক কাগজপত্রের জন্য শত শত বার বিভিন্ন অফিসের দরজায় ঘুরতে না হয়। আইনি জটিলতা তৈরি করে আপনার পরিবারকে আরও অসহায় অবস্থায় ফেলে যাবেন না।
আমি জানি, এই লেখাটা পড়ে আপনার রাগ হচ্ছে। হয়তো আমার ওপর, হয়তো সমাজের ওপর, অথবা হয়তো নিজের ওপর। এই রাগটাই দরকার। এই রাগটাকে পুষে রাখুন। এই রাগটাকেই আপনার পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করুন।
আপনি আজ দুটি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
একটি রাস্তা হলো আত্মপ্রবঞ্চনার। যেখানে আপনি এই লেখাটাকে একটা বাজে স্বপ্ন ভেবে ভুলে যাবেন, আর আগের মতোই দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে জীবনযাপন করবেন। আর মনে মনে ভাববেন, "আমার কিছু হলে আমার আপনজনেরা দেখবে।"
আরেকটি রাস্তা হলো কঠোর বাস্তবতার। যেখানে আপনি আজ রাতেই নিজের জীবন বিমার কাগজটা বের করে দেখবেন, স্ত্রীর সাথে বসে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করবেন, এবং আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত করার জন্য কঠিন পদক্ষেপ নেবেন।
সিদ্ধান্ত আপনার। আপনি কি একজন কাপুরুষের মতো মরে গিয়ে আপনার পরিবারকে অথৈ সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে যেতে চান? নাকি একজন সত্যিকারের দায়িত্বশীল স্বামী ও পিতা হিসেবে এমন ব্যবস্থা করে যেতে চান, যাতে আপনার কবরের পাশে দাঁড়িয়েও আপনার স্ত্রী বলতে পারে, "তুমি না থেকেও আছো। তুমি আমাদের ভবিষ্যতের দেয়ালটা এত মজবুত করে বানিয়ে দিয়ে গেছো যে, কোনো ঝড়ই তা ভাঙতে পারবে না।"
ভেবে দেখুন। আপনার লাশের পাশে দাঁড়িয়ে আপনার স্ত্রী-সন্তান কি কাঁদবে আপনার বিয়োগান্তক মৃত্যুর জন্য, নাকি তাদের সামনে আসতে চলা ভয়ংকর ভবিষ্যতের কথা ভেবে?
আপনার কবরের মাটি শুকানোর আগেই আপনার পরিবারের স্বপ্নগুলো শুকিয়ে যাবে, যদি না আপনি আজ জেগে ওঠেন। দায়টা সম্পূর্ণ আপনার। এবং শুধু আপনারই।