17/07/2025
এক্স-রে, এমআরআই, সিটিস্ক্যান একই রকমের মনে হলেও এগুলো আসলে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে আলাদা রকমের রোগ নির্ণয়ের উপায়।
এক্স-রে (X-ray) ☢️
এক্স-রে হলো এক ধরনের তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ, যা শরীরের ভেতরের কাঠামোর ছবি তৈরি করতে পারে। এটি চিকিৎসা ক্ষেত্রে সবচেয়ে পুরোনো এবং বহুল ব্যবহৃত ইমেজিং কৌশলগুলোর মধ্যে অন্যতম।
কিভাবে কাজ করে? 🤔
এক্স-রে মেশিন থেকে অল্প পরিমাণ বিকিরণ শরীরের মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়। শরীরের বিভিন্ন অংশ—যেমন হাড় 🦴, নরম টিস্যু, এবং বাতাস—ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণে এই বিকিরণ শোষণ করে। হাড়ের মতো ঘন টিস্যু বেশি বিকিরণ শোষণ করে এবং ছবিতে সাদা দেখায়। অন্যদিকে, ফুসফুসের 🫁 বাতাসের মতো নরম টিস্যু কম বিকিরণ শোষণ করে এবং ছবিতে কালো দেখায়। এই শোষণের তারতম্যকে একটি ডিটেক্টরে ধারণ করে ছবি তৈরি করা হয়।
কখন ব্যবহার করা হয়? 👨⚕️
* হাড় ভাঙা বা স্থানচ্যুতি 🩹 নির্ণয় করতে।
* দাঁতের সমস্যা 🦷, যেমন ক্যাভিটি বা ইমপ্যাক্টেড দাঁত দেখতে।
* বুকের রোগ, যেমন নিউমোনিয়া বা ফুসফুসের ক্যান্সার শনাক্ত করতে।
* পেটের সমস্যা 🤰, যেমন অন্ত্রের প্রতিবন্ধকতা দেখতে।
* শরীরে কোনো বাইরের বস্তু 📎 প্রবেশ করলে তার অবস্থান জানতে।
বিশেষ তথ্য 💡
* দ্রুত এবং ব্যথাহীন: এক্স-রে প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুত ⚡ এবং এতে কোনো ব্যথা লাগে না।
* বিকিরণের ঝুঁকি: এক্স-রেতে সামান্য পরিমাণ বিকিরণ ব্যবহৃত হয়, যা সাধারণত ক্ষতিকর নয়। তবে, গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে ভ্রূণের সুরক্ষার জন্য এটি এড়িয়ে চলা হয়।
* উইলহেলম রন্টজেন ১৮৯৫ সালে এক্স-রে আবিষ্কার করেন, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। 🏆
সিটি স্ক্যান (CT Scan) 🌀
সিটি স্ক্যান বা কম্পিউটেড টমোগ্রাফি হলো এক্স-রের একটি উন্নত সংস্করণ, যা শরীরের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিস্তারিত ত্রিমাত্রিক (3D) ছবি 🖼️ তৈরি করে।
কিভাবে কাজ করে? 💻
সিটি স্ক্যানার দেখতে একটি বড় ডোনাট 🍩 আকৃতির মেশিনের মতো। রোগী একটি টেবিলে শুয়ে মেশিনের মাঝখানের গর্তের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে। মেশিনটি রোগীর শরীরের চারপাশে ঘুরতে থাকে এবং বিভিন্ন কোণ থেকে শত শত এক্স-রে ছবি তোলে। এরপর একটি শক্তিশালী কম্পিউটার এই সমস্ত দ্বি-মাত্রিক ছবিগুলোকে একত্রিত করে একটি বিস্তারিত ত্রিমাত্রিক ছবিতে রূপান্তর করে। এই ছবিতে নরম টিস্যু, রক্তনালী এবং হাড়ের গঠন খুব স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
কখন ব্যবহার করা হয়? 🚑
* মাথার গুরুতর আঘাত 🤕, স্ট্রোক বা মস্তিষ্কের টিউমার 🧠 নির্ণয় করতে।
* শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ 🩸 শনাক্ত করতে।
* ক্যান্সার খুঁজে বের করতে, এর আকার এবং অবস্থান জানতে এবং চিকিৎসার কার্যকারিতা নিরীক্ষণ করতে।
* হাড়ের জটিল ভাঙন বা টিউমারের বিস্তারিত চিত্র পেতে।
* রক্তনালীর রোগ, যেমন অ্যানিউরিজম বা ব্লকেজ দেখতে (সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাম)।
বিশেষ তথ্য ℹ️
* কনট্রাস্ট ডাই: অনেক সময় ছবির মান আরও ভালো করার জন্য রোগীর শরীরে এক ধরনের তরল (কনট্রাস্ট ডাই) 💉 পান করার মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়। এটি নির্দিষ্ট অঙ্গ বা রক্তনালীকে ছবিতে আরও উজ্জ্বল করে তোলে।
* বিকিরণের মাত্রা: সিটি স্ক্যানে সাধারণ এক্স-রের চেয়ে বেশি বিকিরণ ব্যবহৃত হয়। তাই, এটি শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়।
* বিস্তারিত চিত্র: সিটি স্ক্যান সাধারণ এক্স-রের তুলনায় শরীরের নরম টিস্যু, অঙ্গ এবং রক্তনালীর অনেক বেশি বিস্তারিত চিত্র প্রদান করে।
এমআরআই (MRI) 🧲
এমআরআই বা ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং হলো একটি অত্যাধুনিক ইমেজিং প্রযুক্তি, যা শক্তিশালী চুম্বক ক্ষেত্র এবং রেডিও তরঙ্গ 📡 ব্যবহার করে শরীরের ভেতরের অঙ্গ ও টিস্যুর অত্যন্ত পরিষ্কার এবং বিস্তারিত ছবি তৈরি করে।
কিভাবে কাজ করে? ⚙️
এমআরআই মেশিনে একটি বিশাল, শক্তিশালী চুম্বক থাকে। রোগীকে মেশিনের ভেতরে একটি টানেলের মতো অংশে প্রবেশ করানো হয়। এই শক্তিশালী চুম্বক ক্ষেত্রটি রোগীর শরীরের পানির অণুগুলোর প্রোটনকে একটি নির্দিষ্ট দিকে সারিবদ্ধ করে। এরপর মেশিন থেকে রেডিও তরঙ্গ পাঠানো হলে এই প্রোটনগুলো তাদের অবস্থান থেকে সরে যায়। রেডিও তরঙ্গ বন্ধ হয়ে গেলে প্রোটনগুলো আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসে এবং একটি সংকেত নির্গত করে। কম্পিউটার এই সংকেত গ্রহণ করে সেটিকে একটি বিস্তারিত ছবিতে পরিণত করে।
কখন ব্যবহার করা হয়? 🩺
* মস্তিষ্ক 🧠 এবং মেরুদণ্ডের রোগ, যেমন টিউমার, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, বা ডিস্কের সমস্যা নির্ণয় করতে।
* লিগামেন্ট, টেন্ডন এবং পেশীর আঘাত (যেমন, খেলার সময়কার আঘাত ⚽) দেখতে।
* বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার শনাক্তকরণ এবং নিরীক্ষণে।
* হৃৎপিণ্ড ❤️ এবং রক্তনালীর গঠনগত সমস্যা দেখতে।
* পেটের অঙ্গ, যেমন লিভার, কিডনি এবং পিত্তথলির বিস্তারিত চিত্র পেতে।
বিশেষ তথ্য ✨
* কোনো বিকিরণ নেই: এমআরআইতে এক্স-রে বা সিটি স্ক্যানের মতো কোনো ক্ষতিকর আয়োনাইজিং বিকিরণ ব্যবহার করা হয় না, যা এটিকে একটি অত্যন্ত নিরাপদ ✅ ইমেজিং পদ্ধতিতে পরিণত করেছে।
* সময়সাপেক্ষ ও কোলাহলপূর্ণ: এমআরআই স্ক্যান করতে ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ⏳ লাগতে পারে এবং প্রক্রিয়া চলাকালীন মেশিন থেকে বেশ জোরে শব্দ 🔊 হয়।
* ধাতব বস্তুতে নিষেধাজ্ঞা: শক্তিশালী চুম্বক ক্ষেত্রের কারণে, শরীরে কোনো ধরনের ধাতব ইমপ্লান্ট (যেমন, পেসমেকার, কৃত্রিম জয়েন্ট) থাকলে এমআরআই করা যায় না। 🚫🔩